উপসর্গ (পর্ব ১):
উপসর্গ
উপসর্গের নিজস্ব অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে
বাংলা উপসর্গ
তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ
আ, সু, বি, নি
বিদেশি উপসর্গ
ফারসি উপসর্গ
আরবি উপসর্গ
ইংরেজি উপসর্গ
উর্দু-হিন্দিউপসর্গ
ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র
শকুন্তলা
বঙ্গভাষা
আমার পূর্ব বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন
উপসর্গ : বাংলা ভাষায় কিছু কিছু অব্যয়সূচক শব্দাংশ বাক্যে পৃথকভাবে স্বাধীন কোনো পদ হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে বিভিন্ন শব্দের শুরুতে আশ্রিত হয়ে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে বলা হয় উপসর্গ। এগুলোর নিজস্ব কোন অর্থ নেই, তবে এগুলো শব্দের পূর্বে ব্যবহৃত হয়ে শব্দের অর্থের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংকোচন সাধন করে।
উপসর্গ কোন শব্দ নয়, শব্দাংশ। এটি শুধুমাত্র শব্দের শুরুতে যোগ হয়। খেয়াল রাখতে হবে, উপসর্গ শুধুমাত্র শব্দেরই আগে বসে, কোন শব্দাংশের আগে বসে না। সুতরাং যে শব্দকে ভাঙলে বা সন্ধিবিচ্ছেদ করলে কোন মৌলিক শব্দ পাওয়া যায় না, তার শুরুতে কোন উপসর্গের মতো শব্দাংশ থাকলেও সেটা উপসর্গ নয়। এক্ষেত্রে নতুন শব্দের সঙ্গে মৌলিক শব্দটির কোন অর্থগত সম্পর্ক নাও থাকতে পারে।
শব্দের শুরুতে যোগ হয়ে এটি- নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে, অর্থের সম্প্রসারণ করতে পারে, অর্থের সংকোচন করতে পারে এবং অর্থের পরিবর্তন করতে পারে।
উপসর্গের নিজস্ব অর্থবাচকতা বা অর্থ নেই, কিন্তু অন্য কোন শব্দের আগে বসে নতুন শব্দ তৈরির ক্ষমতা বা অর্থদ্যোতকতা আছে। যেমন, ‘আড়’ একটি উপসর্গ, যার নিজস্ব কোন অর্থ নেই। কিন্তু এটি যখন ‘চোখে’র আগে বসবে তখন একটি নতুন শব্দ ‘আড়চোখে’ তৈরি করে, যার অর্থ বাঁকা চোখে। অর্থাৎ, এখানে আড় উপসর্গটি চোখে শব্দের অর্থের পরিবর্তন করেছে। আবার এটিই ‘পাগলা’র আগে বসে তৈরি করে ‘আড়পাগলা’, যার অর্থ পুরোপুরি নয়, বরং খানিকটা পাগলা। এখানে পাগলা শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটেছে। আবার ‘গড়া’ শব্দের আগে বসে তৈরি করে ‘আড়গড়া’ শব্দটি, যার অর্থ আস্তাবল। এখানে আবার শব্দের অর্থ পুরোপুরিই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, উপসর্গের নিজস্ব অর্থবাচকতা না থাকলেও তার অর্থদ্যোতকতা আছে। উপসর্গ অন্য কোন শব্দের আগে বসে নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উপসর্গ মূলত ৩ প্রকার- বাংলা উপসর্গ, তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ ও বিদেশি উপসর্গ।
বাংলা উপসর্গ :বাংলা ভাষায় বাংলা উপসর্গ মোট ২১ টি। বাংলা উপসর্গ সবসময় খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের পূর্বে ব্যবহৃত হয়। বাংলা উপসর্গগুলো হলো-
অ
অঘা
অজ
অনা
আ
আড়
আন
আব
ইতি
ঊন (ঊনা)
কদ
কু
নি
পাতি
বি
ভর
রাম
স
সা
সু
হা
নিচে বাংলা উপসর্গগুলোর প্রয়োগ দেখানো হলো-
উপসর্গ
অর্থ
উদাহরণ/ প্রয়োগ
১
অ
নিন্দিত
অকেজো (নিন্দিত কাজ করে যে), অচেনা, অপয়া
অভাব
অচিন (চিন-পরিচয়ের অভাব), অজানা, অথৈ
ক্রমাগত
অঝোর (ক্রমাগতভাবে ঝরতে থাকা), অঝোরে
২
অঘা
বোকা
অঘারাম, অঘাচন্ডী
৩
অজ
নিতান্ত/ মন্দ
অজপাড়াগাঁ (একেবারে নিতান্তই পাড়াগাঁ), অজমূর্খ, অজপুকুর
৪
অনা
অভাব
অনাবৃষ্টি (বৃষ্টির অভাব), অনাদর
ছাড়া
অনাছিষ্টি (সৃষ্টিছাড়া), অনাচার
অশুভ
অনামুখো (অশুভ, মুখ যার অশুভ)
৫
আ
অভাব
আলুনি (লবনের অভাব), আকাঁড়া, আধোয়া
বাজে, নিকৃষ্ট
আকাঠা, আগাছা
৬
আড়
বক্র/ বাঁকা
আড়চোখে (বাঁকা চোখে), আড়নয়নে
আধা, প্রায়
আড়পাগলা (আধা পাগলা), আড়ক্ষ্যাপা, আড়মোড়া
বিশিষ্ট
আড়গড়া (আস্তাবল), আড়কোলা, আড়কাঠি
৭
আন
না
আনকোরা (যা এখনো কোরা হয়নি, একদম নতুন)
বিক্ষিপ্ত
আনচান, আনমনা (মনের বিক্ষিপ্ত অবস্থা)
৮
আব
অস্পষ্টতা
আবছায়া (অস্পষ্ট ছায়া), আবডাল
৯
ইতি
এ বা এর
ইতিপূর্বে (পূর্বেই) , ইতিকর্তব্য
পুরনো
ইতিকথা (বহু পুরনো কথা), ইতিহাস
১০
ঊন (ঊনা)
কম
ঊনিশ (বিশ হতে ১ ঊন) , ঊনপাঁজুরে
১১
কদ্
নিন্দিত
কদাকার (নিন্দিত/ কুৎসিত আকার) , কদবেল, কদর্য
১২
কু
কুৎসিত/ অপকর্ষ
কুঅভ্যাস (কুৎসিত/ খারাপ অভ্যাস), কুকথা, কুনজর, কুসঙ্গ,কুজন
১৩
নি
নাই/ নেতি
নিখুঁত (খুঁত নেই যার), নিখোঁজ, নিলাজ, নিভাঁজ, নিরেট
১৪
পাতি
ক্ষুদ্র
পাতিহাঁস (ক্ষুদ্র প্রজাতির হাঁস), পাতিশিয়াল, পাতিলেবু, পাতকুয়ো
১৫
বি
ভিন্নতা/ নাই বা নিন্দনীয়
বিপথ (ভিন্ন পথ), বিভূঁই, বিফল
১৬
ভর
পূর্ণতা
ভরপেট (পেটের ভর্তি/ পূর্ণ অবস্থা), ভরসাঁঝ, ভরপুর, ভরদুপুর, ভরসন্ধ্যে
১৭
রাম
বড়/ উৎকৃষ্ট
রামছাগল (বড় বা উৎকৃষ্ট প্রজাতির ছাগল), রামদা, রামশিঙ্গা, রামবোকা
১৮
স
সঙ্গে
সলাজ (লাজের সঙ্গে), সরব, সঠিক, সজোর, সপাট
১৯
সা
উৎকৃষ্ট
সাজিরা (উৎকৃষ্ট মানের এক প্রকার জিরা), সাজোয়ান
২০
সু
উত্তম
সুদিন (উত্তম দিন), সুনজর, সুখবর, সুনাম, সুকাজ
২১
হা
অভাব
হাভাতে (ভাতের অভাব), হাপিত্যেশ, হাঘরে