Search This Blog

সন্ধি (পর্ব ৪): ৫. ‘ম’-এর পরে অন্তঃস্থ ধ্বনি (য, র, ল, ব) কিংবা উষ্ম ধ্বনি (শ, ষ, স, হ) থাকলে ‘ম’-এর জায়গায় ‘ং’ হয়। সম+যম = সংযম সম+বাদ = সংবাদ সম+রক্ষণ = সংরক্ষণ সম+লাপ = সংলাপ সম+শয় = সংশয় সম+সার = সংসার সম+হার = সংহার বারম+বার = বারংবার কিম+বা = কিংবা সম+বরণ = সংবরণ সম+যোগ = সংযোগ সম+যোজন = সংযোজন সম+শোধন = সংশোধন সর্বম+সহা = সর্বংসহা স্বয়ম+বরা = স্বয়ম্বরা উল্লেখ্য, এই নিয়মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম- সম+রাট = সম্রাট। ৬. তালব্য অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে নাসিক্য ধ্বনি আসলে নাসিক্য ধ্বনিটিও তালব্য নাসিক্য ধ্বনি হয়। অর্থাৎ, ‘চ/জ’ এর পরে ঙ, ঞ, ণ, ন, ম (নাসিক্য ধ্বনি) থাকলে সেগুলো ‘ঞ’ হয়ে যায়। চ+ন = চ+ঞ যাচ+না = যাচ্ঞা রাজ+নী = রাজ্ঞী জ+ন = জ+ঞ যজ+ন = যজ্ঞ ৭. ‘দ/ধ’-এর পরে অঘোষ বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ (অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি) হয়। অর্থাৎ, ‘দ/ধ’-এর পরে ক, চ, ট, ত, প কিংবা খ, ছ, ঠ, থ, ফ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়। দ˃ ত তদ্+কাল = তৎকাল হৃদ+কম্প = হৃৎকম্প তদ+পর = তৎপর তদ+ত্ব = তত্ত্ব ধ˃ ত ক্ষুধ+পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা ৮. ঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (দ/ধ) এর পরে ‘স’ (দন্ত্য স ধ্বনি) থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় দন্ত্য অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ হয়। অর্থাৎ, ‘দ/ধ’ এর পরে ‘স’ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়। যেমন- বিপদ+সংকুল = বিপৎসংকুল (‘দ’ এরপরে ‘স’ থাকায় ‘দ’, ‘ত’ হয়ে গেছে) তদ+সম = তৎসম ৯. ‘ষ’ (মূর্ধণ্য ষ ধ্বনি) এর পরে অঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (ত, থ) থাকলে সেগুলো অঘোষ মূর্ধণ্য ধ্বনি (ট, ঠ) হয়ে যায়। অর্থাৎ, ‘ষ’ এর পরে ‘ত/থ’ থাকলে সেগুলো যথাক্রমে ‘ট/ঠ’ হয়ে যায়। যেমন- কৃষ+তি = কৃষ্টি (ষ+ত = ষ+ট) ষষ+থ = ষষ্ঠ (ষ+থ = ষ+ঠ) ১০. কিছু কিছু সন্ধি কিছু বিশেষ নিয়মে হয়। এগুলোকেবিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধিবলে। বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি উৎ+স্থান = উত্থান উৎ+স্থাপন = উত্থাপন পরি+কৃত = পরিষ্কৃত পরি+কার = পরিষ্কার সম+কৃত = সংস্কৃত সম+কৃতি = সংস্কৃতি সম+কার = সংস্কার মনে রাখার জন্য : উত্থান, উত্থাপন পরিষ্কৃত, পরিষ্কার সংস্কৃত, সংস্কৃতি, সংস্কার ১১. যে সকল ব্যঞ্জনসন্ধি কোনো নিয়ম না মেনে, বরং নিয়মের ব্যতিক্রম করে সন্ধি হয়, তাদেরকেনিপাতনে সিদ্ধ সন্ধিবলে। যেমন, ‘পতৎ+অঞ্জলি’, এখানে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ এর সঙ্গে স্বরধ্বনি ‘অ’ এর সন্ধি হয়েছে। সুতরাং, সন্ধির নিয়ম অনুসারে ‘ত’ এর জায়গায় ‘দ’ হওয়ার কথা। তার বদলে একটি ‘ত’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘পতঞ্জলি’। এরকম- নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি আ+চর্য = আশ্চর্য গো+পদ = গোষ্পদ বন+পতি = বনস্পতি বৃহৎ+পতি = বৃহস্পতি তৎ+কর = তস্কর পর+পর = পরস্পর ষট+দশ = ষোড়শ এক+দশ = একাদশ পতৎ+অঞ্জলি = পতঞ্জলি মনস+ঈষা = মনীষা মনে রাখার জন্য : আশ্চর্য, গোষ্পদ বনস্পতি, বৃহস্পতি তস্কর, পরস্পর ষোড়শ, একাদশ পতঞ্জলি, মনীষা বিসর্গ সন্ধি যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটি যদি বিসর্গ হয়, তবে তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। বিসর্গ সন্ধি ২ ভাবে সম্পাদিত হয়- ১. বিসর্গ + স্বরধ্বনি ২. বিসর্গ + ব্যঞ্জনধ্বনি [বিসর্গসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধির সম্পর্ক: সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী শব্দ বা পদের শেষে ‘র্’ বা ‘স্’ থাকলে তাদের বদলে ‘ঃ’ বা অঘোষ ‘হ’ উচ্চারিত হয়। এর উপর ভিত্তি করে বিসর্গকে ২ভাগে ভাগ করা হয়েছে- র-জাত বিসর্গ: ‘র্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে র-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : অন্তর- অন্তঃ, প্রাতর- প্রাতঃ, পুনর- পুনঃ, ইত্যাদি। স-জাত বিসর্গ :‘স্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে স-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : নমস- নমঃ, পুরস- পুরঃ, শিরস- শিরঃ, ইত্যাদি। মূলত, ‘ঃ’ হলো ‘র্’ ও ‘স্’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই র-জাত বিসর্গ ও স-জাত বিসর্গ উভয়েই মূলত ব্যঞ্জনধ্বনিরই অন্তর্গত। এই কারণে অনেকে বিসর্গ সন্ধিকেও ব্যঞ্জনসন্ধিরই অন্তর্গত বলে মনে করে।] বিসর্গ+স্বরধ্বনি ‘অ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে আবার ‘অ’ থাকলে অ+ঃ+অ = ‘ও’ হয়। যেমন- ততঃ+অধিক = ততোধিক বিসর্গ+ব্যঞ্জনধ্বনি ১. (ক) ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে, ‘ঃ’-র জায়গায় ‘ও’ হয়। অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব অথবা হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়। অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম ধ্বনি থাকলে কিংবা য, র, ল, ব, হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়। যেমন- তিরঃ+ধান = তিরোধান (অ+ঃ+ধ) মনঃ+রম = মনোরম (অ+ঃ+র) তপঃ+বন = তপোবন (অ+ঃ+ব) মনঃ+হর = মনোহর (অ+ঃ+হ) (খ) ‘অ’-এর পরে র-জাত ‘ঃ’ থাকলে, এবং তারপরে স্বরধ্বনি কিংবা ঐ একই ধ্বনিগুলো থাকলে (ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি ও হ), ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। যেমন- অন্তঃ+গত = অন্তর্গত (অ+ঃ+গ) পুনঃ+আয় = পুনরায় (অ+ঃ+আ) অন্তঃ+ধান = অন্তর্ধান (অ+ঃ+ধ) পুনঃ+উক্ত = পুনরুক্ত (অ+ঃ+উ) অন্তঃ+ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত (অ+ঃ+ভ) পুনঃ+জন্ম = পুনর্জন্ম (অ+ঃ+জ) অন্তঃ+বর্তী = অন্তর্বর্তী (অ+ঃ+ব) পুনঃ+বার = পুনর্বার (অ+ঃ+ব) অহঃ+অহ = অহরহ (অ+ঃ+অ) পুনঃ+অপি = পুনরপি (অ+ঃ+অ) প্রাতঃ+উত্থান = প্রাতরুত্থান (অ+ঃ+উ)