Search This Blog

ভাষা, বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষারীতি (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): বাংলা ভাষায় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষারীতি আছে; যেটি এখন মৃতপ্রায়, আর ব্যবহৃত হয় না- সাধু ভাষারীতি বা সাধু রীতি। সাধু রীতি:পূর্বে সাহিত্য রচনা ও লেখালেখির জন্য তৎসম শব্দবহুল, দীর্ঘ সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ সম্পন্ন যে গুরুগম্ভীর ভাষারীতি ব্যবহৃত হতো, তাকেই সাধু ভাষা বলে। এই ভাষা অত্যন্ত গুরুগম্ভীর, দুরূহ এবং এতে দীর্ঘ পদ ব্যবহৃত হয় বলে এই ভাষা কথা বলার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক না। তাই এই ভাষায় কথাও বলা হয় না। এই ভাষা কেবল লেখ্য রীতিতে ব্যবহারযোগ্য। তাও বহু আগেই লেখ্য রীতি হিসেবে চলিত রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় সাধু রীতি এখন লেখ্য ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় না। কেবল সরকারি দলিল-দস্তাবেজ লেখা ও অন্যান্য কিছু দাপ্তরিক কাজে এখনো এই রীতি ব্যবহৃত হয়। নিচে বাংলা ভাষারীতিগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো: আঞ্চলিক কথ্য রীতি প্রমিত চলিত রীতি সাধু রীতি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা সকলের দ্বারা স্বীকৃত সাহিত্য রচনা, আলাপ-আলোচনা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভাষারীতি পূর্বে সাহিত্য রচনা ও লেখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত গুরুগম্ভীর ও দুরূহ ভাষারীতি শুধু কথ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় কথ্য ও লেখ্য উভয় মাধ্যমেই বহুল ব্যবহৃত শুধু লেখ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় নির্দিষ্ট অঞ্চলে ব্যবহৃত হয় বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত; সকল স্তরে ব্যবহৃত হয় বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না উপভাষা/নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভাষা সর্বজনস্বীকৃত আদর্শ চলিত রূপ সর্বজনস্বীকৃত লেখ্য রূপ নিচে সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্যগুলো সংক্ষেপে দেয়া হলো: চলিত ভাষা সাধু ভাষা তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। গুরুগম্ভীর তৎসম শব্দ যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া হয়। যেমন- রক্ষা(পরিত্রাণ), সঙ্গে(সমভিব্যাহারে), তীর সংযোগ(শরসন্ধান), আমগাছের নিচে(সহকার তরুতলে) তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন- পরিত্রাণ(রক্ষা), সমভিব্যাহারে(সঙ্গে), শরসন্ধান(তীর সংযোগ), সহকার তরুতলে (আমগাছের নিচে) সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সহজ ও সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়, যেটি উচ্চারণ ও ব্যবহার করা আরামদায়ক ও সহজ। যেমন- তার(তদীয়), এরা(ইহারা), আপনার(আপনকার), তাদের(তাহাদিগকে) হলে(হইলে), লাগিলেন(লাগলেন), জিজ্ঞাসিলেন(জিজ্ঞাসা করলেন) সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দীর্ঘ পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন- তদীয়(তার), ইহারা(এরা), আপনকার(আপনার), তাহাদিগকে(তাদের) হইলে(হলে), লাগলেন(লাগিলেন), জিজ্ঞাসা করলেন(জিজ্ঞাসিলেন) অপেক্ষাকৃত সহজ বিশেষণ পদ ব্যবহার করা হয়। যেমন- অত্যন্ত(অতিমাত্র), এরূপ(এ রকম), এইরকম(ঈদৃশ), মাদৃশ(আমার মতো), এই অনুযায়ী(এতদনুযায়ী) অপেক্ষাকৃত কঠিন, দীর্ঘ (বিশেষত তৎসম) বিশেষণ পদ ব্যবহার করা হয়। যেমন- অতিমাত্র(অত্যন্ত), এ রকম(এরূপ), ঈদৃশ(এইরকম), আমার মতো(মাদৃশ), এতদনুযায়ী(এই অনুযায়ী) সন্ধি ও সমাসবদ্ধ পদকে প্রায়ই ভেঙে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বনের মধ্যে (বনমধ্যে), ভার অর্পণ (ভারার্পণ), প্রাণ যাওয়ার ভয় (প্রাণভয়) সন্ধি ও সমাসবদ্ধ পদ বেশি ব্যবহার করা হয়। যেমন- বনমধ্যে (বনের মধ্যে), ভারার্পণ (ভার অর্পণ), প্রাণভয় (প্রাণ যাওয়ার ভয়) * উল্লেখ্য,সাধু ও চলিত রীতিতে কেবলমাত্র অব্যয় পদ অপরিবর্তিতভাবে ব্যবহৃত হয়।সাধু ও চলিত রীতি ভেদে অব্যয় পদের কোনো পরিবর্তন হয় না। এছাড়া আর প্রায় সবধরনের পদ-ই পরিবর্তিত হয়। এমনকি কিছু কিছু অনুসর্গও সাধু ও চলিত রীতিতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.সাধু ও চলিত রীতিতে অভিন্নরূপে ব্যবহৃত হয়Ñ (ক-২০০৬-০৭) *.বাংলা কোন রীতি এখন বহুল প্রচলিত- (ঘ-২০০০-০১)