Search This Blog

ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ ও উচ্চারণবিধি (পর্ব ১): ধ্বনি স্বরধ্বনি ব্যঞ্জনধ্বনি বর্ণ স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি বাংলা বর্ণমালা বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ ; কার ও ফলা উচ্চারণবিধি স্বরধ্বনির উচ্চারণ ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ স্পর্শ ব্যঞ্জন অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ ধ্বনি ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি উষ্মধ্বনি বা শিশ্ধ্বনি ঃ (বিসর্গ) কম্পনজাত ধ্বনি- র তাড়নজাত ধ্বনি- ড় ও ঢ় পার্শ্বিক ধ্বনি- ল আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম পরাশ্রয়ী বর্ণ : ং,ঃ,ঁ স্পর্শধ্বনির (ও অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধ্বনি) একটি পূর্ণাঙ্গ ছক অন্তঃস্থ ধ্বনি কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ধ্বনি : কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো ধ্বনি। ভাষাকে বা ভাষার বাক প্রবাহকে বিশেলষণ করলে কতগুলো ক্ষুদ্রতম একক বা মৌলিক ধ্বনি পাওয়া যায়। যেমন- অ, আ, ক্, খ্, ইত্যাদি। ধ্বনি মূলত ২ প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি। স্বরধ্বনি : ধ্বনি উচ্চারণের সময় মানুষ ফুসফুস থেকে কিছু বাতাস ছেড়ে দেয়। এবং সেই বাতাস ফুসফুস কণ্ঠনালী দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খেয়ে বা বাঁক খেয়ে একেক ধ্বনি উচ্চারণ করে। যে ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় এই বাতাস কোথাও বাধা পায় না, বা ধাক্কা খায় না, তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন, অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ইত্যাদি। এগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে মুখের বাহিরে আসতে কোথাও ধাক্কা খায় না। ব্যঞ্জনধ্বনি : যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস মুখের বাহিরে আসার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খায়, বা বাধা পায়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- ক্, খ্, গ্, ঘ্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস জিহবামূল বা কণ্ঠ্যে ধাক্কা খায়। তাই এগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি। বর্ণ : বিভিন্ন ধ্বনিকে লেখার সময় বা নির্দেশ করার সময় যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্ণ বলে। স্বরবর্ণ : স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণকে স্বরবর্ণ বলে। ব্যঞ্জনবর্ণ : ব্যঞ্জনধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি : আমরা যখন ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণ করি, তখন তার শেষে একটি স্বরধ্বনি ‘অ’-ও উচ্চারণ করি। যেমন, ‘ক্’ কে উচ্চারণ করি (ক্ + অ =) ‘ক’। উচ্চারণের সুবিধার জন্য আমরা এই কাজ করি। কিন্তু স্বরধ্বনি ছাড়া ‘ক্’ উচ্চারণ করলে সেটা প্রকাশ করার জন্য ‘ক’-এর নিচে যে চিহ্ন (& )দেয়া হয়, তাকে বলে হস্ / হল চিহ্ন। আর যে ধ্বনির পরে এই চিহ্ন থাকে, তাকে বলে হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি। কোন বর্ণের নিচে এই চিহ্ন দেয়া হলে তাকে বলে হসন্ত বা হলন্ত বর্ণ। বাংলা বর্ণমালা : বাংলা বর্ণমালায় বর্ণ আছে মোট ৫০টি। নিচে বর্ণমালা অন্যান্য তথ্য সহকারে দেয়া হলো- পূর্ণমাত্রা অর্ধমাত্রা মাত্রাহীন স্বরবর্ণ অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ* ও ঔ* ৬ ১ ৪ ব্যঞ্জনবর্ণ ক খ গ ঘ ঙ ২ ২ ১ চ ছ জ ঝ ঞ ৪ - ১ ট ঠ ড ঢ ণ ৪ ১ - ত থ দ ধ ন ৩ ২ - প ফ ব ভ ম ৪ ১ - য র ল ৩ - - শ ষ স হ ৩ ১ - ড় ঢ় য় ৎ ৩ - ১ ংঃ ঁ - - ৩ মোট স্বরবর্ণ ১১ মোট ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯ মোট বর্ণ ৫০ পূর্ণ, অর্ধ ও মাত্রাহীন বর্ণ ৩২ ৮ ১০ * এই দুটি স্বরধ্বনিকে দ্বিস্বর বা যুগ্ম স্বরধ্বনি বলে। কারণ, এই দুটি মূলত ২টি স্বরধ্বনির মিশ্রণ। যেমন- অ+ই = ঐ, অ+উ = ঔ বা ও+উ = ঔ। অর্থাৎ,বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি মূলত ৯টি। বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ ; কার ও ফলা : প্রতিটি স্বরবর্ণ ও কিছু কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ দুটো রূপে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, স্বাধীনভাবে শব্দের মাঝে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক সময় অন্য কোন বর্ণে যুক্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপে বা আশ্রিত রূপেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘আ’ বর্ণটি ‘আমার’ শব্দের স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, আবার ‘ম’-র সঙ্গে আশ্রিত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপেও (া ) ব্যবহৃত হয়েছে। স্বরবর্ণের এই আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে কার, আর ব্যঞ্জনবর্ণের আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা। উপরে ‘আমার’ শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে যুক্ত ‘আ’-র সংক্ষিপ্ত রূপটিকে (া ) বলা হয় আ-কার। এমনিভাবে ই-কার ( w ), ঈ-কার ( x ), উ-কার ( y ), ঊ-কার ( ~ ), ঋ-কার (ৃ ), এ-কার ( † ), ঐ-কার ( ˆ ), ও-কার ( ো), ঔ-কার ৌ) কার। তবে ‘অ’ এর কোন কার নেই। আবার আম্র শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে ‘র’ সংক্ষিপ্ত রূপে বা ফলা যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত রূপটি (ª ) র-ফলা। এরকম ম-ফলা ( ¨ ), ল-ফলা ( ­ ), ব-ফলা ( ^ ), ইত্যাদি। উচ্চারণবিধি স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্বরধ্বনির উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে বের হয়ে কোথাও বাধা পায় না। মূলত জিহবার অবস্থান ও ঠোঁটের বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। নিচে স্বরধ্বনির উচ্চারণ একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো- জিহবার অবস্থান জিহবা সামনে আগাবে ঠোঁটের প্রসারণ ঘটবে জিহবা শায়িত অবস্থায় ঠোঁট স্বাভাবিক/ বিবৃত জিহবা পিছিয়ে আসবে ঠোঁট গোলাকৃত হবে উচ্চে ই ঈ (উচ্চসম্মুখ স্বরধ্বনি) উ ঊ (উচ্চ পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) উচ্চমধ্যে এ (মধ্যাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি) ও (মধ্যাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) নিম্নমধ্যে অ্যা (নিম্নাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি) অ (নিম্নাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) নিম্নে আ (কেন্দ্রীয় নিমণাবস্থিত স্বরধ্বনি, বিবৃত ধ্বনি) যৌগিক স্বরধ্বনি : পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে তারা উচ্চারণের সময় সাধারণত একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হলে মিলিত স্বরধ্বনিটিকে বলা হয়যৌগিক স্বর, সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর। বাংলা ভাষায়যৌগিক স্বর মোট ২৫টি। তবেযৌগিক স্বরবর্ণ মাত্র ২টি- ঐ, ঔ। অন্য যৌগিক স্বরধ্বনিগুলোর নিজস্ব প্রতীক বা বর্ণ নেই। ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ উচ্চারণ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়েছে।