Search This Blog

কারক ও বিভক্তি: বিভক্তি বাক্যের একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শব্দগুলোর সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত করতে হয়। এই শব্দাংশগুলোকে বলা হয় বিভক্তি। মা শিশু চাঁদ দেখা। উপরের বাক্যটিতে কোন শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত করা হয়নি। ফলে বাক্যের শব্দগুলোর মধ্যে কোন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি, এবং এগুলো বাক্যও হয়ে উঠতে পারেনি। এখন শিশু’র সঙ্গে কে বিভক্তি আর দেখা’র সঙ্গে চ্ছেন’ বিভক্তি যোগ করলে বাক্যটি হবে- মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। অর্থাৎ, শব্দগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে একটি বাক্য সম্পূর্ণ হলো এবং এখন আর এগুলো শব্দ নয়, এগুলো প্রত্যেকটি একেকটি পদ। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তখন সেগুলোকে বলা হয় পদ। বাক্যে বিভক্তি ছাড়া কোন পদ থাকে না বলে ধরা হয়। তাই কোন শব্দে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন না হলেও ধরে নেয়া হয় তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। এবং এই বিভক্তিটিকে বলা হয় শূণ্য বিভক্তি। উপরের বাক্যটিতে ‘মা’ ও ‘চাঁদ’ শব্দদুটির সঙ্গে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন হয়নি। তাই ধরে নিতে হবে এই শব্দদুটির সঙ্গে শূণ্য বিভক্তি যোগ হয়ে এগুলো বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং এই দুটিও এখন পদ। মৌলিক বাংলা শব্দ বিভক্তিগুলো হলো- শূণ্য বিভক্তি (০), এ, য়, তে, কে, রে, র(এর)। তবে এছাড়াও কিছু কিছু অব্যয় শব্দ কারক সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো হলো- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হতে, থেকে, চেয়ে, ইত্যাদি। বাংলা শব্দ বিভক্তি ৭ প্রকার- বিভক্তির নাম বিভক্তি প্রথমা বা শূণ্য বিভক্তি ০, অ দ্বিতীয়া বিভক্তি কে, রে তৃতীয়া বিভক্তি দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক চতুর্থী বিভক্তি কে, রে* পঞ্চমী বিভক্তি হইতে (হতে), থেকে, চেয়ে ষষ্ঠী বিভক্তি র, এর সপ্তমী বিভক্তি এ, য়, তে *.চতুর্থী বিভক্তি শুধুমাত্র সম্প্রদান কারকে যুক্ত হয়। *.বচনভেদে বিভক্তির আকৃতি পরিবর্তিত হয়। তবে কোন বিভক্তি চিহ্নিত করার জন্য উপরের বিভক্তির তালিকাটি মনে রাখলেই চলবে। *.বিভক্তির নাম লেখার সময় কখনো সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা যাবে না। অর্থাৎ দ্বিতীয়া বিভক্তিকে কখনোই ২য়া বিভক্তি লেখা যাবে না। *.বিভক্তির তালিকাটি ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে, প্রয়োজন হলে মুখস্থ করতে হবে। কারক কারক শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘যা ক্রিয়া সম্পাদন করে’। বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে। অর্থাৎ, বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে। কারক ৬ প্রকার- ১. কর্তৃকারক ২. কর্মকারক ৩. করণকারক ৪. সম্প্রদান কারক ৫. অপাদান কারক ৬. অধিকরণ কারক কর্তৃকারক বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কে/ কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্তৃকারক। (কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের বাক্যে এই নিয়ম খাটবে না। সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।) উদাহরণ- গরু ঘাস খায়। (কে খায়) : কর্তৃকারকে শূণ্য বিভক্তি কর্ম কারক যাকে অবলম্বন করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্ম বা কর্মকারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মকারক। বাক্যে দুইটি কর্ম থাকলে বস্ত্তবাচক কর্মটিকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম ও ব্যক্তিবাচক কর্মটিকে গৌণ কর্ম বলে। তবে দুইটি একই ধরনের কর্ম থাকলে প্রথম কর্মটিকে উদ্দেশ্য কর্ম ও দ্বিতীয়টিকে বিধেয় কর্ম বলে। যেমন- ‘দুধকে মোরা দুগ্ধ বলি, হলুদকে বলি হরিদ্রা’। এখানে ‘দুধ’ ও ‘হলুদ’ উদ্দেশ্য কর্ম, ‘দুগ্ধ’ ও ‘হরিদ্রা’ বিধেয় কর্ম। কর্তা নিজে কাজ না করে কর্মকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে তাকে প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম বলে। ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্ম বলে। [ক্রিয়াপদ] উদাহরণ- বাবা আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। (কাকে দিয়েছেন? আমাকে। কী দিয়েছেন? ল্যাপটপ) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), ল্যাপটপ- কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি (মুখ্য কর্ম) ডাক্তার ডাক। (কাকে ডাক?) : কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি আমাকে একটা বই দাও। (কাকে দাও? আমাকে। কী দাও? বই) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), বই- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (মুখ্য কর্ম) আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থণা। (কাকে করিবে? আমারে) : কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি তোমার দেখা নাই। (কার দেখা? তোমার) : কর্মকারকে ষষ্ঠী বিভক্তি জিজ্ঞাসিবে জনে জনে। (কাকে জিজ্ঞাসিবে? জনে জনে) : কর্মকারকে সপ্তমী বিভক্তি করণ কারক করণ শব্দের অর্থ যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়। যে উপাদান বা উপায়ে ক্রিয়া সম্পাদন করা হয়, তাকে করণ কারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কী দিয়ে/ কী উপায়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই করণ কারক। উদাহরণ- পিয়াল কলম দিয়ে লিখছে। (কী দিয়ে লেখে? কলম দিয়ে) :করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি কীর্তিমান হয় সাধনায়। (কী উপায়ে হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি ডাকাতেরা গৃহকর্তার মাথায় লাঠি মেরেছে। (কী দিয়ে মেরেছে? গুলি): করণ কারকে শূণ্য বিভক্তি লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হয়। (কী দিয়ে চাষ করা হয়? লাঙ্গল দিয়ে): করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি মন দিয়ে পড়াশুনা কর। (কী উপায়ে/ দিয়ে কর? মন দিয়ে) :করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি ফুলে ফুলে ঘর ভরেছে। (কী দিয়ে ভরেছে? ফুলে ফুলে) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। (কী দিয়ে/ উপায়ে চেনা যায়? গোঁফে): করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি সাধনায় সব হয়। (কী উপায়ে সব হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি এ সুতায় কাপড় হয় না। (কী দিয়ে হয় না? সুতায়)