Search This Blog

শুক্র গ্রহ (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): কক্ষীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ [সম্পাদনা] কক্ষপথ[সম্পাদনা] সব গ্রহের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হলেও শুক্রের কক্ষপথ প্রায় গোলাকার। এর উৎকেন্দ্রিকতাশতকরা এক ভাগেরও কম। যেহেতু সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্ব পৃথিবীর চেয়ে কম, সেহেতু পৃথিবীর দিক থেকে সূর্য উদিত হয় (সূর্যের বৃহত্তমপ্রতানহচ্ছে ৪৭.৮ ডিগ্রী) শুক্রও প্রায় একই দিক থেকে উদিত হয়। এজন্য এই গ্রহটিকে কেবল সূর্যোদয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে এবং সূর্যাস্তের কয়েক ঘণ্টা পরে দেখা যায়। অবশ্য যখন শুক্র তার উজ্জ্বলতম অবস্থায় থাকে তখন দিনের বেলায়ও একে দেখা যায়। আসলেচাঁদছাড়া শুক্র গ্রহই একমাত্র জ্যোতিষ্কযা পৃথিবীর আকাশ থেকে রাত এবং দিন উভয় সময়েই দেখা যায়। অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে কিছুনবতারারাত ও দিন উভয় সময়ে দেখা যায়। যেমন,কাঁকড়া নীহারিকা সৃষ্টিকারী নবতারা। যাহোক অন্ধাকার আকাশে দৃশ্যমান শুক্র গ্রহ দেখাতে অনেকটাই তারার মত জ্বলজ্বলে হয়ে থাকে। পরপর দুটি সর্বোচ্চপ্রতানেরমধ্যবর্তী চক্রটির সময়কাল ৫৮৪ দিন। এই ৫৮৪ দিন পর শুক্র গ্রহকে পূর্বে যে অবস্থানে দেখা যেত তার সাথে ৭২ ডিগ্রী কোণ করে অবস্থান করতে দেখা যায়। যেহেতু ৫ * ৫৮৪ = ২৯২০ = ৮ * ৩৬৫ সেহেতু দেখা যাচ্ছে শুক্র গ্রহ প্রতি ৮ বছর পরপর (লীপ ইয়ারের দুই দিন বাদে) তার আগের অবস্থানে ফিরে আসে। এই চক্রটি প্রাচীনগ্রিক সভ্যতায়সোথিক্‌স চক্রনামে পরিচিত ছিল এবংমায়া সভ্যতারনিকটও তা সুপরিচিত ছিল। চাঁদের সাথেও এর একটি সম্পর্ক রয়েছে, যেমন: ২৯.৫ * ৯৯ = ২৯২০.৫; অর্থাৎ এই সময়কালটি প্রায় ৯৯ টি চন্দ্রমাসেরসমান। গ্রহটিরঅন্তঃসংযোগেরসময় শুক্র অন্য যেকোন গ্রহের তুলনায় পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটে আসে; তখন এ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব হয় চাঁদথেকে পৃথিবীর গড় দূরত্বের প্রায় ১০০ গুণ। ১৮০০সালের পর থেকে শুক্র গ্রহ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে পৌঁছেছিল১৮৫০সালের১৬ ডিসেম্বর তারিখে। কখন তাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল: ০.২৬৪১৩৮৫৪জ্যোতির্বিজ্ঞান একক= ৩৯,৫৪১,৮২৭ কিলোমিটার। ২১০১সালেরডিসেম্বর ১৬তারিখের পূর্ব পর্যন্ত এটিই হবে শুক্র থেকে পৃথিবীর সর্বনিম্ন দূরত্ব। উক্ত তারিখে গ্রহদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব দাড়াবে ০.২৬৪৩১৭৩৬ জ্যোতির্বিজ্ঞান একক= ৩৯,৫৪১,৫৭৮ কিলোমিটার। ঘূর্ণন[সম্পাদনা] শুক্রেরপ্রতীপ গতিবেশ ধীর, এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘুরে যেখানে অন্যান্য অধিকাংশ গ্রহই পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরে থাকে। অবশ্য প্লুটোএবংইউরেনাস গ্রহেরওপ্রতীপ গতি রয়েছে। শুক্রের এই ধীর প্রতীপ গতির কারণ হিসেবে ধরা হয়, জোয়ার বল,ঘর্ষণএবং শুক্রের পুরু পরিবেশ সূর্যের মাধ্যমে অতি উত্তপ্ত হওয়া। যদি শুক্র থেকে সূর্য দেখা যেত তবে শুক্রের আকাশে তা পশ্চিম দিকে উদিত হয়ে পূর্বে অস্ত যেত। এর আহ্নিক গতি হচ্ছে পৃথিবীর ১১৬.৭৫ দিনের সমান এবং একটি শুক্রীয় বছরের স্থায়িত্বকাল হচ্ছে ১.৯২ শুক্রীয় দিবস। একবার সম্পূর্ণভাবে নিজের কক্ষপথ বেয়ে সূর্যকে পরিভ্রমণ করতে শুক্র গ্রহের সময় লাগে ২২৫ দিন। শুক্র তার নিজ অক্ষে ঘোরে খুব ধীরগতিতে। শুক্রের ব্যাস ১২,১০৪ কিলোমিটার এবং ঘনত্ব ৫.০৬। এর এসকেপ ভেলোসিটি প্রতি সেকেন্ডে ৬.৫ মাইল। শুক্রগ্রহের উল্লেখযোগ্য কোনো চৌম্বকক্ষেত্রনেই। এই গ্রহের আবহমন্ডলের প্রায় সবটাই কার্বন-ডাই-অক্সাইডগ্যাস। এখানে মাত্র ০.৪ ভাগঅক্সিজেনগ্যাস রয়েছে। শুক্র গ্রহে কিছুনাইট্রোজেন,হাইড্রোজেন,এ্যামোনিয়াএবং নামমাত্র জলীয়বাষ্পের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত শুক্রগ্রহের খবরাখবর জানার জন্য বহু মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। তাদের মধ্যে পাইওনিয়ার, ভেনাস- ১ ও ২ এবংভেনেরা ১১থেকে ১৪ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাইয়োনিয়ার মহাকাশযান শুক্রগ্রহের কাছ থেকে এমন সব ছবি তুলেছে যা থেকে শুক্রগ্রহে বিশাল পাহাড়, সমতলভূমি ও অনেক আগ্নেয়গিরি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। শুক্র গ্রহের মোটামুটি একটা মানচিত্র পাইওনিয়ারের সূক্ষ জরিপের ফলে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।এছাড়া ভেনেরা-১১, শুক্র গ্রহের উপর নেমেছিল ১৯৭৮সালর২৫ ডিসেম্বরতারিখে। শুক্র গ্রহের অনেক ছবি পাঠিয়েছে এই মহাকাশযান।ভেনেরা-১৪ও ১৫ শুক্র গ্রহে নেমে চমৎকার রঙিন ছবি পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। অবশ্য এর আগে ১৯৬৬সালের মার্চ মাসেভেনাস-৩শুক্রের উপরিভাগে বিধ্বস্ত হয়। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন শুক্রগ্রহে প্রাণের কোনো অস্তিত্ব নেই।