শেখ মুজিবুর রহমান (পর্ব ২):
রাজনৈতিক জীবনের সূচনা[সম্পাদনা]
বঙ্গবন্ধুররাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল১৯৩৯সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। এ বছর স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা
এ কে ফজলুল হকএবং পরবর্তিতে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারীহোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী
। তিনি স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবীর উপর ভিত্তি করে একটি দল নিয়ে তাদের কাছে যান যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি নিজেই।১৯৪০
সালেনিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনেযোগ দেন। সেখানে তিনি এক বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।১৯৪২সনে এনট্র্যান্স পাশ করার পর কলকাতা
ইসলামিয়া কলেজে(বর্তমান নামমাওলানা আজাদ কলেজ) আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরঅধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিল। এই কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং অগ্রণী কাশ্মিরী বংশদ্ভুদ বাঙালি মুসলিম নেতা হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন।এখানে তার ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য বিষয় ছিল একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন।
১৯৪৩সনেবঙ্গীয় মুসলিম লীগেরকাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৪সনে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্র লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কলকাতায় বসবাসকারী ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে তৈরি"ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের"সেক্রেটারি মনোনীত হন। এর দুই বছর পর ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
১৯৪৭সনে অর্থাৎ দেশবিভাগের বছর মুজিব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার সময়ে কলকাতায় ভয়ানক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়। এসময় মুজিব মুসলিমদের রক্ষা এবং দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সোহরাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন।
[৪]
পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরআইন বিভাগে ভর্তি হন।১৯৪৮সালেরজানুয়ারি ৪
তারিখে প্রতিষ্ঠা করেনপূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগযার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। এ সময় সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার নিম্নমানের উন্নয়নের জন্য এটিকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে মনে করতে থাকেন।
প্রাথমিক রাজনৈতিক তৎপরতা
[সম্পাদনা]
১৯৫০ সালে শেখ মুজিব
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন[সম্পাদনা]
এই অনুচ্ছেদটিরনিরপেক্ষতানিয়েবিতর্করয়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনাআলাপ পাতায়
পাওয়া যেতে পারে। অনুগ্রহ করেবিতর্ক নিরসনহওয়ার আগ পর্যন্ত এই টেমপ্লেটটি সরিয়ে ফেলবেন না।
এই নিবন্ধটিতে কোনোউৎস বা তথ্যসূত্রউদ্ধৃতকরা হয়নি।
দয়া করে উপযুক্তনির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রথেকেউৎস প্রদান করেনিবন্ধটিরমানোন্নয়নে
সাহায্য করুন।
(সাহায্যের জন্য দেখুন:যাচাইযোগ্যতা) নিবন্ধের যেসব অংশে সঠিক তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই, সেগুলি যেকোনো মুহূর্তে সরিয়ে ফেলা হতে পারে।
বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমেই শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা ঘটে।
১৯৪৮সনেরফেব্রুয়ারি ২৩তারিখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণ-পরিষদের অধিবেশনে বলেন যে, উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই মন্তব্যে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদী শেখ মুজিব অবিলম্বে মুসলিম লীগের এই পূর্ব পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। এই বছরের ২ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মিলনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয় যাতে শেখ মুজিব একটি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। এখান থেকেই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পরিষদের আহ্বানে ১১ মার্চ ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিবসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মীকে সচিবালয় ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ছাত্রসমাজের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ শেখ মুজিব এবং অন্য ছাত্র নেতাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। এদের মুক্তি উপলক্ষে সর্বদলীয়
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় র্যালি হয় যাতে মুজিব সভাপতিত্ব করেন। পুলিশ এই র্যালি অবরোধ করেছিল। পুলিশী কার্যক্রমের প্রতিবাদে শেখ মুজিব অবিলম্বে ১৭ মার্চ দেশব্যাপী ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ১৯ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। এতে ১১ সেপ্টেম্বরে তাকে আবার আটক করা হয় এবং বহিষ্কৃত হন ।উল্লেখ্য ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর হৃত ছাত্রত্ব (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ফিরিয়ে দেয়া হয় ।
১৯৪৯সালের ২১ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবী আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন যার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি এই জরিমানাকে অবৈধ ঘোষণা করে তা আদায় থেকে বিরত থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ এপ্রিল মুসলিম লীগ বিরোধী প্রার্থী শামসুল হক টাঙ্গাইলে একটি উপ-নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু তার সেই আন্দোলনের সফলতার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনের ধর্মঘট করেন যার জন্য তাকে আবার আটক করা হয়। এ সময়ই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মাচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান।