সমাস (পর্ব ১):
সমাস
ব্যাসবাক্য
সমস্ত পদ
সমস্যমান পদ
পূর্বপদ
পরপদ/ উত্তরপদ
প্রকারভেদ
অর্থ প্রাধান্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ
দ্বন্দ্ব সমাস
কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
উপমেয়
উপমান
সাধারণ ধর্ম
উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমিত কর্মধারয় সমাস
রূপক কর্মধারয় সমাস
তৎপুরুষ সমাস
বহুব্রীহি সমাস
দ্বিগু সমাস
অব্যয়ীভাব সমাস
প্রাদি সমাস
নিত্য সমাস
ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র
শকুন্তলা
যৌবনের গান
একটি তুলসী গাছের কাহিনী
যৌবনের গান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন
সমাস:সমাস শব্দের অর্থ মিলন। অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের মিলিত হয়ে একটি নতুন শব্দ তৈরির ব্যাকরণ সম্মত প্রক্রিয়াকেই বলা হয় সমাস। মূলত, সমাসে একটি বাক্যাংশ একটি শব্দে পরিণত হয়। সমাসের রীতি বাংলায় এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে।
বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সমাস ব্যবহার করা হয়।
উল্লেখ্য, সমাস অর্থ সম্বন্ধপূর্ণ একাধিক শব্দের মিলন। আর সন্ধি পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি ধ্বনির মিলন।
সমাসের জন্য কয়েকটি সংজ্ঞা/ টার্মস জানা খুবই জরুরি। এগুলো হলো-
ব্যাসবাক্য: যে বাক্যাংশ থেকে সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। একে সমাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্যও বলা হয়।
সমস্ত পদ:ব্যাসবাক্য থেকে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় সমস্ত পদ।
সমস্যমান পদ:ব্যাসবাক্যের যে সব শব্দ সমস্ত পদে অন্তর্গত থাকে, সমস্ত পদের সেই সব শব্দকে সমস্যমান পদ বলে।
পূর্বপদ : সমস্ত পদের প্রথম অংশ/ শব্দকে পূর্বপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের প্রথম সমস্যমান পদই পূর্বপদ।
পরপদ/ উত্তরপদ:সমস্ত পদের শেষ অংশ/ শব্দকে পরপদ/ উত্তরপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের শেষ সমস্যমান পদই পরপদ।
যেমন, সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন
এখানে ব্যাসবাক্য হলো- ‘সিংহ চিহ্নিত আসন’। আর সমস্ত পদ হলো ‘সিংহাসন’। সমস্যমান পদ হলো ‘সিংহ’ আর ‘আসন’। এদের মধ্যে ‘সিংহ’ পূর্বপদ, আর ‘আসন’ পরপদ।
আবার, আমিষের অভাব = নিরামিষ
এখানে, পূর্বপদ ‘নিঃ’ বা অভাব। আর পরপদ হলো ‘আমিষ’।
উলেলখ্য, একই সমস্ত পদ কয়েকভাবে ভেঙে কয়েকটি ব্যাসবাক্য তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক ব্যাসবাক্যও কয়েকটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাসবাক্য অনুযায়ী সেটি কোন সমাস তা নির্ণয় করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাসবাক্যের সঙ্গে সমস্ত পদের অর্থসঙ্গতি যেন ঠিক থাকে। যেমন, ‘বিপদে আপন্ন = বিপদাপন্ন’, এই সমাসটি এভাবে ভাঙলে তা ভুল হবে। এটা করতে হবে ‘বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন’।
প্রকারভেদ:সমাসপ্রধানত ৬ প্রকার- দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব।
তবে অনেকেই দ্বিগু সমাসকে কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। আবার অনেকে কর্মধারয় সমাসকে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। সমস্যমান পদের অর্থ প্রাধান্য বিবেচনা করে তারা এই মত দিয়ে থাকেন।সমস্যমান পদ বা পূর্বপদ-পরপদের অর্থ প্রাধান্য বিবেচনা করলে মূলত সমাস ৪ প্রকার- দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব।
এছাড়াও কিছু অপ্রধান সমাসও রয়েছে। যেমন- প্রাদি, নিত্য, অলুক, প্রভৃতি।
অর্থ প্রাধান্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ :
পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য
পরপদের অর্থ প্রাধান্য
সমাস
আছে
আছে
দ্বন্দ্ব
নেই
আছে
কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু
আছে
নেই
অব্যয়ীভাব
নেই
নেই
বহুব্রীহি
নিচে বিভিন্ন সমাসের বর্ণনা দেয়া হলো।
দ্বন্দ্বসমাস
যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ- উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ স্থাপনে ও, এবং, আর- এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়।
যেমন- মা ও বাপ = মা-বাপ। এখানে পূর্বপদ ‘মা’ ও পরপদ ‘বাপ’। ব্যাসবাক্যে ‘মা’ ও ‘বাপ’ দুইজনকেই সমান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এবং দুজনকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্বপদ ও পরপদ, উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি দ্বন্দ্ব সমাস।
কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। মূলত, এই সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদ পূর্বপদ ও বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ পরপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর ব্যাসবাক্যটিতে ঐ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদটি সম্পর্কে কিছু বলা হয়। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।
যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। এখানে, পূর্বপদ ‘নীল’ বিশেষণ ও পরপদ ‘পদ্ম’ বিশেষ্য। ব্যাসবাক্যে ‘পদ্ম’ সম্পর্কে বলা হয়েছে পদ্মটি ‘নীল’ রঙের। অর্থাৎ, ‘পদ্ম’ বা পরপদের অর্থই এখানে প্রধান, পরপদ ছাড়া পূর্বপদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই এটি কর্মধারয় সমাস।
কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম-
*.দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে এটি দ্বন্দ্ব সমাস হবে না।
*.দুইটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব। একই কারণে এটি দ্বন্দ্ব না কর্মধারয় হবে।
*.কার্যে পরপম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা। এখানে ‘মোছা’ কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
*.পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন, সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা
*.বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে মহা হয়। মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান
*.পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’, ‘কৎ’ হয়। যেমন, কু যে অর্থ = কদর্থ।
*.পরপদে ‘রাজা’ থাকলে ‘রাজ’ হয়। যেমন, মহান যে রাজা = মহারাজ।
*.বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।