Search This Blog

পৃথিবী ও সৌরমন্ডল বা সৌরজগত্‍ প্রাককথন (পর্ব ১): সৌরজগত্‍: সূর্য এবং তার চারপাশে ঘুরছে যে গ্রহ,উপগ্রহ,উল্কা,গ্রহাণু,ধুমকেতু তাদের নিয়েই হল সৌরজগত। এই সব জ্যোতিষ্কমন্ডলী একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে একটা নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। যে সব জ্যোতিষ্কদের নিজেদের আলো আছে তাদেরনক্ষত্রবলে আর যে সব জ্যোতিষ্কদের নিজেদের আলো নেই তাদেরগ্রহবলে । পৃথিবীর নিজস্ব আলো নেই তাইপৃথিবী একটি গ্রহ।পৃথিবীর কাছের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটি হল সূর্য । মহাকাশের কোটি কোটি নক্ষত্র নিয়ে গড়ে উঠেছেনক্ষত্রজগৎ(Galaxy)।আর এই নক্ষত্রজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে যে সব গ্রহ,উপগ্রহ,ধুমকেতু,উল্কা নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে চলেছে তাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে‘সৌরজগৎ‘ । সৌরজগতে মোট ৮ টি গ্রহ আছে । সূর্য থেকে দুরত্ব অনুসারে গ্রহগুলি হল -বুধ, শুক্র,পৃথিবী,মঙ্গল,বৃহস্পতি,শনি,ইউরেনাস ও নেপচুন । দুরত্ব অনুসারে পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় গ্রহ । পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে কেন্দ্র করে পরিক্রমণ করে, তাই পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব সব সময় সমান থাকে না ।পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যে গড় দুরত্ব থাকে প্রায় ১৫ কোটি কিমি. ।  পৃথিবীর আকৃতি প্রায় গোলাকার । এর নিরক্ষীয় ব্যাস ১২,৭৫৭ কিমি. এবং মেরুব্যাস ১২,৭১৪ কিমি. । প্রকৃত গড় ব্যাস ১২,৭৩৫.৫ কিমি.{(১২৭৫৭ + ১২৭১৪) / ২}। আর সাধারনত গড় ব্যাস ধরা হয় প্রায় ১২,৮০০ কিমি. । সুতরাং পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ ৬,৪০০ কিমি. । আয়তন অনুসারে পৃথিবী সৌরজগতের পঞ্চম গ্রহ (বৃহস্পতি,শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের পর ) । পৃথিবী পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৫১ কোটি ৫৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার । পৃথিবীর গড় পরিধি প্রায় ৪০,০০০ কিমি. (প্রকৃতপক্ষে ৪০,০৭৭ কিমি.) । খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ২০০ বছর আগে গ্রিক পন্ডিত এরাটসথেনিসমিশরের আলেকজান্দ্রিয়া ও সিয়েন শহরে সূর্যরশ্মির পতন কোণের তারতম্য বিচার করে অবিশ্বাস্য কিন্তু প্রায় সঠিক ভাবে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেছিলেন  ।  পৃথিবীর আনুমানিক ওজন প্রায় ৫,৬৯৭X১০১৮টন বা ৬ কোটি কোটি কোটি টন (৬ -এর পর ২১ টি শূন্য বসালে যে সংখ্যা হয় ) । পৃথিবী মহাশূন্যে ভেসে থেকে তার অক্ষ বা মেরুদন্ডের উপর ভর করে নির্দিষ্ট গতিতে নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করতে করতে সূর্যকে পরিক্রমণ করে চলেছে  । পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে উঁচু অংশ ৮,৮৪৮ মিটার ( মাউন্ট এভারেস্ট ) এবং সবচেয়ে নীচু অংশ ১১ ,০৩৫ মিটার (প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত ) সুতরাং ভূপৃষ্ঠের বন্ধুরতার পরিমাণ প্রায় ২০ কিলোমিটার  । পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হল চাঁদ । চাঁদের আয়তন পৃথিবীর ৫০ ভাগের ১ ভাগ । চাঁদের ব্যাস ৩ ,৪৭৬ কিমি. । পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব প্রায় ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিমি. । পৃথিবীর চারিদিকে ১ বার পরিক্রমণ করতে চাঁদের সময় লাগে ২৭ দিন ৮ ঘন্টা  । গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে অনেক ছোট ও বড় জ্যোতিষ্ক। এদের মধ্যে কয়েকটি খুব বড় এবং নিজের নিজের কক্ষপথ ধরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে এরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এদের নিজস্ব আলো নেই। এদেরকে গ্রহ বলে। মোট নটি গ্রহ সূর্যকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। এদের নাম হল ,বুধ,শুক্র,পৃথিবী,মঙ্গল, বৃহস্পতি শন ইউরেনাস,নেপচুন ও প্লুটো। এদের মধ্যে প্লুটো কে মাঝে মাঝে গ্রহের আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পৃথিবী সূর্যের থেকে দূরত্ব অনুসারে তিন নম্বর গ্রহ হল আমাদের এই পৃথিবী। এর সূর্য থেকে গড় দূরত্ব হল ১৪১৫০০০০০ কিলোমিটার। ওজন ৫ ,৬৯৭X১০ ১৮ কোটি টন। পৃথিবীর ব্যাস ( মানে পৃথিবীকে এপার ওপার ফুটো করলে সেটা যতটা লম্বা হবে) হল প্রায় ১২৭০০ কিলোমিটার। কিন্তু এটা সব জায়াগায় সমান নয়। উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু সোজাসুজ়ি যেতে ১২৭১৪ কিলমিটার রাস্তা পার হতে হবে। ঠিক তেমনি নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই ব্যাস ১২৭৫৭ কিলোমিটার। পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল ৫১৫৪০০০০০ বর্গ কিলোমিটার। পৃথিবীর পরিধি ( মানে পৃথিবীকে ঘিরে একবার পাক খেয়ে আসতে যতটা পথ যেতে হবে) ৪০০০০ কিলোমিটার।   পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি পৃথিবীর গতি (Movement of the Earth ) আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় যে পৃথিবী স্থিরভাবে অবস্থান করছে আর সূর্য তার চারদিকে ঘুরছে ।  অতীতের এই ধারণাকে ভুল বলে প্রথম ঘোষণা করেন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্যভট্টএবং গ্রিক বিজ্ঞানীগ্যালিলিও।তাঁরা বলেন সুর্য স্থিরভাবে অবস্থান করছে আর পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলি সূর্যের চারিদিকে অনবরত ঘুরে চলেছে । পরবর্তীকালে কোপারনিকাস ,কেপলার,নিউটন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা এই মতবাদকে সমর্থন করেন । সুর্য প্রতিদিন সকলে পূর্বাকাশে উঠে আর সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে অস্ত যায়।