শেখ মুজিবুর রহমান (পর্ব ১):
মার্চ ১৭,১৯২০–আগস্ট ১৫,১৯৭৫
ডাক নাম:বঙ্গবন্ধু
জন্ম তারিখ:মার্চ ১৭,১৯২০
জন্মস্থান:টুঙ্গীপাড়া,গোপালগঞ্জ জেলা,বঙ্গ,
ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু তারিখ:১৫ই আগস্ট,১৯৭৫
মৃত্যুস্থান:ঢাকা,বাংলাদেশ
জীবনকাল:মার্চ ১৭১৯২০–আগস্ট ১৫১৯৭৫
আন্দোলন:বাংলা ভাষা আন্দোলন
ছয় দফা আন্দোলন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন
স্মরণীয় অর্জন:জুলিও কুরি পুরস্কার[১]
দাম্পত্য সঙ্গী:বেগম ফজিলাতুন্নেসা
শেখ মুজিবুর রহমান(মার্চ ১৭,১৯২০-আগস্ট ১৫,১৯৭৫) বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা যিনিপূর্ব পাকিস্তানথেকেবাংলাদেশপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বিবেচিত। তিনি
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীপ্রতিষ্ঠিতআওয়ামী লীগেরসভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি"শেখ মুজিব"এবং"শেখ সাহেব"হিসাবে বেশি পরিচিত এবং তার উপাধি'বঙ্গবন্ধু'। তার কন্যাশেখ হাসিনা ওয়াজেদ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৭-এ ভারত বিভাগ পরবর্পূতী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন ছাত্রনেতা। ক্রমে তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বের উচ্চপদে আসীন হয়েছিলেন। তার বড় গুণ ছিল তুখোড় বক্তৃতা প্রদানের ক্ষমতা।সমাজতন্ত্রেরপক্ষসমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তনের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একসময়
ছয় দফা স্বায়ত্ত্বশাসন পরিকল্পনাপ্রস্তাব করেন যাকেপশ্চিম পাকিস্তানেএকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ছয় দফা দাবীর মধ্যে প্রধান ছিল বর্ধিত প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন যার কারণে তিনিআইয়ুব খানেরসামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন।১৯৬৮খ্রিস্টাব্দেভারত সরকারেরসাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিচার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তিনি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।১৯৭০খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। তথাপি তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয় নি।
পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতিইয়াহিয়া খানএবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদজুলফিকার আলী ভুট্টোরসাথে শেখ মুজিবে আলোচনা বিফলে যাওয়ার পর
১৯৭১খ্রিষ্টাব্দেমার্চ ২৫মধ্যরাত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরেগণহত্যাপরিচালনা করে। একই রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তবে তা কার্যকরা হয় নি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ীমুক্তিযুদ্ধশেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১০ এপ্রিল ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র চালনার চেষ্টা সত্ত্বেও তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্বব্যাপী অরাজকতা এবং সেই সাথে ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় অতিবাহিত করেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সকল দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নিজেকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এর সাত মাস পরে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন।
পরিচ্ছেদসমূহ
১প্রাথমিক জীবন
১.১জন্ম ও শিক্ষা
১.২রাজনৈতিক জীবনের সূচনা
২প্রাথমিক রাজনৈতিক তৎপরতা
২.১রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন
২.২যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
৩পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান নেতা
৩.১ছয় দফা দাবী
৩.২আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
৩.৩উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান
৪১৯৭০ এর নির্বাচন ও স্বাধীনতা যুদ্ধ
৫বাংলাদেশের শাসন
৬বাকশাল
৭হত্যাকাণ্ড
৮সমালোচনা ও কৃতিত্ব
৯আত্মজীবনী
১০তথ্যসূত্র
১১বহিঃ সংযোগ
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]
১৯৪৯ সনের ছাত্রনেতা, শেখ মুজিব
জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]
শেখ মুজিবুর রহমান তদানীন্তন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের
টুঙ্গিপাড়াগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২]তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন এবং মা'র নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।
১৯২৭সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে তথা
১৯২৯সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।১৯৩৭
সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন।১৯৩৪থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
[৩]১৯৩৮সনে আঠারো বছর বয়সে তার সাথে ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন
শেখ হাসিনাএবংশেখ রেহানা। আর পুত্রদের নামশেখ কামাল,শেখ জামাল
এবংশেখ রাসেল।[৩]তিনজন পুত্রই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতে আততায়ীর হাতে নিহত হন।