Search This Blog

ধ্বনি পরিবর্তন (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): ৮. ধ্বনি বিপর্যয় : শব্দের মধ্যবর্তী দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি অদলবদল হলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন, বাক্স˃ বাস্ক, রিক্সা˃ রিস্কা, পিশাচ˃ পিচাশ, লাফ˃ ফাল ৯. সমীভবন :(স্বরসঙ্গতির মতো, কিন্তু ব্যঞ্জন ধ্বনির পরিবর্তন হয়) দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার- ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত) ১০. বিষমীভবন : পাশাপাশি একই ব্যঞ্জনধ্বনি দু’বার থাকলে তাদের একটি পরিবর্তিত হলে তাকে বিষমীভবন বলে। যেমন, শরীর˃ শরীল, লাল˃ নাল ১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা : শব্দের কোন ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে, অর্থাৎ দুইবার উচ্চারিত হলে তাকে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা বলে। মূলত জোর দেয়ার জন্য দ্বিত্ব ব্যঞ্জন হয়। যেমন, পাকা˃ পাক্কা, সকাল˃ সক্কাল ১২. ব্যঞ্জন বিকৃতি : কোন ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোন ব্যঞ্জনধ্বনি হলে তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। যেমন, কবাট˃ কপাট, ধোবা˃ ধোপা, ধাইমা˃ দাইমা ১৩. ব্যঞ্জনচ্যুতি : পাশাপাশি দুটি একই উচ্চারণের ব্যঞ্জন থাকলে তার একটি লোপ পেলে তাকে বলে ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন, বউদিদি˃ বউদি, বড় দাদা˃ বড়দা, ১৪. অন্তর্হতি : কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন, ফাল্গুন˃ ফাগুন (‘ল’ লোপ), ফলাহার˃ ফলার, আলাহিদা˃ আলাদা ১৫. অভিশ্রুতি : যদি অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হয়, এবং পরিবর্তিত স্বরধ্বনি তার আগের স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলে যায়, এবং সেই মিলিত স্বরধ্বনির প্রভাবে তার পরের স্বরধ্বনিও পরিবর্তিত হয়, তবে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন, ‘করিয়া’ (ক+অ+র+ই+য়+আ) থেকে অপিনিহিতির মাধ্যমে (র+ই-এর আগে আরেকটা অতিরিক্ত ‘ই’ যোগ হয়ে) ‘কইরিয়া’ হলো। অর্থাৎ অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ‘ই’ স্বরধ্বনিটির পরিবর্তন হলো। আবার ‘কইরিয়া’-এর র+ই-এর ‘ই’ তার আগের ‘ই’-র সঙ্গে মিলে গেলে হলো ‘কইরয়া’ বা ‘কইরা’। এবার ‘কইরা’-র ‘ই’ ও ‘আ’ পরিবর্তিত হয়ে হলো ‘করে’। এটিই অভিশ্রুতি। এরকম, শুনিয়া˃ শুইনিয়া˃ শুইনা˃ শুনে, বলিয়া˃ বইলিয়া˃ বইলা˃ বলে, হাটুয়া˃ হাউটুয়া˃ হাউটা˃ হেটো, মাছুয়া˃ মাউছুয়া˃ মাউছা˃ মেছো ১৬. র-কার লোপ : (আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) শব্দের ‘র’ ধ্বনি বা ‘র-কার’ লোপ পেয়ে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে তাকে র-কার লোপ বলে। যেমন, তর্ক˃ তক্ক, করতে˃ কত্তে, মারল˃ মালল, করলাম˃ কল্লাম ১৭. হ-কার লোপ : (আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) অনেক সময় দুইটি স্বরধ্বনির মধ্যবর্তী ‘হ’ ধ্বনি বা ‘হ-কার’ লোপ পায়। একে হ-কার লোপ বলে। যেমন, ‘গাহিল’ (গ+আ+হ+ই+ল+অ)-এর ‘আ’ ও ‘ই’ স্বরধ্বনি দুটির মধ্যবর্তী ‘হ’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘গাইল’। এরকম, পুরোহিত˃ পুরুত, চাহে˃ চায়, সাধু˃ সাহু˃ সাউ, আল্লাহ˃ আল্লা, শাহ˃ শা ১৮. অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি : পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে, এবং সেই দুটি স্বরধ্বনি মিলে কোন যৌগিক স্বর তৈরি না করলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য মাঝে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ বা অন্তঃস্ত ‘ব’ উচ্চারিত হয়। একে অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি বলে। যেমন, ‘যা+আ’, এখানে পরপর দুটি ‘আ’ স্বরধ্বনি আছে। দুটি যুক্ত হয়ে কোন যৌগিক স্বর তৈরি করছে না। তাই এখানে মাঝখানে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ উচ্চারিত হয়ে হবে ‘যাওয়া’। এরকম, নাওয়া, খাওয়া, দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে কি বলে? (গ-২০০৮-০৯) *.‘স্কুল’ শব্দটিকে ‘ইস্কুল’ উচ্চারণে ধ্বনির এই পরিবর্তনকে বলা হয়: (গ-২০০৭-০৮) *.দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বলা হয়: (গ-২০০৫-০৬)