Search This Blog

সমাস (পর্ব ৩ ও শেষ পর্ব): প্রাদি সমাস প্র, প্রতি, অনু, পরি, ইত্যাদি অব্যয় বা উপসর্গের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যর সমাস হলে তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন। এখানে বচন সমস্যমান পদটি একটি বিশেষ্য, যার মূল (ধাতু)বচ ধাতু বা কৃৎ প্রত্যয়। ‘প্র’ অব্যয়ের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য ‘বচন’র সমাস হয়ে সমস্ত পদ ‘প্রবচন’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। সুতরাং, এটি প্রাদি সমাস। নিত্য সমাস যে সমাসের সমস্ত পদই ব্যাসবাক্যের কাজ করে, আলাদা করে ব্যাসবাক্য তৈরি করতে হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন, অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর। এখানে ‘অন্য গ্রাম’ আর ‘গ্রামান্তর’, এই বাক্যাংশ ও শব্দটির মধ্যে তেমন বিশেষকোন পার্থক্য নেই। কেবল ‘অন্য’ পদের বদলে ‘অন্তর’ পদটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এটি নিত্য সমাস। ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র শকুন্তলা শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম বনমধ্যে বনের মধ্যে ষষ্ঠী তৎপুরুষ প্রাণভয় প্রাণ যাওয়ার ভয় মধ্যপদলোপী কর্মধারয় রথারোহণ রথে আরোহণ সপ্তমী তৎপুরুষ রথচালন রথকে চালন দ্বিতীয় তৎপুরুষ শরনিক্ষেপ শরকে নিক্ষেপ দ্বিতীয় তৎপুরুষ শরের নিক্ষেপ ষষ্ঠী তৎপুরুষ প্রাণবধ প্রাণের বধ ষষ্ঠী তৎপুরুষ অতিমাত্র মাত্রাকে অতিক্রান্ত প্রাদি বেগসংবরণ বেগকে সংবরণ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ বজ্রসম বজ্রের সম ষষ্ঠী তৎপুরুষ ক্ষীণজীবী ক্ষীণভাবে বাঁচে যে উপপদ তৎপুরুষ অল্পপ্রাণ অল্পপ্রাণ যার বহুব্রীহি পুত্রলাভ পুত্রকে লাভ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ কার্যক্ষতি কার্যরে ক্ষতি ষষ্ঠী তৎপুরুষ অতিথি সৎকার অতিথির সৎকার ষষ্ঠী তৎপুরুষ ধর্মকার্য ধর্মবিহিত কার্য মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ভুজবল ভুজের বল ষষ্ঠী তৎপুরুষ ভারার্পণ ভারের অর্পণ ষষ্ঠী তৎপুরুষ তপোবন তপের নিমিত্ত বন চতুর্থী তৎপুরুষ তপোবনদর্শন তপোবনকে দর্শন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ কোটরস্থিত কোটরে স্থিত সপ্তমী তৎপুরুষ মুখভ্রষ্ট মুখ থেকে ভ্রষ্ট পঞ্চমী তৎপুরুষ উপলখণ্ড উপলের খণ্ড ষষ্ঠী তৎপুরুষ বিস্ময়াপন্ন বিস্ময়কে আপন্ন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ কর্ণকুহর কর্ণের কুহর ষষ্ঠী তৎপুরুষ তপস্বিকন্যা তপস্বীর কন্যা ষষ্ঠী তৎপুরুষ অনতিবৃহৎ নয় অতি বৃহৎ নঞ তৎপুরুষ সেচনকলস সেচনের নিমিত্ত কলস চতুর্থী তৎপুরুষ জলসেচন জলদ্বারা সেচন তৃতীয়া তৎপুরুষ অনসূয়া নেই অসূয়া (ঈর্ষা) যার বহুব্রীহি প্রিয়ংবদা প্রিয়ম্ (প্রিয়বাক্য) বলে যে (স্ত্রী) উপপদ কণ্বতনয়া কণ্বের তনয়া ষষ্ঠী তৎপুরুষ মনোহারিণী মন হরণ করে যে নারী উপপদ তৎপুরুষ স্বভাবসিদ্ধ স্বভাব দ্বারা সিদ্ধ তৃতীয়া তৎপুরুষ অঙ্গুলি সংকেত অঙ্গুলি দ্বারা সংকেত তৃতীয়া তৎপুরুষ নবযৌবন নব যে যৌবন কর্মধারয় যৌবনের গান শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম মমতারস মমতা মিশ্রিত রস মধ্যপদলোপী কর্মধারয় অলসতন্দ্রা অলস যে তন্দ্রা কর্মধারয় মোহনিদ্রা মোহ রূপ নিদ্রা রূপক কর্মধারয় সৈন্যসামন্ত সৈন্য ও সামন্ত দ্বন্দ্ব সংগীতগুঞ্জন সংগীতের গুঞ্জন ষষ্ঠী তৎপুরুষ ঝরনাধারা ঝরনার ধারা ষষ্ঠী তৎপুরুষ জবাকুসুমসঙ্কাশ জবাকুসুমের সঙ্কাশ ষষ্ঠী তৎপুরুষ তিমিরবিদারী তিমিরকে বিদীর্ণ করে যা কর্মধারয় যৌবনসূর্য যৌবন রূপ সূর্য রূপক কর্মধারয় তিমিরকুন্তলা তিমিরের ন্যায় কুন্তল যার উপমিত কর্মধারয় পাষাণস্তুপ পাষাণের স্তুপ ষষ্ঠী তৎপুরুষ আলোকপিয়াসী আলোকের পিয়াসী ষষ্ঠী তৎপুরুষ প্রাণচঞ্চল প্রাণ চঞ্চল যার বহুব্রীহি মেঘলুপ্ত মেঘে লুপ্ত সপ্তমী তৎপুরুষ জয়মুকুট জয়ের জন্য যে মুকুট মধ্যপদলোপী কর্মধারয় মার্তণ্ডপ্রায় মার্তণ্ডের প্রায় ষষ্ঠী তৎপুরুষ নবপৃথিবী নব যে পৃথিবী কর্মধারয় সলিলসমাধি সলিলে সমাধি সপ্তমী তৎপুরুষ একটি তুলসী গাছের কাহিনী শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম গল্পপ্রেমিক গল্প প্রেমিক যে কর্মধারয় পুষ্পসৌরভ পুষ্পের সৌরভ ষষ্ঠী তৎপুরুষ জ্যোৎস্নারাত জ্যোৎস্না শোভিত রাত মধ্যপদলোপী কর্মধারয় পৃষ্ঠপ্রদর্শন পৃষ্ঠকে প্রদর্শন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ দেশভঙ্গ দেশকে ভঙ্গ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ জনমানব জন ও মানব দ্বন্দ্ব দেশপলাতক দেশ থেকে পলাতক পঞ্চমী তৎপুরুষ আম-কুড়ানো আমকে কুড়ানো দ্বিতীয়া তৎপুরুষ অনাশ্রিত নয় আশ্রিত যে বহুব্রীহি সমবেদনা-ভরা সমবেদনা দিয়ে ভরা তৃতীয়া তৎপুরুষ মন্দভাগ্য মন্দ যে ভাগ্য কর্মধারয় মন্দ ভাগ্য যার বহুব্রীহি ন্যায়সঙ্গত ন্যায় দ্বারা সঙ্গত তৃতীয়া তৎপুরুষ জীবনসঞ্চার জীবনের সঞ্চার ষষ্ঠী তৎপুরুষ আবর্জনা-ভরা আবর্জনা দ্বারা ভরা তৃতীয়া তৎপুরুষ গানের আসর গানের আসর অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ রান্নাঘর রান্না করা ঘর মধ্যপদলোপী কর্মধারয় রান্নার নিমিত্ত ঘর চতুর্থী তৎপুরুষ বেওয়ারিশ বে (নেই) ওয়ারিশ যার নঞর্থক বহুব্রীহি সন্ধ্যাপ্রদীপ সন্ধ্যার প্রদীপ ষষ্ঠী তৎপুরুষ জীবনপ্রদীপ জীবন রূপ প্রদীপ রূপক কর্মধারয় সুখসময় সুখের সময় ষষ্ঠী তৎপুরুষ গৃহকর্ত্রী গৃহের কর্ত্রী ষষ্ঠী তৎপুরুষ বাকবিতণ্ডা বাক দ্বারা বিতণ্ডা তৃতীয়া তৎপুরুষ অত্যাচার অবিচার অত্যাচার ও অবিচার দ্বন্দ্ব শ্বাস-প্রশ্বাস শ্বাস ও প্রশ্বাস দ্বন্দ্ব কচুকাটা কচুর মত কাটা উপমান কর্মধারয় অক্ষত নয় ক্ষত নঞ তৎপুরুষ অবিশ্বাস্য নয় বিশ্বাস্য নঞ তৎপুরুষ বেআইনি বে (নয়) আইনি নঞ তৎপুরুষ অপর্যাপ্ত নয় পর্যাপ্ত নঞ তৎপুরুষ যৌবনের গান শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন শ্রম-কিণাঙ্কের ন্যায় কঠিন উপমান কর্মধারয় বন্য-শ্বাপদ-সঙ্কুল বন্য-শ্বাপদে সঙ্কুল সপ্তমী তৎপুরুষ জরা-মৃত্যু-ভীষণা জরা-মৃত্যুতে ভীষণা সপ্তমী তৎপুরুষ ধরণী-মেরী ধরনী রূপ মেরী রূপক কর্মধারয় খেয়াল-খুশি খেয়াল ও খুশি দ্বন্দ্ব জীবন-আবেগ জীবনের আবেগ ষষ্ঠী তৎপুরুষ উদ্ধত-শির উদ্ধত শির যার বহুব্রীহি সিন্ধু-নীর সিন্ধুর নীর ষষ্ঠী তৎপুরুষ যৌবন-বেগ যৌবনের বেগ ষষ্ঠী তৎপুরুষ মরু-কবি মরুর কবি ষষ্ঠী তৎপুরুষ বিপ্লব-অভিযান বিপ্লব ও অভিযান দ্বন্দ্ব গরল-পিয়ালা গরলের পিয়ালা ষষ্ঠী তৎপুরুষ গিরি-নিঃস্রাব গিরি হতে নিঃসৃত যা বহুব্রীহি কূপমণ্ডুক কূপের মণ্ডুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ

সমাস (পর্ব ২): কর্মধারয় সমাস মূলত ৪ প্রকার- মধ্যপদলোপী কর্মধারয়:যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদগুলো লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন, ‘স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ’। এখানে ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদ ‘রক্ষার্থে’ লোপ পেয়েছে। পূর্বপদ ‘স্মৃতি’ এখানে বিশেষণ ভাব বোঝাচ্ছে। আর ‘সৌধ’ বিশেষ্য। এটিরই অর্থ প্রধান। সুতরাং এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। (উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম।কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান। আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’। এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।) উপমান কর্মধারয় সমাস:সাধারণ ধর্মবাচক পদের সঙ্গে উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। অর্থাৎ, উপমান ও উপমেয় কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে, সেটিই উপমান কর্মধারয়। যেমন, তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র। এখানে ‘তুষার’র সঙ্গে কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে তুলনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি উপমান। আর সাধারণ ধর্ম হলো ‘শুভ্র’। উপমেয় এখানে নেই। সুতরাং, এটি উপমান কর্মধারয় সমাস। উপমিত কর্মধারয় সমাস:উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। এই সমাসে সাধারণ ধর্ম উল্লেখ করা থাকে না। অর্থাৎ, উপমান ও উপমিত কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে না, সেটিই উপমিত কর্মধারয় সমাস। যেমন, ‘পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ’। এখানে ‘পুরুষ’কে ‘সিংহ’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে ‘পুরুষ’ উপমেয় আর ‘সিংহ’ উপমান। সাধারণ ধর্মের উল্লেখ নেই। সুতরাং, এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস। রূপক কর্মধারয় সমাস:উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এটির ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমান পদের মাঝে ‘রূপ’ শব্দটি অথবা ‘ই’ শব্দাংশটি ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘মন রূপ মাঝি = মনমাঝি’। এখানে ‘মন’ উপমেয় ও ‘মাঝি’ উপমান। কিন্তু এখানে তাদের কোন নির্দিষ্ট গুণের তুলনা করা হয়নি। মনকেই মাঝি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। তৎপুরুষ সমাস যে সমাসে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পায়, এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। পূর্বপদের যে বিভক্তি লোপ পায়, সেই বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসের নামকরণ করা হয়। তবে মাঝে মাঝে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে অবিকৃত থেকে যায়। তখন সেটাকে বলা হয় অলুক তৎপুরুষ। (অলুক মানে লোপ না পাওয়া, অ-লোপ)। যেমন, দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত। এখানে পূর্বপদ ‘দুঃখ’র সঙ্গে থাকা দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ পেয়েছে। আবার পরপদ ‘প্রাপ্ত’র অর্থই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখ প্রাপ্ত হয়েছে বলেই নতুন শব্দের প্রয়োজন হয়েছে, যার জন্য বাক্যাংশটিকে সমাস করে নতুন শব্দ বানানো হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পেয়েছে, এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি তৎপুরুষ সমাস। বহুব্রীহি সমাস যে সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনটিরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয় না, বরং সমস্ত পদ তৃতীয় কোন শব্দকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন, মহান আত্মা যার = মহাত্মা। এখানে পূর্বপদ ‘মহান’ (মহা) ও পরপদ ‘আত্মা’। কিন্তু সমস্ত পদ ‘মহাত্মা’ দ্বারা মহান বা আত্মা কোনটাকেই না বুঝিয়ে এমন একজনকে বোঝাচ্ছে, যিনি মহান, যার আত্মা বা হৃদয় মহৎ। আবার, মহাত্মা বলতে মহাত্মা গান্ধীকেও বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু কোন অর্থেই পূর্বপদ বা পরপদকে বোঝানো হচ্ছে না। অর্থাৎ, পূর্বপদ বা পরপদ, কোনটারই অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে না। সুতরাং, এটি বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ। (উল্লেখ্য, বহুব্রীহি সমাস, বিশেষ করে কিছু ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস ও উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সমস্ত পদ প্রায় একই ধরনের হয়। ফলে এদের সমস্ত পদ দেখে আলাদা করে চেনার তেমন কোন উপায় নেই। এগুলোর সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাই একই ব্যাসবাক্য ও সমাস নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর পরীক্ষায় মূলত এগুলো উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ হিসেবেই আসে।) দ্বিগু সমাস দ্বিগু সমাসের সঙ্গে কর্মধারয় সমাসের বেশ মিল রয়েছে। এজন্য একে অনেকেই কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। দ্বিগু সমাসেও পরপদের অর্থই প্রধান। এবং এই সমাসেও বিশেষণ পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের সমাস হয়। তবে এখানে বিশেষণ পদটি সর্বদাই সংখ্যাবাচক হয়, এবং সমাস হয় সমাহার বা মিলন অর্থে। অর্থাৎ, সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন, ‘অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু’। এখানে পূর্বপদ ‘অষ্ট’ একটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ। আর পরপদ ‘ধাতু’ বিশেষ্য। অষ্ট ধাতুর মিলন বা সমাহার অর্থে সমাস হয়ে ‘অষ্টধাতু’ সমস্ত পদটি তৈরি হয়েছে যাতে ‘ধাতু’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, পরপদের অর্থ প্রধান হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুতরাং, এটি দ্বিগু সমাস। অব্যয়ীভাব সমাস সমাসের পূর্বপদ হিসেবে যদি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, এবং সেই অব্যয়ের অর্থই প্রধান হয়, তবে সেই সমাসকে বলা হয় অব্যয়ীভাব সমাস। যেমন, ‘মরণ পর্যন্ত = আমরণ’। এখানে পূর্বপদ হিসেবে পর্যন্ত অর্থে ‘আ’ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আর পরপদ ‘মরণ’। কিন্তু এখানে সমস্ত পদটিকে নতুন অর্থ দিয়েছে ‘আ’ উপসর্গটি। অর্থাৎ, এখানে ‘আ’ উপসর্গ বা অব্যয় বা পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। তাই এটি অব্যয়ীভাব সমাস। (উপসর্গ এক ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশ। উপসর্গ বচন বা লিঙ্গ ভেদে পরিবর্তিত হয় না কিংবা বাক্যের অন্য কোন পদের পরিবর্তনেও এর কোন পরিবর্তন হয় না। এরকম আরেকটি অব্যয়সূচক শব্দাংশ হলো অনুসর্গ।)

সমাস (পর্ব ১): সমাস ব্যাসবাক্য সমস্ত পদ সমস্যমান পদ পূর্বপদ পরপদ/ উত্তরপদ প্রকারভেদ অর্থ প্রাধান্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ দ্বন্দ্ব সমাস কর্মধারয় সমাস কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম মধ্যপদলোপী কর্মধারয় উপমেয় উপমান সাধারণ ধর্ম উপমান কর্মধারয় সমাস উপমিত কর্মধারয় সমাস রূপক কর্মধারয় সমাস তৎপুরুষ সমাস বহুব্রীহি সমাস দ্বিগু সমাস অব্যয়ীভাব সমাস প্রাদি সমাস নিত্য সমাস ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র শকুন্তলা যৌবনের গান একটি তুলসী গাছের কাহিনী যৌবনের গান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন সমাস:সমাস শব্দের অর্থ মিলন। অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের মিলিত হয়ে একটি নতুন শব্দ তৈরির ব্যাকরণ সম্মত প্রক্রিয়াকেই বলা হয় সমাস। মূলত, সমাসে একটি বাক্যাংশ একটি শব্দে পরিণত হয়। সমাসের রীতি বাংলায় এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সমাস ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, সমাস অর্থ সম্বন্ধপূর্ণ একাধিক শব্দের মিলন। আর সন্ধি পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি ধ্বনির মিলন। সমাসের জন্য কয়েকটি সংজ্ঞা/ টার্মস জানা খুবই জরুরি। এগুলো হলো- ব্যাসবাক্য: যে বাক্যাংশ থেকে সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। একে সমাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্যও বলা হয়। সমস্ত পদ:ব্যাসবাক্য থেকে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় সমস্ত পদ। সমস্যমান পদ:ব্যাসবাক্যের যে সব শব্দ সমস্ত পদে অন্তর্গত থাকে, সমস্ত পদের সেই সব শব্দকে সমস্যমান পদ বলে। পূর্বপদ : সমস্ত পদের প্রথম অংশ/ শব্দকে পূর্বপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের প্রথম সমস্যমান পদই পূর্বপদ। পরপদ/ উত্তরপদ:সমস্ত পদের শেষ অংশ/ শব্দকে পরপদ/ উত্তরপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের শেষ সমস্যমান পদই পরপদ। যেমন, সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন এখানে ব্যাসবাক্য হলো- ‘সিংহ চিহ্নিত আসন’। আর সমস্ত পদ হলো ‘সিংহাসন’। সমস্যমান পদ হলো ‘সিংহ’ আর ‘আসন’। এদের মধ্যে ‘সিংহ’ পূর্বপদ, আর ‘আসন’ পরপদ। আবার, আমিষের অভাব = নিরামিষ এখানে, পূর্বপদ ‘নিঃ’ বা অভাব। আর পরপদ হলো ‘আমিষ’। উলেলখ্য, একই সমস্ত পদ কয়েকভাবে ভেঙে কয়েকটি ব্যাসবাক্য তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক ব্যাসবাক্যও কয়েকটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাসবাক্য অনুযায়ী সেটি কোন সমাস তা নির্ণয় করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাসবাক্যের সঙ্গে সমস্ত পদের অর্থসঙ্গতি যেন ঠিক থাকে। যেমন, ‘বিপদে আপন্ন = বিপদাপন্ন’, এই সমাসটি এভাবে ভাঙলে তা ভুল হবে। এটা করতে হবে ‘বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন’। প্রকারভেদ:সমাসপ্রধানত ৬ প্রকার- দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব। তবে অনেকেই দ্বিগু সমাসকে কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। আবার অনেকে কর্মধারয় সমাসকে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। সমস্যমান পদের অর্থ প্রাধান্য বিবেচনা করে তারা এই মত দিয়ে থাকেন।সমস্যমান পদ বা পূর্বপদ-পরপদের অর্থ প্রাধান্য বিবেচনা করলে মূলত সমাস ৪ প্রকার- দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব। এছাড়াও কিছু অপ্রধান সমাসও রয়েছে। যেমন- প্রাদি, নিত্য, অলুক, প্রভৃতি। অর্থ প্রাধান্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ : পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পরপদের অর্থ প্রাধান্য সমাস আছে আছে দ্বন্দ্ব নেই আছে কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু আছে নেই অব্যয়ীভাব নেই নেই বহুব্রীহি নিচে বিভিন্ন সমাসের বর্ণনা দেয়া হলো। দ্বন্দ্বসমাস যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ- উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ স্থাপনে ও, এবং, আর- এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন- মা ও বাপ = মা-বাপ। এখানে পূর্বপদ ‘মা’ ও পরপদ ‘বাপ’। ব্যাসবাক্যে ‘মা’ ও ‘বাপ’ দুইজনকেই সমান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এবং দুজনকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্বপদ ও পরপদ, উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি দ্বন্দ্ব সমাস। কর্মধারয় সমাস কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। মূলত, এই সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদ পূর্বপদ ও বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ পরপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর ব্যাসবাক্যটিতে ঐ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদটি সম্পর্কে কিছু বলা হয়। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। এখানে, পূর্বপদ ‘নীল’ বিশেষণ ও পরপদ ‘পদ্ম’ বিশেষ্য। ব্যাসবাক্যে ‘পদ্ম’ সম্পর্কে বলা হয়েছে পদ্মটি ‘নীল’ রঙের। অর্থাৎ, ‘পদ্ম’ বা পরপদের অর্থই এখানে প্রধান, পরপদ ছাড়া পূর্বপদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই এটি কর্মধারয় সমাস। কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম- *.দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে এটি দ্বন্দ্ব সমাস হবে না। *.দুইটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব। একই কারণে এটি দ্বন্দ্ব না কর্মধারয় হবে। *.কার্যে পরপম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা। এখানে ‘মোছা’ কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। *.পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন, সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা *.বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে মহা হয়। মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান *.পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’, ‘কৎ’ হয়। যেমন, কু যে অর্থ = কদর্থ। *.পরপদে ‘রাজা’ থাকলে ‘রাজ’ হয়। যেমন, মহান যে রাজা = মহারাজ। *.বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।

শব্দের শ্রেণীবিভাগ (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): এছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয়মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন- রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি) হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি) হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি) হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম) খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম) ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি) পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা) চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি) শব্দের গঠনমূলক শ্রেণীবিভাগ গঠন অনুসারে শব্দ ২ প্রকার- মৌলিক শব্দ:যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, যে সব শব্দকে ভাঙলে আর কোন অর্থসঙ্গতিপূর্ণ শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন- গোলাপ, নাক, লাল, তিন, ইত্যাদি। এই শব্দগুলোকে আর ভাঙা যায় না, বা বিশ্লেষণ করা যায় না। আর যদি ভেঙে নতুন শব্দ পাওয়াও যায়, তার সঙ্গে শব্দটির কোন অর্থসঙ্গতি থাকে না। যেমন, উদাহরণের গোলাপ শব্দটি ভাঙলে গোল শব্দটি পাওয়া যায়। কিন্তু গোলাপ শব্দটি গোল শব্দ থেকে গঠিত হয়নি। এই দুটি শব্দের মাঝে কোন অর্থসঙ্গতিও নেই। তেমনি নাক ভেঙে না বানানো গেলেও নাক না থেকে আসেনি। অর্থাৎ, এই শব্দগুলোই মৌলিক শব্দ। ‘গোলাপ’ শব্দটির সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যোগ করে আমরা ‘গোলাপী’ শব্দটি বানাতে পারি। তেমনি ‘নাক’-র সঙ্গে ‘ফুল’ শব্দটি যোগ করে আমরা ‘নাকফুল’ শব্দটি গঠন করতে পারি। সাধিত শব্দ:যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থসঙ্গতিপূর্ণ ভিন্ন একটি শব্দ পাওয়া যায়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই বিভিন্ন ব্যাকরণসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ গঠিত হয়। মৌলিক শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন- সমাসবদ্ধ হয়ে- চাঁদের মত মুখ = চাঁদমুখ প্রত্যয় সাধিত- ডুব+উরি = ডুবুরি উপসর্গযোগে- প্র+শাসন = প্রশাসন অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ শব্দের অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ জানার আগে শব্দেরব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থসম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা দরকার। ব্যুৎপত্তিগত অর্থ:কোন শব্দ যে শব্দ বা শব্দমূল হতে গঠিত হয়েছে তার অর্থ দিয়ে শব্দটির যে অর্থ ধারণ করার কথা, তাকে শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে। অর্থাৎ, উৎপত্তিগত ভাবে শব্দটির যে অর্থ দাঁড়ায়, তাকেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে। যেমন, ‘মধুর’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘মধু+র’ অর্থাৎ ‘মধু’ শব্দ হতে। তাই ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত মধু সংশ্লিষ্ট কোন অর্থ। আর ‘মধুর’ শব্দের অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’। অর্থাৎ, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থেকেছে। আবার, ‘হস্তী’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘হস্ত+ইন’ অর্থাৎ ‘হস্ত’ শব্দ হতে। তাই ‘হস্তী’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত হস্ত বা হাত সংশ্লিষ্ট। কিন্তু ‘হস্তী’ বলতে একটি বিশেষ পশুকে বোঝায়, যার আদপে কোন হাত-ই নেই। অর্থাৎ, শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থাকেনি। ব্যবহারিক অর্থ:কোন শব্দ প্রকৃতঅর্থে যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, বা যে অর্থ প্রকাশ করে, তাকে সেই শব্দের ব্যবহারিক অর্থ বলে। যেমন, উপরের উদাহরণগুলোতে, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যবহারিক অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’, আর ‘হস্তী’র ব্যবহারিক অর্থ ‘একটি বিশেষ পশু’। অর্থগত ভাবে শব্দসমূহকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়- যৌগিক শব্দ:যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই, তাদের যৌগিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ পরিবর্তিত হয় না, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন (অর্থ) অর্থ গায়ক গৈ+অক যে গান করে কর্তব্য কৃ+তব্য যা করা উচিত বাবুয়ানা বাবু+আনা বাবুর ভাব মধুর মধু+র মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত দৌহিত্র দুহিতা+ষ্ণ্য (দুহিতা= মেয়ে, ষ্ণ্য= পুত্র) কন্যার মত, নাতি চিকামারা চিকা+মারা দেওয়ালের লিখন রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ:প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে গঠিত যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যবহারিক/ মূল অর্থ হস্তী হস্ত+ইন ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা বাঁশি বাঁশ+ইন বাঁশ দিয়ে তৈরি বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র তৈল তিল+ষ্ণ্য তিল থেকে তৈরি সেণহ পদার্থ উদ্ভিদ থেকে তৈরি যে কোন সেণহ পদার্থ প্রবীণ প্র+বীণা প্রকৃষ্টরূপে বীণা বাজায় যিনি অভিজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তি সন্দেশ সম+দেশ সংবাদ মিষ্টান্ন বিশেষ যোগরূঢ় শব্দ:সমাসনিষ্পন্ন যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন ব্যবহারিক অর্থ পঙ্কজ পঙ্কে জন্মে যা পদ্মফুল রাজপুত রাজার পুত্র একটি জাতি বিশেষ, ভারতের একটি জাতি মহাযাত্রা মহাসমারোহে যাত্রা মৃত্যু জলধি জল ধারণ করে যা/ এমন সাগর ]৪.নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ:বিভিন্ন বিদেশি শব্দের অনুকরণে ভাবানুবাদমূলক যেসব প্রতিশব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোকে নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ বলে। মূলত প্রচলিত বিদেশি শব্দেরই এরকম পারিভাষিক শব্দ তৈরি করা হয়েছে। যেমন- পারিভাষিক শব্দ মূল বিদেশি শব্দ পারিভাষিক শব্দ মূল বিদেশি শব্দ অম্লজান Oxygen সচিব Secretary উদযান Hudrogen স্নাতক Graduate নথি File স্নাতকোত্তর Post Graduate প্রশিক্ষণ Training সমাপ্তি Final ব্যবস্থাপক Manager সাময়িকী Periodical বেতার Radio সমীকরণ Equation মহাব্যবস্থাপক General Manager [কিন্তু,যেসব বিদেশি শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত হয়ে গেছে, আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে, সেগুলোও বাংলা ভাষার শব্দ; সেই শব্দগুলোও আমাদের ভাষার সম্পদ। সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার একটি সমৃদ্ধ ভাষার সবচেয়ে বড়ো লক্ষণ। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যতো বড়ো, সেই ভাষা ততো বেশি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভাষা। আর শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির একটি প্রধান কৌশল বিদেশি শব্দ আত্মীকরণ বা গ্রহণ।আর তাই বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক কঠিনতর পরিভাষা তৈরি করা নিষ্প্রয়োজন। এবং তা সাধারণ মানুষ গ্রহণও করে না। ভাষায় তা-ই টিকে থাকে, যা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে।

শব্দের শ্রেণীবিভাগ (পর্ব ১): শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ বাংলা ভাষার উৎপত্তি তৎসম শব্দ অর্ধ-তৎসম শব্দ তদ্ভব শব্দ দেশি শব্দ বিদেশি শব্দ আরবি শব্দ ফারসি শব্দ ইংরেজি শব্দ পর্তুগিজ শব্দ ফরাসি শব্দ ওলন্দাজ শব্দ গুজরাটি শব্দ পাঞ্জাবি শব্দ তুর্কি শব্দ চিনা শব্দ মায়ানমার/ বর্মি শব্দ জাপানি শব্দ মিশ্র শব্দ শব্দের গঠনমূলক শ্রেণীবিভাগ মৌলিক শব্দ সাধিত শব্দ অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যবহারিক অর্থ যৌগিক শব্দ রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ যোগরূঢ় শব্দ নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ৫টি বিভাজন সম্পর্কে জানার আগে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জানা জরুরি। বাংলা ভাষার উৎপত্তি:বাংলা ভাষার উৎপত্তি মূলত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে। এই বংশের অন্যতম একটি শাখা সংস্কৃত। বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার বংশেরই উত্তরসূরী। কিন্তু বাংলা ভাষা সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে আসেনি। সংস্কৃত সবসময়েই ছিলো সমাজের সম্ভ্রান্ত মানুষদের ব্যবহৃত ভাষা। আর বাংলা শুরু থেকেই সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষের ভাষা। এ থেকেই বোঝা যায় সংস্কৃত আর বাংলার মাঝেও কোনো ভাষা ছিলো। কিন্তু এ ব্যাপারে ভাষাবিদেরা একমত হতে পারেননি। পূর্বে সম্ভ্রান্ত মানুষেরা সংস্কৃত ব্যবহার করতো। আর সাধারণ মানুষ যে সব ভাষায় কথা বলতো, সেগুলোকে বলা হতো প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষা। অপভ্রংশ মানে বিকৃত, সংস্কৃত ভাষার শব্দকে মানুষ পরিবর্তন করে তাদের সুবিধামতো করে উচ্চারণ করতো বলে এগুলোকে পন্ডিতরা বলতেন অপভ্রংশ বা বিকৃত ভাষা। এগুলো আঞ্চলিক ভাষার মতোই একেক জায়গায় ছিলো একেক রকম। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা এসেছে গৌড়ীয় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে। আর ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলা এসেছে মাগধী অপভ্রংশ থেকে। এই অপভ্রংশগুলোতে সংস্কৃত ভাষার যে পরিবর্তিত বা বিকৃত রূপ পাওয়া যায়, তারই আরো পরিবর্তিত আর সহজ রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয় বাংলা ভাষা। দিন দিন মানুষের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলা ভাষাও অনেক সহজ হয়ে এসেছে। এবং তা আরো পরিবর্তিত হয়ে দিন দিন আরো সহজ ও সংক্ষিপ্ত হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রয়োজনে আরো অনেক নতুন শব্দও তৈরি হবে বা অন্য ভাষা থেকে আমাদের ভাষায় ঢুকে যাবে। উৎপত্তিগত দিক দিয়ে শব্দের ৫টি বিভাজন হলো- তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি আর বিদেশি শব্দ। তৎসম শব্দ:সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রাকৃত বা অপভ্রংশের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়নি, বরং সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, অনেক তৎসম শব্দেরই অর্ধ-তৎসম ও তদ্ভব রূপও বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, সূর্য˃ সুরুয, মনুষ্য˃ মানুষ। শুধু তৎসম শব্দেই ষ, ণ ব্যবহৃত হয়। অর্ধ-তৎসম শব্দ:যে সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। এগুলো সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকেই কিছুটা সহজ আকারে গৃহীত হয়েছে। সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষার মাধ্যমে বাংলায় আসেনি। যেমন, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂ গিন্নী, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত। তদ্ভব শব্দ:বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। অর্থাৎ, যে সব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত বা অপভ্রংশে ব্যবহৃত হয়েছিলো, পরে আবার প্রাকৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, মূলত এই শব্দগুলোই বাংলা ভাষা গঠন করেছে। আর তাই এই শব্দগুলোকে বলা হয় খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন, সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার, দেশি শব্দ:বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। মেমন,কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, পেট (উদর)- তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা। বিদেশি শব্দ:বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে। আরবি শব্দ :আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায় ফারসি শব্দ:খোদা, গুনাহ, দোযখ, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, মেথর, রসদ আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospitai), বোতল (bottle) পর্তুগিজ শব্দ :আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোঁরা ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম) গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা চিনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি জাপানি শব্দ :রিক্সা, হারিকিরি

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): ৩. ইকা-প্রত্যয় : (ক) শব্দের শেষে অক থাকলে ইকা-প্রত্যয় যোগ হয় এবং অক’-র স্থলে ইকা হয়। যেমন- বালক-বালিকা, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেবক-সেবিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা। ব্যতিক্রম : গণক-গণকী (গণিকা- বেশ্যা), নর্তক-নর্তকী, চাতক-চাতকী, রজক-রজকী/ রজকিনী (বাংলায়) (খ) অনেক সময় ক্ষুদ্রার্থেও ইকা প্রত্যয় যোগ হয়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না, এগুলো ক্ষুদ্রার্থক প্রত্যয়। যেমন- নাটক-নাটিকা (ক্ষুদ্র নাটক, নাটকের স্ত্রী রূপ নয়), মালা-মালিকা (ক্ষুদ্র মালা), গীত-গীতিকা (ক্ষুদ্র গান), পুস্তক-পুস্তিকা (ক্ষুদ্র বই)। ৪. আনী-প্রত্যয় : ইন্দ্র-ইন্দ্রানী, মাতুল-মাতুলানী, আচার্য-আচার্যানী (আচার্যের স্ত্রী, কিন্তু আচার্যের কাজে নিয়োজিত নারীও ‘আচার্য’), শূদ্র-শূদ্রানী (শূদ্রের স্ত্রী, সাধারণ শূদ্র জাতীয় মহিলা ‘শূদ্রা’), ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়ানী (ক্ষত্রিয়ের স্ত্রী, ক্ষত্রিয় জাতের মহিলা ক্ষত্রিয়া) কখনো কখনো আনী-প্রত্যয় অর্থেরও পরিবর্তন ঘটায়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না। যেমন- অরণ্য-অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), হিম-হিমানী (জমানো বরফ)। ৫. নী, ঈনী-প্রত্যয় : মায়াবী-মায়াবিনী, কুহক-কুহকিনী, যোগী-যোগিনী, মেধাবী-মেধাবিনী, দুঃখী-দুঃখিনী বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ : ১. যে সব পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ আছে, সেগুলোর শেষে ‘ত্রী’ হয়। যেমন- ধাতা-ধাত্রী, নেতা-নেত্রী, কর্তা-কর্ত্রী, শ্রোতা- শ্রোত্রী ২. পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত, বান, মান, ঈয়ান থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে যথাক্রমে অতী, বতী, মতী, ঈয়সী হয়। যেমন- সৎ-সতী, মহৎ-মহতী, গুণবান-গুণবতী, রূপবান-রূপবতী, শ্রীমান-শ্রীমতি, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, গরীয়ান-গরিয়সী ৩. বিশেষ নিয়মে গঠিত স্ত্রীবাচক শব্দ : সম্রাট- সম্রাজ্ঞী, রাজা-রাণী, যুবক-যুবতী, শ্বশুর-শ্বশ্রূ, নর-নারী, বন্ধু-বান্ধবী, দেবর- জা, শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী, স্বামী-স্ত্রী, পতি-পত্নী, সভাপতি-সভানেত্রী নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ : কতগুলো সংস্কৃত শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। অর্থাৎ, এগুলো সর্বদাই স্ত্রীবাচক, এগুলোর কোন পুরুষবাচক শব্দই নেই। যেমন- সতীন, সৎমাতা, সধবা, কুলটা ইত্যাদি। বিদেশি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ খান- খানম মরদ- জেনানা মালেক- মালেকা মুহতারিম- মুহতারিমা সুলতান- সুলতানা দ্রষ্টব্য : ১. কতোগুলো বাংলা শব্দ পুরুষ ও স্ত্রী দুই-ই বোঝায়। যেমন-জন, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু ২. কতোগুলো শব্দ শুধু পুরুষ বোঝায়। যেমন-কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার ৩. কতোগুলো শব্দ শুধু স্ত্রীবাচক হয়। যেমন-সতীন, সৎমা, সধবা ৪. কিছু পুরুষবাচক শব্দের দুটো করে স্ত্রীবাচক শব্দ আছে- দেবর- ননদ (দেবরের বোন), জা (দেবরের স্ত্রী) ভাই- বোন, ভাবি/ বৌদি (ভাইয়ের স্ত্রী) শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী (নারী শিক্ষক), শিক্ষকপত্নী (শিক্ষকের স্ত্রী) বন্ধু- বান্ধবী মেয়ে বন্ধু), বন্ধুপত্নী (বন্ধুর স্ত্রী) দাদা-দিদি (বড় বোন), বৌদি (দাদার স্ত্রী) ৫. বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের বিশেষণ স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- সুন্দর বলদ- সুন্দর গাই, সুন্দর ছেলে- সুন্দর মেয়ে, মেজ খুড়ো, মেজ খুড়ি ৬. বাংলায় বিশেষণ পদের স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে (পাগলি হবে না)। নদী ভয়ে অস্থির হয়ে গেছে (অস্থিরা হবে না)। ৭. কুল-উপাধি-বংশ ইত্যাদিরও স্ত্রীবাচক রূপ আছে। যেমন- ঘোষ- ঘোষজা (কন্যা অর্থে), ঘোষজায়া (পত্নী অর্থে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.ক্ষুদ্রার্থে ‘ইকা’ প্রত্যয়যোগে গঠিত? (ঘ-২০০৪-০৫) *.দুটি পুরম্নষবাচক রম্নপ রয়েছে কোন শব্দের ? (ঘ-২০০৮-০৯) *.লিঙ্গান্তর হয় না এমন শব্দ কোনটি? (গ-২০০৪-০৫)

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) (পর্ব ১): লিঙ্গ পুরুষবাচক শব্দ স্ত্রীবাচক শব্দ পতি ও পত্নীবাচক অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ সাধারণ পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বাংলা শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ বিদেশি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ দ্রষ্টব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন লিঙ্গ : ছেলে মেয়ের ধারণাকে বলা হয় লিঙ্গ। অর্থাৎ, পুংলিঙ্গ মানে পুরুষ, আর স্ত্রীলিঙ্গ মানে নারী বা মেয়ে বা স্ত্রী। এই বিভাজনই হলো লিঙ্গভেদ। অন্যান্য ভাষার মতোই বাংলা ভাষাতেও লিঙ্গভেদে শব্দের রূপ পরিবর্তিত হয়। আবার অনেক সময় দুই লিঙ্গের দুইটি পৃথক শব্দও ব্যবহৃত হয়। পুরুষবাচক শব্দ : যে শব্দ পুরুষ বা ছেলে বোঝায়, তাকে পুরুষবাচক শব্দ বলে। যেমন- বাপ, ভাই, ছেলে, ইত্যাদি। স্ত্রীবাচক শব্দ : যে শব্দ নারী বা স্ত্রী বা মেয়ে বোঝায়, তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলে। যেমন- মা, বোন, মেয়ে, ইত্যাদি। উলেলখ্য, মূলত বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ আছে। সংস্কৃত ভাষায় পুরুষবাচক বিশেষ্য পদের সঙ্গে পুরুষবাচক বিশেষণ পদ আর স্ত্রীবাচক বিশেষ্য পদের স্ত্রীবাচক বিশেষণ পদ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষায় এই নিয়ম মানা হয় না। বাংলা ভাষায় বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ করা হয় না। অর্থাৎ, বাংলা ভাষায় কেবল বিশেষ্য পদের লিঙ্গভেদ হয়। যেমন- সংস্কৃত ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দরী বালিকা’। কিন্তু বাংলা ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা’। পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দগুলোকে সাধারণত ২টি ভাগে ভাগ করা যায়- ১. পতি ও পত্নীবাচক অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ : আববা-আম্মা, বাবা-মা, চাচা-চাচি, কাকা-কাকি, জেঠা-জেঠি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নন্দাই-ননদ, দেওর-জা, ভাই-ভাবি/বৌদি, ইত্যাদি। ২. সাধারণ পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ : খোকা-খুকি, পাগল-পাগলি, বামন-বামনি, ভেড়া-ভেড়ী, মোরগ-মুরগি, বালক-বালিকা, দেওর-ননদ, ইত্যাদি। পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন মূলত পুরুষবাচক শব্দের শেষে স্ত্রীবাচক প্রত্যয় যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। অর্থাৎ, পুরুষবাচক শব্দের শেষে একটি অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। এই স্ত্রীবাচক প্রত্যয় ২ প্রকার- বাংলা স্ত্রী বাচক প্রত্যয় ও সংস্কৃত স্ত্রী বাচক প্রত্যয়। বাংলা স্ত্রী বাচক প্রত্যয়গুলো বাংলা শব্দের সঙ্গে আর সংস্কৃত স্ত্রী বাচক প্রত্যয়গুলো সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়। শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হওয়া ছাড়াও আরো কিছু বিশেষ নিয়মে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। নিচে বাংলা ও সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। বাংলা শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বাংলা স্ত্রী প্রত্যয় যোগে পুরুষ হতে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন : ১. ঈ-প্রত্যয় : বেঙ্গম-বেঙ্গমী, ভাগনা/ভাগনে- ভাগনী ২. নী-প্রত্যয় : কামার-কামারনী, জেলে-জেলেনী, কুমার-কুমারনী, ধোপা-ধোপানী, মজুর-মজুরনী পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে নী-প্রত্যয় যোগ হলে আগের ‘ঈ’, ‘ই’ হয়। যেমন- ভিখারী- ভিখারিনী ৩. আনী-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকুরানী, নাপিত-নাপিতানী, মেথর-মেথরানী, চাকর-চাকরানী ৪. ইনী-প্রত্যয় : কাঙাল-কাঙালিনী, গোয়ালা- গোয়ালিনী, বাঘ-বাঘিনী ৫. উন-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকরুন ৬. আইন-প্রত্যয় : (এরকম আরো নতুন নতুন প্রত্যয়ের প্রয়োগ দেখা যায়) ঠাকুর-ঠাকুরাইন নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ : কতগুলো শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। অর্থাৎ, এগুলো সর্বদাই স্ত্রীবাচক, এগুলোর কোন পুরুষবাচক শব্দই নেই। যেমন- সতীন, সৎমা, এয়ো, দাই, সধবা, ইত্যাদি। শব্দের আগে পৃথক শব্দ যোগ করে : কতগুলো শব্দের আগে পুরুষবাচক শব্দ গঠনের জন্য নর, মদ্দা, ইত্যাদি ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠনের জন্য স্ত্রী, মাদী, মাদা, ইত্যাদি শব্দ যোগ করা হয়। যেমন- মর/ মদ্দা/ হুলো বিড়াল- মেনি বিড়াল, মদ্দা হাঁস- মাদী হাঁস, মদ্দা ঘোড়া- মাদী ঘোড়া, পুরুষলোক-মেয়েলোক, বেটাছেলে- মেয়েছেলে, পুরুষ কয়েদী- স্ত্রী/ মেয়ে কয়েদী, এঁড়ে বাছুর-বকনা বাছুর, বলদ গরু- গাই গরু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগে : কিছু কিছু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- কবি- মহিলা কবি, ডাক্তার- মহিলা ডাক্তার, সভ্য- মহিলা সভ্য, কর্মী- মহিলা কর্মী, শিল্পী- মহিলা শিল্পী/ নারী শিল্পী, সৈন্য- নারী সৈন্য/ মহিলা সৈন্য, পুলিশ- মহিলা পুলিশ শব্দের শেষে পৃথক শব্দ যোগ করে : শব্দের শেষে পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করেও পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ তৈরি করা যায়। যেমন- বোন-পো- বোন-ঝি, ঠাকুর-পো- ঠাকুর-ঝি, ঠাকুর দাদা/ ঠাকুরদা- ঠাকুরমা, গয়লা- গয়লা-বউ, জেলে- জেলে-বউ ভিন্ন শব্দ প্রয়োগে : দুটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দের মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী বাচক বোঝানো যেতে পারে। যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, কর্তা-গিন্নী, ছেলে-মেয়ে, সাহেব- বিবি, জামাই-মেয়ে, বর-কনে, দুলহা-দুলাইন/ দুলহিন, বেয়াই-বেয়াইন, তাঐ-মাঐ, বাদশা-বেগম, শুক-সারী সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয় যোগে পুরুষ হতে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন : ১. আ-প্রত্যয় : মৃত-মৃতা, বিবাহিত-বিবাহিতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রিয়-প্রিয়া, প্রথম-প্রথমা, চতুর-চতুরা, চপল-চপলা, নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা, অজ-অজা, কোকিল-কোকিলা, শিষ্য-শিষ্যা, ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া, শূদ্র-শূদ্রা ২. ঈ-প্রত্যয় : নিশাচর-নিশাচরী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, সুন্দর-সুন্দরী, চতুর্দশ-চতুর্দশী, ষোড়শ-ষোড়শী, সিংহ-সিংহী, ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী, মানব-মানবী, বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী, কুমার-কুমারী, ময়ূর-ময়ূরী

প্রকৃতি ও প্রত্যয় (পর্ব ৩ ও শেষ পর্ব): তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তদ্ধিত প্রত্যয় ৩ প্রকার। যেমন- বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়, বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় ও তৎসম বা সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়। বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন আ চোর+আ = চোরা কেষ্ট+আ = কেষ্টা ডিঙি+আ = ডিঙা বাঘ+আ = বাঘা হাত+আ = হাতা কাল+আ = কালা জল+আ = জলা গোদ+আ = গোদা রোগ+আ = রোগা বড়+আই = বড়াই চড়া+আই = চড়াই কানু+আই = কানাই নিম+আই = নিমাই বোন+আই = বোনাই ননদ+আই = নন্দাই জেঠা+আই = জেঠাই মিঠা+আই = মিঠাই ঢাকা+আই = ঢাকাই পাবনা+আই = পাবনাই চোর+আই = চোরাই মোগল+আই = মোগলাই আমি/আম/ আমো/মি ইতর+আমি = ইতরামি পাগল+আমি = পাগলামি চোর+আমি = চোরামি বাঁদর+আমি = বাঁদরামি ফাজিল+আমো = ফাজলামো ঠক+আমো = ঠকামো ঘর+আমি = ঘরামি জেঠা+মি = জেঠামি ছেলে+মি = ছেলেমি ই/ঈ বাহাদুর+ই = বাহাদুরি উমেদার+ই = উমেদারি ডাক্তার+ঈ = ডাক্তারী মোক্তার+ঈ = মোক্তারী পোদ্দার+ঈ = পোদ্দারী ব্যাপার+ঈ = ব্যাপারী চাষ+ঈ = চাষী জমিদার+ঈ = জমিদারী দোকান+ঈ = দোকানী ভাগলপুর+ঈ = ভাগলপুরী মাদ্রাজ+ঈ = মাদ্রাজী রেশম+ঈ = রেশমী সরকার+ঈ = সরকারী ইয়া ˃ এ সেকাল+এ = সেকেলে একাল+এ = একেলে ভাদর+ইয়া = ভাদরিয়া ˃ ভাদুরে পাথর+ইয়া = পাথুরিয়া ˃ পাথুরে মাটি+ইয়া = মেটে বালি+ইয়া = বেলে জাল+ইয়া = জালিয়া ˃ জেলে মোট+ইয়া = মুটে খুন+ইয়া = খুনিয়া ˃ খুনে না+ইয়া = নাইয়া ˃ নেয়ে দেমাক+এ = দেমাকে টনটন+এ = টনটনে কনকন+এ = কনকনে গনগন+এ = গনগনে চকচক+এ = চকচকে উয়া ˃ ও জ্বর+উয়া = জ্বরুয়া ˃ জ্বরো বাত+উয়া = বাতুয়া ˃ বেতো টাক+উয়া = টাকুয়া ˃ টেকো খড়+ও = খড়ো ধান+উয়া = ধেনো মাঠ+উয়া = মেঠো গাঁ+উয়া = গাঁইয়া ˃ গেঁয়ো মাছ+উয়া = মাছুয়া ˃ মেছো দাঁত+উয়া = দেঁতো ছাঁদ+উয়া = ছেঁদো তেল+উয়া = তেলো ˃ তেলা কুঁজ+উয়া = কুঁজো উ ঢাল+উ = ঢালু কল+উ = কলু উক লাজ+উক = লাজুক মিশ+উক = মিশুক মিথ্যা+উক = মিথ্যুক আরি/আরী/ আরু ভিখ+আরী = ভিখারী শাঁখ+আরী = শাঁখারী বোমা+আরু = বোমারু আলি/আলো/ আল˃এল দাঁত+আল = দাঁতাল লাঠি+আল = লাঠিয়াল ˃ লেঠেল তেজ+আল = তেজাল ধার+আল = ধারাল শাঁস+আল = শাঁসাল জমক+আল = জমকালো দুধ+আল = দুধাল ˃ দুধেল হিম+আল = হিমাল ˃ হিমেল চতুর+আলি = চতুরালি ঘটক+আলি = ঘটকালি সিঁদ+আল˃এল = সিঁদেল গাঁজা+আল˃এল = গেঁজেল উরিয়া˃উড়িয়া/ উড়ে/রে হাট+উরিয়া = হাটুরিয়া ˃ হাটুরে সাপ+উড়িয়া = সাপুড়িয়া ˃ সাপুড়ে কাঠ+উরিয়া = কাঠুরিয়া ˃ কাঠুরে উড় লেজ+উড় = লেজুড় উয়া/ওয়া˃ও ঘর+ওয়া = ঘরোয়া জল+উয়া = জলুয়া ˃ জলো আটিয়া/টে তামা+আটিয়া = তামাটিয়া ˃ তামাটে ঝগড়া+আটিয়া = ঝগড়াটে ভাড়া+আটিয়া = ভাড়াটে রোগা+আটিয়া = রোগাটে অট˃ট ভরা+ট = ভরাট জমা+ট = জমাট লা মেঘ+লা = মেঘলা এক+লা = একলা আধ+লা = আধলা সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন বিশেষ নিয়ম মূল যুক্ত হয় ইত কুসুম+ইত = কুসুমিত তরঙ্গ+ইত = তরঙ্গিত কণ্টক+ইত = কণ্টকিত ইমন ইমা নীল+ইমন = নীলিমা মহৎ+ইমন = মহিমা ইল পঙ্ক+ইল = পঙ্কিল ঊর্মি+ইল = ঊর্মিল ফেন+ইল = ফেনিল ইষ্ঠ গুরু+ইষ্ঠ = গরিষ্ঠ লঘু+ইষ্ঠ = লঘিষ্ঠ ইন/ঈ/ইনী জ্ঞান+ইন = জ্ঞানিন সুখ+ইন = সুখিন গুণ+ইন = গুণিন মান+ইন = মানিন জ্ঞান+ইনী = জ্ঞানিনী গুণ+ইনী = গুণিনী জ্ঞান+ইন(ঈ)= জ্ঞানী গুণ+ইন(ঈ)= গুণী তা/ত্ব শত্রু+তা = শত্রুতা বন্ধু+তা = বন্ধুতা বন্ধু+ত্ব = বন্ধুত্ব গুরু+ত্ব = গুরুত্ব ঘন+ত্ব = ঘনত্ব মহৎ+ত্ব = মহত্ত্ব তর/তম মধুর+তর = মধুরতর প্রিয়+তর = প্রিয়তর প্রিয়+তম = প্রিয়তম নীন ঈন(ন ইৎ) সর্বজন+নীন = সর্বজনীন কুল+নীন = কুলীন নব+নীন = নবীন নীয় ঈয়(ন ইৎ) জল+নীয় = জলীয় বায়ু+নীয় = বায়বীয় বর্ষ+নীয় = বর্ষীয় পর+নীয় = পরকীয় স্ব+নীয় = স্বকীয় রাজা+নীয় = রাজকীয় বতুপ/মতুপ বান/মান গুণ+বতুপ = গুণবান দয়া+বতুপ = দয়াবান শ্রী+মতুপ = শ্রীমান বুদ্ধি+মতুপ = বুদ্ধিমান বিন বী মেধা+বিন = মেধাবী মায়া+বিন = মায়াবী তেজঃ+বিন = তেজস্বী যশঃ+বিন = যশস্বী র মধু+র = মধুর মুখ+র = মুখর ল শীত+ল = শীতল বৎস+ল = বৎসল ষ্ণ(অ) মনু+ষ্ণ = মানব যদু+ষ্ণ = যাদব শিব+ষ্ণ = শৈব জিন+ষ্ণ = জৈন শক্তি+ষ্ণ = শাক্ত বুদ্ধ+ষ্ণ = বৌদ্ধ বিষ্ণু+ষ্ণ = বৈষ্ণব শিশু+ষ্ণ = শৈশব গুরু+ষ্ণ = গৌরব কিশোর+ষ্ণ = কৈশোর পৃথিবী+ষ্ণ = পার্থিব দেব+ষ্ণ = দৈব চিত্র+ষ্ণ = চৈত্র নিপাতনে সিদ্ধ : সূর্য+ষ্ণ = সৌর (সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সুর+ষ্ণ = সৌর) ষ্ণ্য(য) মনুঃ+ষ্ণ্য = মনুষ্য জমদগ্নি+ষ্ণ্য = জামদগ্ন্য সুন্দর+ষ্ণ্য = সৌন্দর্য শূর+ষ্ণ্য = শৌর্য ধীর+ষ্ণ্য = ধৈর্য কুমার+ষ্ণ্য = কৌমার্য পর্বত+ষ্ণ্য = পার্বত্য বেদ+ষ্ণ্য = বৈদ্য ষ্ণি(ই) রাবণ+ষ্ণি = রাবণি দশরথ+ষ্ণ্যি = দাশরথি ষ্ণিক(ইক) সাহিত্য+ষ্ণিক = সাহিত্যিক বেদ+ষ্ণিক = বৈদিক বিজ্ঞান+ষ্ণিক = বৈজ্ঞানিক সমুদ্র+ষ্ণিক = সামুদ্রিক নগর+ষ্ণিক = নাগরিক মাস+ষ্ণিক = মাসিক ধর্ম+ষ্ণিক = ধার্মিক সমর+ষ্ণিক = সামরিক সমাজ+ষ্ণিক = সামাজিক হেমন্ত+ষ্ণিক = হৈমন্তিক অকস্মাৎ+ষ্ণিক = আকস্মিক ষ্ণেয়(এয়) ভগিনী+ষ্ণেয় = ভগিনেয় অগ্নি+ষ্ণেয় = আগ্নেয় বিমাতৃ+ষ্ণেয় = বৈমাত্রেয় বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন হিন্দি ওয়ালা˃আলা বাড়ি+ওয়ালা = বাড়িওয়ালা দিল্লি+ওয়ালা = দিল্লিওয়ালা মাছ+ওয়ালা = মাছওয়ালা দুধ+ওয়ালা = দুধওয়ালা ওয়ান˃আন গাড়ি+ওয়ান = গাড়োয়ান দার+ওয়ান = দারোয়ান আনা˃আনি মুনশী+আনা = মুনশীআনা/মুন্সিয়ানা বিবি+আনা = বিবিআনা/বিবিয়ানা ছেলে+পনা = ছেলেপনা গিন্নী+পনা = গিন্নীপনা বেহায়া+পনা = বেহায়াপনা সা˃সে পানি+সা = পানিসা ˃ পানসে এক+সা = একসা কাল+সা = কালসা ˃ কালসে ফারসি গর˃কর কারি+গর = কারিগর বাজি+গর = বাজিগর ˃ বাজিকর সওদা+গর = সওদাগর দার খবর+দার = খবরদার তাঁবে+দার = তাঁবেদার বুটি+দার = বুটিদার দেনা+দার = দেনাদার চৌকি+দার = চৌকিদার পাহারা+দার = পাহারাদার ধোঁকা+বাজ = ধোঁকাবাজ গলা+বাজ = গলাবাজ+ই = গলাবাজি বন্দী/বন্দ জবান+বন্দী = জবানবন্দী সারি+বন্দী = সারিবন্দী কোমর+বন্দ = কোমরবন্দ সই (মত অর্থে) জুত+সই = জুতসই মানান+সই = মানানসই টেক+সই = টেকসই দ্রষ্টব্য : টিপসই ও নামসই- শব্দ দু’টোর ‘সই’ প্রত্যয় নয়, স্বাধীন শব্দ; সহি˃সই (স্বাক্ষর)।

প্রকৃতি ও প্রত্যয় (পর্ব ২): কৃৎ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত কৃৎ প্রত্যয় ২ প্রকার- বাংলা কৃৎ প্রত্যয় ও সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়। বাংলা কৃৎ প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন বিশেষ নিয়ম শূণ্য প্রত্যয় (প্রত্যয় ছাড়া কোনো ক্রিয়া প্রকৃতি বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হলে সেখানে শূণ্য প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে বলে ধরা হয়।) জিত্ হার্ ধরপাকড় (ধর ও পাকড় একত্রে ব্যবহৃত হয়েছে) অ √ধর+অ= ধর √মার+অ = মার বি:দ্র: আধুনিক বাংলায় সর্বত্র অ-প্রত্যয় উচ্চারিত হয় না। যেমন- √হার+অ = হার্ দ্বিত্ব প্রয়োগ (আসন্ন সম্ভাব্যতা অর্থে) : √কাঁদ+অ = কাঁদকাঁদ √মর+অ = মরমর অন (ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়) √কাঁদ+অন = কাঁদন √নাচ+অন = নাচন √বাড়+অন= বাড়ন √ঝুল+অন = ঝুলন √দুল+অন = দোলন ধাতুর শেষে ‘আ-কার’ থাকলে ‘ওন’ হয়। যেমন- √খা+অন = খাওন √ছা+অন = ছাওন √দে+অন = দেওন অনা √দুল+অনা = দোলনা √খেল+অনা = খেলনা অনি/উনি √চির+অনি = চিরনি ˃ চিরুনি √বাঁধ+অনি = বাঁধুনি √আঁট+অনি = আঁটুনি অন্ত (বিশেষণ গঠনে ব্যবহৃত হয়) √উড়+অন্ত = উড়ন্ত √ডুব+অন্ত = ডুবন্ত অক √মুড়+অক = মোড়ক √ঝল+অক = ঝলক আ √পড়+আ = পড়া √রাঁধ+আ = রাঁধা √কেন+আ = কেনা? √কাচ+আ = কাচা √ফুট+আ = ফোটা? আই (ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়) √চড়+আই = চড়াই √সিল+আই = সিলাই আও (ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়) √পাকড়+আও = পাকড়াও √চ+আও = চড়াও আন(আনো) (প্রযোজক ধাতু ও কর্মবাচ্যের ধাতুর পরে বসে) √জানা+আন = জানানো √শোনা+আন = শোনানো √ভাসা+আন = ভাসানো √চাল+আন = চালানো/চালান √মান+আন = মানান/মানানো আনি √জান+আনি = জানানি √শুন+আনি = শুনানি √উড়+আনি = উড়ানি (√উড়+উনি = উড়ুনি) আরি/আরী/রি/উরি √ডুব+আরি/উরি = ডুবুরি √ধুন+আরী = ধুনারী √পূজা+আরী = পূজারী আল √মাত+আল = মাতাল √মিশ+আল = মিশাল ই √ভাজ+ই = ভাজি √বেড়+ই = বেড়ি ইয়া/ইয়ে √মর+ইয়া = মরিয়া √বল+ইয়ে = বলিয়ে √নাচ+ইয়ে = নাচিয়ে √গা+ইয়ে = গাইয়ে √লিখ+ইয়ে = লিখিয়ে √বাজ+ইয়ে = বাজিয়ে √ক+ইয়ে = কইয়ে উ √ডাক+উ = ডাকু √ঝাড়+উ = ঝাড়ু দ্বিত্বপ্রয়োগ : √উড়+উ = উড়ুউড়ু উয়া/ও √পড়+উয়া = পড়ুয়া √উড়+উয়া = উড়ুয়া ˃ উড়ো/ √উড়+ও = উড়ো তা (বিশেষণ গঠনে ব্যবহৃত হয়) √ফির+তা = ফিরতা ˃ ফেরতা √পড়+তা = পড়তা √বহ+তা = বহতা তি (বিশেষণ গঠনে ব্যবহৃত হয়) √ঘাট+তি = ঘাটতি √বাড়+তি = বাড়তি √কাট+তি = কাটতি √উঠ+তি = উঠতি না (বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়) √কাঁদ+না = কাঁদনা ˃ কান্না √রাঁধ+না = রাঁধনা ˃ রান্না √ঝর+না = ঝরনা সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন বিশেষ নিয়ম মূল ইৎ/লোপ থাকে অনট ট অন √নী+অনট ˃ নে+অন* = নয়ন √শ্রু+অনট = শ্রবণ* √স্থা+অনট = স্থান √ভোজ+অনট = ভোজন √নৃত+অন = নর্তন* √দৃশ+অন = দর্শন* √নন্দি+অনট = নন্দন ক্ত ক ত √জ্ঞা+ক্ত = জ্ঞাত √খ্যা+ক্ত = খ্যাত ক) কিছু কিছু ধাতুর শেষে ‘ই-কার’ যুক্ত হয়। যেমন- √পঠ+ক্ত = পঠিত √লিখ+ক্ত = লিখিত √বিদ+ক্ত = বিদিত √বেষ্ট+ক্ত = বেষ্টিত √চল+ক্ত = চলিত √পত+ক্ত = পতিত √লুণ্ঠ+ক্ত = লুণ্ঠিত √ক্ষুধ+ক্ত = ক্ষুধিত √শিক্ষ+ক্ত = শিক্ষিত খ) ধাতুর শেষে ‘চ/জ’ থাকলে তা ‘ক’ হয়। যেমন- √মুচ+ক্ত = মুক্ত √ভুজ+ক্ত = ভুক্ত গ) নিপাতনে সিদ্ধ : √গম+ক্ত = গত √গ্রন্থ+ক্ত = গ্রথিত √চুর+ক্ত = চূর্ণ √ছিদ+ক্ত = ছিন্ন √জন+ক্ত = জাত √হন+ক্ত = হত √দা+ক্ত = দত্ত √দহ+ক্ত = দগ্ধ √মুহ+ক্ত = মুগ্ধ √যুধ+ক্ত = যুদ্ধ √লভ+ক্ত = লব্ধ √বচ+ক্ত = উক্ত √বপ+ক্ত = উপ্ত √স্বপ+ক্ত = সুপ্ত √সৃজ+ক্ত = সৃষ্ট ক্তি ক তি √গম+ক্তি = গতি ক) কিছু ধাতুর শেষের ব্যঞ্জন লোপ পায়। যেমন- √মন+ক্তি = মতি √রম+ক্তি = রতি খ) কিছু ধাতুর প্রথম ব্যঞ্জনে আ-কার যুক্ত হয়। যেমন- √শ্রম+ক্তি = শ্রান্তি √শম+ক্তি = শান্তি গ) ধাতুর শেষে ‘চ/জ’ থাকলে তা ‘ক’ হয়। যেমন- √বচ+ক্তি = উক্তি √মুচ+ক্তি = মুক্তি √ভজ+ক্তি = ভক্তি ঘ) নিপাতনে সিদ্ধ : √বচ+ক্তি = উক্তি √গৈ+ক্তি = গীতি √সিধ+ক্তি = সিদ্ধি √বুধ+ক্তি = বুদ্ধি √শক+ক্তি = শক্তি তব্য √কৃ+তব্য = কর্তব্য* √দা+তব্য = দাতব্য √পঠ+তব্য = পঠিতব্য অনীয় √কৃ+অনীয় = করণীয়* √রক্ষ+অনীয় = রক্ষণীয় √দৃশ+অনীয় = দর্শনীয়* √পান+অনীয় = পানীয় √শ্রু+অনীয় = শ্রবণীয় √পালন+অনীয় = পালনীয় তৃচ চ তৃ √দা+তৃচ = দাতা √মা+তৃচ = মাতা √ক্রী+তৃচ = ক্রেতা √যুধ+তৃচ = যোদ্ধা ণক ণ অক √পঠ+ণক = পাঠক° √ণী+ণক ˃ নৈ+অক = নায়ক° √গৈ+ণক = গায়ক √লিখ+ণক = লেখক* ক) প্রযোজক ধাতুর শেষে ‘ই-কার’ থাকলে লোপ পায়- √পূঁজি+ণক = পূজক √জনি+ণক = জনক √চালি+ণক = চালক √স্তাবি+ণক = স্তাবক খ) ধাতুর শেষে ‘আ-কার’ থাকলে অতিরিক্ত ‘য়’ যুক্ত হয়। যেমন- √দা+ণক = দায়ক বি+√ধা+ণক = বিধায়ক ঘ্যণ ঘ, ণ য-ফলা √কৃ+ঘ্যণ = কার্য্য ˃ কার্য √ধৃ+ঘ্যণ = ধার্য √বাচ+ঘ্যণ = বাচ্য √ভোজ+ঘ্যণ = ভোজ্য √যোগ+ঘ্যণ = যোগ্য √হাস+ঘ্যণ = হাস্য পরি+√হার+ঘ্যণ = পরিহার্য য য ˃ য় √দা+য ˃ √দে+য = দেয় √হা+য ˃ √হে+য = হেয় বি+√ধা+য = বিধেয় অ+√জি+য = অজেয় পরি+√মা+য = পরিমেয় অনু+√মা+য = অনুমেয় ক)শেষে ব্যঞ্জন থাকলে য-ফলা হয়। যেমন- √গম+য = গম্য √লভ+য = লভ্য ণিন ণ ইন˃ঈ-কার √গ্রহ+ণিন = গ্রাহী √পা+ণিন = পায়ী √কৃ+ণিন = কারী √দ্রোহ+ণিন = দ্রোহী সত্য+√বাদ+ণিন = সত্যবাদী √ভাব+ণিন = ভাবী √স্থা+ণিন = স্থায়ী √গম+ণিন = গামী ‘হন’ ধাতুর ক্ষেত্রে- √হন+ণিন = ঘাতী : আত্ম+√হন+ণিন = আত্মঘাতী ইন ইন˃ঈ-কার √শ্রম+ইন = শ্রমী অল ল অ √জি+অল = জয় √ক্ষি+অল = ক্ষয় √নিচ+অল = নিচয় √বিন+অল = বিনয় √বিল+অল = বিলয় √হন+অল = বধ ইষ্ণু √চল+ইষ্ণু = চলিষ্ণু √ক্ষয়+ইষ্ণু = ক্ষয়িষ্ণু √বর্ধ+ইষ্ণু = বর্ধিষ্ণু বর √ঈশ+বর = ঈশ্বর √ভাস+বর = ভাস্বর √নশ+বর = নশ্বর √স্থা+বর = স্থাবর র √হিন+স+র = হিংস্র √নম+র = নম্র উক/ঊক √ভু+উক ˃ ভৌ+উক = ভাবুক √জাগৃ+ঊক = জাগরূক শানচ শ, চ আন/মান √দীপ+শানচ = দীপ্যমান √চল+শানচ = চলমান √বৃধ+শানচ = বর্ধমান ঘঞ ঘ, ঞ অ √বস+ঘঞ = বাস √যুজ+ঘঞ = যোগ √ক্রুধ+ঘঞ = ক্রোধ √খদ+ঘঞ = খেদ √ভিদ+ঘঞ = ভেদ √ত্যজ+ঘঞ = ত্যাগ √পচ+ঘঞ = পাক √শুচ+ঘঞ = শোক * গুণ হয়েছে। ° বৃদ্ধি হয়েছে।

প্রকৃতি-প্রত্যয় (পর্ব ১): প্রাতিপদিক ক্রিয়ামূল বা ধাতু প্রকৃতি প্রত্যয় নাম প্রকৃতি ক্রিয়া প্রকৃতি কৃৎ প্রত্যয় তদ্ধিত প্রত্যয় কৃদন্ত পদ তদ্ধিতান্ত পদ গুণ বৃদ্ধি ইৎ কৃৎ প্রত্যয় বাংলা কৃৎ প্রত্যয় সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন [বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের কিছু বিশেষ কৌশল আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সমাস, সন্ধি, উপসর্গ যোগে ও প্রত্যয় সাধিত হয়ে শব্দ গঠন।] [মূলত শব্দমূল বা প্রকৃতির সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে। এটি নতুন শব্দ গঠনের অন্যতম কৌশল। অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যয়সাধিত শব্দের প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠনের প্রক্রিয়া সন্ধির সঙ্গে মিলে যায়।] [প্রত্যয়সাধিত হয়ে সবসময় নামপদ তৈরি হয়।] প্রাতিপদিক : বিভক্তিহীন নামশব্দকে প্রাতিপদিক বলে। নামপদের যেই অংশকে আর বিশ্লেষণ করা বা ভাঙা যায় না, তাকেই প্রাতিপদিক বলে। যেমন- ‘হাত’। এই নাম শব্দের সঙ্গে কোনো বিভক্তি নেই। এর সঙ্গে ‘আ’ যুক্ত করে নতুন শব্দ ‘হাতা’ তৈরি করা যেতে পারে। এটিও একটি নাম শব্দ। আবার এর সঙ্গে ‘অল’ শব্দাংশ যুক্ত করে ‘হাতল’ আরেকটি নামশব্দ তৈরি করা যেতে পারে। ক্রিয়ামূল বা ধাতু : ক্রিয়াপদের মূলশব্দকে বলা হয় ক্রিয়ামূল বা ধাতু। যেমন- ‘পড়্’। এটি নিজেই একটি ক্রিয়াপদ (বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ)। আবার এর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে কাল ও পুরুষভেদে ক্রিয়াটির রূপ পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন- পড়ো, পড়ুন, পড়বে, পড়ছি, পড়ছিলাম, পড়েছি, ইত্যাদি। বাংলা ব্যাকরণে ধাতু চিহ্নিত করার জন্য একটি আলাদা ব্যাকরণিক চিহ্ন (√) ব্যবহৃত হয়। একে বলা হয় ধাতু চিহ্ন। অর্থাৎ √পড় মানে ‘পড়’ ধাতু। প্রকৃতি : শব্দমূল বা শব্দের যে অংশকে আর ভাঙা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে।প্রত্যয় যুক্তপ্রতিটি মৌলিক শব্দ তথা প্রত্যয় যুক্তপ্রতিটি প্রাতিপদিক ও ধাতুই একেকটি প্রকৃতি।কিন্তু মৌলিক শব্দকে প্রকৃতি বলা যায় না। যখনই সেই শব্দের সঙ্গে বা অতিরিক্ত শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তখনই কেবল নতুন সৃষ্ট শব্দটির মূল শব্দটিকে প্রকৃতি বলা যায়। অর্থাৎ, প্রত্যয় সাধিত শব্দের মূলশব্দকে বলা হয় প্রকৃতি। কিন্তু শব্দটি থেকে প্রত্যয় সরিয়ে ফেললে, মূলশব্দটিকে তখন আর প্রকৃতি বলা যাবে না। যেমন- লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলোর মূলশব্দ যথাক্রমে লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত। এখানে, লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলো প্রত্যয়সাধিত (মূলশব্দের সঙ্গে অতিরিক্ত শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে।) আর এই শব্দগুলোর মূলশব্দ লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত। অর্থাৎ লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত- এগুলো লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলোর প্রকৃতি। কিন্তু আলাদাভাবে উল্লেখ করলে এগুলো আর প্রকৃতি নয়, এগুলো তখন স্রেফ কতোগুলো মৌলিক শব্দ। প্রত্যয় :মূলশব্দ বা মৌলিক শব্দের সঙ্গে যে অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন নামপদ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে।অর্থাৎ, প্রাতিপদিক ও ধাতুর সঙ্গে যেই শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদেরকেই প্রত্যয় বলে। উপরের উদাহরণে, লাজুক শব্দের প্রকৃতি ‘লাজ’-এর সঙ্গে প্রত্যয় ‘উক’ যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে ‘লাজুক’ শব্দটি। এমনিভাবে প্রকৃতি + প্রত্যয় = প্রত্যয়সাধিত শব্দ বড় + আই = বড়াই ঘর + আমি = ঘরামি পড় + উয়া = পড়ুয়া নাচ + উনে = নাচুনে জিত + আ = জিতা প্রকৃতি ২ প্রকার- নাম প্রকৃতি : প্রাতিপদিকের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকটিকে নাম প্রকৃতি বলে। যেমন, উপরের লাজ, বড়, ঘর- এগুলো নাম প্রকৃতি। ক্রিয়া প্রকৃতি : ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুটিকে ক্রিয়া প্রকৃতি বলে। যেমন, উপরের √পড়, √নাচ, √জিত- এগুলো ক্রিয়া প্রকৃতি। প্রত্যয় ২ প্রকার- কৃৎ প্রত্যয় : ক্রিয়া প্রকৃতির সঙ্গে যেই প্রত্যয় যুক্ত হয়, তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন, উপরের উদাহরণে, ‘√পড়’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘উয়া’, ‘√নাচ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘উনে’ এবং ‘√জিত’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘আ’ কৃৎ প্রত্যয়। তদ্ধিত প্রত্যয় : নাম প্রকৃতির সঙ্গে যেই প্রত্যয় যুক্ত হয়, তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন, উপরের উদাহরণে, ‘লাজ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘উক’, ‘বড়’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘আই’, ‘ঘর’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘আমি’ তদ্ধিত প্রত্যয়। কৃদন্ত পদ : কৃৎ প্রত্যয় সাধিত পদটিকে বলা হয় কৃদন্ত পদ। অর্থাৎ যে নাম পদ (বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ) ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যোগ হয়ে গঠিত, তাকে কৃদন্ত পদ বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ক্রিয়ামূল বা ধাতু থেকে গঠিত বিশেষ্য বা বিশেষণ পদকেই কৃদন্ত পদ বলে। যেমন, উপরের পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা। তদ্ধিতান্ত পদ : তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত শব্দকে তদ্ধিতান্ত পদ বলে। যেমন, উপরের লাজুক, বড়াই, ঘরামি। অনেক সময় কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতুর আদিস্বর অনেক সময় পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন যথেচ্ছভাবে হয় না, কিছু নিয়ম অনুসরণ করে হয়। কৃৎ প্রত্যয় ব্যবহৃত হওয়ার সময় পরিবর্তন হওয়ার নিয়ম ২টি- গুণ ও বৃদ্ধি। গুণ : ই/ঈ-স্থলে এ √চিন+আ= চেনা, √নী+আ= নেওয়া উ/ঊ-স্থলে ও √ধু+আ= ধোয়া ঋ-স্থলে অর √কৃ+তা = করতা ˃ ক্রেতা বৃদ্ধি: অ-স্থলে আ √পচ+ণক(অক) = পাচক ই/ঈ-স্থলে ঐ √শিশু+ষ্ণ = শৈশব উ/ঊ-স্থলে ঔ √যুব+অন= যৌবন ঋ-স্থলে আর √কৃ+ঘ্যণ(য-ফলা)= কার্য ইৎ : প্রত্যয় প্রাতিপদিক বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় প্রায়ই সম্পূর্ণ বা অখণ্ড অবস্থায় যুক্ত হয় না; এর কিছু অংশ লোপ পায়। যুক্ত হওয়ার সময় প্রত্যয়ের কিছু অংশ লোপ পাওয়াকে বলা হয় ইৎ। সাধারণত বাংলা প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার সময় ইৎ হয় না বা লোপ পায় না। অন্যদিকে অধিকাংশ সংস্কৃত প্রত্যয়-ই ইৎ হয়ে বা আংশিক লোপ পেয়ে যুক্ত হয় বা ব্যবহৃত হয়। উচ্চারণ বা ব্যবহার সহজ করার জন্যই এই লোপ পাওয়ার ঘটনা বা ইৎ ঘটে। শব্দের মতো সংস্কৃত প্রত্যয়ও বাংলা ভাষায় পরিবর্তিত হয়ে ব্যবহৃত হয়। আর এই পরিবর্তনের জন্য সংস্কৃত প্রত্যয়ের লোপ পাওয়া-ই ইৎ। যেমন, √স্থা+অনট = √স্থা+অন(ট ইৎ বা লোপ) = স্থান

পদাশ্রিত নির্দেশক: পদাশ্রিত নির্দেশক একবচনে ব্যবহৃত পদাশ্রিত নির্দেশক বহুবচনে ব্যবহৃত পদাশ্রিত নির্দেশক বিশেষ প্রয়োগ ; পরিমাণের স্বল্পতা বোঝাতে বিভিন্ন পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার টি,টা গোটা খানা, খানি টাক, টুকু, টুক, টো বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত নির্দেশক ; কেতা, তা, পাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন পদাশ্রিত নির্দেশক : বাংলা ভাষায় কিছু কিছু প্রত্যয় বা শব্দাংশ শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে পদটির নির্দিষ্টতা কিংবা অনির্দিষ্টতা জ্ঞাপন করে। এগুলোকে পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। অর্থাৎ, যে সব প্রত্যয় বা শব্দাংশ পদের নির্দিষ্টতা কিংবা অনির্দিষ্টতা নির্দেশ বা প্রকাশ করে, তাদেরকেই পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। এরা সাধারণত পদের শেষে যুক্তভাবে বসে। তবে অনেক পদাশ্রিত নির্দেশক পদের আগেও বসে। [পদাশ্রিত নির্দেশক ইংরেজি Article (a(n), the) এর মতো কাজ করে।] বচনভেদে বিভিন্ন পদাশ্রিত নির্দেশক ব্যবহৃত হয়। যেমন- একবচনে ব্যবহৃত পদাশ্রিত নির্দেশক : টি, টা, খানা, খানি, গাছা, গাছি, ইত্যাদি। যেমন- টাকাটা, ছেলেটি, কাপড়খানা, বইখানা, লাঠিগাছা, চুড়িগাছি, ইত্যাদি। বহুবচনে ব্যবহৃত পদাশ্রিত নির্দেশক : গুলি, গুলা, গুলো, গুলিন, ইত্যাদি। যেমন- মানুষগুলি, লোকগুলো, আমগুলো, পটলগুলিন, ইত্যাদি। বিশেষ প্রয়োগ ; পরিমাণের স্বল্পতা বোঝাতে : কোনো সংখ্যা বা পরিমাণের স্বল্পতা বোঝাতে ব্যবহৃত পদাশ্রিত নির্দেশক- টে, টুক, টুকু, টুকুন, টো, গোটা, ইত্যাদি। যেমন- চারটে ভাত, দুধটুকু, দুধটুকুন, দুটো ভাত, গোটা চারেক আম, ইত্যাদি। বিভিন্ন পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার : ১. টি,টা : ক) ‘এক’-র সঙ্গে ‘টি/টা’ যুক্ত হলে তা অনির্দিষ্টতা বোঝায়। কিন্তু অন্য সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে ‘টি/টা’ যুক্ত হলে নির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন-একটিদেশ, সে যেমনেই হোক দেখতে।(যে কোন একটি দেশ, অনির্দিষ্ট) তিনটিটাকা,দশটিবছর।(নির্দিষ্ট সংখ্যক টাকা ও বছর, নির্দিষ্ট) খ) নির্দেশক সর্বনামের সঙ্গে ‘টি/টা’ যুক্ত হলে সেগুলো সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়। যেমন-এটানয়,ওটাআনো।ওইটেইআমার প্রিয় গান। গ) নিরর্থকভাবেও টি/টা ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন- সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি।ন্যাকামিটাএখন রাখ। ২. গোটা : বচনবাচক/সংখ্যাত্মক শব্দের আগে বসে। নির্দিষ্টতা কিংবা অনির্দিষ্টতা, দুই-ই বোঝাতে পারে। যেমন-গোটাদেশটাই ছারখার হয়ে গেছে। (নির্দিষ্ট) গোটাতিনেক আম দাও। (অনির্দিষ্ট) ৩. খানা, খানি : বচনবাচক/সংখ্যাত্মক শব্দের পরে বসে। নির্দিষ্টতা কিংবা অনির্দিষ্টতা, দুই-ই বোঝাতে পারে। যেমন-দু’খানাকম্বল চেয়েছিলাম। (নির্দিষ্ট) একখানাবই কিনে নিও। (অনির্দিষ্ট) ৪. টাক, টুকু, টুক, টো : নির্দিষ্টতা ও অনির্দিষ্টতা উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যেমন-পোয়াটাকদুধ দাও। (অনির্দিষ্ট) সবটুকুওষুধই খেয়ে ফেলো। (নির্দিষ্ট) ৫. বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত নির্দেশক ; কেতা, তা, পাটি : এগুলো বিশেষ অর্থে নির্দিষ্টতা জ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কেতা : এতিনকেতাজমির দাম দশ হাজার টাকা মাত্র। দশ টাকারপাঁচ কেতানোট। তা :দশ তাকাগজ দাও। পাটি : আমারএক পাটিজুতো ছিঁড়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.‘একটা কলম দাও।’- এখানে ‘একটা’ শব্দটি (ঘ-২০১০-১১)

পদ প্রকরণ (পর্ব ৩ ও শেষ পর্ব): মধ্যম পুরুষ : বাক্যের উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। অর্থাৎ, উত্তম পুরুষ যাকে উদ্দেশ্য করে বাক্যটি বলে, এবং পাশাপাশি বাক্যেও উল্লেখ করে, তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। মধ্যম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনার, আপনাদের, ইত্যাদি। নামপুরুষ : বাক্যে বক্তা অনুপস্থিত যেসব ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর উল্লেখ করেন, তাদের নামপুরুষ বলে। অর্থাৎ, বক্তার সামনে নেই এমন যা কিছুর কথা বক্তা বাক্যে বলেন, সবগুলোই নামপুরুষ। নাম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের, ইত্যাদি।] [সমস্ত বিশেষ্য পদই নামপুরুষ।] অব্যয় পদ অব্যয় শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘ন ব্যয়’, অর্থাৎ যার কোন ব্যয় নেই। যে পদের কোন ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। অর্থাৎ, যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থাকে, যার সঙ্গে কোন বিভক্তি যুক্ত হয় না এবং পুরুষ বা বচন বা লিঙ্গ ভেদে যে পদের রূপের বা চেহারারও কোন পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। অব্যয় পদ বাক্যে কোন পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে কখনো বাক্যকে আরো শ্রচতিমধুর করে, কখনো একাধিক পদ বা বাক্যাংশ বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে। বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের অব্যয়শব্দব্যবহৃত হয়- ১. বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হাঁ, না ২. তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্ত্তত। ‘এবং’ ও ‘সুতরাং’ এই দুটি অব্যয় শব্দও তৎসম, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। তবে এ দুটি অব্যয় শব্দের অর্থ বাংলা ভাষায় এসে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সংস্কৃতে ‘এবং = এমন’ আর ‘সুতরাং = অত্যন্ত, অবশ্য’ বাংলায় ‘এবং = ও’ আর ‘সুতরাং = অতএব’ ৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা অব্যয়ের প্রকারভেদ অব্যয় পদ মূলত ৪ প্রকার- ১. সমুচ্চয়ী অব্যয় : যে অব্যয় পদ একাধিক পদের বা বাক্যাংশের বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। এই সম্পর্ক সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন যে কোনটিই হতে পারে। একে সম্বন্ধবাচক অব্যয়ও বলে। সংযোজক অব্যয় : উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায়। (উচ্চপদ, সামাজিক মর্যাদা- দুটোই চায়) তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। (তাই অব্যয়টি ‘তিনি সৎ’ ও ‘সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে’ বাক্য দুটির মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে। এরকম- ও, আর, তাই, অধিকন্তু, সুতরাং, ইত্যাদি। বিয়োজক অব্যয় : আবুল কিংবা আব্দুল এই কাজ করেছে। (আবুল, আব্দুল- এদের একজন করেছে, আরেকজন করেনি। সম্পর্কটি বিয়োগাত্মক, একজন করলে অন্যজন করেনি।) মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। (‘মন্ত্রের সাধন’ আর ‘শরীর পাতন’ বাক্যাংশ দুটির একটি সত্য হবে, অন্যটি মিথ্যা হবে।) এরকম- কিংবা, বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো, ইত্যাদি। সংকোচক অব্যয় : তিনি শিক্ষিত, কিন্তু অসৎ। (এখানে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অসৎ’ দুটোই সত্য, কিন্তু শব্দগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটেনি। কারণ, বৈশিষ্ট্য দুটো একরকম নয়, বরং বিপরীতধর্মী। ফলে তিনি অসৎ বলে তিনি শিক্ষিত বাক্যাংশটির ভাবের সংকোচ ঘটেছে।) এরকম- কিন্তু, বরং, তথাপি, যদ্যপি, ইত্যাদি। ২. অনন্বয়ী অব্যয় : যে সব অব্যয় পদ নানা ভাব বা অনুভূতি প্রকাশ করে, তাদেরকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। এগুলো বাক্যের অন্য কোন পদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন- উচ্ছ্বাস প্রকাশে : মরি মরি! কী সুন্দর সকাল! স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি প্রকাশে : হ্যা, আমি যাব। না, তুমি যাবে না। সম্মতি প্রকাশে : আমি আজ নিশ্চয়ই যাব। অনুমোদন প্রকাশে : এতো করে যখন বললে, বেশ তো আমি আসবো। সমর্থন প্রকাশে : আপনি তো ঠিকই বলছেন। যন্ত্রণা প্রকাশে : উঃ! বড্ড লেগেছে। ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশে : ছি ছি, তুমি এতো খারাপ! সম্বোধন প্রকাশে : ওগো, তোরা আজ যাসনে ঘরের বাহিরে। সম্ভাবনা প্রকাশে : সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/ পাছে লোকে কিছু বলে। বাক্যালংকার হিসেবে : কত না হারানো স্মৃতি জাগে আজ মনে। : হায়রে ভাগ্য, হায়রে লজ্জা, কোথায় সভা, কোথায় সজ্জা। ৩. অনুসর্গ অব্যয় : যেসব অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির কাজ করে, এবং কারকবাচকতা প্রকাশ করে, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। অর্থাৎ, যেই অব্যয় অনুসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন- ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। (এখানে ‘দিয়ে’ তৃতীয়া বিভক্তির মতো কাজ করেছে, এবং ‘ওকে’ যে কর্ম কারক, তা নির্দেশ করেছে। এই ‘দিয়ে’ হলো অনুসর্গ অব্যয়।) [কারক ও বিভক্তি] [অনুসর্গ] ৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় : বিভিন্ন শব্দ বা প্রাণীর ডাককে অনুকরণ করে যেসব অব্যয় পদ তৈরি করা হয়েছে, তাদেরকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে। মানুষ আদিকাল থেকেই অনুকরণ প্রিয়। তারা বিভিন্ন ধরনের শব্দ, প্রাকৃতিক শব্দ, পশুপাখির ডাক, যেগুলো তারা উচ্চারণ করতে পারে না, সেগুলোও উচ্চারণ করার চেষ্টা করেছে। এবং তা করতে গিয়ে সে সকল শব্দের কাছাকাছি কিছু শব্দ তৈরি করেছে। বাংলা ভাষার এ সকল শব্দকে বলা হয় অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়। যেমন- বজ্রের ধ্বনি- কড় কড় তুমুল বৃষ্টির শব্দ- ঝম ঝম স্রোতের ধ্বনি- কল কল বাতাসের শব্দ- শন শন নূপুরের আওয়াজ- রুম ঝুম সিংহের গর্জন- গর গর ঘোড়ার ডাক- চিঁহি চিঁহি কোকিলের ডাক- কুহু কুহু চুড়ির শব্দ-টুং টাং শুধু বিভিন্ন শব্দই না, মানুষ তাদের বিভিন্ন অনুভূতিকেও শব্দের আকারে ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি প্রকাশের জন্য তারা বিভিন্ন শব্দ তৈরি করেছে। এগুলোও অনুকার অব্যয়। যেমন- ঝাঁ ঝাঁ (প্রখরতা) খাঁ খাঁ (শূণ্যতা) কচ কচ কট কট টল মল ঝল মল চক চক ছম ছম টন টন খট খট কিছু বিশেষ অব্যয় ১. অব্যয় বিশেষণ : কোন অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষণের কাজ করলে, তাকে অব্যয় বিশেষণ বলে। নাম বিশেষণ : অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। ক্রিয়া বিশেষণ : আবার যেতে হবে। বিশেষণীয় বিশেষণ : রকেট অতি দ্রচত চলে।

পদ প্রকরণ (পর্ব ২): নির্ধারক বিশেষণ : দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করে যখন একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানো হয় তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলে। যেমন- রাশি রাশি ভারা ভারাধান (সোনার তরী) লাল লালকৃষ্ণচূড়ায় গাছ ভরে আছে। নববর্ষ উপলক্ষেঘরে ঘরেসাড়া পড়ে গেছে। এতছোট ছোটউত্তর লিখলে হবে না। [নির্ধারক বিশেষণ; ভাষা অনুশীলন; সোনার তরী] [বিশেষণবাচক ‘কী’ কী-শব্দটির একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে বিশেষণ হিসেবে এর ব্যবহার। যেমন, ‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতায় : এই যে আসুন, তারপরকীখবর? নিজেই চমকে,কীনিস্পৃহ, কেমন শীতল। কীসহজে হয়ে গেল বলা। (ক্রিয়াবিশেষণের বিশেষণ/ বিশেষণের বিশেষণ)] [বিশেষণবাচক ‘কী’; ভাষা অনুশীলন; একটি ফটোগ্রাফ] [বিশেষণ সম্বন্ধ পাথরেরটুকরো আমাদেরগ্রামেরপুকুর গ্রীষ্মেরপুকুর শোকেরনদী আমারসন্তান] [বিশেষণ সম্বন্ধ; ভাষা অনুশীলন; একটি ফটোগ্রাফ] বিশেষণের অতিশায়ন (degree) বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের মধ্যে তুলনা বোঝায়, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের একরকম অতিশায়ন প্রচলিত আছে, আবার তৎসম শব্দে সংস্কৃত ভাষার অতিশায়নের নিয়মও প্রচলিত আছে। ক) বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের অতিশায়ন ১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন বোঝাতে দুইটি বিশেষ্য বা সর্বনামের মাঝে চাইতে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রায়ই প্রথম বিশেষ্যটির সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) যুক্ত হয়। যেমন- গরুরথেকেঘোড়ার দাম বেশি। বাঘেরচেয়েসিংহ বলবান। ব্যতিক্রম : কখনো কখনো প্রথম বিশেষ্যের শেষের ষষ্ঠী বিভক্তিই হতে, থেকে, চেয়ে-র কাজ করে। যেমন- এ মাটি সোনারবাড়া। (সোনার চেয়েও বাড়া) ২. বহুর মধ্যে অতিশায়নে বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সর্বাপেক্ষা, সবথেকে, সবচেয়ে,সর্বাধিক, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন- তোমাদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান। পশুর মধ্যে সিংহসর্বাপেক্ষাবলবান। ৩. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে গেলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম অধিকতর, ইত্যাদি শব্দ যোগ করতে হয়। যেমন- পদ্মফুল গোলাপের চাইতেবেশিসুন্দর। ঘিয়ের চেয়ে দুধবেশিউপকারী। কমলার চাইতে পাতিলেবুঅল্পছোট। খ) তৎসম শব্দের অতিশায়ন ১. দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ হয় বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তম’ যোগ হয়। যেমন- গুরু- গুরুতর- গুরুতম দীর্ঘ- দীর্ঘতর- দীর্ঘতম [তবে কোনো বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ করলে সেটা যদি আবার শ্রচতিকটু হয়ে যায়, শুনতে খারাপ লাগে, তখন বিশেষণটির শেষে ‘তর’ যোগ না করে বিশেষণের আগে ‘অধিকতর’ শব্দটি যোগ করা হয়। যেমন- ‘অধিকতর সুশ্রী’।] ২. আবার, দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ঈয়স’ প্রত্যয় যুক্ত হয় বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ইষ্ঠ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- লঘু- লঘীয়ান- লঘিষ্ঠ অল্প- কনীয়ান- কনিষ্ঠ বৃদ্ধ- জ্যায়ান- জ্যেষ্ঠ শ্রেয়- শ্রেয়ান- শ্রেষ্ঠ [দুয়ের তুলনায় এই নিয়মের ব্যবহার বাংলায় হয় না। অর্থাৎ, বাংলায় লঘীয়ান, কনীয়ান, জ্যায়ান, শ্রেয়ান, ইত্যাদি শব্দগুলোর প্রচলন নেই। তবে ‘ঈয়স’ প্রত্যয়যুক্ত কতোগুলো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন- ভূয়সী প্রশংসা।] সর্বনাম পদ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই সর্বনাম পদ বলে। অনুচ্ছেদে বা প্যারাগ্রাফে একই বিশেষ্য পদ বারবার আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একই পদ বারবার ব্যবহার করলে তা শুনতে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এই পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিশেষ্য পদের পরিবর্তে অনুচ্ছেদে যে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে সেই বিশেষ্য পদকেই বোঝানো হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে। [সর্বনাম পদগুলো সব বিশেষ্য বা নামের পরিবর্তে বসতে পারে বলে এদেরকে ‘সর্বনাম’ বলে।] ‘বাংলাদেশঅত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ।এই দেশটি যেমন সুন্দর,এই দেশের মানুষগুলোও তেমনি ভালো।তারাএতোটাই ভদ্র ও মার্জিত যে,তাদেরকাছে ভিখারি ভিক্ষা চাইতে আসলেতারাতাদেরবিতাড়িত করে না। বরং মার্জিতভাবে বলে, মাফ করেন।’ উপরের অনুচ্ছেদে মূলত ৩টি বিশেষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশের মানুষ’ ও ‘ভিখারি’। এবং প্রথমবার উল্লেখের পর দ্বিতীয়বার কোন বিশেষ্যই আর উল্লেখ করা হয়নি। পরের বার থেকে ‘বাংলাদেশ’-র বদলে ‘এই দেশ’; ‘বাংলাদেশের (এই দেশের) মানুষ’-র বদলে ‘তারা’ ও ‘তাদের’ এবং ‘ভিখারি’-র বদলে ‘তাদের’ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ্য পদের বদলে ব্যবহৃত এই শব্দগুলোই হলো সর্বনাম পদ। সর্বনাম পদগুলোকে মূলত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা ২. আত্মবাচক : স্বয়ং, নিজ, খোদ, আপনি ৩. সামীপ্যবাচক : এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি ৪. দূরত্ববাচক : ঐ, ঐসব, সব ৫. সাকল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ ৬. প্রশ্নবাচক : কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে ৭. অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক : কোন, কেহ, কেউ, কিছু ৮. ব্যতিহারিক : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর ৯. সংযোগজ্ঞাপক : যে, যিনি, যাঁরা, যাহারা ১০. অন্যাদিবাচক : অন্য, অপর, পর সাপেক্ষ সর্বনাম : কখনও কখনও পর্সপর সম্পর্কযুক্ত একাধিক সর্বনাম পদ একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে দুটি বাক্যের সংযোগ সাধন করে থাকে। এদেরকে বলা হয় সাপেক্ষ সর্বনাম। যেমন- যতচাওততলও (সোনার তরী) যতচেষ্টা করবেততইসাফল্যের সম্ভাবনা। যতবড় মুখ নয়ততবড় কথা। যতগর্জেততবর্ষে না। যেইকথাসেইকাজ। যেমনকর্মতেমনফল। যেমনবুনো ওলতেমনিবাঘা তেঁতুল। [সাপেক্ষ সর্বনাম; ভাষা অনুশীলন; সোনার তরী] সর্বনামের পুরুষ [PERSON] [বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পুরুষভেদে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। বিশেষণ ও অব্যয় পদের কোন পুরুষভেদ নেই।] পুরুষ ৩ প্রকার। সুতরাং, সর্বনাম পদের পুরুষও ৩টি- উত্তম পুরুষ : বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি।

পদ প্রকরণ (পর্ব ১): পদ পদের প্রকারভেদ বিশেষ্য পদ বিশেষণ পদ নির্ধারক বিশেষণ বিশেষণবাচক ‘কী’ বিশেষণ সম্বন্ধ বিশেষণের অতিশায়ন (degree) সর্বনাম পদ সাপেক্ষ সর্বনাম সর্বনামের পুরুষ [PERSON] অব্যয় পদ অব্যয়ের প্রকারভেদ কিছু বিশেষ অব্যয় অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় অনুসর্গ অব্যয় অনন্বয়ী অব্যয় সমুচ্চয়ী অব্যয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন পদ : বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকে পদ বলে। বাক্যে যখন শব্দ ব্যবহৃত হয়, তখন শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য প্রতিটি শব্দের সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়। এগুলোকে বলে বিভক্তি। যে সব শব্দে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় কোন বিভক্তি যুক্ত হয়নি, সে সব শব্দেও একটি বিভক্তি যুক্ত হয়। একে প্রথমা বিভক্তি বা শূণ্য বিভক্তি বলে। ব্যাকরণ অনুযায়ী কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তাতে বিভক্তি যুক্ত হতে হয়। আর তাই কোন শব্দ বাক্যে বিভক্তি না নিয়ে ব্যবহৃত হলেও তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে বলে ধরে নিয়ে তাকে শূণ্য বিভক্তি বলা হয়। অর্থাৎ,বিভক্তিযুক্ত শব্দকেই পদ বলে। পদের প্রকারভেদ : পদ প্রধানত ২ প্রকার- সব্যয় পদ ও অব্যয় পদ। সব্যয় পদ আবার ৪ প্রকার- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও ক্রিয়া। অর্থাৎ,পদ মোট ৫ প্রকার- ১. বিশেষ্য ২. বিশেষণ ৩. সর্বনাম ৪. ক্রিয়া ৫. অব্যয় [শব্দের শ্রেণীবিভাগ হলো- তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি। অন্যদিকে পদের শ্রেণীবিভাগ হলো- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয়। দুইটিই ৫ প্রকার।] যখন পর্যন্ত কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হচ্ছে না, তখনো সেটি কোন পদ নয়। কোন শব্দ কোন পদ হবে তা নির্ভর করে বাক্যে কিভাবে ব্যবহৃত হলো তার উপর। তাই কোন শব্দকে আগেই বিশেষ্য বা বিশেষণ বলে দেয়া ঠিক নয়। যেমন- তোমারহাতেকি? ডাকাত আমার সবহাতিয়েনিয়েছে। জঙ্গীরাহাতবোমা মেরে পালিয়ে গেলো। প্রথম বাক্যে হাত শব্দটি বিশেষ্য। আবার দ্বিতীয় বাক্যে এই হাত শব্দটিই একটু পরিবর্তিত হয়ে ক্রিয়া হয়ে গেছে। আবার তৃতীয় বাক্যেই আবার হাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষণ হিসেবে। [তবে প্রশ্নে শুধু শব্দ দিয়ে সেটি কোন পদ জিজ্ঞেস করলে সাধারণত শব্দটি যে পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেটি দিতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, প্রতিটি শব্দই সাধারণত একেক পদ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় একেক রূপ নেয়। যেমন, ‘হাত’ শব্দটি বিশেষণ হিসেবে কোন বিভক্তি নেয়নি, কিন্তু বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় বিভক্তি নিয়েছে। আবার ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় প্রত্যয় নিয়েছে। এভাবেপ্রশ্নের শব্দটিকে বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহার করে কোন পদ নির্ণয় করা যেতে পারে।] বিশেষ্য পদ কোন কিছুর নামকেই বিশেষ্য বলে। যে পদ কোন ব্যক্তি, বস্ত্ত, প্রাণী, সমষ্টি, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম, গুণ ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। বিশেষ্য পদ ৬ প্রকার- ১. নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য (ক) ব্যাক্তির নাম : নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল (খ) ভৌগোলিক স্থানের নাম : ঢাকা, দিলিল, লন্ডন, মক্কা (গ) ভৌগোলিক নাম (নদী, পর্বত, সমুদ্র ইত্যাদির নাম) : মেঘনা, হিমালয়, আরব সাগর (ঘ) গ্রন্থের নাম : গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা, দেশেবিদেশে, বিশ্বনবী ২. জাতিবাচক বিশেষ্য : (এক জাতীয় প্রাণী বা পদার্থের নাম) মানুষ, গরু, গাছ, পাখি, পর্বত, নদী, ইংরেজ ৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য : বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবন, পানি ৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি) : সভা, জনতা, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল ৫. ভাববাচক বিশেষ্য (ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব বা কাজের নাম বোঝায়) : গমন, শয়ন, দর্শন, ভোজন. দেখা, শোনা, যাওয়া, শোয়া ৬. গুণবাচক বিশেষ্য : মধুরতা, তারল্য, তিক্ততা, তারুণ্য, সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ বিশেষণ পদ যে পদ বাক্যের অন্য কোন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে। অর্থাৎ, বিশেষণ পদ অন্য কোন পদ সম্পর্কে তথ্য বা ধারণা প্রকাশ করে, বা অন্য পদকে বিশেষায়িত করে। [কিছু বিশেষণ পদ : (‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতা থেকে) সফেদদেয়াল শান্তফটোগ্রাফ জিজ্ঞাসুঅতিথি ছোটছেলে নিস্পৃহকণ্ঠস্বর তিনটিবছর (সংখ্যাবাচক বিশেষণ) রুক্ষচর প্রশ্নাকুলচোখ ক্ষীয়মাণশোক সহজেহয়ে গেল বলা (ক্রিয়া বিশেষণ)] [বিশেষণ শব্দ; ভাষা অনুশীলন; একটি ফটোগ্রাফ] বিশেষণ পদ ২ প্রকার- নাম বিশেষণ ও ভাব বিশেষণ। নাম বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ কোন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন- *.বিশেষ্যের বিশেষণ :নীলআকাশ আরসবুজমাঠের মাঝ দিয়ে একটিছোট্টপাখি উড়ে যাচ্ছে। *.সর্বনামের বিশেষণ : সেরূপবানওগুণবান। ভাব বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ছাড়া অন্য কোন পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে। ভাব বিশেষণ ৪ প্রকার- *.ক্রিয়া বিশেষণ :ধীরে ধীরেবায়ু বয়।পরেএক বার এসো। *.বিশেষণের বিশেষণ (কোন বিশেষণ যদি অন্য একটি বিশেষণকেও বিশেষায়িত করে, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে) : *.নাম বিশেষণের বিশেষণ :সামান্যএকটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সেঅতিশয়দুঃখিত। *.ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : রকেটিঅতিদ্রুত চলে। *.অব্যয়ের বিশেষণ (অব্যয় পদ বা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষায়িত করে) : ধিক তারে,শতধিক নির্লজ্জ যে জন। *.বাক্যের বিশেষণ (কোন পদকে বিশেষায়িত না করে সম্পূর্ণ বাক্যটিকেই বিশেষায়িত করে) :দুর্ভাগ্যক্রমেদেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।বাস্তবিকইআজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন। [না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ : নি- *.এখনো দেখনিতুমি? *.ফুল কি ফোটেনিশাখে? *.পুষ্পারতি লভেনিকি ঋতুর রাজন? রাখিনিসন্ধান *.রহেনি, সে ভুলেনিতো না- *.বসন্তে বরিয়া তুমি লবেনাকি তব বন্দনায়? *.রচিয়া লহনাআজও গীতি। *.ভুলিতে পারিনাকোন মতে। নাই- *.শুনিনাই, রাখি নি সন্ধান *.নাইহল, না হোক এবারে *.করেনাইঅর্ঘ্য বিরুন?] [না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ; ভাষা অনুশীলন; তাহারেই পড়ে মনে]

ণত্ব ও ষত্ব বিধান: ণত্ব ও ষত্ব বিধান স্পর্শধ্বনির তালিকা ণত্ব বিধান বা ণ ব্যবহারের নিয়ম ষত্ব বিধান বা ষ ব্যবহারের নিয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ণত্ব ও ষত্ব বিধান : বাংলা ভাষায় ‘ণ’ ও ‘ষ’-র ব্যবহার তেমন নেই। অর্থাৎ, খাঁটি বাংলা শব্দে বা তদ্ভব শব্দে কখনোই ‘ণ/ ষ’ ব্যবহৃত হয় না। শুধু তাই না, অর্ধ-তৎসম, দেশি বা বিদেশি শব্দেও ‘ণ/ষ’ ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোন পরিবর্তন ছাড়াই সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে, সে সব শব্দে সংস্কৃত ভাষার বানান অনুসরণ করার জন্য ‘ণ/ ষ’ ব্যবহার করতে হয়। এইসব তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে ‘ণ/ ষ’ ব্যবহার করার নিয়মকেই বলা হয় ণত্ব ও ষত্ব বিধান। [ণত্ব ও ষত্ব বিধান পড়ার জন্য স্পর্শধ্বনির তালিকাটা জরুরি বলে উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হলো- স্পর্শধ্বনি/ বর্গীয় ধ্বনি ক-বর্গীয় ধ্বনি ক খ গ ঘ ঙ চ-বর্গীয় ধ্বনি চ ছ জ ঝ ঞ ট-বর্গীয় ধ্বনি ট ঠ ড ঢ ণ ত-বর্গীয় ধ্বনি ত থ দ ধ ন প-বর্গীয় ধ্বনি প ফ ব ভ ম ণত্ব বিধান বা ণ ব্যবহারের নিয়ম ১.ট-বর্গীয় ধ্বনির আগে ন যুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন গঠিত হলে তা ‘ণ’ হয়। অর্থাৎ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ- এদের আগে ন যুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন গঠিত হলে সেই ‘ন’, ‘ণ’ হয়। যেমন- কণ্ঠ, ঘণ্টা, লণ্ঠন, কান্ড, ইত্যাদি। ২. ঋ, র, ষ- এদের পরে ‘ণ’ হয়। যেমন- ঋণ, তৃণ (ত+ঋ+ণ+অ), বর্ণ (ব+অ+র+ণ+অ), বর্ণনা, কারণ, মরণ, ব্যকরণ, ভীষণ, ভাষণ, উষ্ণ (উ+ষ+ণ) ৩. ঋ, র, ষ- এদের পরে ‘স্বরকপযবহং’ থাকলে এবং তারপর ‘ন’ আসলে তা ‘ণ’ হয়। এখানে স্বরকপযবহং মানে হলো- স্বর = স্বরধ্বনি কপ = ক ও প বর্গীয় ধ্বনি (ক-বর্গীয় ধ্বনি = ক, খ, গ, ঘ, ঙ; প-বর্গীয় ধ্বনি = প, ফ, ব, ভ, ম) যব = ষ, য়, য, ব হং = হ, ং যেমন-কৃপণ (ক+ঋ+ প (প-বর্গীয় ধ্বনি)+অ (স্বরধ্বনি)+ ণ) হরিণ (হ+অ+র+ ই(স্বরধ্বনি)+ ণ) অর্পণ (অ+র+ প(প-বর্গীয় ধ্বনি)+অ(স্বরধ্বনি)+ ণ) লক্ষণ (ল+অ+ক্+ষ+ অ(স্বরধ্বনি)+ ণ) রামায়ণ (র+ আ(স্বরধ্বনি+ম(প-বর্গীয় ধ্বনি)+আ(স্বরধ্বনি)+য়(যব)+ ণ) রুক্মিণী (র+ উ(স্বরধ্বনি)+ক(ক-বর্গীয়ধ্বনি)+ম(প-বর্গীয়ধ্বনি)+ই(স্বরধ্বনি)+ ণ +ই) ব্রাহ্মণ (ব+র+ আ(স্বরধ্বনি)+হ(হং)+ম(প-বর্গীয় ধ্বনি)+অ(স্বরধ্বনি)+ ণ) ৪. কতোগুলো শব্দে স্বভাবতই ণ হয়- চাণক্য মাণিক্য গণ বাণিজ্য লবণ মণ বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা কল্যাণ শোণিত মণি স্থাণু গুণ পূণ্য বেণী ফণী অণু বিপণি গণিকা আপণ লাবণ্য বাণী নিপুণ ভণিতা পাণি গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ চিক্কণ নিক্কণ তূণ কফোণি বণিক গুণ গণনা পিণাক পণ্য বাণ ৫. (এটি ণত্ব বিধানের সংজ্ঞানুযায়ী ণত্ব বিধানের নিয়ম নয়) সমাসবদ্ধ শব্দে ণত্ব বিধান খাটে না। অর্থাৎ, সমাসের মাধ্যমে গঠিত শব্দে ‘ণ’ হয় না, ‘ন’ হয়। যেমন- ত্রিনয়ন (২নং নিয়ম অনুযায়ী ত্রিণয়ন), সর্বনাম (৩নং নিয়ম অনুযায়ী সর্বণাম), দুর্নীতি (২নং নিয়ম অনুযায়ী দুর্ণীতি), দুর্নাম (২নং নিয়ম অনুযায়ী দুর্ণাম), দুর্নিবার (২নং নিয়ম অনুযায়ী দুর্ণিবার), পরনিন্দা (২নং নিয়ম অনুযায়ী পরণিন্দা), অগ্রনায়ক (২নং নিয়ম অনুযায়ী অগ্রণায়ক) ৬. (এটিও ণত্ব বিধানের সংজ্ঞানুযায়ী ণত্ব বিধানের নিয়ম নয়) ত-বর্গীয় ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হলে কখনোই ‘ন’, ‘ণ’ হয় না। অর্থাৎ, ত, থ, দ, ধ, ন- এদের সঙ্গে যুক্ত হলে সেটা ‘ন’ হবে। যেমন- অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন, চন্দন ষত্ব বিধান বা ষ ব্যবহারের নিয়ম ১. অ/আ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনি এবং ক,র-এর পরের ‘স’, ‘ষ’ হয়। অর্থাৎ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ, ক, র- এদের পরে স থাকলে তা ষ হয়। যেমন- ভবিষ্যৎ (ভ+অ+ব+ই+ষ+য+ত্), মুমূর্ষু (ম+উ+ম+ঊ+র+ষ+উ), চক্ষুষ্মান (চ+অ+ক+ষ+উ+ষ+ম+আ+ন), চিকীর্ষা (চ+ই+ক+ঈ+র+ষ+আ) ২. ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পরে প্রায়ই ষ হয়। অর্থাৎ, যে সব সংস্কৃত উপসর্গের শেষে ই-কার বা উ-কার আছে, সেসব উপসর্গযোগে গঠিত শব্দে প্রায়ই ষ হয়। মূলত, ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের সঙ্গে কতোগুলো ধাতু যুক্ত হলে সেসব ধাতুতে ষ হয়। যেমন- অভিসেক> অভিষেক (এখানে উপসর্গ অভি, অ+ভ+ই- ই-কারান্ত উপসর্গ)। এরকম- সুসুপ্ত> সুষুপ্ত, অনুসঙ্গ> অনুষঙ্গ, প্রতিসেধক> প্রতিষেধক, প্রতিস্থান> প্রতিষ্ঠান (দন্ত্য স-র সঙ্গে দন্ত্য ধ্বনি থ যুক্ত হয়। আর মূর্ধণ্য ষ-এর সঙ্গে মূর্ধণ্য ধ্বনি ঠ যুক্ত হয়েছে।), অনুস্থান> অনুষ্ঠান, বিসম> বিষম, সুসমা> সুষমা ৩. ঋ ও র-এর পরে ষ হয়। যেমন- ঋষি, কৃষক (ক+ঋ+ষ+অ+ক), তৃষ্ণা (ত+ঋ+ষ+ণ+আ), উৎকৃষ্ট, বৃষ্টি (ব+ঋ+ষ+ট+ই), দৃষ্টি (দ+ঋ+ষ+ট+ই), কৃষ্টি, সৃষ্টি, বর্ষা (ব+অ+র+ষ+আ), বর্ষণ ৪. ট ও ঠ-র সঙ্গে যুক্ত হলে ষ হয়। যেমন- কষ্ট, স্পষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ, ওষ্ঠ ৫. কতোগুলো শব্দে স্বভাবতই ষ হয়। যেমন- অ= অভিলাষ আ= আষাঢ়, আভাষ ঈ= ঈষৎ ঊ= ঊষা, ঊষর ঔ= ঔষধ, ঔষধি ক= কলুষ, কোষ ত= তোষণ দ= দ্বেষ প= পাষন্ড, পাষাণ, পোষণ, পৌষ ভ= ভাষা, ভাষ্য, ভাষণ, ভূষণ ম= মানুষ র= রোষ শ= শোষণ স= সরিষা ষ= ষন্ড, ষোড়শ, ষড়যন্ত্র, ষটচক্র (শব্দগুলো প্রথম ধ্বনির ক্রমানুযায়ী সাজানো হলেও পড়ার সুবিধার্থে ‘স’কে আগে দিয়ে ‘ষ’কে পরে রাখা হয়েছে।) ৬. (এটি ষত্ব বিধানের সংজ্ঞানুযায়ী ষত্ব বিধানের নিয়ম নয়) বিদেশি শব্দে কখনোই ‘ষ’ হয় না। যেমন- জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পোস্ট, ইত্যাদি। এই বানানগুলোর ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ৭. (এটিও ষত্ব বিধানের সংজ্ঞানুযায়ী ষত্ব বিধানের নিয়ম নয়) সংস্কৃত ‘সাৎ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত শব্দেও ‘ষ’ হয় না। অর্থাৎ, যেসব শব্দের শেষে ‘সাৎ’ শব্দাংশটি আছে, সেখানে সাৎ বানানে ষ হয় না। যেমন- অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.নিচের কোন শব্দে কোনো নিয়ম ছাড়াই মূর্ধণ্য ষ বসেছে (ঘ-২০০৯-১০) *.‘ণ’-ত্ব বিধান অনুসারে নিচের কোন বানান অশুদ্ধ? (ক-২০০৯-১০)

ক্রিয়ার কাল: ক্রিয়ার কাল ক্রিয়ার কাল রূপ নির্ভর, অর্থ নির্ভর নয় প্রকারভেদ বিভিন্ন কালের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (ছক আকারে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ক্রিয়ার কাল : ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কেই ক্রিয়ার কাল বা কাল বলে। যেমন- আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়ি।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি এখন সম্পন্ন হচ্ছে। আবার, আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়বো।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি পরে সম্পন্ন হবে। আবার, আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়েছি।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি পূর্বেই সম্পাদিত হয়েছে। উপরের বাক্য তিনটিতে ক্রিয়া তিনটি ভিন্ন সময়ে সম্পাদিত হয়েছে। ক্রিয়া সম্পাদনের এই সময়গুলোই ক্রিয়ার কাল বা কাল। ক্রিয়ার কাল রূপ নির্ভর, অর্থ নির্ভর নয় : কাল মূলত ক্রিয়ার রূপকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ ক্রিয়াপদ তৈরি করে। ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ক্রিয়াবিভক্তিটি কাল ও পুরুষ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। আর তাই কাল ও পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়াপদের রূপও পরিবর্তিত হয়। ক্রিয়াপদের এই পরিবর্তনশীল ‘রূপ’ কাল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, বাক্যের অর্থ নয়। মনে রাখতে হবে, কাল বলতে ক্রিয়ার কালকে বোঝায়, বাক্যের কাল নয়। তাই, ক্রিয়াপদ যে কালের রূপ অনুযায়ী ব্যবহৃত হবে, ক্রিয়াপদটি সেই কালের হবে। যেমন- ‘তিনি গতকাল হাটে যাননি।’ এখানে, বাক্যটি গতকালকে সম্পাদিত ক্রিয়ার কথা বলছে। সুতরাং, এটি অতীত কালের উদাহরণ হওয়া উচিত। কিন্তু বাক্যের ক্রিয়াপদ ‘যাননি’ বর্তমান কালের রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। (যেমন- ‘আপনি আজ হাটে যাননি)। তাই, এখানে ক্রিয়াপদের বা বাক্যের কাল বা ক্রিয়ার কাল বর্তমান হিসেবে ধরা হয়। এ ধরনের উদাহরণকে কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয়। কাল বা ক্রিয়ার কাল ইংরেজি Tense-এর অনুরূপ। কিন্তু ইংরেজি Tense বাক্যের অর্থ অনুসরণ করে, বাংলা কাল প্রায়ই বাক্যের অর্থ অনুসরণ করে না; মূলত বাংলা কাল ক্রিয়ার রূপকে অনুসরণ করে। প্রকারভেদ : ক্রিয়ার কালকে মূলত- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত, এই ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। তবে এইগুলোকেও আবার অনেক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিচে ক্রিয়ার কালের প্রকারভেদ দেওয়া হলো- বিভিন্ন কালের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো: কাল সংজ্ঞা উদাহরণ বিশিষ্ট প্রয়োগ ১. বর্তমান কাল সাধারণ বর্তমান নিত্যবৃত্ত বর্তমান যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণভাবে ঘটে সে ভাত খায়। আম বাড়ি যাই। ক) অনুমতি প্রার্থণায় : এখন তবে আসি। খ) উদ্ধৃতি : চণ্ডীদাস বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ গ)বর্ণনা : আমি দেখেছি, বাচ্চাটি রোজ রাতে কাঁদে। ঘ) নেতিবাচক শব্দযোগে অতীত কালের ক্রিয়ায় : তিনি গতকাল হাটে যাননি। স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়। ক) স্থায়ী সত্য : চার আর চারে আট হয়। খ)ঐতিহাসিক বর্তমান: ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনায়; বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করলেন। গ) কাব্যের ভনিতায় : মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস ভনে শুনে পূণ্যবান।। ঘ) অনিশ্চয়তা : কে জানে দেশে আবার সুদিন আসবে কি না। ঙ) অতীত ও ভবিষ্যতে ‘যদি, যখন, যেন’ শব্দের প্রয়োগ করলে। যদি বৃষ্টি আসে, তবে আমরা বাড়ি চলে যাব। সকলেই যেন সভায় হাজির থাকে। বিপদ যখন আসে, তখন এমনি করেই আসে। ঘটমান বর্তমান এখনও চলছে এমন বর্তমানের কাজ হাসান ইডিপিডিবিডিতে পড়ছে। নীরা গান গাইছে। ক) প্রত্যক্ষ উক্তিতে : বক্তা বললেন, ‘ধন-সম্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে, দিকে দিকে আগুন জ্বলছে।’ খ) ভবিষ্যত সম্ভাবনা : চিন্তা করো না, কালই আসছি। পুরাঘটিত বর্তমান পূর্বেই শেষ হয়ে যাওয়া কোনো ক্রিয়ার ফল যদি এখনো বর্তমান থাকে এ বার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি। ২. অতীত কাল সাধারণ অতীত যে ক্রিয়া আগেই শেষ হয়েছে প্রদীপ নিভে গেল। শিকারি পাখিটিকে গুলি করল। ক) পুরাঘটিত বর্তমানের স্থলে : এক্ষণে জানিলাম, কুসুমে কীট আছে। খ) বিশেষ ইচ্ছা প্রকাশে : তোমরা যা খুশি কর, আমি বিদায় হলাম। নিত্যবৃত্ত অতীত অতীতকালে অভ্যস্ততা অর্থে আমরা তখন রোজ নদীতে গোসল করতাম। ক) কামনা প্রকাশে : আজ যদি সুমন আসত, কেমন মজা হত। খ) অসম্ভব কল্পনায় : সাতাশ হত যদি একশ’ সাতাশ। গ) সম্ভাবনা প্রকাশে : তুমি যদি যেতে, তবে ভালই হত। ঘটমান অতীত অতীতে চলছিল (যখনকার কথা বলা হচ্ছে, তখনো কাজটি শেষ হয় নি।) কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল। আর আমরা তখন ভিজছিলাম। পুরাঘটিত অতীত অতীতে বহু আগে সংঘটিত সে বার তাকে সুস্থিই দেখেছিলাম। কাজটি কি তুমি করেছিলে? ক) অতীতের নিশ্চিত ঘটনার বর্ণনায় : পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে এক লক্ষ মারাঠা সৈন্য মারা গিয়েছিল। আমি সমিতিতে সে দিন পাঁচ টাকা নগদ দিয়েছিলাম। খ) অতীতের ক্রিয়া পরম্পরা বোঝাতে অপেক্ষাকৃত আগে সম্পন্ন ক্রিয়াতে : বৃষ্টি শেষ হবার পূর্বেই আমরা বাড়ি পৌছেছিলাম। ৩. ভবিষ্যত কাল সাধারণ ভবিষ্যত পরে সংঘটিত হবে আমরা মাঠে খেলতে যাব। শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে। ক)আক্ষেপ প্রকাশে অতীতের স্থলে : কে জানত, আমার ভাগ্যে এমন হবে? সে দিন কে জানত যে ইউরোপে আবার মহাযুদ্ধের ভেরী বাজবে? খ) অতীতের ক্রিয়ায় সন্দেহের ভাব থাকলে : ভাবলাম, তিনি এখন বাড়ি দিয়ে থাকবেন। তোমরা হয়ত বিশ্বনবী পড়ে থাকবে। ঘটমান ভবিষ্যত ভবিষ্যতে চলতে থাকবে পুরাঘটিত ভবিষ্যত সম্ভবত ঘটে গেছে এমন ক্রিয়া বোঝাতে ভবিষ্যত কালের ক্রিয়া ব্যবহার করলে তা পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.কোনটি নিত্যবৃত্ত অতীত কালের উদাহরণ? (গ-২০০৬-০৭)

ক্রিয়া পদ (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): 1.প্রযোজক ক্রিয়া যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনায় আরেকজন করে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। প্রযোজক ক্রিয়ার দু’জন কর্তা থাকে। এরমধ্যে একজন কর্তা কাজটি আরেকজন কর্তাকে দিয়ে করান। অর্থাৎ, একজন যখন আরেকজনকে দিয়ে কোন কাজ করিয়ে নেয়, তখন সেই ক্রিয়াপদটিকে বলে প্রযোজক ক্রিয়া। [সংস্কৃত ব্যাকরণে এরই নাম ণিজন্ত ক্রিয়া।] প্রযোজক ক্রিয়ার দুইজন কর্তার মধ্যে যিনি কাজটি করান, তাকে বলে প্রযোজক কর্তা। আর যিনি কাজটি করেন, তাকে বলে প্রযোজ্য কর্তা। তাকে দিয়ে কাজটি প্রযোজ্য করা হয় বলে তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন- মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এখানে চাঁদ দেখার কাজটি করছে ‘শিশু’, কিন্তু চাঁদ দেখাচ্ছেন ‘মা’। অর্থাৎ, ‘মা’ কাজটি প্রযোজনা করছেন। তাই ‘মা’ এখানে প্রযোজক কর্তা। আর চাঁদ দেখার কাজটি আসলে ‘শিশু’ করছে, তাই ‘শিশু’ এখানে প্রযোজ্য কর্তা। এরকম- সাপুড়ে সাপ খেলায়। (এখানে সাপুড়ে প্রযোজক কর্তা, আর সাপ প্রযোজ্য কর্তা) 1.নামধাতুর ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে সব ধাতু গঠিত হয়, তাদেরকে নামধাতু বলে। নামধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে যেসব ক্রিয়াপদ গঠন করে, তাদেরকেই নামধাতুর ক্রিয়া বলে। যেমন- বিশেষ্য = বেত+আ = বেতা, ক্রিয়াপদ = বেতানো, বেতাচ্ছেন, বেতিয়ে বিশেষণ = বাঁকা+আ = বাঁকা, ক্রিয়াপদ = বাঁকানো, বাঁকাচ্ছেন, বাঁকিয়ে ধ্বন্যাত্মক অব্যয় = কন কন+আ = কনকনা, ক্রিয়াপদ = কনকনাচ্ছে, কনকনিয়ে বাক্যে প্রয়োগ- লোকটি ছেলেটিকে বেতাচ্ছে। কঞ্চিটি বাঁকিয়ে ধর। দাঁত ব্যথায় কনকনাচ্ছে। অজগরটি ফোঁসাচ্ছে। ব্যতিক্রম : কয়েকটি নামধাতু ‘আ’ প্রত্যয় ছাড়াই ধাতু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ফল = বাগানে এবার অনেক আম ফলেছে। টক = তরকারি বাসি হলে টকে। ছাপা = প্রকাশক তার বইটা এবার মেলায় ছেপেছে। 1.যৌগিক ক্রিয়া একটি সমাপিকা ক্রিয়া ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি বসে যদি কোন বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া মিলে যদি তাদের সাধারণ অর্থ প্রকাশ না করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন- ঘটনাটা শুনে রাখ। (শোনার বদলে তাগিদ দেয়া অর্থ বুঝিয়েছে) তিনি বলতে লাগলেন। (বলার অর্থ সম্প্রসারণ করে নিরন্তর বলা বুঝিয়েছে) ছেলেমেয়েরা শুয়ে পড়ল। (শোওয়ার পাশাপাশি দিনের কার্যসমাপ্তিও বোঝাচ্ছে) সাইরেন বেজে উঠল। (আকস্মিক সাইরেন বাজার কথা বলা হচ্ছে) শিক্ষায় মন সংস্কারমুক্ত হয়ে থাকে। (অভ্যস্ততা অর্থে, ধীরে ধীরে সংস্কারমুক্ত হয় বোঝাচ্ছে) এখন যেতে পার। (যাওয়ার বদলে অনুমোদন অর্থে) 1.মিশ্র ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়্, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র ক্রিয়া বলে। যেমন- বিশেষ্যের পরে : আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। গোল্লা য় যাও। বিশেষেণের পরে : তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম। ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে : মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। [খেয়াল রাখতে হবে, যৌগিক ক্রিয়া দুইটি ক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, যার একটি সমাপিকা ক্রিয়া আরেকটি অসমাপিকা ক্রিয়া। অন্যদিকে, মিশ্র ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ক্রিয়াপদ বসে গঠিত হয়।] পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপ পুরুষ সাধারণ সম্ভ্রমাত্মক তুচ্ছার্থক/ ঘনিষ্ঠার্থক উত্তম পুরুষ আমি যাই আমরা যাই --------- -------- মধ্যম পুরুষ তুমি যাও তোমরা যাও আপনি যান আপনারা যান তুই যা তোরা যা নাম পুরুষ সে যায় তারা যায় তিনি যান তাঁরা যান এটা যায় এগুলো যায় [উত্তম পুরুষ : বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি। মধ্যম পুরুষ : বাক্যের উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। অর্থাৎ, উত্তম পুরুষ যাকে উদ্দেশ্য করে বাক্যটি বলে, এবং পাশাপাশি বাক্যেও উল্লেখ করে, তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। মধ্যম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনার, আপনাদের, ইত্যাদি। নামপুরুষ : বাক্যে বক্তা অনুপস্থিত যেসব ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর উল্লেখ করেন, তাদের নামপুরুষ বলে। অর্থাৎ, বক্তার সামনে নেই এমন যা কিছুর কথা বক্তা বাক্যে বলেন, সবগুলোই নামপুরুষ। নাম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের, ইত্যাদি।] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.বাংলা ভাষায় অসমাপিকা ক্রিয়ার রূপ (ঘ-২০০৫-০৬) *.কোন বাক্যে সকর্মক ক্রিয়ায় অকর্মক রূপ আছে? (ঘ-২০০৬-০৭) *.লোকটা পুরো কাঁঠালটাই খেয়ে ফেলল।- এই বাক্যে খেয়ে ফেলল’ কোন ধররেন ক্রিয়াপদ? (ক-২০০৬-০৭) *.ক্রিয়াপদের মূল অংশের নাম: (গ-২০০৪-০৫) *.ক্রিয়া পদের মূল অংশকে কি বলে? (গ-২০০১-০২)

ক্রিয়া পদ (পর্ব ১): ক্রিয়া পদ ক্রিয়ার প্রকারভেদ সমাপিকা-অসমাপিকা ক্রিয়া সকর্মক-অকর্মক-দ্বিকর্মক ক্রিয়া কর্ম পদ প্রযোজক ক্রিয়া নামধাতুর ক্রিয়া যৌগিক ক্রিয়া মিশ্র ক্রিয়া পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপ উত্তম পুরুষ মধ্যম পুরুষ নামপুরুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ক্রিয়া পদ : যে পদ দিয়ে কোন কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে। অর্থাৎ, বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোন কাজ সম্পাদন করা বা কোন কাজ সংঘটন হওয়াকে বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ ও কাল অনুযায়ী ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন, ‘পড়্’ একটি ধাতু। এর সঙ্গে উত্তম পুরুষ ও সাধারণ বর্তমান কাল অনুযায়ী ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয় ‘পড়ি’ ক্রিয়াপদটি। আবার মধ্যম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ো’। নাম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ে’। আবার উত্তম পুরুষের জন্য ঘটমান বর্তমান কালের জন্য হবে ‘পড়ছি’। সাধারণ অতীত কালের জন্য হবে ‘পড়েছি’। [ক্রিয়া পদ বাক্যের অপরিহার্য অঙ্গ। শুধু ক্রিয়াপদ নিয়ে একটি বাক্য গঠিত হতে পারে। কিন্তু ক্রিয়া পদ ছাড়া কোন বাক্য গঠিত হতে পারে না। তবে মাঝে মাঝে অনেক বাক্যের ক্রিয়াপদটি উহ্য থাকে। যেমন- ‘রমেশ আমার ভাই (হয়)।’ এই বাক্যে ‘হয়’ ক্রিয়াটি উহ্য থাকে, এটি না লিখলেও সবাই বুঝতে পারে। আর তাই এটি লেখাও হয় না। কিন্তু এটা আবার ইংরেজি করলে ‘হয়’-র ইংরেজি লেখা হয়- Rameshismy brother. সাধারণত, ‘হ্’ ও আছ্’ ধাতু বা ক্রিয়ামূল দ্বারা গঠিত ক্রিয়া পদগুলো উহ্য থাকে।] ক্রিয়ার প্রকারভেদ 1.সমাপিকা-অসমাপিকা ক্রিয়া বাক্যের ভাব প্রকাশের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া, এই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া পদ বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে ক্রিয়া পদ বাক্যকে সম্পূর্ণ করে, আর কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা বাকি থাকে না, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। একটি বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতেই হয়। এবং একটি বাক্যে একটার বেশি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে না। যেমন- ছেলেরাখেলছে। ছেলেরা খেলাকরছে। দ্বিতীয় বাক্যে ‘খেলা’ সমাপিকা ক্রিয়া নয়। এ জন্য ‘করছে’ সমাপিকা ক্রিয়া আনতে হয়েছে। নয়তো বাক্যটি সম্পূর্ণ হচ্ছে না। অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া পদ দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্য সম্পূর্ণ হয় না, আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহারের পরও বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করতে হয়। শুধু অসমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে বাক্য গঠিত হয় না। একটি বাক্যে যতোগুলো ইচ্ছা অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করা যায়। কিন্তু একটি সমাপিকা ক্রিয়া আনতেই হয়। যেমন- ছেলেরাখেলা। এখানে খেলা একটি অসমাপিকা ক্রিয়া। ক্রিয়া পদ হলেও এটি দিয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ হয়নি, আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরেকটি সমাপিকা ক্রিয়া ‘করছে’ যোগ করলেই কেবল বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে। ছেলেরা খেলা করছে। সাধারণত অসমাপিকা ক্রিয়ার শেষেইয়া, ইলে, ইতে, এ, লে, তেবিভক্তিগুলো যুক্ত থাকে। 1.সকর্মক-অকর্মক-দ্বিকর্মক ক্রিয়া বাক্যে ক্রিয়ার কর্মের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে অকর্মক, সকর্মক ও দ্বিকর্মক- এই ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। কর্ম পদ : যে পদকে আশ্রয় করে ক্রিয়া পদ তার কাজ সম্পাদন বা সংঘটন করে, তাকে কর্ম পদ বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়া পদ কাজ করার জন্য যেই পদকে ব্যবহার করে, তাকে কর্ম পদ বলে। ক্রিয়া পদকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মপদ। আর যদি উত্তর না পাওয়া যায়, তবে সেই ক্রিয়ার কোন কর্মপদ নেই। যেমন- মেয়েটি কলম কিনেছে। মেয়েটি হাসে। এখানে প্রথম বাক্যে ক্রিয়াপদ ‘কিনেছে’কে ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় ‘কলম’। (কী কিনেছে?- কলম) অর্থাৎ, প্রথম বাক্যের ক্রিয়ার কর্মপদ কলম। আবার দ্বিতীয় বাক্যের ক্রিয়াপদ ‘হাসে’কে ‘কী/ কাকে’ কোনটা দিয়ে প্রশ্ন করলেই কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং, এই বাক্যের ক্রিয়াপদের কোন কর্ম নেই। অকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের কোন কর্ম নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের কর্ম পদ আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। দ্বিকর্মক ক্রিয়া : কখনো কখনো একটি বাক্যে একই ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম পদ থাকে। তখন সেই ক্রিয়াপদকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। এক্ষেত্রে,বস্তুবাচক কর্মপদকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম বলে এবং ব্যক্তিবাচক কর্মপদকে গৌণ কর্মবলে। অর্থাৎ, বস্তুবাচক কর্মটিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন- ‘বাবাআমাকে একটিল্যাপটপকিনে দিয়েছেন।’ এখানে ‘কিনে দিয়েছেন’ ক্রিয়ার কর্মপদ দুটি, ‘আমাকে’ (কাকে কিনে দিয়েছেন?) ও ‘ল্যাপটপ’ (কী কিনে দিয়েছেন?)। এখানে বস্ত্তবাচক কর্মপদ ‘ল্যাপটপ’, আর ব্যক্তিবাচক কর্মপদ ‘আমাকে’। সুতরাং এখানে মুখ্য বা প্রধান কর্মপদ ‘ল্যাপটপ’ আর গৌণ বা অপ্রধান কর্ম ‘আমাকে’। সমধাতুজ কর্ম : বাক্যের ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ যদি একই ধাতু বা ক্রিয়ামূল থেকে গঠিত হয়, তবে তাকে সমধাতুজ কর্মপদ বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই শব্দমূল থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্মপদ বলে। যেমন- আজ এমন ঘুম ঘুমিয়েছি। এখানে ক্রিয়াপদ ‘ঘুমিয়েছি’, আর কর্মপদ ‘ঘুম’ (কী ঘুমিয়েছি?)। আর এই ‘ঘুমিয়েছি’ আর ‘ঘুম’ দুটি শব্দেরই শব্দমূল ‘ঘুম্’। অর্থাৎ, শব্দ দুইটি একই ধাতু হতে গঠিত (ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে)। সুতরাং, এই বাক্যে ‘ঘুম’ কর্মটি একটি সমধাতুজ কর্ম। এরকম- আজ কী খেলা খেললাম। (খেল্) আর মায়াকান্না কেঁদো না। (কাঁদ্) এমন মরণ মরে কয়জনা? (মর্)

কারক ও বিভক্তি (পর্ব ২ এবং শেষ পর্ব): সম্প্রদান কারক যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে কিছু দেয়া হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে। ‘কাকে দান করা হল’ প্রশ্নের উত্তরই হলো সম্প্রদান কারক। সম্প্রদান কারকের নিয়ম অন্যান্য নিয়মের মতোই সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকেই এসেছে। তবে অনেক বাংলা ব্যাকরণবিদ/ বৈয়াকরণ একে আলাদা কোন কারক হিসেবে স্বীকার করেন না। তারা একেও কর্ম কারক হিসেবেই গণ্য করেন। কর্মকারক ও সম্প্রদান কারকের বৈশিষ্ট্যও একই। কেবল স্বত্ব ত্যাগ করে দান করার ক্ষেত্রে কর্মকারক হিসেবে গণ্য না করে কর্মপদটিকে সম্প্রদান কারক হিসেবে গণ্য করা হয়। সম্প্রদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তির বদলে চতুর্থী বিভক্তি যুক্ত হয়। চতুর্থী বিভক্তি আর কোথাও যুক্ত হয় না। অর্থাৎ, ‘কে/ রে’ বিভক্তি দুটি সম্প্রদান কারকের সঙ্গে থাকলে তা চতুর্থী বিভক্তি। অন্য কোন কারকের সঙ্গে থাকলে তা দ্বিতীয়া বিভক্তি। তবে কোথাও নিমিত্তার্থে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হলে তা চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল। (নিমিত্তার্থে চতুর্থী বিভক্তি) উদাহরণ- ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। (কাকে দান করা হল? ভিখারিকে।) : সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি অসহায়কে খাদ্য দাও। (কাকে দান করা হল? অসহায়কে।) : সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে দেহ প্রাণ। (কাকে দান করা হল? অন্ধজনে।): সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি সমিতিতে চাঁদা দাও। (কাকে দান করা হল? সমিতিতে।) : সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি অপাদান কারক যা থেকে কোন কিছু গৃহীত, বিচ্যুত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত, রক্ষিত, ভীত হয়, তাকে অপাদান কারক বলে। অর্থাৎ, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হওয়া বোঝায়। ‘কি হতে বের হল’ প্রশ্নের উত্তরই অপাদান কারক। উদাহরণ- গাছ থেকে পাতা পড়ে। (কি হতে বের হল/ পড়ল? গাছ থেকে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি শুক্তি থেকে মুক্তি মেলে। (কি হতে বের হল? শুক্তি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি জমি থেকে ফসল পাই। (কি হতে বের হল? জমি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি দেশ থেকে হায়েনারা চলে গেছে। (কি হতে বের হল? দেশ থেকে):অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি বিপদ থেকে বাঁচাও। (কি হতে বাঁচাও? বিপদ হতে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি বাঘকে ভয় পায় না কে? (কি হতে ভয় বের হল? বাঘ হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি মনে পড়ে সেই জৈষ্ঠ্যের দুপুরে পাঠশালা পলায়ন। (কি হতে বের হল/ পলায়ন? পাঠশালা হতে) : অপাদান কারকে শূণ্য বিভক্তি বাবাকে বড্ড ভয় পাই। (কি হতে ভয় বের হয়? বাবা হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন। (কি হতে বের হয়েছেন/ এসেছেন? চট্টগ্রাম হতে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছিলো। (কি হতে বের হল/ ফেলা হল? বিমান হতে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি অধিকরণ কারক ক্রিয়া সম্পাদনের কাল এবং আধারকে (সময় এবং স্থানকে) অধিকরণ কারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কোথায়/ কখন/ কী বিষয়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই অধিকরণ কারক। উদাহরণ- পুকুরে মাছ আছে। (কোথায় আছে? পুকুরে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি বনে বাঘ আছে। (কোথায় আছে? বনে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে। (কোথায় বাঁধা আছে? ঘাটে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা। (কোথায় বাঁধা? দুয়ারে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি সকালে সূর্য ওঠে। (কখন ওঠে? সকালে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি এ বাড়িতে কেউ নেই। (কোথায় কেউ নেই? বাড়িতে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি নদীতে পানি আছে। (কোথায় আছে? নদীতে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি রবিন অঙ্কে কাঁচা। (কী বিষয়ে কাঁচা? অঙ্কে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি সজিব ব্যাকরণে ভাল। (কী বিষয়ে কাঁচা? ব্যাকরণে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি ঘরের মধ্যে কে রে? (কোথায়? ঘরে) : অধিকরণ কারকে অনুসর্গ মধ্যে বাড়ি থেকে নদী দেখা যায়। (কোথায় থেকে দেখা যায়? বাড়ি থেকে):অধিকরণে পঞ্চমী বিভক্তি* *.শেষ উদাহরণটিতে নদী বাড়ি থেকে বের হয়নি, তাই এটি অপাদান কারক নয়। নদী বাড়ি থেকেই দেখা যায়। অর্থাৎ, ক্রিয়াটি বাড়িতেই ঘটছে, তাই এটি অধিকরণ কারক। অপাদান-অধিকরণ কারকের পার্থক্য অপাদান ও অধিকরণ কারক আলাদা করতে গিয়ে অনেকেরই সমস্যা হয়। অপাদান ও অধিকরণ কারককে আলাদা করে চেনার সহজ উপায় হলো, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হয় বোঝায়। আর অধিকরণ কারকের মাঝেই ক্রিয়া সম্পাদিত হয়। যেমন- ‘তিলে থেকে তেল হয়’ আর ‘তিলে তেল আছে’। প্রথম বাক্যে তিলের ভেতর ক্রিয়া সংঘটিত হয়নি। বরং তিল থেকে তেল বের হওয়ার কথা বোঝাচ্ছে। আর দ্বিতীয় বাক্যে তিলের ভেতরই তিল থাকার কথা বলছে। এই ‘আছে’ ক্রিয়াটি তিলের ভেতরে থেকেই কাজ করছে। [ছবি] এরকম-বিপদ থেকে বাঁচাও- অপাদান কারক বিপদে বাঁচাও- অধিকরণ কারক শুক্তি থেকে মুক্তি মেলে- অপাদান কারক শুক্তিতে মুক্তি হয়- অধিকরণ কারক জমি থেকে ফসল পাই- অপাদান কারক জমিতে ফসল হয়- অধিকরণ কারক নিচে কারক নির্ণয়ের উপায় সংক্ষেপে ছক আকারে দেয়া হলো- ক্রিয়াকে প্রশ্ন উত্তর যে কারক কে, কারা? কর্তৃকারক কী, কাকে? কর্মকারক কী দিয়ে? করণকারক কাকে দান করা হল? সম্প্রদান কারক কি হতে বের হল? অপাদান কারক কোথায়, কখন, কী বিষয়ে? অধিকরণ কারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.শিকারী বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। *.ক্রিকেট খেলে’- বাক্যের কারক ও বিভক্তি- (ক-২০০৬-০৭) *.‘রেখো মা দাসেরে মনে।’- এ বাক্যে ‘দাসেরে’ কোন কারকে কোন বিভক্তি? (ঘ-২০১০-১১) *.‘গরিবকে কম্বল দিয়ে ঠাণ্ডায় বাঁচাও’- বাক্যটির ‘ঠাণ্ডায়’ শব্দের কারক-বিভক্তি (ঘ-২০০৬-০৭) *.‘নিঃশেষে নিশাচর গ্রাসে মহাবিশ্বে’ এই চরণের ‘মহাবিশ্বের’ পদটির কারক- (ঘ-১৯৯৮-৯৯) *.‘লঙ্ঘি এ সিন্ধুর প্রলয়ের নৃত্যে’- এ বাক্যে ‘সিন্ধুর’ কারক ও বিভক্তি হবে: (গ-২০১০-১১) *.‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’- ধর্মের কল’- এর কারক ও বিভক্তি: (গ-২০১০-১১) *.গুরুজনে ভক্তি কর- ‘গুরুজনে’ কোন কারক? (গ-২০০৯-১০)

কারক ও বিভক্তি: বিভক্তি বাক্যের একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শব্দগুলোর সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত করতে হয়। এই শব্দাংশগুলোকে বলা হয় বিভক্তি। মা শিশু চাঁদ দেখা। উপরের বাক্যটিতে কোন শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত করা হয়নি। ফলে বাক্যের শব্দগুলোর মধ্যে কোন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি, এবং এগুলো বাক্যও হয়ে উঠতে পারেনি। এখন শিশু’র সঙ্গে কে বিভক্তি আর দেখা’র সঙ্গে চ্ছেন’ বিভক্তি যোগ করলে বাক্যটি হবে- মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। অর্থাৎ, শব্দগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে একটি বাক্য সম্পূর্ণ হলো এবং এখন আর এগুলো শব্দ নয়, এগুলো প্রত্যেকটি একেকটি পদ। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তখন সেগুলোকে বলা হয় পদ। বাক্যে বিভক্তি ছাড়া কোন পদ থাকে না বলে ধরা হয়। তাই কোন শব্দে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন না হলেও ধরে নেয়া হয় তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। এবং এই বিভক্তিটিকে বলা হয় শূণ্য বিভক্তি। উপরের বাক্যটিতে ‘মা’ ও ‘চাঁদ’ শব্দদুটির সঙ্গে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন হয়নি। তাই ধরে নিতে হবে এই শব্দদুটির সঙ্গে শূণ্য বিভক্তি যোগ হয়ে এগুলো বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং এই দুটিও এখন পদ। মৌলিক বাংলা শব্দ বিভক্তিগুলো হলো- শূণ্য বিভক্তি (০), এ, য়, তে, কে, রে, র(এর)। তবে এছাড়াও কিছু কিছু অব্যয় শব্দ কারক সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো হলো- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হতে, থেকে, চেয়ে, ইত্যাদি। বাংলা শব্দ বিভক্তি ৭ প্রকার- বিভক্তির নাম বিভক্তি প্রথমা বা শূণ্য বিভক্তি ০, অ দ্বিতীয়া বিভক্তি কে, রে তৃতীয়া বিভক্তি দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক চতুর্থী বিভক্তি কে, রে* পঞ্চমী বিভক্তি হইতে (হতে), থেকে, চেয়ে ষষ্ঠী বিভক্তি র, এর সপ্তমী বিভক্তি এ, য়, তে *.চতুর্থী বিভক্তি শুধুমাত্র সম্প্রদান কারকে যুক্ত হয়। *.বচনভেদে বিভক্তির আকৃতি পরিবর্তিত হয়। তবে কোন বিভক্তি চিহ্নিত করার জন্য উপরের বিভক্তির তালিকাটি মনে রাখলেই চলবে। *.বিভক্তির নাম লেখার সময় কখনো সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা যাবে না। অর্থাৎ দ্বিতীয়া বিভক্তিকে কখনোই ২য়া বিভক্তি লেখা যাবে না। *.বিভক্তির তালিকাটি ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে, প্রয়োজন হলে মুখস্থ করতে হবে। কারক কারক শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘যা ক্রিয়া সম্পাদন করে’। বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে। অর্থাৎ, বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে। কারক ৬ প্রকার- ১. কর্তৃকারক ২. কর্মকারক ৩. করণকারক ৪. সম্প্রদান কারক ৫. অপাদান কারক ৬. অধিকরণ কারক কর্তৃকারক বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কে/ কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্তৃকারক। (কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের বাক্যে এই নিয়ম খাটবে না। সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।) উদাহরণ- গরু ঘাস খায়। (কে খায়) : কর্তৃকারকে শূণ্য বিভক্তি কর্ম কারক যাকে অবলম্বন করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্ম বা কর্মকারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মকারক। বাক্যে দুইটি কর্ম থাকলে বস্ত্তবাচক কর্মটিকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম ও ব্যক্তিবাচক কর্মটিকে গৌণ কর্ম বলে। তবে দুইটি একই ধরনের কর্ম থাকলে প্রথম কর্মটিকে উদ্দেশ্য কর্ম ও দ্বিতীয়টিকে বিধেয় কর্ম বলে। যেমন- ‘দুধকে মোরা দুগ্ধ বলি, হলুদকে বলি হরিদ্রা’। এখানে ‘দুধ’ ও ‘হলুদ’ উদ্দেশ্য কর্ম, ‘দুগ্ধ’ ও ‘হরিদ্রা’ বিধেয় কর্ম। কর্তা নিজে কাজ না করে কর্মকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে তাকে প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম বলে। ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্ম বলে। [ক্রিয়াপদ] উদাহরণ- বাবা আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। (কাকে দিয়েছেন? আমাকে। কী দিয়েছেন? ল্যাপটপ) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), ল্যাপটপ- কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি (মুখ্য কর্ম) ডাক্তার ডাক। (কাকে ডাক?) : কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি আমাকে একটা বই দাও। (কাকে দাও? আমাকে। কী দাও? বই) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), বই- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (মুখ্য কর্ম) আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থণা। (কাকে করিবে? আমারে) : কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি তোমার দেখা নাই। (কার দেখা? তোমার) : কর্মকারকে ষষ্ঠী বিভক্তি জিজ্ঞাসিবে জনে জনে। (কাকে জিজ্ঞাসিবে? জনে জনে) : কর্মকারকে সপ্তমী বিভক্তি করণ কারক করণ শব্দের অর্থ যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়। যে উপাদান বা উপায়ে ক্রিয়া সম্পাদন করা হয়, তাকে করণ কারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কী দিয়ে/ কী উপায়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই করণ কারক। উদাহরণ- পিয়াল কলম দিয়ে লিখছে। (কী দিয়ে লেখে? কলম দিয়ে) :করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি কীর্তিমান হয় সাধনায়। (কী উপায়ে হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি ডাকাতেরা গৃহকর্তার মাথায় লাঠি মেরেছে। (কী দিয়ে মেরেছে? গুলি): করণ কারকে শূণ্য বিভক্তি লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হয়। (কী দিয়ে চাষ করা হয়? লাঙ্গল দিয়ে): করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি মন দিয়ে পড়াশুনা কর। (কী উপায়ে/ দিয়ে কর? মন দিয়ে) :করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি ফুলে ফুলে ঘর ভরেছে। (কী দিয়ে ভরেছে? ফুলে ফুলে) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। (কী দিয়ে/ উপায়ে চেনা যায়? গোঁফে): করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি সাধনায় সব হয়। (কী উপায়ে সব হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি এ সুতায় কাপড় হয় না। (কী দিয়ে হয় না? সুতায়)

দ্বিরুক্ত শব্দ: দ্বিরুক্ত শব্দ শব্দের দ্বিরুক্তি পদের দ্বিরুক্তি/ পদাত্মক দ্বিরুক্তি বিশিষ্টার্থক বাগধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ দ্বিরুক্ত শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘দ্বি+উক্ত’। অর্থাৎ, যা দুইবার বলা হয়েছে। বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ বা পদ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে অন্য একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। কোন শব্দ বা পদ পরপর দুইবার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে দ্বিরুক্ত শব্দ বলে। যেমন- ‘আমার জ্বর জ্বর লাগছে।’ এখানে ‘জ্বর জ্বর’ দ্বিরুক্ত শব্দটি ঠিক ‘জ্বর’ অর্থ প্রকাশ করছে না। জ্বরের ভাব প্রকাশ করছে। দ্বিরুক্ত শব্দ ৩ প্রকার- শব্দের দ্বিরুক্তি, পদের দ্বিরুক্তি ও অনুকার দ্বিরুক্তি। (ক) শব্দের দ্বিরুক্তি ১. একই শব্দ অবিকৃতভাবে দুইবার ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- ভাল ভাল বই, ফোঁটা ফোঁটা জল, বড় বড় বাড়ি, ইত্যাদি। ২. সহচর শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। দুটি সম্পর্কিত শব্দকে সহচর শব্দ বলা যায়। যেমন, ‘কাপড়-চোপড়’ সহচর শব্দযোগে গঠিত দ্বিরুক্ত শব্দ। ‘কাপড়’ অর্থ গা ঢাকার জন্য যেসব পরা হয়। আর কাপড়ের সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে যেগুলো পরা হয় সেগুলোই ‘চোপড়’। অর্থাৎ, এই দুটি শব্দ পরস্পর সম্পর্কিত। তাই এই দুটি শব্দ সহচর শব্দ। এরকম- লালন-পালন, খোঁজ-খবর, ইত্যাদি। ৩. একই শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে পরেরবার একটু পরিবর্তিত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- মিট-মাট, ফিট-ফাট, বকা-ঝকা, তোড়-জোড়, গল্প-সল্প, রকম-সকম, ইত্যাদি। ৪. সমার্থক শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- ধন-দৌলত, বলা-কওয়া, টাকা-পয়সা, ইত্যাদি। ৫. বিপরীতার্থক শব্দযোগেও দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন- লেন-দেন, দেনা-পাওনা, ধনী-গরিব, আসা-যাওয়া, ইত্যাদি। (খ) পদের দ্বিরুক্তি/ পদাত্মক দ্বিরুক্তি পদ বা বিভক্তিযুক্ত শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে পদের দ্বিরুক্তি বা পদাত্মক দ্বিরুক্তি বলে। পদাত্মক দ্বিরুক্তি নিম্নোক্তভাবে গঠিত হতে পারে- ১. একই পদ অবিকৃতভাবে পরপর দুইবার ব্যবহৃত হয়ে। যেমন- ঘরে ঘরে লেখাপড়া হচ্ছে। দেশে দেশে ধন্য ধন্য পড়ে গেলো। মনে মনে আমিও এ কথাই ভাবছিলাম। ২. দ্বিতীয় পদ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে। তবে এক্ষেত্রেও পদ-বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, মূল শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়, কিন্তু বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন- আমরা হাতে-নাতে চোরটাকে ধরেছি। ৩. সহচর, সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দ একই বিভক্তি যুক্ত হয়ে পরপর ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- আমার সমত্মান যেন থাকে দুধে-ভাতে। দেশে বিদেশে বইটি লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী, আর পথে-প্রবাসে লিখেছেন মুহম্মদ এনামুল হক। পদাত্মক দ্বিরুক্তির প্রয়োগ বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি (উল্লেখ্য, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ পদের মত কাজ/ আচরণ করে। অর্থাৎ, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।) ১. আধিক্য বোঝাতে : রাশি রাশি ধন, ধামা ধামা ধান ২. সামান্য বোঝাতে : আমার জ্বর জ্বর লাগছে। কবি কবি ভাব। ৩. পরস্পরতা বা ধারাবাহিকতা বোঝাতে : তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছ। ওরা বাড়ি বাড়ি হেঁটে চাঁদা তুলছে। ৪. ক্রিয়া বিশেষণ : ধীরে ধীরে যায়, ফিরে ফিরে চায়। ৫. অনুরূপ কিছু বোঝাতে : তার সঙ্গী সাথী কেউ নেই। ৬. আগ্রহ বোঝাতে : ও দাদা দাদা বলে ডাকছে। বিশেষণ পদের দ্বিরুক্তি ১. আধিক্য বোঝাতে : ভাল ভাল আম। ছোট ছোট ডাল। ২. তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতে : গরম গরম জিলাপী। নরম নরম হাত। ৩. সামান্যতা বোঝাতে : উড়ু উড়ু ভাব। কাল কাল চেহারা। সর্বনাম পদের দ্বিরুক্তি ১. বহুবচন বা আধিক্য বোঝাতে : সে সে লোক কোথায় গেল? কে কে এল? কেউ কেউ বলে। ক্রিয়াপদের/ ক্রিয়াবাচক পদের দ্বিরুক্তি ১. বিশেষণ রূপে : রোগীর তো যায় যায় অবস্থা। তোমার নেই নেই ভাব আর গেল না। ২. স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতে : দেখতে দেখতে আকাশ কাল হয়ে এল। ৩. ক্রিয়া বিশেষণ : দেখে দেখে যাও। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলে কিভাবে? ৪. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেছি। অব্যয় পদের দ্বিরুক্তি ১. ভাবের গভীরতা বোঝাতে : সবাই হায় হায় করতে লাগল। ছি ছি, তুমি এত খারাপ! ২. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : বার বার সে কামান গর্জে উঠল। ৩. অনুভূতি বা ভাব বোঝাতে : ভয়ে গা ছম ছম করছে। ফোঁড়াটা টন টন করছে। ৪. বিশেষণ বোঝাতে : পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির। ৫. ধ্বনিব্যঞ্জনা : ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর। বিশিষ্টার্থক বাগধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ সতর্কতা বোঝাতে : ছেলেটিকে চোখে চোখে রেখো। ভাবের প্রগাঢ়তা বোঝাতে : ভুলগুলো তুই আনরে বাছা বাছা। কালের বিসত্মার বোঝাতে : থেকে থেকে শিশুটি কাঁদছে। আধিক্য বোঝাতে : লোকটা হাড়ে হাড়ে শয়তান। : খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে, পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.নমনীয় বস্তুর প্রসারণ জ্ঞাপক দ্বিরুক্ত শব্দ- (ঘ-১৯৯৮-৯৯)লকলকে *.‘অলি-গলি’ শব্দটিকে ব্যাকরণের সংজ্ঞায় বলা হয় (ঘ-১৯৯৯-২০০০) *.‘জিজ্ঞাসিব জনে জনে।’ বাক্যটির দ্বিরুক্তি কী দিয়ে গঠিত?(ক-২০০৮-০৯) *.দ্রুততা জ্ঞাপক দ্বিরুক্ত শব্দ (ক-২০০৯-১০)

ধ্বনি পরিবর্তন (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): ৮. ধ্বনি বিপর্যয় : শব্দের মধ্যবর্তী দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি অদলবদল হলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন, বাক্স˃ বাস্ক, রিক্সা˃ রিস্কা, পিশাচ˃ পিচাশ, লাফ˃ ফাল ৯. সমীভবন :(স্বরসঙ্গতির মতো, কিন্তু ব্যঞ্জন ধ্বনির পরিবর্তন হয়) দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার- ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত) ১০. বিষমীভবন : পাশাপাশি একই ব্যঞ্জনধ্বনি দু’বার থাকলে তাদের একটি পরিবর্তিত হলে তাকে বিষমীভবন বলে। যেমন, শরীর˃ শরীল, লাল˃ নাল ১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা : শব্দের কোন ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে, অর্থাৎ দুইবার উচ্চারিত হলে তাকে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা বলে। মূলত জোর দেয়ার জন্য দ্বিত্ব ব্যঞ্জন হয়। যেমন, পাকা˃ পাক্কা, সকাল˃ সক্কাল ১২. ব্যঞ্জন বিকৃতি : কোন ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোন ব্যঞ্জনধ্বনি হলে তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। যেমন, কবাট˃ কপাট, ধোবা˃ ধোপা, ধাইমা˃ দাইমা ১৩. ব্যঞ্জনচ্যুতি : পাশাপাশি দুটি একই উচ্চারণের ব্যঞ্জন থাকলে তার একটি লোপ পেলে তাকে বলে ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন, বউদিদি˃ বউদি, বড় দাদা˃ বড়দা, ১৪. অন্তর্হতি : কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন, ফাল্গুন˃ ফাগুন (‘ল’ লোপ), ফলাহার˃ ফলার, আলাহিদা˃ আলাদা ১৫. অভিশ্রুতি : যদি অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হয়, এবং পরিবর্তিত স্বরধ্বনি তার আগের স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলে যায়, এবং সেই মিলিত স্বরধ্বনির প্রভাবে তার পরের স্বরধ্বনিও পরিবর্তিত হয়, তবে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন, ‘করিয়া’ (ক+অ+র+ই+য়+আ) থেকে অপিনিহিতির মাধ্যমে (র+ই-এর আগে আরেকটা অতিরিক্ত ‘ই’ যোগ হয়ে) ‘কইরিয়া’ হলো। অর্থাৎ অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ‘ই’ স্বরধ্বনিটির পরিবর্তন হলো। আবার ‘কইরিয়া’-এর র+ই-এর ‘ই’ তার আগের ‘ই’-র সঙ্গে মিলে গেলে হলো ‘কইরয়া’ বা ‘কইরা’। এবার ‘কইরা’-র ‘ই’ ও ‘আ’ পরিবর্তিত হয়ে হলো ‘করে’। এটিই অভিশ্রুতি। এরকম, শুনিয়া˃ শুইনিয়া˃ শুইনা˃ শুনে, বলিয়া˃ বইলিয়া˃ বইলা˃ বলে, হাটুয়া˃ হাউটুয়া˃ হাউটা˃ হেটো, মাছুয়া˃ মাউছুয়া˃ মাউছা˃ মেছো ১৬. র-কার লোপ : (আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) শব্দের ‘র’ ধ্বনি বা ‘র-কার’ লোপ পেয়ে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে তাকে র-কার লোপ বলে। যেমন, তর্ক˃ তক্ক, করতে˃ কত্তে, মারল˃ মালল, করলাম˃ কল্লাম ১৭. হ-কার লোপ : (আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) অনেক সময় দুইটি স্বরধ্বনির মধ্যবর্তী ‘হ’ ধ্বনি বা ‘হ-কার’ লোপ পায়। একে হ-কার লোপ বলে। যেমন, ‘গাহিল’ (গ+আ+হ+ই+ল+অ)-এর ‘আ’ ও ‘ই’ স্বরধ্বনি দুটির মধ্যবর্তী ‘হ’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘গাইল’। এরকম, পুরোহিত˃ পুরুত, চাহে˃ চায়, সাধু˃ সাহু˃ সাউ, আল্লাহ˃ আল্লা, শাহ˃ শা ১৮. অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি : পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে, এবং সেই দুটি স্বরধ্বনি মিলে কোন যৌগিক স্বর তৈরি না করলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য মাঝে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ বা অন্তঃস্ত ‘ব’ উচ্চারিত হয়। একে অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি বলে। যেমন, ‘যা+আ’, এখানে পরপর দুটি ‘আ’ স্বরধ্বনি আছে। দুটি যুক্ত হয়ে কোন যৌগিক স্বর তৈরি করছে না। তাই এখানে মাঝখানে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ উচ্চারিত হয়ে হবে ‘যাওয়া’। এরকম, নাওয়া, খাওয়া, দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে কি বলে? (গ-২০০৮-০৯) *.‘স্কুল’ শব্দটিকে ‘ইস্কুল’ উচ্চারণে ধ্বনির এই পরিবর্তনকে বলা হয়: (গ-২০০৭-০৮) *.দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বলা হয়: (গ-২০০৫-০৬)

ধ্বনি পরিবর্তন (পর্ব ১): ধ্বনি পরিবর্তন পড়াতে যা জানা জরুরি- *.উচ্চারণবিধি ধ্বনি পরিবর্তন শব্দ ভাঙার কৌশল আদি স্বরাগম মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি : অন্ত্যস্বরাগম অপিনিহিতি অসমীকরণ স্বরসঙ্গতি সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ ধ্বনি বিপর্যয় সমীভবন বিষমীভবন দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা ব্যঞ্জন বিকৃতি ব্যঞ্জনচ্যুতি অন্তর্হতি অভিশ্রুতি র-কার লোপ হ-কার লোপ অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ধ্বনি পরিবর্তন : ভাষা সর্বদা পরিবর্তনশীল। কোন ভাষার পরিবর্তন নিয়ম বা ব্যাকরণ দিয়ে বন্ধ করে দিলে সে ভাষা আস্তে আস্তে মরে যায়। যেমন মরে গেছে সংস্কৃত ভাষা। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারণের সুবিধার্থে ভাষার শব্দ, মূলত শব্দের অন্তর্গত ধ্বনি নানাভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে এই পরিবর্তনও কিছু নিয়ম মেনে হয়ে থাকে। ধ্বনির এই পরিবর্তনই মূলত ভাষার পরিবর্তন ঘটায়। ধ্বনির পরিবর্তনের নিয়ম বা প্রক্রিয়াগুলো নিচে দেয়া হলো- [শব্দ ভাঙার কৌশল : ধ্বনি পরিবর্তন পড়ার আগে একটি কৌশল শিখে নেয়া জরুরি। শব্দের অন্তর্গত ধ্বনিগুলো আলাদা করার বা ভাঙার কৌশল। শব্দ ভাঙার সময় যেই ধ্বনি আগে উচ্চারিত হয়েছে, সেটিকে আগে লিখতে হবে। শব্দে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি পূর্ণাঙ্গ রূপে থাকার পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত রূপে কার ও ফলা আকারেও থাকে। শব্দ ভাঙার সময় এগুলোকেও বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া একটি স্বরধ্বনির কোন সংক্ষিপ্ত রূপ বা ‘কার’ নেই- ‘অ’-এর। এটি বিভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে মিলিত রূপে উচ্চারিত হয়, কিন্তু তার কোন প্রতীক বা ‘কার’ আমরা লেখি না। শব্দ ভাঙার সময় এই উহ্য ‘অ’-কেও লিখতে হবে। যেমন- ‘এখানে বসতি গাড়ে এক দঙ্গল পশু’ বাক্যটির সবগুলো শব্দ ভাঙলে হবে- এখানে = এ+খ+আ+ন+এ বসতি = ব+অ+স+অ+ত+ই গাড়ে = গ+আ+ড়+এ এক = এ+ক দঙ্গল = দ+ঙ+গ+অ+ল পশু = প+শ+উ উল্লেখ্য, যুক্তব্যঞ্জনের ভেতরে কোন উহ্য ‘অ’ থাকে না।] ১. আদি স্বরাগম : শব্দের আদিতে বা শুরচতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলা হয় আদি স্বরাগম। যেমন, ‘স্কুল’ শব্দটি উচ্চারণের সুবিধার জন্য শুরচতে ‘ই’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে ‘ইস্কুল’ হয়ে গেছে। এটি আদি স্বরাগম। এরকম- স্টেশন˃ ইস্টিশন, স্ট্যাবল˃ আস্তাবল, স্পর্ধা˃ আস্পর্ধা ২. মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি : শব্দের মাঝখানে স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে মধ্য স্বরাগম। যেমন, ‘রত্ন’ (র+অ+ত+ন+অ) শব্দের ‘ত’ ও ‘ন’-র মাঝখানে একটি অ যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘রতন’। এটি মধ্য স্বরাগম। এরকম- ধর্ম˃ ধরম, স্বপ্ন˃ স্বপন, হর্ষ˃ হরষ, প্রীতি˃ পিরীতি, ক্লিপ˃ কিলিপ, ফিল্ম˃ ফিলিম, মুক্তা˃ মুকুতা, তুর্ক˃ তুরুক, ভ্রু˃ ভুরু, গ্রাম˃ গেরাম, প্রেক˃ পেরেক, স্রেফ˃ সেরেফ, শ্লোক˃ শোলোক, মুরগ˃ মুরোগ˃ মোরোগ, ৩. অন্ত্যস্বরাগম : শব্দের শেষে একটা অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে অন্ত্যস্বরাগম। যেমন, ‘দিশ্’-র সঙ্গে অতিরিক্ত ‘আ’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘দিশা’। এরকম- পোক্ত্˃ পোক্ত, বেঞ্চ˃ বেঞ্চি, সত্য˃ সত্যি ৪. অপিনিহিতি : পরের ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন, ‘আজি (আ+জ+ই) শব্দের ‘ই’ আগে উচ্চারিত হয়ে হয়েছে ‘আইজ’ (আ+ই+জ)। এরকম- সাধু˃ সাউধ, রাখিয়া˃ রাইখ্যা, বাক্য˃ বাইক্য, সত্য˃ সইত্য, চারি˃ চাইর, মারি˃ মাইর ৫. অসমীকরণ : দুটো একই ধ্বনির পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনি যুক্ত হলে তাকে বলে অসমীকরণ। যেমন, ধপ+ধপ˃ (মাঝখানে একটি অতিরিক্ত আ যোগ হয়ে) ধপাধপ। এরকম- টপ+টপ˃ টপাটপ ৬. স্বরসঙ্গতি : দুটি স্বরধ্বনির মধ্যে সঙ্গতি রক্ষার্থে একটির প্রভাবে আরেকটি পরিবর্তিত হলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, ‘দেশি’ (দ+এ+শ+ই)˃ (‘ই’-র প্রভাবে ‘এ’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ই’ হয়ে) ‘দিশি’। স্বরসঙ্গতি ৫ প্রকার- ক. প্রগত :আগের স্বরধ্বনি অনুযায়ী পরের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মুলা˃ মুলো, শিকা˃ শিকে, তুলা˃ তুলো খ.পরাগত : পরের স্বরধ্বনি অনুযায়ী আগের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে পরাগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, আখো˃ আখুয়া˃ এখো, দেশি˃ দিশি গ. মধ্যগত : অন্যান্য স্বরধ্বনির প্রভাবে মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, বিলাতি˃ বিলিতি ঘ. অন্যোন্য : আগের ও পরের স্বরধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে যদি দুইটি-ই পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাকে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মোজা˃ মুজো ঙ. চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতি : গিলা˃ গেলা, মিলামিশা˃ মেলামেশা। মিঠা˃ মিঠে, ইচ্ছা˃ ইচ্ছে। মুড়া˃ মুড়ো, চুলা˃ চুলো। উড়ুনি˃ উড়নি, এখুনি˃ এখনি। ৭. সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ : শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ বলে। যেমন, ‘বসতি’ (ব+অ+স+অ+ত+ই)-র মাঝের ‘অ’ স্বরধ্বনি লোপ পেয়ে হয়েছে ‘বস্তি’ (ব+অ+স+ত+ই)। স্বরলোপ ৩ প্রকার- ক. আদিস্বরলোপ : শব্দের শুরুর স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন, অলাবু˃ লাবু˃ লাউ, এড়ন্ড˃ (‘এ’ লোপ পেয়ে) রেড়ী, উদ্ধার˃ উধার˃ ধার। খ. মধ্যস্বরলোপ : শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে মধ্যস্বরাগম বলে। যেমন, অগুরু˃ অগ্রু, সুবর্ণ˃ স্বর্ণ গ. অন্ত্যস্বরালোপ : শব্দের শেষের স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যেমন, আশা˃ আশ, আজি˃ আজ, চারি˃ চার, সন্ধ্যা˃ সঞ্ঝ্যা˃ সাঁঝ (স্বরলোপ স্বরাগম-এর বিপরীত প্রক্রিয়া।)

ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ ও উচ্চারণবিধি (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): স্পর্শ ব্যঞ্জন : ক থেকে ম পর্যন্ত প্রথম ২৫ টিব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস মুখগহবরের কোন না কোন জায়গা স্পর্শ করে যায়। এজন্য এই ২৫টি বর্ণকে বলা হয় স্পর্শধ্বনি বা স্পৃষ্টধ্বনি। অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ ধ্বনি :যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় বা ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাসের জোর বেশি থাকে, তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। আর যে ধ্বনিগুলোতে বাতাসের জোর কম থাকে, নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না, তাদেরকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। ক, গ, চ, জ- এগুলো অল্পপ্রাণ ধ্বনি। আর খ, ঘ, ছ, ঝ- এগুলো মহাপ্রাণ ধ্বনি। ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি :যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, অর্থাৎ গলার মাঝখানের উঁচু অংশে হাত দিলে কম্পন অনুভূত হয়, তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে। আর যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন, ক, খ, চ, ছ- এগুলো অঘোষ ধ্বনি। আর গ, ঘ, জ, ঝ- এগুলো ঘোষ ধ্বনি। উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি : শ, ষ, স, হ-এই চারটি ধ্বনি উচ্চারণের শেষে যতক্ষণ ইচ্ছা শ্বাস ধরে রাখা যায়, বা শিশ্ দেয়ার মতো করে উচ্চারণ করা যায়। এজন্য এই চারটি ধ্বনিকে বলা হয় উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি। এগুলোর মধ্যে শ, ষ, স- অঘোষ অল্পপ্রাণ,হ- ঘোষ মহাপ্রাণ।ঃ ঃ (বিসর্গ) :অঘোষ‘হ’-র উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনিই হলো‘ঃ’। বাংলায় একমাত্র বিস্ময়সূচক অব্যয়ের শেষে বিসর্গ ধ্বনি পাওয়া যায়। পদের মধ্যে ‘ঃ’ বর্ণটি থাকলে পরবর্তী ব্যঞ্জনের উচ্চারণ দুইবার হয়, কিন্তু ‘ঃ’ ধ্বনির উচ্চারণ হয় না। কম্পনজাত ধ্বনি- র :‘র’ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ কম্পিত হয়, বা কাঁপে এবং দন্তমূলকে কয়েকবার আঘাত করে ‘র’ উচ্চারিত হয়। এজন্য ‘র’-কে বলা হয় কম্পনজাত ধ্বনি। তাড়নজাত ধ্বনি- ড় ও ঢ় :‘ড়’ ও ‘ঢ়’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগের নিচের দিক বা তলদেশ ওপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে দ্রচত আঘাত করে বা তাড়না করে উচ্চারিত হয়। এজন্য এদেরকে তাড়নজাত ধ্বনি বলে। মূলত ‘ড’ ও ‘র’ দ্রচত উচ্চারণ করলে যে মিলিত রূপ পাওয়া যায় তাই ‘ড়’ এর উচ্চারণ। একইভাবে ‘ঢ়’, ‘ঢ’ ও ‘র’-এর মিলিত উচ্চারণ। পার্শ্বিক ধ্বনি- ল :‘ল’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ উপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে ঠেকিয়ে জিহবার দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের করে দেয়া হয়। দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে। আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম-এদের উচ্চারণের সময় এবংং, ঁকোন ধ্বনির সঙ্গে থাকলে তাদের উচ্চারণের সময় মুখ দিয়ে বাতাস বের হওয়ার সময় কিছু বাতাস নাক দিয়ে বা নাসারন্ধ্র দিয়েও বের হয়। উচ্চারণ করতে নাক বা নাসিক্যের প্রয়োজন হয় বলে এগুলোকে বলা হয় আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি। পরাশ্রয়ী বর্ণ : ং,ঃ,ঁ- এই ৩টি বর্ণ যে ধ্বনি নির্দেশ করে তারা কখনো স্বাধীন ধ্বনি হিসেবে শব্দে ব্যবহৃত হয় না। এই ধ্বনিগুলো অন্য ধ্বনি উচ্চারণের সময় সেই ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চারিত হয়। নির্দেশিত ধ্বনি নিজে নিজে উচ্চারিত না হয়ে পরের উপর আশ্রয় করে উচ্চারিত হয় বলে এই বর্ণগুলোকে পরাশ্রয়ী বর্ণ বলে। নিচে স্পর্শধ্বনির (ও অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধ্বনি) একটি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা ছক আকারে দেয়া হলো- স্পর্শধ্বনি/ বর্গীয় ধ্বনি (বর্গগুলো এই পর্যন্ত সীমিত) নাম উচ্চারণ প্রণালী অঘোষ ঘোষ নাসিক্য অঘোষ অঘোষ ঘোষ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ মহাপ্রাণ ক-বর্গীয় ধ্বনি (কণ্ঠ্য ধ্বনি) জিহবার গোড়া নরম তালুর পেছনের অংশ স্পর্শ করে ক খ গ ঘ ঙ চ-বর্গীয় ধ্বনি (তালব্য ধ্বনি) জিহবার অগ্রভাগ চ্যাপ্টা ভাবে তালুর সামনের দিকে ঘষা খায় চ ছ জ ঝ ঞ য য় শ ট-বর্গীয় ধ্বনি (মূর্ধন্য ধ্বনি) জিহবার অগ্রভাগ কিছুটা উল্টিয়ে ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ স্পর্শ করে ট ঠ ড ঢ ণ র ড় ঢ় ষ ত-বর্গীয় ধ্বনি (দন্ত্য ধ্বনি) জিহবা সামনের দিকে এগিয়ে ওপরের দাঁতের পাটির গোড়া স্পর্শ করে ত থ দ ধ ন ল স প-বর্গীয় ধ্বনি (ওষ্ঠ্য ধ্বনি) দুই ঠোঁট বা ওষ্ঠ ও অধর জোড়া লেগে উচ্চারিত হয় প ফ ব ভ ম ঃ হ *.উল্লেখ্য, কণ্ঠ্য ধ্বনিকে জিহবামূলীয় এবং মূর্ধণ্য ধ্বনিকে দন্তমূল প্রতিবেষ্টিত ধ্বনিও বলে। অন্তঃস্থ ধ্বনি :য, র, ল, ব- এদেরকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয়। তবে অন্তঃস্থ ‘ব’ এখন আর বর্ণমালায় নেই, এবং এখন আর এটি শব্দে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় না। তবে ব্যাকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত সন্ধিতে এর প্রয়োগ দেখা যায়। কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ ক+ত = ক্ত জ+ঞ = জ্ঞ ত+ত = ত্ত ন+থ = ন্থ র+উ = রু ষ+ম = ষ্ম হ+উ = হু ক+ষ = ক্ষ ঞ+জ = ঞ্জ ত+থ = ত্থ ন+ধ = ন্ধ র+ঊ = রূ ষ+ণ = ষ্ণ হ+ঋ = হৃ ক+য = ক্য ঞ+চ = ঞ্চ ত+ম = ত্ম র+ধ = র্ধ স+র = স্র হ+ব = হ্ব ক+র = ক্র ঞ+ছ = ঞ্ছ ত+র = ত্র ব+ধ = ব্ধ ল+ল = ল্ল স+ন = স্ন হ+ণ = হ্ণ গ+উ = গু ট+ট = ট্ট ত+র+উ = ত্রু ভ+র = ভ্র স+ব = স্ব হ+ন = হ্ন ঙ+গ = ঙ্গ ণ+ড = ণ্ড দ+য = দ্য ভ+র+উ = ভ্রু শ+উ = শু স+ত = স্ত হ+ম = হ্ম ঙ+ক = ঙ্ক দ+ম = দ্ম ম+ব = ম্ব শ+র+উ = শ্রু স+য = স্য দ+ধ = দ্ধ শ+র+ঊ = শ্রূ স+থ = স্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.ড় এবং ঢ় (ঘ-২০০৫-০৬) *.দন্তমূলের শেষাংশ ও জিহবার সহযোগে সৃষ্ট ধ্বনি- (ঘ-২০০৬-০৭) *.যথাক্রমে ক্ষ, ষ্ণ হ্ন- তিনটি যুক্ত বর্ণের বিশ্লিষ্ট রূপ নির্দেশ কর- (ক-২০০৫-০৬) *.পার্শ্বিক ব্যঞ্জনের উদাহরণ কোনটি? (ক-২০০৬-০৭) *.মুখ বিবরের বায়ুপথ সংকীর্ণ হয়ে কোন জায়গায় ঘষা না খেয়ে উৎপণ্ন হয় যে-ধ্বনি- (ক-২০০৬-০৭) *.বাংলা বর্ণমালার স্বরবর্ণ অংশের মাত্রাহীন বর্ণের সংখ্যা- (ক-২০০৬-০৭) *.‘ত্রু’ এর বিশ্লিষ্ট রূপ- (ক-২০০৬-০৭) *.বাঙালি শিশু কোন বর্গের ধ্বনিগুলো আগে শেখে? (ক-২০০৭-০৮) *.‘ক্রমপুঞ্জিত শব্দটির যথার্থ উচ্চারণ হল (ক-২০০৭-০৮) *.‘তৃষ্ণা’ শব্দে কোন কোন বর্ণ আছে? (ক-২০০৮-০৯) *.‘ব্যাকরণ’ শব্দের যথাযথ উচ্চারণ হল- (ক-২০০৮-০৯) *.বাংলা অভিধানে ‘ক্ষ’-এর অবস্থান (ক-২০০৯-১০) *.কোনটি যৌগিক স্বরধ্বনি (ক-২০০৯-১০)

ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ ও উচ্চারণবিধি (পর্ব ১): ধ্বনি স্বরধ্বনি ব্যঞ্জনধ্বনি বর্ণ স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি বাংলা বর্ণমালা বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ ; কার ও ফলা উচ্চারণবিধি স্বরধ্বনির উচ্চারণ ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ স্পর্শ ব্যঞ্জন অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ ধ্বনি ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি উষ্মধ্বনি বা শিশ্ধ্বনি ঃ (বিসর্গ) কম্পনজাত ধ্বনি- র তাড়নজাত ধ্বনি- ড় ও ঢ় পার্শ্বিক ধ্বনি- ল আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম পরাশ্রয়ী বর্ণ : ং,ঃ,ঁ স্পর্শধ্বনির (ও অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধ্বনি) একটি পূর্ণাঙ্গ ছক অন্তঃস্থ ধ্বনি কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ধ্বনি : কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো ধ্বনি। ভাষাকে বা ভাষার বাক প্রবাহকে বিশেলষণ করলে কতগুলো ক্ষুদ্রতম একক বা মৌলিক ধ্বনি পাওয়া যায়। যেমন- অ, আ, ক্, খ্, ইত্যাদি। ধ্বনি মূলত ২ প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি। স্বরধ্বনি : ধ্বনি উচ্চারণের সময় মানুষ ফুসফুস থেকে কিছু বাতাস ছেড়ে দেয়। এবং সেই বাতাস ফুসফুস কণ্ঠনালী দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খেয়ে বা বাঁক খেয়ে একেক ধ্বনি উচ্চারণ করে। যে ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় এই বাতাস কোথাও বাধা পায় না, বা ধাক্কা খায় না, তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন, অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ইত্যাদি। এগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে মুখের বাহিরে আসতে কোথাও ধাক্কা খায় না। ব্যঞ্জনধ্বনি : যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস মুখের বাহিরে আসার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খায়, বা বাধা পায়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- ক্, খ্, গ্, ঘ্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস জিহবামূল বা কণ্ঠ্যে ধাক্কা খায়। তাই এগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি। বর্ণ : বিভিন্ন ধ্বনিকে লেখার সময় বা নির্দেশ করার সময় যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্ণ বলে। স্বরবর্ণ : স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণকে স্বরবর্ণ বলে। ব্যঞ্জনবর্ণ : ব্যঞ্জনধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি : আমরা যখন ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণ করি, তখন তার শেষে একটি স্বরধ্বনি ‘অ’-ও উচ্চারণ করি। যেমন, ‘ক্’ কে উচ্চারণ করি (ক্ + অ =) ‘ক’। উচ্চারণের সুবিধার জন্য আমরা এই কাজ করি। কিন্তু স্বরধ্বনি ছাড়া ‘ক্’ উচ্চারণ করলে সেটা প্রকাশ করার জন্য ‘ক’-এর নিচে যে চিহ্ন (& )দেয়া হয়, তাকে বলে হস্ / হল চিহ্ন। আর যে ধ্বনির পরে এই চিহ্ন থাকে, তাকে বলে হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি। কোন বর্ণের নিচে এই চিহ্ন দেয়া হলে তাকে বলে হসন্ত বা হলন্ত বর্ণ। বাংলা বর্ণমালা : বাংলা বর্ণমালায় বর্ণ আছে মোট ৫০টি। নিচে বর্ণমালা অন্যান্য তথ্য সহকারে দেয়া হলো- পূর্ণমাত্রা অর্ধমাত্রা মাত্রাহীন স্বরবর্ণ অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ* ও ঔ* ৬ ১ ৪ ব্যঞ্জনবর্ণ ক খ গ ঘ ঙ ২ ২ ১ চ ছ জ ঝ ঞ ৪ - ১ ট ঠ ড ঢ ণ ৪ ১ - ত থ দ ধ ন ৩ ২ - প ফ ব ভ ম ৪ ১ - য র ল ৩ - - শ ষ স হ ৩ ১ - ড় ঢ় য় ৎ ৩ - ১ ংঃ ঁ - - ৩ মোট স্বরবর্ণ ১১ মোট ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯ মোট বর্ণ ৫০ পূর্ণ, অর্ধ ও মাত্রাহীন বর্ণ ৩২ ৮ ১০ * এই দুটি স্বরধ্বনিকে দ্বিস্বর বা যুগ্ম স্বরধ্বনি বলে। কারণ, এই দুটি মূলত ২টি স্বরধ্বনির মিশ্রণ। যেমন- অ+ই = ঐ, অ+উ = ঔ বা ও+উ = ঔ। অর্থাৎ,বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি মূলত ৯টি। বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ ; কার ও ফলা : প্রতিটি স্বরবর্ণ ও কিছু কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ দুটো রূপে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, স্বাধীনভাবে শব্দের মাঝে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক সময় অন্য কোন বর্ণে যুক্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপে বা আশ্রিত রূপেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘আ’ বর্ণটি ‘আমার’ শব্দের স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, আবার ‘ম’-র সঙ্গে আশ্রিত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপেও (া ) ব্যবহৃত হয়েছে। স্বরবর্ণের এই আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে কার, আর ব্যঞ্জনবর্ণের আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা। উপরে ‘আমার’ শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে যুক্ত ‘আ’-র সংক্ষিপ্ত রূপটিকে (া ) বলা হয় আ-কার। এমনিভাবে ই-কার ( w ), ঈ-কার ( x ), উ-কার ( y ), ঊ-কার ( ~ ), ঋ-কার (ৃ ), এ-কার ( † ), ঐ-কার ( ˆ ), ও-কার ( ো), ঔ-কার ৌ) কার। তবে ‘অ’ এর কোন কার নেই। আবার আম্র শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে ‘র’ সংক্ষিপ্ত রূপে বা ফলা যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত রূপটি (ª ) র-ফলা। এরকম ম-ফলা ( ¨ ), ল-ফলা ( ­ ), ব-ফলা ( ^ ), ইত্যাদি। উচ্চারণবিধি স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্বরধ্বনির উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে বের হয়ে কোথাও বাধা পায় না। মূলত জিহবার অবস্থান ও ঠোঁটের বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। নিচে স্বরধ্বনির উচ্চারণ একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো- জিহবার অবস্থান জিহবা সামনে আগাবে ঠোঁটের প্রসারণ ঘটবে জিহবা শায়িত অবস্থায় ঠোঁট স্বাভাবিক/ বিবৃত জিহবা পিছিয়ে আসবে ঠোঁট গোলাকৃত হবে উচ্চে ই ঈ (উচ্চসম্মুখ স্বরধ্বনি) উ ঊ (উচ্চ পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) উচ্চমধ্যে এ (মধ্যাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি) ও (মধ্যাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) নিম্নমধ্যে অ্যা (নিম্নাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি) অ (নিম্নাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) নিম্নে আ (কেন্দ্রীয় নিমণাবস্থিত স্বরধ্বনি, বিবৃত ধ্বনি) যৌগিক স্বরধ্বনি : পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে তারা উচ্চারণের সময় সাধারণত একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হলে মিলিত স্বরধ্বনিটিকে বলা হয়যৌগিক স্বর, সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর। বাংলা ভাষায়যৌগিক স্বর মোট ২৫টি। তবেযৌগিক স্বরবর্ণ মাত্র ২টি- ঐ, ঔ। অন্য যৌগিক স্বরধ্বনিগুলোর নিজস্ব প্রতীক বা বর্ণ নেই। ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ উচ্চারণ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

বাচ্য: বাচ্য পড়তে যে বিষয়েগুলো জানা জরুরি- ক্রিয়াপদ বাচ্য কর্তা কর্ম কর্তৃবাচ্য কর্মবাচ্য ভাববাচ্য কর্মকর্তৃবাচ্য বাচ্য : বাক্যের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশভঙ্গিকে বাচ্য বলে। একটি বাক্যকে বিভিন্নভাবে লেখা যেতে পারে। একেকভাবে লিখলে বাক্যটির মূল বক্তব্য একই থাকলেও, একেকবার একেকটি উপাদান অধিক প্রাধান্য পায়। একটি বাক্যের বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গিকেই বলে বাচ্য। বাংলা ভাষায় ৩টি বাচ্য পাওয়া যায়- কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্য। [বিভিন্ন ধরনের বাচ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে বাক্যের কর্তা ও কর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার। কর্তা : যেই পদ বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্তা বলে। অর্থাৎ, যে বাক্যের কাজটি করে, সে-ই কর্তা। যেমন- গরু ঘাস খায়। এখানে খাওয়ার কাজটি করছে ‘গরু’।- সুতরাং, এখানে ‘গরু’ কর্তা। টেবিলটি সকাল থেকে এরকম নড়বড় করছে।- এখানে ‘নড়বড় করা’র কাজটি করছে ‘টেবিল’। সুতরাং, এখানে কর্তা ‘টেবিল’। ক্রিয়াকে ‘কে/কারা‘ দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্তা পদ পাওয়া যায়। কর্ম : কর্তা যাকে আশ্রয় করে বা অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে কর্ম বলে। অর্থাৎ, কর্তা যার সাহায্যে কাজটি করে, তাই কর্ম। যেমন- গরু ঘাষ খায়।- এখানে ‘গরু’ ‘খাওয়া’র কাজটি করার জন্য ‘ঘাস’কে অবলম্বন হিসেবে নিয়েছে। সে ‘ঘাস’কে দিয়ে ‘খাওয়া’র কাজ করছে। সুতরাং, এখানে ‘ঘাস’ কর্ম। বাবা আমাকে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন।- এখানে ‘কিনে দেয়া’র কাজটি করেছেন ‘বাবা’। ‘বাবা’ এখানে কর্তা। ‘বাবা’ ‘কিনে দেয়া’র কাজ করার জন্য ‘আমাকে’ ও ‘ল্যাপটপ’-র সাহায্য নিয়েছেন। এখানে, ‘আমাকে’ ও ‘ল্যাপটপ’ কর্ম। ক্রিয়াকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্তা পদ পাওয়া যায়।] কর্তৃবাচ্য : বাক্যে কর্তার প্রাধান্য রক্ষিত হলে তাকে কর্তৃবাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে কর্তা অনুযায়ী ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয় এবং ক্রিয়া কর্তার অনুসারী হয়। কর্তৃবাচ্যের পদে কর্তায়- শূণ্য বিভক্তি হয়। কর্মে- দ্বিতীয়া বা ষষ্ঠী বিভক্তি হয়। (শূণ্য বিভক্তিও হতে পারে) যেমন- ছাত্ররা বাংলা পড়ছে। শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান। রোগী পথ্য সেবন করে। কর্মবাচ্য : কর্মপদ প্রধান রূপে প্রকাশিত হলে তাকে কর্মবাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে ক্রিয়াপদ কর্তা অনুযায়ী না হয়ে কর্মপদ অনুযায়ী হয় এবং কর্মপদের অনুসারী হয়। এ ধরনের বাক্যে কর্তায়- তৃতীয়া বিভক্তি হয়। কর্মে- শূণ্য বিভক্তি হয়। (কখনো কখনো দ্বিতীয়া বিভক্তিও হয়) যেমন- শিকারি কর্তৃক বাঘটি নিহত হয়েছে। আলেকজান্ডার কর্তৃক পারস্য বিজিত হয়। চোরটা ধরা পড়েছে। আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে। (কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি) ভাববাচ্য : বাক্যে ক্রিয়ার অর্থই বিশেষভাবে প্রকাশিত হলে তাকে ভাববাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে কর্ম থাকে না এবং কর্তাও প্রধান হয় না। কাউকে কোন কিছু সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে বলতে গেলে ভাববাচ্যে বলা যায়। এ ধরনের বাক্যে কর্তায়- ষষ্ঠী, দ্বিতীয়া বা তৃতীয়া বিভক্তি হয়। নামপুরুষের ক্রিয়াপদ [ক্রিয়াপদ] হয়। মাঝে মাঝে মূল ক্রিয়াপদের সঙ্গে সহযোগী ক্রিয়াপদও যুক্ত হয়। কখনো কখনো কর্তা উহ্য থাকে, অর্থাৎ কর্তা অনুল্লেখিত থাকে। যেমন- আমার খাওয়া হল না। (নামপুরুষের ক্রিয়াপদ) তোমার যাওয়া হবে না। (নামপুরুষের ক্রিয়াপদ) এ পথে চলাযায়না। (সহযোগী ক্রিয়াপদ যুক্ত) কোথা থেকে আসাহচ্ছে। (সহযোগী ক্রিয়াপদ যুক্ত) এ ব্যাপারে আমাকে দায়ী করা চলে না। (কর্তা ‘তুমি’ উহ্য) এ রাস্তা আমার চেনা নেই। কর্মকর্তৃবাচ্য : এছাড়াও বাংলায় আরো এক ধরনের প্রকাশভঙ্গির বাক্য দেখা যায়। এ ধরনের বাক্যের বাচ্যকে বলা হয় কর্মকর্তৃবাচ্য। এ ধরনের বাক্যে কর্তাপদ উহ্য থাকে, তবে কর্মপদ থাকে। আর ওই কর্মপদই কর্তার কাজ করে। অর্থাৎ, যে বাক্যে কর্তা থাকে না, কর্মই কর্তার কাজ করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। যেমন- কাজটা ভাল দেখায় না।- এখানে কর্তা নেই। কর্ম হল ‘কাজ’। কিন্তু ‘কাজ’ নিজেই কর্তার মত বাক্যকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরকম- বাঁশি বাজে এ মধুর লগনে। সুতি কাপড় অনেক দিন টেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.কোন বাক্যটি ভাববাচ্যে রচিত? (ঘ-১৯৯৮-৯৯) আমার যাওয়া হবে না *.‘তুমি কবে আসবে?’ বাক্যটিকে ভাববাচ্যে রূপান্তর করলে দাঁড়াবে (ঘ-২০০৫-০৬) *.কর্মবাচ্যের উদাহরণ (ঘ-২০০৮-০৯)ওকে খেতে ডেকে আন *.ভাববাচ্য কোনটি? (ক-২০০৫-০৬) সাহেবের কোথায় থাকা হয় *.ভাববাচ্যের উদাহরণ- (ক-২০০৯-১০) চোরটাকে ধরা গেল না। *.‘শিক্ষককে সকলেই সম্মান করে’- এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ? (গ-২০০৯-১০)

বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য হাইফেন ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, দুইটি পদ একসঙ্গে লিখতে গেলে হাইফেন দিয়ে লিখতে হয়। যেমন- সুখ-দুঃখ, মা-বাবা। ইলেক বা লোপ চিহ্ন কোন বর্ণ লোপ করে বা বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত উচ্চারণ বোঝাতে ইলেক বা লোপ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। কবিতা বা অন্যান্য সাহিত্যে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- মাথার ’পরে জ্বলছে রবি। (’পরে= ওপরে) পাগড়ি বাঁধা যাচ্ছে কা’রা? (কা’রা = কাহারা) উদ্ধরণ চিহ্ন বক্তার কথা হুবুহু উদ্ধৃত করলে সেটিকে এই চিহ্নের মধ্যে রাখতে হয়। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের মধ্যে রেখে লিখতে হয়। যেমন- ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছেন, ‘জন্মভূমি অথবা মৃত্যু’। ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন ( ).{ }. [ ] গণিতশাস্ত্রে এই তিনটির আলাদা গুরচত্ব থাকলেও ভাষার ক্ষেত্রে এদের আলাদা কোন গুরচত্ব নেই। তবে সাহিত্যে ও রচনায় ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য প্রথম বন্ধনী ব্যবহার করা হয়। যেমন- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে পরাজয় মেনে দলিলে স্বাক্ষর করে। ]ব্যাকরণিক চিহ্ন বিরাম চিহ্নের বাইরেও বাংলা ভাষায় কিছু চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এগুলো দিয়ে কোন বিরতি বা ছেদ বোঝানো হয় না। এগুলো ব্যাকরণের কতোগুলো টার্মস বোঝায়। ব্যাকরণের বিভিন্ন তথ্য বা টার্মস বোঝাতে যেই চিহ্নগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলোই ব্যাকরণিক চিহ্ন। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উলেলখযোগ্য কয়েকটি ব্যাকরণিক চিহ্ন হলো- বোঝায় চিহ্ন/ আকৃতি উদাহরণ ধাতু √ √স্থা = স্থা ধাতু পরবর্তী শব্দ হতে উৎপন্ন ˂ জাঁদরেল ˂ জেনারেল পূর্ববর্তী শব্দ হতে উৎপন্ন ˃ গঙ্গা ˃ গাঙ সমানবাচক বা সমস্তবাচক = নর ও নারী = নরনারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.যেখানে কমা অপেক্ষা অধিক বিরাম আবশ্যক সেখানে কোন চিহ্ন ব্যবহার হয়? (ঘ-২০০৩-০৪) *.কোন কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে বসে (ঘ-২০০৪-০৫) *.সেমিকোলনের বাংলা (ঘ-২০০৫-০৬) *.হাইফেন ব্যবহৃত হয়- (ক-২০০৫-০৬) *.বাক্যের সূচনায় সম্বোধন থাকলে যে বিরাম চিহ্ন বসে- (ক-২০০৬-০৭) *.বাক্যের প্রান্তিক চিহ্ন নয় কোনটি? (ক-২০০৬-০৭) *.অসম্পূর্ণ বাক্যের শেষে কোন বিরাম চিহ্ন বসে? (ক-২০০৮-০৯) *.পূর্ণ বাক্যে একাধিক স্বাধীন বাক্যাংশের পরে বসে- (ক-২০০৯-১০)

বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন (পর্ব ১): বিরাম চিহ্ন :বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য বাক্য উচ্চারণের সময় বাক্যের মাঝে ও শেষে বিরতি দিতে হয়। এই বিরতির পরিমাণ প্রয়োজন অনুযায়ী কম-বেশি হয়ে থাকে। আবার বাক্য উচ্চারণের সময় বিভিন্ন আবেগের জন্য উচ্চারণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। বাক্যটি লেখার সময় এই বিরতি ও আবেগের ভিন্নতা প্রকাশ করার জন্য যেই চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হয়, তাদেরকে বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন বলে। প্রাচীন বাংলায় মাত্র দুইটি বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করা হতো, দাঁড়ি (।) ও দুই দাঁড়ি (॥)। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজি ভাষার অনুকরণে বাংলায় আরো অনেকগুলো বিরাম চিহ্ন প্রচলন করেন। বর্তমানে ব্যবহৃত বিরাম চিহ্নগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিরাম চিহ্ন নিচে দেয়া হলো- যতি চিহ্নের নাম আকৃতি বিরতির পরিমাণ কমা , ১ বলতে যে সময় লাগে দাঁড়ি/ পূর্ণচ্ছেদ । এক সেকেন্ড জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নসূচক চিহ্ন ? এক সেকেন্ড বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ! এক সেকেন্ড ড্যাস - এক সেকেন্ড কোলন ড্যাস :- এক সেকেন্ড কোলন : এক সেকেন্ড সেমি কোলন ; ১ বলার দ্বিগুণ সময় উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন ‘ ’/ ‘‘ ’’ এক সেকেন্ড হাইফেন - থামার প্রয়োজন নেই ইলেক বা লোপ চিহ্ন ’ থামার প্রয়োজন নেই বন্ধনী চিহ্ন ( ) থামার প্রয়োজন নেই { } [ ] দুই দাঁড়ি ॥ ত্রিবিন্দু বা ত্রিডট ... বিরাম চিহ্নে ব্যবহার কমা (,) *.বাক্য সুস্পষ্ট করতে বাক্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগের মাঝে কমা বসে। যেমন- সুখ চাও, সুখ পাবে বই পড়ে। *.পরস্পর সম্পর্কিত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে ব্যবহৃত হলে শেষ পদটি ছাড়া প্রতিটির পরে কমা বসে। যেমন- ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মন সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, ভালবাসা, আনন্দে ভরে থাকে। *.সম্বোধনের পরে কমা বসে। যেমন- রশিদ, এদিকে এসো। *.জটিল বাক্যের প্রত্যেকটি খন্ডবাক্যের পরে কমা বসে। যেমন- যে পরিশ্রম করে, সেই সুখ লাভ করে। *.কোন বাক্যে উদ্ধৃতি থাকলে, তার আগের খন্ডবাক্যের শেষে কমা (,) বসে। যেমন- আহমদ ছফা বলেন, ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।’ তুমি বললে, ‘আমি কালকে আবার আসবো।’ *.মাসের তারিখ লেখার সময় বার ও মাসের পর কমা বসে। যেমন- ২৫ বৈশাখ, ১৪১৮, বুধবার। *.ঠিকানা লেখার সময় বাড়ির নাম্বার বা রাস্তার নামের পর কমা বসে। যেমন- ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা- ১০০০। *.ডিগ্রী পদবি লেখার সময় কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন- ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম,এ, পি-এইচ,ডি। সেমিকোলন (;) কমা-র চেয়ে বেশি কিন্তু দাঁড়ি-র চেয়ে কম বিরতি দেয়ার জন্য সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- আমরা সবাই সবাইকে ভালবাসি; আসলেই কি সবাই ভালবাসি? *.এক ধরনের বাক্যন্তর্গত চিহ্ন *.একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন বসে *.বক্তব্য স্পষ্ট করার জন্য সমজাতীয় বাক্য পাশাপাশি প্রতিস্থাপন করলে সেমিকোলন বসে [অনুশীলনী; যৌবনের গান] দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।) প্রতিটি বাক্যের[] শেষে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। দাঁড়ি দিয়ে বাক্যটি শেষ হয়েছে বোঝায়। যেমন- আমি কাল বাড়ি আসবো। প্রশ্নবোধক চিহ্ন প্রশ্নবোধক বাক্যের[] শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- তুমি কেমন আছ? বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন বিস্মিত হওয়ার অনুভূতি প্রকাশের জন্য কিংবা অন্য কোন হৃদয়ানুভূতি প্রকাশের জন্য এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- আহা! কী চমৎকার দৃশ্য। ছি! তুমি এত খারাপ। হুররে! আমরা খেলায় জিতেছি। আগে সম্বোধনের পরেও বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আধুনিক নিয়ম অনুযায়ী সম্বোধনের পরে কমা বসে। তাই পুরোনো লেখায় সম্বোধনের পরে বিস্ময়সূচক চিহ্ন থাকলেও এখন এটা আর লেখা হয় না। যেমন- জননী! আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে। কোলন একটি অপূর্ণ বাক্যের পর অন্য একটি বাক্য লিখতে হলে কোলন ব্যবহার করতে হয়। যেমন- সভায় ঠিক করা হল : এক মাস পর আবার সভা অনুষ্ঠিত হবে। ড্যাস (-) যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে দুই বা তারচেয়েও বেশি পৃথক বাক্য লেখার সময় তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহার করা যায়। যেমন- তোমরা দরিদ্রের উপকার কর- এতে তোমাদের সম্মান যাবে না- বাড়বে। *.কোনো কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় *.বাক্য অসম্পূর্ণ থাকলে বাক্যের শেষে ড্যাশ চিহ্ন বসে *.গল্পে উপন্যাসে প্রসঙ্গের পরিবর্তন বা ব্যাখ্যায় ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় *.নাটক বা গল্প-উপন্যাসে সংলাপের আগেও ড্যাশ চিহ্ন বসে [অনুশীলনী; যৌবনের গান] কোলন ড্যাস (:-) উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগের জন্য কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হয়। যেমন- পদ পাঁচ প্রকার :- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া।

বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন: বিরাম চিহ্ন :বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য বাক্য উচ্চারণের সময় বাক্যের মাঝে ও শেষে বিরতি দিতে হয়। এই বিরতির পরিমাণ প্রয়োজন অনুযায়ী কম-বেশি হয়ে থাকে। আবার বাক্য উচ্চারণের সময় বিভিন্ন আবেগের জন্য উচ্চারণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। বাক্যটি লেখার সময় এই বিরতি ও আবেগের ভিন্নতা প্রকাশ করার জন্য যেই চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হয়, তাদেরকে বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন বলে। প্রাচীন বাংলায় মাত্র দুইটি বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করা হতো, দাঁড়ি (।) ও দুই দাঁড়ি (॥)। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজি ভাষার অনুকরণে বাংলায় আরো অনেকগুলো বিরাম চিহ্ন প্রচলন করেন। বর্তমানে ব্যবহৃত বিরাম চিহ্নগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিরাম চিহ্ন নিচে দেয়া হলো- যতি চিহ্নের নাম আকৃতি বিরতির পরিমাণ কমা , ১ বলতে যে সময় লাগে দাঁড়ি/ পূর্ণচ্ছেদ । এক সেকেন্ড জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নসূচক চিহ্ন ? এক সেকেন্ড বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ! এক সেকেন্ড ড্যাস - এক সেকেন্ড কোলন ড্যাস :- এক সেকেন্ড কোলন : এক সেকেন্ড সেমি কোলন ; ১ বলার দ্বিগুণ সময় উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন ‘ ’/ ‘‘ ’’ এক সেকেন্ড হাইফেন - থামার প্রয়োজন নেই ইলেক বা লোপ চিহ্ন ’ থামার প্রয়োজন নেই বন্ধনী চিহ্ন ( ) থামার প্রয়োজন নেই { } [ ] দুই দাঁড়ি ॥ ত্রিবিন্দু বা ত্রিডট ... বিরাম চিহ্নে ব্যবহার কমা (,) *.বাক্য সুস্পষ্ট করতে বাক্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগের মাঝে কমা বসে। যেমন- সুখ চাও, সুখ পাবে বই পড়ে। *.পরস্পর সম্পর্কিত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে ব্যবহৃত হলে শেষ পদটি ছাড়া প্রতিটির পরে কমা বসে। যেমন- ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মন সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, ভালবাসা, আনন্দে ভরে থাকে। *.সম্বোধনের পরে কমা বসে। যেমন- রশিদ, এদিকে এসো। *.জটিল বাক্যের প্রত্যেকটি খন্ডবাক্যের পরে কমা বসে। যেমন- যে পরিশ্রম করে, সেই সুখ লাভ করে। *.কোন বাক্যে উদ্ধৃতি থাকলে, তার আগের খন্ডবাক্যের শেষে কমা (,) বসে। যেমন- আহমদ ছফা বলেন, ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।’ তুমি বললে, ‘আমি কালকে আবার আসবো।’ *.মাসের তারিখ লেখার সময় বার ও মাসের পর কমা বসে। যেমন- ২৫ বৈশাখ, ১৪১৮, বুধবার। *.ঠিকানা লেখার সময় বাড়ির নাম্বার বা রাস্তার নামের পর কমা বসে। যেমন- ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা- ১০০০। *.ডিগ্রী পদবি লেখার সময় কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন- ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম,এ, পি-এইচ,ডি। সেমিকোলন (;) কমা-র চেয়ে বেশি কিন্তু দাঁড়ি-র চেয়ে কম বিরতি দেয়ার জন্য সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- আমরা সবাই সবাইকে ভালবাসি; আসলেই কি সবাই ভালবাসি? *.এক ধরনের বাক্যন্তর্গত চিহ্ন *.একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন বসে *.বক্তব্য স্পষ্ট করার জন্য সমজাতীয় বাক্য পাশাপাশি প্রতিস্থাপন করলে সেমিকোলন বসে [অনুশীলনী; যৌবনের গান] দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।) প্রতিটি বাক্যের[] শেষে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। দাঁড়ি দিয়ে বাক্যটি শেষ হয়েছে বোঝায়। যেমন- আমি কাল বাড়ি আসবো। প্রশ্নবোধক চিহ্ন প্রশ্নবোধক বাক্যের[] শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- তুমি কেমন আছ? বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন বিস্মিত হওয়ার অনুভূতি প্রকাশের জন্য কিংবা অন্য কোন হৃদয়ানুভূতি প্রকাশের জন্য এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- আহা! কী চমৎকার দৃশ্য। ছি! তুমি এত খারাপ। হুররে! আমরা খেলায় জিতেছি। আগে সম্বোধনের পরেও বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আধুনিক নিয়ম অনুযায়ী সম্বোধনের পরে কমা বসে। তাই পুরোনো লেখায় সম্বোধনের পরে বিস্ময়সূচক চিহ্ন থাকলেও এখন এটা আর লেখা হয় না। যেমন- জননী! আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে। কোলন একটি অপূর্ণ বাক্যের পর অন্য একটি বাক্য লিখতে হলে কোলন ব্যবহার করতে হয়। যেমন- সভায় ঠিক করা হল : এক মাস পর আবার সভা অনুষ্ঠিত হবে। ড্যাস (-) যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে দুই বা তারচেয়েও বেশি পৃথক বাক্য লেখার সময় তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহার করা যায়। যেমন- তোমরা দরিদ্রের উপকার কর- এতে তোমাদের সম্মান যাবে না- বাড়বে। *.কোনো কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় *.বাক্য অসম্পূর্ণ থাকলে বাক্যের শেষে ড্যাশ চিহ্ন বসে *.গল্পে উপন্যাসে প্রসঙ্গের পরিবর্তন বা ব্যাখ্যায় ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় *.নাটক বা গল্প-উপন্যাসে সংলাপের আগেও ড্যাশ চিহ্ন বসে [অনুশীলনী; যৌবনের গান] কোলন ড্যাস (:-) উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগের জন্য কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হয়। যেমন- পদ পাঁচ প্রকার :- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া।

ব্যাকরণ ও এর আলোচ্য বিষয়: ব্যাকরণ:ব্যাকরণ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়- বি+আ+কৃ+অন = ব্যাকরণ। যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে। [বাংলা ভাষার ব্যাকরণ(নবম-দশম শ্রেণী); মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী] সুতরাং, যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে। ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা : ১. ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন-প্রকৃতি জানা ২. ভাষার বিভিন্ন উপাদানের সুষ্ঠু ব্যবহার করা ৩. ভাষা ব্যবহারের সময় শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় করতে পারা বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় : প্রতিটি ভাষারই ৪টি মৌলিক অংশ থাকে- ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ। আর তাই সব ভাষার ব্যাকরণই প্রধানত এই ৪টি অংশ নিয়েই আলোচনা করে। অর্থাৎ, ব্যাকরণের বা বাংলা ব্যাকরণের মূল আলোচ্য বিষয়/ অংশ ৪টি- ১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology) ২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology) ৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) ৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics) এছাড়াও ব্যাকরণে আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অভিধানতত্ত্ব(Lexicography), ছন্দ ও অলংকার, ইত্যাদি। নিচে বাংলা ব্যাকরণের এই ৪টি মূল বিষয় সংশ্লিষ্ট কিছু সংজ্ঞা দেওয়া হলো : ধ্বনি:কোন ভাষারউচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককইহলো সেই ভাষার ধ্বনি। ধ্বনি ভাষার মূল উপাদান। ধ্বনিমূল:ধ্বনির সূক্ষ্মতম মৌলিক অংশকে বা একককে বলা হয় ধ্বনিমূল বা phoneme। এই ধ্বনিমূল বা phoneme থেকেই ধ্বনিতত্ত্বের নাম হয়েছে Phonology। বর্ণ:বিভিন্ন ধ্বনিকে লেখার সময় বা নির্দেশ করার সময় যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্ণ বলে। শব্দ:একটি ধ্বনি বা একাধিক ধ্বনি একত্রিত হয়ে যখন কোনোসুনির্দিষ্ট অর্থপ্রকাশ করে, তখন সেই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে।বাক্যের মূল উপাদান শব্দ। রূপ:শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় রূপ বা morpheme। রূপ শব্দের ক্ষুদ্রতম একক। এই রূপ বা morpheme থেকেই শব্দতত্ত্বের নাম হয়েছে রূপতত্ত্ব বা Morphology। বাক্য:কতোগুলো পদসুবিন্যস্তহয়ে বক্তার মনোভাবসম্পূর্ণভাবেপ্রকাশ করলে তাকে বাক্য বলে। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য। বাংলা ব্যাকরণের মূল ৪টি অংশে যে সব বিষয় আলোচনা করা হয়, সেগুলো নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেয়া হলো: ব্যাকরণের অংশ আলোচ্য বিষয় ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology) (ধ্বনি সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়।) ধ্বনির উচ্চারণবিধি ধ্বনি পরিবর্তন সন্ধি/ধ্বনিসংযোগ (সন্ধি ধ্বনির মিলন। তাই এটি ধ্বনিতত্ত্বে আলোচিত হয়।) ণত্ব ও ষত্ব বিধান শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology) (শব্দ সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়।) সমাস (সমাস শব্দের মিলন। তাই এটি শব্দতত্ত্বে আলোচিত হয়।) প্রকৃতি-প্রত্যয় (প্রকৃতি-প্রত্যয় শব্দ নিয়ে কাজ করে। মনে রাখা দরকার, প্রকৃতি মাত্রই প্রাতিপদিক বা ক্রিয়াপদ, অর্থাৎ স্বাধীন শব্দ।) উপসর্গ (উপসর্গ নিজে শব্দ না হলেও শব্দ ছাড়া এর কোনো প্রয়োজন নেই। উপরন্তু উপসর্গ নতুন শব্দ তৈরির একটি উল্লেখযোগ্য হাতিয়ারও বটে।) বচন পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ দ্বিরুক্ত শব্দ সংখ্যাবাচক শব্দ পদাশ্রিত নির্দেশক ধাতু শব্দের শ্রেণীবিভাগ বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) (বাক্য সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়।) পদ প্রকরণ (শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তখনই সেটাকে পদ বলে। তাই পদ বাক্যের ও পদ প্রকরণ বাক্যতত্ত্বের অন্তর্গত।) ক্রিয়াপদ কারক ও বিভক্তি (বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে। বাক্যের অন্তর্গত পদ নিয়ে কাজ করে বলে কারকও বাক্যতত্ত্বের অন্তর্গত।) কাল পুরুষ অনুসর্গ বাগধারা বাচ্য উক্তি যতি ও ছেদ চিহ্ন (বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে যতি বা ছেদ চিহ্ন ব্যবহার হয়। অর্থাৎ, এরা বাক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।) বাক্যের প্রকারভেদ বাক্যে পদ-সংস্থাপনার ক্রম বা পদক্রম অর্থতত্ত্ব (Semantics) (অর্থ সম্পর্কিত বিষয়াদি এখানে আলোচিত হয়।) শব্দের অর্থবিচার বাক্যের অর্থবিচার অর্থের প্রকারভেদ; মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.‘ব্যাকরণ’ শব্দটি গঠিত হয়েছে: (গ-২০০৮-০৯) *.বাগধারা ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়: (গ-২০০৪-০৫) *.‘ব্যকরণ’ শব্দের সঠিক অর্থ হল- (গ-২০০১-০২)

বাক্য প্রকরণ (বাকি অংশ): ঙ) দুর্বোধ্যতা : অপ্রচলিত কিংবা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে বাক্য তার যোগ্যতা গুণ হারায়। এই ধরনের শব্দ বাক্যের শব্দগুলোর মধ্যে অর্থগত মিলবন্ধন নষ্ট করে। যেমন- এ কী প্রপঞ্চ! বাক্যটির প্রপঞ্চ শব্দটি অপ্রচলিত, একই সঙ্গে দুর্বোধ্য। তাই বাক্যটির অর্থ পরিস্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে না। ফলে বাক্যের পদগুলোর মধ্যের অর্থগত মিলবন্ধন বিনষ্ট হয়েছে। তাই এটি কোন যোগ্যতা সম্পন্ন সার্থক বাক্য হতে পারেনি। চ) রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা : বাক্যে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, শব্দগুলো যাতে তাদের রীতিসিদ্ধ অর্থ অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়। শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক বা রীতিসিদ্ধ অর্থ ভিন্ন হলে, অবশ্যই রীতিসিদ্ধ অর্থে শব্দ ব্যবহার করতে হবে। নয়তো শব্দটির সঙ্গে বাক্যের অন্য শব্দগুলোর অর্থগত মিলবন্ধন নষ্ট হবে। যেমন- ‘বাধিত’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘বাধাপ্রাপ্ত’। আর ব্যবহারিক বা রীতিসিদ্ধ অর্থ হলো ‘কৃতজ্ঞ’। শব্দটি ব্যবহারের সময় কৃতজ্ঞ অর্থেই ব্যবহার করতে হবে। নয়তো তা অর্থ বিকৃত করবে। ফলে বাক্যটি যোগ্যতা গুণ হারাবে। উদ্দেশ্য ও বিধেয় প্রতিটি বাক্যের দুটি অংশ থাকে- উদ্দেশ্য ও বিধেয়। বাক্যে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য বলে। বাক্যে উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা কিছু বলা হয়, তাই বিধেয়। যেমন- বইটি খুব ভালো। বাক্যটিতে বইটি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘বইটি’ উদ্দেশ্য। অন্যদিকে, ‘বইটি’ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘খুব ভালো’। এই ‘খুব ভালো’ বাক্যটির বিধেয় অংশ। উদ্দেশ্য অংশ একটি শব্দ না হয়ে একটি বাক্যাংশও হতে পারে। এবং সেই শব্দ বা বাক্যাংশটি শুধু বিশেষ্য-ই হবে, এমন কোন কথাও নেই। উদ্দেশ্য বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন বাক্যাংশ, এমনকি ক্রিয়াভাবাপন্ন বাক্যাংশও হতে পারে। উদ্দেশ্য বিধেয় সৎ হওয়া খুব কঠিন। (এখানে ক্রিয়াভাবাপন্ন বাক্যাংশ উদ্দেশ্য) সৎ লোকেরাই প্রকৃত সুখী। (এখানে বিশেষণভাবাপন্ন বাক্যাংশ উদ্দেশ্য) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.‘রাত্রিতে রৌদ্র হয়।’- এই বাক্যে কিসের অভাব? (ক-২০০৯-১০) *.ভাষার মূল উপকরণ কি? (গ-২০০৮-০৯) *.বাংলাভাষায় ‘গুরুচণ্ডালী’ দোষ মানে হলো: (গ-২০০৬-০৭)

বাক্য প্রকরণ: বাক্য: কতোগুলো পদ সুবিন্যস্ত হয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করলে তাকে বাক্য বলে। বাক্যে কতোগুলো পদ থাকে। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তাকে পদ বলে। এই বিভক্তি যুক্ত হয়ে শব্দগুলো পরস্পর সম্পর্কিত হয়ে বাক্য গঠন করে। নয়তো বাক্য তৈরি হয় না। যেমন- আমা মা আমা অনেক আদর করে। এখানে মূল শব্দগুলো বিভক্তি ছাড়া সঠিক ক্রমে (ড়ৎফবৎ) সাজানো হলেও একটির সঙ্গে আরেকটি শব্দের কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি। শব্দগুলোতে বিভক্তি যুক্ত করলে একটি সম্পূর্ণ বাক্য তৈরি হবে- আমার মা আমাকে অনেক আদর করে। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য, বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ। আর ভাষার মূল উপাদান ধ্বনি। ভাষার বিচারে/ব্যাকরণ অনুযায়ী একটি সার্থক বাক্যের ৩টি গুণ থাকতেই হবে/আবশ্যক- আকাঙক্ষা, আসত্তি, যোগ্যতা। আকাঙক্ষা : বাক্যে সম্পূর্ণ একটি মনোভাব থাকতে হবে। বাক্যের ভাব বা বক্তার বক্তব্য অসম্পূর্ণ থাকলে সেটি বাক্য হবে না। যেমন- মা আমাকে অনেক... বা মা আমাকে অনেক আদর... উপরের কোন বাক্যই বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ করছে না। দুটি বাক্য শেষ হওয়ার পরও আরো কিছু শোনার আকাঙক্ষা থেকে যাচ্ছে। সুতরাং, কোন বাক্যেরই আকাঙক্ষা গুণটি নেই। তাই কোনটিই বাক্য নয়। সম্পূর্ণ বাক্যটি হবে- মা আমাকে অনেক আদর করে। এটি শোনার পর আর কিছু শোনার আগ্রহ বাকি থাকছে না। সুতরাং এটি আকাঙক্ষা গুণ সম্পন্ন একটি সার্থক বাক্য। অর্থাৎ, শ্রোতার সম্পূর্ণ বাক্য শোনার আগ্রহ-ই আকাঙক্ষা। আসত্তি : বাক্যের পদগুলোকে সঠিক ক্রমে/ অর্ডারে না সাজালে সেটি বাক্য হয় না। উপরের বাক্যের পদগুলো অন্যভাবে সাজালে সেটি বাক্য নাও হতে পারে। যেমন, উপরের বাক্যকে যদি এভাবে সাজানো হয়- আমার অনেক মা আদর আমাকে করে। এখানে বাক্যের প্রকৃত অর্থ যেমন বিকৃত হয়ে গেছে, তেমনি বিকৃত অর্থও পরিস্কার ভাবে প্রকাশিত হয়নি। সুতরাং, বাক্যের পদগুলোকেও সঠিক ক্রমানুযায়ী বিন্যস্ত করতে হবে। বাক্যের এই বিন্যাসকেই আসত্তি বলে। উপরের বাক্যটিকে সঠিক ক্রমে সাজালে হবে- আমার মা আমাকে অনেক আদর করে। এখানে বাক্যের পদগুলোর বিন্যাস বাক্যটির অর্থ সঠিক ও পরিস্কারভাবে প্রকাশ করছে। সুতরাং এটি আসত্তি গুণ সম্পন্ন একটি সার্থক বাক্য। অর্থাৎ, বাক্যের পদগুলোকে সঠিক ক্রমে (Order) বিন্যস্ত করে বক্তার মনোভাব সঠিক ও পরিস্কার করে বোঝানোর কৌশলই আসত্তি গুণ। যোগ্যতা :বাক্যের অর্থ সঠিক ও পরিস্কার করে বোঝাতে আকাঙক্ষা ও আসত্তি গুণ ছাড়াও আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। বাক্যের পদগুলো যদি পরস্পর অর্থগত ও ভাবগত দিক দিয়ে সম্পর্কিত না হয়, তাহলেও সেটি সার্থক বাক্য হয় না। যেমন- গ্রীষ্মের বৃষ্টিতে পলাবনের সৃষ্টি হয়েছে। বাক্যটিতে আকাঙক্ষা গুণও যেমন আছে, তেমনি এতে আসত্তি গুণও আছে। কিন্তু বাক্যটি সার্থক বাক্য নয়। কারণ, গ্রীষ্মে বৃষ্টিই হয় না। সুতরাং, সেই বৃষ্টিতে পলাবনের প্রশ্নই আসে না। সুতরাং, বাক্যের পদগুলোর মধ্যে অর্থগত এবং ভাবগত কোনই মিল নেই। বাক্যটি যদি এভাবে লেখা হয়- বর্ষার বৃষ্টিতে পলাবনের সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে বাক্যটির পদগুলোর মধ্যে অর্থগত ও ভাবগত মিল পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এটি একটি যোগ্যতা গুণ সম্পন্ন সার্থক বাক্য। অর্থাৎ, বাক্যের শব্দগুলোর অর্থগত ও ভাবগত মিলকেই যোগ্যতা বলে। বাক্যের যোগ্যতার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো জড়িত- ক) গুরুচণ্ডালী দোষ :সংশিলষ্ট দুটি শব্দের একটি তৎসম ও একটি তদ্ভব শব্দ ব্যবহার করলে সেটি বাক্যের যোগ্যতা গুণ নষ্ট করে। কারণ, তাতে পদগুলোর ভাবগত মিল নষ্ট হয়। একে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে। যেমন- ‘গরুর গাড়ি’ শব্দদুটো সংশিলষ্ট শব্দ এবং দুটিই খাঁটি বাংলা শব্দ। আমরা যদি একে ‘গরুর শকট’ বলি, তা শুনতে যেমন বিশ্রী শোনায়, তেমনি শব্দদুটোর ভাবগত মিলও আর থাকে না। এটিই গুরুচণ্ডালী দোষ। এরকম- ‘শবদাহ’কে ‘মড়াদাহ’ কিংবা ‘শবপোড়া’, ‘মড়াপোড়া’কে ‘শবপোড়া’ বা ‘মড়াদাহ’, বললে তা গুরুচণ্ডালী দোষ হবে। অর্থাৎ, বাক্যে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ ও তদ্ভব বা খাঁটি বাংলা শব্দ একসঙ্গে ব্যবহার করলে তাকে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে। খ) বাহুল্য দোষ :প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ বা শব্দাংশ ব্যবহার করলে শব্দের অর্থগত যোগ্যতা নষ্ট হয়। ফলে বাক্যও যোগ্যতা গুণ হারায়। শব্দকে বহুবচন করার সময় একাধিক বহুবচনবোধক শব্দ বা শব্দাংশ ব্যবহার করা একটি সাধারণ বাহুল্য দোষ। অধিক জোর দেয়ার জন্য অনেক সময় এই কৌশল প্রয়োগ করা হলেও সাধারণ ক্ষেত্রে একাধিক বহুবচনবোধক শব্দ বা শব্দাংশ ব্যবহার করলে শব্দটি বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়। যেমন- ‘সব মানুষেরা’ বাহুল্য দোষে দুষ্ট শব্দ। যোগ্যতা গুণ সম্পন্ন বাক্যে ‘সব মানুষ’ বা ‘মানুষেরা’- এই দুটির যে কোন একটি ব্যবহার করতে হবে। গ) উপমার ভুল প্রয়োগ :উপমা-অলংকার সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এগুলোর প্রয়োগে কোন ভুল হলে বাক্য তার ভাবগত যোগ্যতা হারাবে। যেমন- আমার হৃদয়-মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হল। বাক্যটিতে উপমার ভুল প্রয়োগ হয়েছে। কারণ, বীজ মন্দিরে উপ্ত হয় না/ বপন করা হয় না। বীজ বপন করা হয় ক্ষেতে। সুতরাং বলতে হবে- আমার হৃদয়-ক্ষেত্রে আশার বীজ উপ্ত হল। ঘ) বাগধারার শব্দ পরিবর্তন :বাগধারা ভাষার একটি ঐতিহ্য। বাংলা ভাষাতেও অসংখ্য বাগধারা প্রচলিত আছে। এসব বাগধারা ব্যবহার করার সময় এগুলোর কোন পরিবর্তন করলে বাগধারার ভাবগত যোগ্যতা নষ্ট হয়। ফলে বাক্য তার যোগ্যতা গুণ হারায়। সুতরাং, যোগ্যতা সম্পন্ন সার্থক বাক্য তৈরি করতে বাগধারা সঠিকভাবেই লিখতে হবে। যেমন- যদি বলা হয়, ‘অরণ্যে ক্রন্দন’, তাহলে গুরুচণ্ডালী দোষও হয় না। কিন্তু বাগধারাটির শব্দ পরিবর্তন করার কারণে এটি তার ভাবগত যোগ্যতা হারিয়েছে। যোগ্যতা সম্পন্ন বাক্য গঠন করতে হলে প্রচলিত বাগধারাটিই লিখতে হবে। অর্থাৎ, ‘অরণ্যে রোদন’ই লিখতে হবে।