Search This Blog

পদ প্রকরণ (পর্ব ২): নির্ধারক বিশেষণ : দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করে যখন একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানো হয় তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলে। যেমন- রাশি রাশি ভারা ভারাধান (সোনার তরী) লাল লালকৃষ্ণচূড়ায় গাছ ভরে আছে। নববর্ষ উপলক্ষেঘরে ঘরেসাড়া পড়ে গেছে। এতছোট ছোটউত্তর লিখলে হবে না। [নির্ধারক বিশেষণ; ভাষা অনুশীলন; সোনার তরী] [বিশেষণবাচক ‘কী’ কী-শব্দটির একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে বিশেষণ হিসেবে এর ব্যবহার। যেমন, ‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতায় : এই যে আসুন, তারপরকীখবর? নিজেই চমকে,কীনিস্পৃহ, কেমন শীতল। কীসহজে হয়ে গেল বলা। (ক্রিয়াবিশেষণের বিশেষণ/ বিশেষণের বিশেষণ)] [বিশেষণবাচক ‘কী’; ভাষা অনুশীলন; একটি ফটোগ্রাফ] [বিশেষণ সম্বন্ধ পাথরেরটুকরো আমাদেরগ্রামেরপুকুর গ্রীষ্মেরপুকুর শোকেরনদী আমারসন্তান] [বিশেষণ সম্বন্ধ; ভাষা অনুশীলন; একটি ফটোগ্রাফ] বিশেষণের অতিশায়ন (degree) বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের মধ্যে তুলনা বোঝায়, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের একরকম অতিশায়ন প্রচলিত আছে, আবার তৎসম শব্দে সংস্কৃত ভাষার অতিশায়নের নিয়মও প্রচলিত আছে। ক) বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের অতিশায়ন ১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন বোঝাতে দুইটি বিশেষ্য বা সর্বনামের মাঝে চাইতে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রায়ই প্রথম বিশেষ্যটির সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) যুক্ত হয়। যেমন- গরুরথেকেঘোড়ার দাম বেশি। বাঘেরচেয়েসিংহ বলবান। ব্যতিক্রম : কখনো কখনো প্রথম বিশেষ্যের শেষের ষষ্ঠী বিভক্তিই হতে, থেকে, চেয়ে-র কাজ করে। যেমন- এ মাটি সোনারবাড়া। (সোনার চেয়েও বাড়া) ২. বহুর মধ্যে অতিশায়নে বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সর্বাপেক্ষা, সবথেকে, সবচেয়ে,সর্বাধিক, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন- তোমাদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান। পশুর মধ্যে সিংহসর্বাপেক্ষাবলবান। ৩. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে গেলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম অধিকতর, ইত্যাদি শব্দ যোগ করতে হয়। যেমন- পদ্মফুল গোলাপের চাইতেবেশিসুন্দর। ঘিয়ের চেয়ে দুধবেশিউপকারী। কমলার চাইতে পাতিলেবুঅল্পছোট। খ) তৎসম শব্দের অতিশায়ন ১. দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ হয় বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তম’ যোগ হয়। যেমন- গুরু- গুরুতর- গুরুতম দীর্ঘ- দীর্ঘতর- দীর্ঘতম [তবে কোনো বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ করলে সেটা যদি আবার শ্রচতিকটু হয়ে যায়, শুনতে খারাপ লাগে, তখন বিশেষণটির শেষে ‘তর’ যোগ না করে বিশেষণের আগে ‘অধিকতর’ শব্দটি যোগ করা হয়। যেমন- ‘অধিকতর সুশ্রী’।] ২. আবার, দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ঈয়স’ প্রত্যয় যুক্ত হয় বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ইষ্ঠ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- লঘু- লঘীয়ান- লঘিষ্ঠ অল্প- কনীয়ান- কনিষ্ঠ বৃদ্ধ- জ্যায়ান- জ্যেষ্ঠ শ্রেয়- শ্রেয়ান- শ্রেষ্ঠ [দুয়ের তুলনায় এই নিয়মের ব্যবহার বাংলায় হয় না। অর্থাৎ, বাংলায় লঘীয়ান, কনীয়ান, জ্যায়ান, শ্রেয়ান, ইত্যাদি শব্দগুলোর প্রচলন নেই। তবে ‘ঈয়স’ প্রত্যয়যুক্ত কতোগুলো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন- ভূয়সী প্রশংসা।] সর্বনাম পদ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই সর্বনাম পদ বলে। অনুচ্ছেদে বা প্যারাগ্রাফে একই বিশেষ্য পদ বারবার আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একই পদ বারবার ব্যবহার করলে তা শুনতে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এই পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিশেষ্য পদের পরিবর্তে অনুচ্ছেদে যে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে সেই বিশেষ্য পদকেই বোঝানো হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে। [সর্বনাম পদগুলো সব বিশেষ্য বা নামের পরিবর্তে বসতে পারে বলে এদেরকে ‘সর্বনাম’ বলে।] ‘বাংলাদেশঅত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ।এই দেশটি যেমন সুন্দর,এই দেশের মানুষগুলোও তেমনি ভালো।তারাএতোটাই ভদ্র ও মার্জিত যে,তাদেরকাছে ভিখারি ভিক্ষা চাইতে আসলেতারাতাদেরবিতাড়িত করে না। বরং মার্জিতভাবে বলে, মাফ করেন।’ উপরের অনুচ্ছেদে মূলত ৩টি বিশেষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশের মানুষ’ ও ‘ভিখারি’। এবং প্রথমবার উল্লেখের পর দ্বিতীয়বার কোন বিশেষ্যই আর উল্লেখ করা হয়নি। পরের বার থেকে ‘বাংলাদেশ’-র বদলে ‘এই দেশ’; ‘বাংলাদেশের (এই দেশের) মানুষ’-র বদলে ‘তারা’ ও ‘তাদের’ এবং ‘ভিখারি’-র বদলে ‘তাদের’ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ্য পদের বদলে ব্যবহৃত এই শব্দগুলোই হলো সর্বনাম পদ। সর্বনাম পদগুলোকে মূলত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা ২. আত্মবাচক : স্বয়ং, নিজ, খোদ, আপনি ৩. সামীপ্যবাচক : এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি ৪. দূরত্ববাচক : ঐ, ঐসব, সব ৫. সাকল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ ৬. প্রশ্নবাচক : কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে ৭. অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক : কোন, কেহ, কেউ, কিছু ৮. ব্যতিহারিক : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর ৯. সংযোগজ্ঞাপক : যে, যিনি, যাঁরা, যাহারা ১০. অন্যাদিবাচক : অন্য, অপর, পর সাপেক্ষ সর্বনাম : কখনও কখনও পর্সপর সম্পর্কযুক্ত একাধিক সর্বনাম পদ একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে দুটি বাক্যের সংযোগ সাধন করে থাকে। এদেরকে বলা হয় সাপেক্ষ সর্বনাম। যেমন- যতচাওততলও (সোনার তরী) যতচেষ্টা করবেততইসাফল্যের সম্ভাবনা। যতবড় মুখ নয়ততবড় কথা। যতগর্জেততবর্ষে না। যেইকথাসেইকাজ। যেমনকর্মতেমনফল। যেমনবুনো ওলতেমনিবাঘা তেঁতুল। [সাপেক্ষ সর্বনাম; ভাষা অনুশীলন; সোনার তরী] সর্বনামের পুরুষ [PERSON] [বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পুরুষভেদে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। বিশেষণ ও অব্যয় পদের কোন পুরুষভেদ নেই।] পুরুষ ৩ প্রকার। সুতরাং, সর্বনাম পদের পুরুষও ৩টি- উত্তম পুরুষ : বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি।