Search This Blog

সন্ধি (পর্ব ৩): ব্যঞ্জনসন্ধি যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটিও যদি ব্যঞ্জনধ্বনি হয়, তাহলেই সেই সন্ধিকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। ব্যঞ্জনসন্ধি ৩ ভাবে হতে পারে- ১. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি ২. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি ৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি ১. স্বরধ্বনির পর ‘ছ’ থাকলে তা দ্বিত্ব হয়, অর্থাৎ ‘ছ’-র বদলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন- অ+ছ = চ্ছ এক+ছত্র = একচ্ছত্র মুখ+ছবি = মুখচ্ছবি অঙ্গ+ছেদ = অঙ্গচ্ছেদ আলোক+ছটা= আলোকচ্ছটা প্র+ছদ = প্রচ্ছদ বৃক্ষ+ছায়া = বৃক্ষছায়া স্ব+ছন্দ = স্বচ্ছন্দ আ+ছ = চ্ছ কথা+ছলে = কথাচ্ছলে আচ্ছা+দন = আচ্ছাদন ই+ছ = চ্ছ পরি+ছদ = পরিচ্ছদ বি+ছেদ= বিচ্ছেদ পরি+ছদ = পরিচ্ছদ বি+ছিন্ন = বিচ্ছিন্ন প্রতি+ছবি = প্রতিচ্ছবি উ+ছ = চ্ছ অনু+ছেদ = অনুচ্ছেদ ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি ১.ক, চ, ট, ত, প থাকলে এবং তাদের পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়), দ, ব হয়। অর্থাৎ অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়। অর্থাৎ কোনো বর্গের প্রথম ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো সেই বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়। যেমন- ক্+অ = গ+অ দিক্+অন্ত = দিগন্ত ক্+আ = গ+আ বাক্+আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর ক্+ঈ = গ+ঈ বাক্+ঈশ = বাগীশ চ্+অ = জ+অ ণিচ্+অন্ত = ণিজন্ত ট্+আ = ড+আ ষট্+আনন = ষড়ানন ত্+অ = দ+অ তৎ+অবধি = তদবধি কৃৎ+অন্ত = কৃদন্ত ত্+আ = দ+আ সৎ+আনন্দ = সদানন্দ ত্+ই = দ+ই জগৎ+ইন্দ্র = জগদিন্দ্র ত্+উ = দ+উ সৎ+উপায় = সদুপায় সৎ+উপদেশ = সদুপদেশ প্+অ = ব+অ সুপ্+অন্ত = সুবন্ত ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি ১. ক) ‘ত/দ’ এরপরে ‘চ/ছ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্চ/চ্ছ’ হয়। যেমন- ত্+চ = চ্চ সৎ+চিন্তা = সচ্চিন্তা উৎ+চারণ = উচ্চারণ শরৎ+চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র সৎ+চরিত্র = সচ্চরিত্র সৎ+চিদানন্দ(চিৎ+আনন্দ) = সচ্চিদানন্দ ত্+ছ = চ্ছ উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ তৎ+ছবি = তচ্ছবি দ্+চ = চ্চ বিপদ+চয় = বিপচ্চয় দ্+ছ = চ্ছ বিপদ+ছায়া = বিপচ্ছায়া খ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘জ/ঝ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘জ্জ/জ্ঝ’ হয়। যেমন- ত+জ = জ্জ সৎ+জন = সজ্জন উৎ+জ্বল = উজ্জ্বল তৎ+জন্য = তজ্জন্য যাবৎ+জীবন = যাবজ্জীবন জগৎ+জীবন = জগজ্জীবন দ+জ = জ্জ বিপদ+জাল = বিপজ্জাল ত+ঝ = জ্ঝ কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা গ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘শ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন- ত+শ = চ+ছ = চ্ছ উৎ+শ্বাস = উচ্ছাস চলৎ+শক্তি = চলচ্ছক্তি উৎ+শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল ঘ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ড/ঢ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ড্ড/ড্ঢ’ হয়। যেমন- ত+ড = ড্ড উৎ+ডীন = উড্ডীন ত+ঢ = ড্ঢ বৃহৎ+ঢক্কা = বৃহড্ডক্কা ঙ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘হ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘দ্ধ’ হয়। যেমন- ত+হ = দ্ধ উৎ+হার = উদ্ধার উৎ+হৃত = উদ্ধৃত উৎ+হত = উদ্ধত দ+হ = দ্ধ পদ+হতি = পদ্ধতি তদ্+হিত = তদ্ধিত চ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ল’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ল্ল’ হয়। যেমন- ত+ল = ল্ল উৎ+লাস = উল্লাস উৎ+লেখ = উল্লেখ উৎ+লিখিত = উল্লিখিত উৎ+লেখ্য = উল্লেখ্য উৎ+লঙ্ঘন = উল্লঙ্ঘন ২. কোনো অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি তার নিজের বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়। অর্থাৎ, ক, চ, ট, ত, প- এদের পরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা য, র, ব থাকলে প্রথম ধ্বনি (ক, চ, ট, ত, প) তার নিজের বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড, দ, ব) হয়ে যায়। অর্থাৎ, বর্গের প্রথম ধ্বনিগুলোর কোনোটি থাকলে, এবং তার পরে বর্গের তৃতীয় বা চতুর্থ ধ্বনিগুলোর কোনোটি বা য, র, ব (এরা সবাই ঘোষ ধ্বনি) আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় ধ্বনি হয়। যেমন- ক+দ = গ+দ বাক+দান = বাগদান বাক+দেবী = বাগ্দেবী ক+ব = গ+ব দিক+বিজয় = দিগ্বিজয় ক+জ = গ+জ বাক+জাল = বাগ্জাল ট+য = ড+য ষট+যন্ত্র = ষড়যন্ত্র ত+গ = দ+গ উৎ+গার = উদ্গার উৎ+গিরণ =উদ্গিরণ সৎ+গুরু = সদ্গুরু ত+ঘ = দ+ঘ উৎ+ঘাটন = উদ্ঘাটন ত+ভ = দ+ভ উৎ+ভব = উদ্ভব ত+য = দ+য উৎ+যোগ = উদ্যোগ উৎ+যম = উদ্যম ত+ব = দ+ব উৎ+বন্ধন = উদ্বন্ধন ত+র = দ+র তৎ+রূপ = তদ্রূপ ৩.নাসিক্য ধ্বনির পরে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি নিজ বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি বা নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়। অর্থাৎ, ঙ, ঞ, ণ, ন, ম- এদের পরে ক, চ, ট, ত, প থাকলে ক, চ, ট, ত, প যথাক্রমে গ, জ, ড, দ, ব অথবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম হয়ে যায়। অর্থাৎ, বর্গের পঞ্চম/ শেষ ধ্বনির পরে বর্গের প্রথম ধ্বনি আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় বা পঞ্চম/ শেষ ধ্বনি হয়ে যায়। ক+ন = গ/ঙ+ন দিক+নির্ণয় = দিগনির্ণয়/ দিঙনির্ণয় ক+ম = গ/ঙ+ম বাক+ময় = বাঙময় ত+ন = দ/ন+ন জগৎ+নাথ = জগন্নাথ উৎ+নয়ন = উন্নয়ন উৎ+নীত = উন্নীত ত+ম = দ/ন+ম তৎ+মধ্যে = তদমধ্যে/ তন্মধ্যে মৃৎ+ময় = মৃন্ময় তৎ+ময় = তন্ময় চিৎ+ময় = চিন্ময় উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির চেয়ে নাসিক্য ধ্বনিই অধিক প্রচলিত। ৪. ‘ম’-এর পরে কোনো বর্গীয় ধ্বনি বা স্পর্শ ধ্বনি আসলে ‘ম’ তার পরের ধ্বনির নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়। অর্থাৎ, ‘ম’-এর পরে যে বর্গীয় ধ্বনি আসে, ‘ম’ সেই ধ্বনির বর্গের পঞ্চম ধ্বনি হয়ে যায়। ম+ক = ঙ+ক শম+কা = শঙ্কা ম+ভ = ম+ভ কিম+ভূত = কিম্ভূত ম+চ = ঞ+চ সম+চয় = সঞ্চয় ম+ন = ন্ন কিম+নর = কিন্নর ম+ত = ন+ত সম+তাপ = সন্তাপ সম+ন্যাস = সন্ন্যাস ম+দ = ন+দ সম+দর্শন = সন্দর্শন ম+ধ = ন্ধ সম+ধান = সন্ধান উল্লেখ্য, আধুনিক বাংলায় ‘ম’-এর পরে ক-বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ক-বর্গের নাসিক্য/ পঞ্চম ধ্বনি ‘ঙ’-র বদলে ‘ং’ হয়। যেমন, ‘সম+গত’-এ ‘ম’ ও ‘গ (ক-বর্গীয় ধ্বনি)’ সন্ধি হয়ে ‘ম’, ‘ঙ’ না হয়ে ‘ং’ হয়ে ‘সংগত’। এরকম- অহম+কার = অহংকার সম+খ্যা = সংখ্যা