Search This Blog

শেখ মুজিবুর রহমান (পর্ব ৪): পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান নেতা [সম্পাদনা] ১৯৪৯ সালে হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে শেখ মুজিব উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করার মাধ্যমে তিনি১৯৬১সালে জেল থেকে ছাড়া পান। এবার শুরু করেন গুপ্ত রাজনৈতিক তৎপরতা। অন্যান্য সাধারণ ছাত্রনেতাদের নিয়ে গোপনে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদনামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা। ১৯৬২সালের ৬ ফেব্রয়ারি জননিরাপত্তা আইনে তাকে আবার আটক করা হয়েছিল। জুনের ২ তারিখে চার বছরব্যাপী মার্শাল ল অপসারণের পর একই মাসের ১৮ তারিখে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ২৫ জুন অন্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথে মিলে আইয়ুব খান আরোপিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমে পড়েন। ৫ জুন পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে আইয়ুব খানের সমালোচনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর লাহোরযান এবং সেখানে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মিলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলেন। এটি মূলত বিরোধী দলসমূহের একটি সাধারণ কাঠামো হিসেবে কাজ করেছিল। পুরো অক্টোবর মাস জুড়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মিলে বাংলার বিভিন্ন স্থান সফর করেন এই যুক্তফ্রন্টের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে। ১৯৬৩সালে সোহরাওয়ার্দীর সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে লন্ডন যান, সোহরাওয়ার্দী সেখানে চিকিৎসারত ছিলেন। এই বছরের ৫ ডিসেম্বর তিনি বৈরুতেমৃত্যুবরণ করেন। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর১৯৬৪সালের ২৫ জানুয়ারি মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুণরায় সংহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই বৈঠকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শেখ মুজিব তত্কালীন পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মহাসচিব [৫]ওমাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১১ মার্চ একটি সর্বদলীয় সংগ্রমা পরিষদ গঠিত হয় যার মাধ্যমে মুজিব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকল্পে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেনাশাসক আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসিস প্ল্যান, সামরিক শাসন এবং এক-ইউনিট পদ্ধতির বিরোধী নেতাদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন শেখ মুজিব। এই পদ্ধতি অনুযায়ী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা করা হয় এবং প্রদেশগুলোকে একত্রে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। [৬]অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কাজ করতে গিয়ে, মুজিব আইয়ুব বিরোধী দল প্রার্থী ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করেন। যথারীতি নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পূর্বে তাকে আটক করা হয়। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতা এবং আপত্তিকর প্রস্তাব পেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করে এক বছরের কারদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। [৪]অবশ্য উচ্চ আদালতের এক রায়ে তার আগেই তিনি মুক্তি পেয়ে যান। এ সময় সামরিক বাহিনীর গণহত্যা আর বাঙালিদের চাহিদা পূরণে সামরিক শাসকদের ঔদাসীন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। [৭] ছয় দফা দাবী[সম্পাদনা] এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন:ছয় দফা আন্দোলন১৯৬৬সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।[২]এ সম্মেলনেই শেখ মুজিব তার ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবীপেশ করেন যাতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের পরিপূর্ণ রূপরেখা উল্লেখিত হয়েছিল। শেখ মুজিব এই দাবীকে"আমাদের বাঁচার দাবী"শিরোনামে প্রচার করেছিলেন। এই দাবীর মূল বিষয় ছিল একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত পাকিস্তানী ফেডারেশনে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন। [৬]এই দাবী সম্মেলনের উদ্যোক্তারা প্রত্যাখান করেন এবং শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ কারণে তিনি উক্ত সম্মেলন বর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। মার্চ মাসের এক তারিখে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগেরসভাপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর তিনি ছয় দফার পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেন। প্রায় পুরো দেশই ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের সময় তিনি সিলেট,ময়মনসিংহএবং ঢাকায় বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে বন্দী হন। বছরের প্রথম চতুর্থাংশেই তাকে আটবার আটক করা হয়েছিল। এই বছরের মে ৮তারিখে নারায়ণগঞ্জে পাট কারখানার শ্রমিকদের এক র‌্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। তার মুক্তির দাবীতে ৭ জুন দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। পুলিশ এই ধর্মঘট চলাকালে গুলিবর্ষণ করে যার কারণে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে আনুমানিক তিনজনের মৃত্যু হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা[সম্পাদনা] এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন:আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হয়ে জেলে দুই বছর থাকার পর১৯৬৮সালের প্রথমদিকে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিব এবং আরও ৩৪ জন বাঙালি সামরিক ও সিএসপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যা ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলানামে সুপরিচিত। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল শেখ মুজিবসহ এই কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরাঅঙ্গরাজ্যের অন্তর্গতআগরতলাশহরে ভারত সরকারের সাথে এক বৈঠকে পাকিস্তানকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা তৈরি করেছে। [২]এতে শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামী করা হয় এবং পাকিস্তান বিভাগের এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অভিযুক্ত সকল আসামীকে ঢাকা সেনানিবাসেঅন্তরীন করে রাখা হয়। এর অব্যবহিত পরেই সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এই মামলাকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে সর্বস্তরের মানুষ শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলের মুক্তির দাবীতে রাজপথে নেমে আসে। এহেন পরিস্থিতে একই বছরের ১৯ জুনঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত আসামীদের বিচারকার্য শুরু হয়।