বাক্যের শ্রেণীবিভাগ (পর্ব ৩):
জটিল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর: জটিল বাক্যে কয়েকটি খণ্ডবাক্য থাকে, এবং সেগুলো পরস্পর নির্ভরশীল থাকে। জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে এই খণ্ডবাক্যগুলোর পরস্পর নির্ভরতা মুছে দিয়ে স্বাধীন করে দিতে হবে। এজন্য সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে ব্যবহৃত অব্যয়গুলোর মধ্যে উপযুক্ত অব্যয়টি বসাতে হবে। পাশাপাশি ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-
জটিল বাক্য : যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।
যৌগিক বাক্য : সে কাল আসবে এবং আমি যাব।
জটিল বাক্য : যদিও তাঁর টাকা আছে, তবুও তিনি দান করেন না।
যৌগিক বাক্য : তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।
যৌগিক থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর : যৌগিক বাক্যে দুইটি পূর্ণ বাক্য কোন অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে। এই অব্যয়টি তুলে দিয়ে সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়ের প্রথমটি প্রথম বাক্যের পূর্বে ও দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বাক্যের পূর্বে বসালেই জটিল বাক্যে রূপান্তরিত হবে।
তবে, সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলোর পূর্ণ বাক্য দুটির প্রথমেই বসাতে হবে, এমন কথা নেই; উপযুক্ত যে কোন জায়গাতেই বসানো যেতে পারে। যেমন-
যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
জটিল বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
যৌগিক বাক্য : তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, কিন্তু তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
জটিল বাক্য : যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
যৌগিক বাক্য : এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।
জটিল বাক্য : এ গ্রামে যে দরগাহটি আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।
ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র থেকে
শকুন্তলা
ক) নেতিবাচক থেকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর
নেতি : এ আশ্রমমৃগ, বধ করিবেন না।
অস্তি : এ আশ্রমমৃগ, বধ করা থেকে বিরত হোন।
নেতি : আপনকার বাণ অল্পপ্রাণ মৃগশাবকের উপর নিক্ষিপ্ত হইবার যোগ্য নহে।
অস্তি : আপনকার বাণ অল্পপ্রাণ মৃগশাবকের উপর নিক্ষিপ্ত হইবার অযোগ্য।
নেতি : না মহারাজ, তিনি আশ্রমে নাই।
অস্তি : হ্যাঁ মহারাজ, তিনি আশ্রমের বাইরে আছেন।
(বাক্যের শুরুতে ‘না’ শব্দটি না থাকলে ‘তিনি আশ্রমে অনুপস্থিত’ হতে পারতো। কিন্তু এক্ষেত্রে ‘অনুপস্থিত’ বলতে গেলে শুরুতে ‘না’ বলতে হবে। তখন বাক্যটি আর অস্তিবাচক হবে না, কারণ নেতিবাচক শব্দ ‘না’ বাক্যে থেকে যাবে। তাই এক্ষেত্রে সেটি সঠিক হবে না।)
নেতি : কেহ কহিয়া দিতেছে না।
অস্তি : সকলে নীরব থাকিতেছে।
নেতি : এরূপ রূপবতী রমণী আমার অন্তঃপুরে নাই।
অস্তি : আমার অন্তঃপুর এরূপ রূপবতী রমনী-বিবর্জিত।
খ) অস্তিবাচক থেকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর
অস্তি : উদ্যানলতা, সৌন্দর্যগুণে, বনলতার নিকট পরাজিত হইল।
নেতি : উদ্যানলতা, সৌন্দর্যগুণে, বনলতার নিকট পরাজিত না হইয়া পারিল না।
অস্তি : কণ্ব আশ্রমপাদপদিগকে তোমা অপেক্ষা অধিক ভালোবাসেন।
নেতি : কণ্ব আশ্রমপাদপদিগকে তোমা অপেক্ষা অধিক না ভালোবাসিয়া পারেন না।
অস্তি : আমারও ইহাদের উপর সহোদর স্নেহ আছে।
নেতি : আমারও যে ইহাদের উপর সহোদর স্নেহ নাই তাহা নহে।
অস্তি : এই জন্যই তোমাকে সকলে প্রিয়ংবদা বলে।
নেতি : এই জন্যই তোমাকে সকলে প্রিয়ংবদা না বলে পারে না।
অস্তি : প্রিয়ংবদা যথার্থ কহিয়াছে।
নেতি : প্রিয়ংবাদ অযথার্থ কহে নাই।
গ) জটিল থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর
জটিল : কেহ কহিয়া দিতেছে না, তথাপি তপোবন বলিয়া বোধ হইতেছে।
সরল : কেহ কহিয়া না দিলেও তপোবন বলিয়া বোধ হইতেছে।
জটিল : শরাসনে যে শর সংহিত করিয়াছেন, আশু তাহার প্রতিসংহার করুন।
সরল : শরাসনে সংহিত শর আশু প্রতিসংহার করুন।
জটিল : যদি কার্যক্ষতি না হয়, তথায় গিয়া অতিথি সৎকার করুন।
সরল : কার্যক্ষতি না হইলে তথায় গিয়া অতিথি সৎকার করুন।
জটিল : ইহারা যেরূপ, এরূপ রূপবতী রমণী আমার অন্তঃপুরে নাই।
সরল : ইহাদের মতো রূপবতী রমণী আমার অন্তঃপুরে নাই।
জটিল : তুমি নবমালিকা কুসুমকোমলা, তথাপি তোমায় আলবালজলসেচনে নিযুক্ত করিয়াছেন।
সরল : তুমি নবমালিকা কুসুমকোমলা হওয়া সত্ত্বেও তোমায় আলবালজলসেচনে নিযুক্ত করিয়াছেন।
কমলাকান্তের জবানবন্দী
সরল থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর
সরল : ফরিয়াদী প্রসন্ন গোয়ালিনী।
জটিল : যে ফরিয়াদী, সে প্রসন্ন গোয়ালিনী।
সরল : সাক্ষীটা কী একটা গণ্ডগোল বাধাইতেছে।
জটিল : যে সাক্ষী, সে একটা গণ্ডগোল বাধাইতেছে।
সরল : আমার নিবাস নাই।
জটিল : যা নিবাস, তা আমার নাই।
সরল : তোমার বাপের নাম কী?
জটিল : তোমার যিনি বাপ, তার নাম কী?
সরল : আমি এ সাক্ষী চাই না।
জটিল : যে সাক্ষী এ রকম, তাকে আমি চাই না।
সরল : কমলাকান্ত পিতার নাম বলল।
জটিল : যিনি কমলাকান্তের পিতা, সে তাঁর নাম বলল।
সরল : কোনো কথা গোপন করিব না।
জটিল : যাহা বলিব, তাহার মধ্যে কোনো কথা গোপন করিব না।
সরল : উকিলবাবু চুপ করিয়া বসিয়া পড়িলেন।
জটিল : যিনি উকিলবাবু, তিনি চুপ করিয়া বসিয়া পড়িলেন।
হৈমন্তী
ক) অস্তিবাচক থেকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর
অস্তি : বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল।
নেতি : বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা আবশ্যক ছিল না।
অস্তি : পঞ্জিকার পাতা উল্টাইতে থাকিল।
নেতি : পঞ্জিকার পাতা উল্টানো বন্ধ রহিল না।
অস্তি : শ্বশুরের ও তাহার মনিবের উপর রাগ হইল।
নেতি : শ্বশুরের ও তাহার মনিবের উপর রাগ না হইয়া পারিলাম না।
অস্তি : আমার বুকের ভেতরটা হু হু করিয়া উঠিল।
নেতি : আমার বুকের ভেতরটা হু হু করিয়া না উঠিয়া পারিল না।
অস্তি : হৈমন্তী চুপ করিয়া রহিল।
নেতি : হৈমন্তী কোনো কথা কহিতে পারিল না।
অস্তি : হৈম কিছু না বলিয়া একটু হাসিল।
নেতি : হৈম কিছু একটু হাসিল, কিছু বলিল না।
অস্তি : সে বাপকে যত চিঠি লিখিত আমাকে দেখাইত।
নেতি : সে বাপকে যত চিঠি লিখিত সেগুলি আমাকে না দেখাইয়া পারিত না।
অস্তি : তাহার মন একেবারে কাঠ হইয়া গেল।
নেতি : তাহার মন কাঠ না হইয়া পারিল না।
খ) নেতিবাচক থেকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর
নেতি : দেশের প্রচলিত ধর্মকর্মে তাঁহার আস্থা ছিল না।
অস্তি : দেশের প্রচলিত ধর্মকর্মে তাঁহার অনাস্থা ছিল।