Search This Blog
বাংলা ছন্দ (পর্ব ১): ছন্দ : কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ্র সিংহরায়) অর্থাৎ, কবি তার কবিতার ধ্বনিগুলোকে যে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যস্ত করে তাতে এক বিশেষ ধ্বনিসুষমা দান করেন, যার ফলে কবিতাটি পড়ার সময় পাঠক এক ধরনের ধ্বনিমাধুর্য উপভোগ করেন, ধ্বনির সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাসকেই ছন্দ বলা হয়। বিভিন্ন প্রকার ছন্দ সম্পর্কে জানার পূর্বে ছন্দের কিছু উপকরণ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। আর ছন্দ সম্পর্কে পড়ার আগে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার- ছন্দ সর্বদা উচ্চারণের সাথে সম্পর্কিত, বানানের সঙ্গে নয়। অক্ষর : (বাগযন্ত্রের) স্বল্পতম প্রয়াসে বা এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশটুকু উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর বা দল বলে। এই অক্ষর অনেকটাই ইংরেজি Syllable-র মত। যেমন- শর্বরী- শর, বো, রী- ৩ অক্ষর চিরজীবী- চি, রো, জী, বী- ৪ অক্ষর কুঞ্জ- কুন, জো- ২ অক্ষর যতি বা ছন্দ-যতি : কোন বাক্য পড়ার সময় শ্বাসগ্রহণের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর অন্তর যে উচ্চারণ বিরতি নেয়া হয়, তাকে ছন্দ-যতি বা শ্বাস-যতি বলে। যতি মূলত ২ প্রকার- হ্রস্ব যতি ও দীর্ঘ যতি। অল্পক্ষণ বিরতির জন্য সাধারণত বাক্য বা পদের মাঝখানে হ্রস্ব যতি দেওয়া হয়। আর বেশিক্ষণ বিরতির জন্য, সাধারণত বাক্য বা পদের শেষে দীর্ঘ যতি ব্যবহৃত হয়। পর্ব : বাক্য বা পদের এক হ্রস্ব যতি হতে আরেক হ্রস্ব যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়। যেমন- একলা ছিলেম ∣ কুয়োর ধারে ∣ নিমের ছায়া ∣ তলে ∣∣ কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) ( ∣ - হ্রস্ব যতি ও ∣∣ - দীর্ঘ যতি) এখানে একলা ছিলেম, কুয়োর ধারে, নিমের ছায়া, তলে- প্রতিটিই একেকটি পর্ব; মানে প্রতিটি চরণে ৪টি করে পর্ব। মাত্রা : একটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে মাত্রা বলে। বাংলায় এই মাত্রাসংখ্যার নির্দিষ্ট নয়, একেক ছন্দে একেক অক্ষরের মাত্রাসংখ্যা একেক রকম হয়। মূলত, এই মাত্রার ভিন্নতাই বাংলা ছন্দগুলোর ভিত্তি। বিভিন্ন ছন্দে মাত্রাগণনার রীতি বিভিন্ন ছন্দের আলোচনায় দেয়া আছে। শ্বাসাঘাত : প্রায়ই বাংলা কবিতা পাঠ করার সময় পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর একটা আলাদা জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত জোর দিয়ে পাঠ করা বা আবৃত্তি করাকেই বলা হয় শ্বাসাঘাত বা প্রস্বর। যেমন- আমরা আছি ∣ হাজার বছর ∣ ঘুমের ঘোরের ∣ গাঁয়ে ∣∣ আমরা ভেসে ∣ বেড়াই স্রোতের ∣ শেওলা ঘেরা ∣ নায়ে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) এখানে প্রতিটি পর্বের প্রথম অক্ষরই একটু ঝোঁক দিয়ে, জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত ঝোঁক বা জোরকেই শ্বাসাঘাত বলে। পদ ও চরণ : দীর্ঘ যতি বা পূর্ণ যতি ছাড়াও এই দুই যতির মধ্যবর্তী বিরতির জন্য মধ্যযতি ব্যবহৃত হয় । দুই দীর্ঘ যতির মধ্যবর্তী অংশকে চরণ বলে, আর মধ্য যতি দ্বারা চরণকে বিভক্ত করা হলে সেই অংশগুলোকে বলা হয় পদ। যেমন- তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ⊥ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣∣ তোমাতে আমাতে ∣ রত ছিনু যবে ⊥ কাননে কুসুম ∣ চয়নে∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) (এখানে ⊥ দ্বারা মধ্যযতি চিহ্নিত করা হয়েছে।) পূর্ণযতি দ্বারা আলাদা করা দুইটি অংশই চরণ; আর চরণের মধ্যযতি দিয়ে পৃথক করা অংশগুলো পদ। এরকম- যা আছে সব ∣ একেবারে ⊥ করবে অধি ∣ কার ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) স্তবক : অনেকগুলো চরণ নিয়ে একটি স্তবক গঠিত হয়। সাধারণত, একটি স্তবকে একটি ভাব প্রকাশিত হয়। মিল : একাধিক পদ, পর্ব বা চরণের শেষে একই রকম ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের ব্যবহারকে মিল বলে। অলংকারের ভাষায় একে বলে অনুপ্রাস। সাধারণত, মিল পদের শেষে থাকলেও শুরুতে বা মাঝেও মিল থাকতে পারে। পদের শেষের মিলকে অন্ত্যমিল বলে। যেমন- মুখে দেয় জল∣ শুধায় কুশল∣ শিরে নাই মোর ∣ হাত∣∣ দাঁড়ায়ে নিঝুম∣ চোখে নাই ঘুম∣মুখে নাই তার ∣ ভাত∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) এখানে, প্রথম চরণের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের শেষের পদদুটিতে অন্ত্যমিল (অল) আছে; দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষেও অন্ত্যমিল আছে (উম)। আবার দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষের ধ্বনি (ম) তৃতীয় পদের শুরুতে ব্যবহৃত হয়ে আরেকটি মিল সৃষ্টি করেছে। আর দুই চরণের শেষের পদেও অন্ত্যমিল আছে (আত)। এবার, সুকান্ত ভট্টাচর্যের আঠারো বছর বয়স- কবিতার প্রথম দুটি স্তবকের ছন্দের এসব উপকরণ নিয়ে আলোচনা করলে বুঝতে সুবিধা হতে পারে। আঠারো বছর বয়স সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর ∣ বয়স কী দুঃ ∣ সহ ∣∣ স্পর্ধায় নেয় ∣ মাথা তোলবার ∣ ঝুঁকি, ∣∣ আঠারো বছর ∣ বয়সেই অহ ∣ রহ ∣∣ বিরাট দুঃসা ∣ হসেরা দেয় যে ∣ উঁকি। ∣∣∣ আঠারো বছর ∣ বয়সের নেই ∣ ভয় ∣∣ পদাঘাতে চায় ∣ ভাঙতে পাথর ∣ বাধা, ∣∣ এ বয়সে কেউ ∣ মাথা নোয়াবার ∣ নয়- ∣∣ আঠারো বছর ∣ বয়স জানে না ∣ কাঁদা। ∣∣ উপরে কবিতাটির ছন্দ যতির স্থান নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এর পর্ব, পদ ও চরণ একরকম নির্দেশিত হয়েছে। প্রতিটি চরণে তিনটি পর্ব রয়েছে; প্রথম দুটি পর্ব ৬ মাত্রার, শেষ পর্বে ২ মাত্রার (মাত্রা গণনা নিচে ছন্দ অনুযায়ী আলোচনা করা আছে)। অর্থাৎ শেষ পর্বটিতে মাত্রা কম আছে। কবিতায় এরকম কম মাত্রার পর্বকে অপূর্ণ পর্ব বলে। কবিতাটির প্রতি চারটি চরণে কোন বিশেষ ভাব নির্দেশিত হয়েছে। এগুলোকে একেকটি স্তবক বলে। যেমন, প্রথম স্তবকটিকে কবিতাটির ভূমিকা বলা যেতে পারে, এখানে কবিতাটির মূলভাবই অনেকটা অনূদিত হয়েছে। আবার দ্বিতীয় স্তবকে আঠারো বছর বয়সের, অর্থাৎ তারুণ্যের নির্ভীকতা/ভয়হীনতা বর্ণিত হয়েছে। এভাবে কবিতার একেকটি স্তবকে একেকটি ভাব বর্ণিত হয়। আবার কবিতাটির চরণের অন্ত্যমিলের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রতি স্তবকের প্রথম ও তৃতীয় চরণের শেষে এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণের শেষে অন্ত্যমিল আছে। এছাড়া চরণগুলোর ভেতরেও খুঁজলে মিল পাওয়া যাবে।
ভাষা, বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষারীতি (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): বাংলা ভাষায় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষারীতি আছে; যেটি এখন মৃতপ্রায়, আর ব্যবহৃত হয় না- সাধু ভাষারীতি বা সাধু রীতি। সাধু রীতি:পূর্বে সাহিত্য রচনা ও লেখালেখির জন্য তৎসম শব্দবহুল, দীর্ঘ সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ সম্পন্ন যে গুরুগম্ভীর ভাষারীতি ব্যবহৃত হতো, তাকেই সাধু ভাষা বলে। এই ভাষা অত্যন্ত গুরুগম্ভীর, দুরূহ এবং এতে দীর্ঘ পদ ব্যবহৃত হয় বলে এই ভাষা কথা বলার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক না। তাই এই ভাষায় কথাও বলা হয় না। এই ভাষা কেবল লেখ্য রীতিতে ব্যবহারযোগ্য। তাও বহু আগেই লেখ্য রীতি হিসেবে চলিত রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় সাধু রীতি এখন লেখ্য ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় না। কেবল সরকারি দলিল-দস্তাবেজ লেখা ও অন্যান্য কিছু দাপ্তরিক কাজে এখনো এই রীতি ব্যবহৃত হয়। নিচে বাংলা ভাষারীতিগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো: আঞ্চলিক কথ্য রীতি প্রমিত চলিত রীতি সাধু রীতি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা সকলের দ্বারা স্বীকৃত সাহিত্য রচনা, আলাপ-আলোচনা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভাষারীতি পূর্বে সাহিত্য রচনা ও লেখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত গুরুগম্ভীর ও দুরূহ ভাষারীতি শুধু কথ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় কথ্য ও লেখ্য উভয় মাধ্যমেই বহুল ব্যবহৃত শুধু লেখ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় নির্দিষ্ট অঞ্চলে ব্যবহৃত হয় বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত; সকল স্তরে ব্যবহৃত হয় বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না উপভাষা/নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভাষা সর্বজনস্বীকৃত আদর্শ চলিত রূপ সর্বজনস্বীকৃত লেখ্য রূপ নিচে সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্যগুলো সংক্ষেপে দেয়া হলো: চলিত ভাষা সাধু ভাষা তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। গুরুগম্ভীর তৎসম শব্দ যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া হয়। যেমন- রক্ষা(পরিত্রাণ), সঙ্গে(সমভিব্যাহারে), তীর সংযোগ(শরসন্ধান), আমগাছের নিচে(সহকার তরুতলে) তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন- পরিত্রাণ(রক্ষা), সমভিব্যাহারে(সঙ্গে), শরসন্ধান(তীর সংযোগ), সহকার তরুতলে (আমগাছের নিচে) সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সহজ ও সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়, যেটি উচ্চারণ ও ব্যবহার করা আরামদায়ক ও সহজ। যেমন- তার(তদীয়), এরা(ইহারা), আপনার(আপনকার), তাদের(তাহাদিগকে) হলে(হইলে), লাগিলেন(লাগলেন), জিজ্ঞাসিলেন(জিজ্ঞাসা করলেন) সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দীর্ঘ পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন- তদীয়(তার), ইহারা(এরা), আপনকার(আপনার), তাহাদিগকে(তাদের) হইলে(হলে), লাগলেন(লাগিলেন), জিজ্ঞাসা করলেন(জিজ্ঞাসিলেন) অপেক্ষাকৃত সহজ বিশেষণ পদ ব্যবহার করা হয়। যেমন- অত্যন্ত(অতিমাত্র), এরূপ(এ রকম), এইরকম(ঈদৃশ), মাদৃশ(আমার মতো), এই অনুযায়ী(এতদনুযায়ী) অপেক্ষাকৃত কঠিন, দীর্ঘ (বিশেষত তৎসম) বিশেষণ পদ ব্যবহার করা হয়। যেমন- অতিমাত্র(অত্যন্ত), এ রকম(এরূপ), ঈদৃশ(এইরকম), আমার মতো(মাদৃশ), এতদনুযায়ী(এই অনুযায়ী) সন্ধি ও সমাসবদ্ধ পদকে প্রায়ই ভেঙে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বনের মধ্যে (বনমধ্যে), ভার অর্পণ (ভারার্পণ), প্রাণ যাওয়ার ভয় (প্রাণভয়) সন্ধি ও সমাসবদ্ধ পদ বেশি ব্যবহার করা হয়। যেমন- বনমধ্যে (বনের মধ্যে), ভারার্পণ (ভার অর্পণ), প্রাণভয় (প্রাণ যাওয়ার ভয়) * উল্লেখ্য,সাধু ও চলিত রীতিতে কেবলমাত্র অব্যয় পদ অপরিবর্তিতভাবে ব্যবহৃত হয়।সাধু ও চলিত রীতি ভেদে অব্যয় পদের কোনো পরিবর্তন হয় না। এছাড়া আর প্রায় সবধরনের পদ-ই পরিবর্তিত হয়। এমনকি কিছু কিছু অনুসর্গও সাধু ও চলিত রীতিতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.সাধু ও চলিত রীতিতে অভিন্নরূপে ব্যবহৃত হয়Ñ (ক-২০০৬-০৭) *.বাংলা কোন রীতি এখন বহুল প্রচলিত- (ঘ-২০০০-০১)
ভাষা, বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষারীতি (পর্ব ১): ভাষা বাগযন্ত্র ধ্বনি কণ্ঠধ্বনি ভাষা বাংলা ভাষা বাংলা ভাষারীতি প্রমিত চলিত ভাষারীতি আঞ্চলিক কথ্য রীতি সাধু রীতি ভাষারীতিগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা (ছক) সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য (ছক) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ভাষা ভাষার সংজ্ঞা বলার আগে আরো কিছু সংজ্ঞা জানা জরুরি। বাগযন্ত্র: মানুষ কথা বলার সময় শরীরের যে সমস্ত অঙ্গ ব্যবহার করে, সেগুলোকেই একত্রে বাগযন্ত্র বলে। মানুষের বাগযন্ত্রের মধ্যে আছে- গলনালী, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, দন্ত বা দাঁত, নাসিকা বা নাক, ওষ্ঠাধর বা ঠোঁট, ইত্যাদি। ধ্বনি: যে কোনো ধরনের আওয়াজকেই ধ্বনি বলা হয়। যেমন, মানুষের ভাষার ক্ষুদ্রতম ধ্বনি, বন্দুকের ধ্বনি, নূপুরের ধ্বনি, বজ্রপাতের ধ্বনি, গিটারের ধ্বনি, ড্রামসের ধ্বনি, কীবোর্ডে টাইপ করার ধ্বনি, ইত্যাদি। কণ্ঠধ্বনি: মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে যে ধ্বনি সৃষ্টি করে, তাকে কণ্ঠধ্বনি বা ভাষণধ্বনি বলে। এটিই আমাদের ব্যাকরণের আলোচ্য ধ্বনি। ব্যাকরণে আমরা ‘ধ্বনি’ বলতে এই কণ্ঠধ্বনি বা ভাষণধ্বনিকেই বুঝিয়ে থাকি। এই ধ্বনিই ভাষার মূল উপাদান। ভাষা: বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকেই ভাষা বলে। এই ভাষা বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন জাতির ও বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের জন্য বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, বাংলাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অধিকারী বাঙালিরা বাংলা ভাষায় কথা বলে। আবার বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। বর্তমানে পৃথিবীতে ভাষা আছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি (৩৫০০-রও বেশি)। বাংলা ভাষা বাঙালি সংস্কৃতির অধিকারী বাঙালি জাতি যে ভাষায় তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটিই বাংলা ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর ৪র্থ বৃহৎ মাতৃভাষা। বর্তমানে, বাংলা ভাষাভাষী জনসংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি। বাংলা ভাষাভাষীরা থাকে- বাংলাদেশে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, এবং ভারতের ত্রিপুরা, উড়িষ্যা, বিহার ও আসামের কিছু অংশে। তবে এখন প্রবাসী বাংলাদেশি ও প্রবাসী ভারতীয় বাঙালিদের কল্যাণে পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষ থাকে। বাংলা ভাষারীতি ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল। প্রতিটি মুহুর্তে ভাষা একটু একটু করে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি ভাষাভাষী লোকজন তাদের ভাষার কঠিন শব্দটিকে পাল্টে সহজ করে নিচ্ছে, ছোট করে নিচ্ছে, আবার প্রয়োজনে অন্য ভাষা থেকে নতুন নতুন শব্দ গ্রহণ করছে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে নানা কৌশল প্রয়োগ করে নতুন নতুন শব্দও তৈরি করছে। এমনকি পুরোনো কোনো শব্দ নতুন অর্থে ব্যবহার করেও শব্দটির নতুন অর্থদ্যোতকতা তৈরি করে নতুন শব্দ তৈরি করা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় এই কৌশলে নতুন অর্থপ্রাপ্ত বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দ হচ্ছে- কঠিন ও চরম। ভাষার এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই একদিন অপভ্রংশ থেকে জন্ম নিয়েছিলো আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। আবার এই পরিবর্তনের কারণে বাংলা ভাষায় কিছু পৃথক ভাষারীতিও জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে ব্যবহৃত বাংলা ভাষারীতি ২টি- আঞ্চলিক কথ্য রীতি ও প্রমিত চলিত ভাষারীতি। প্রমিত চলিত ভাষারীতি:দেশের সকল মানুষ যে আদর্শ ভাষারীতিতে কথা বলে, যেই ভাষারীতি সকলে বোঝে, এবং যে ভাষায় সকলে শিল্প-সাহিত্য রচনা ও শিক্ষা ও অন্যান্য কাজকর্ম সম্পাদন করে, সেটিই প্রমিত চলিত ভাষারীতি। এই ভাষায় যেমন সাহিত্য সাধনা বা লেখালেখি করা যায়, তেমনি কথা বলার জন্যও এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সকলে বোঝে বলে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে, যেমন কোনো অনুষ্ঠানে বা অপরিচিত জায়গায় বা আনুষ্ঠানিক (formal) আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে এই ভাষারীতি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, এই রীতি লেখ্য ও কথ্য উভয় রীতিতেই ব্যবহৃত হয়। বাংলা প্রমিত চলিত ভাষারীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভাগীরথী-তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষার উপর ভিত্তি করে। তবে, পূর্বে এই ভাষা সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। তখন কেবল সাধু ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করা হতো। এ কারণে বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও ছোটগল্পকাররা সাধু ভাষায় উপন্যাস, নাটক ও গল্প লিখেছেন। পরবর্তীতে,প্রমথ চৌধুরীচলিত রীতিতে সাহিত্য রচনার উপর ব্যাপক জোর দেন এবং তাঁর‘সবুজপত্র’(১৯১৪) পত্রিকার মাধ্যমে চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আঞ্চলিক কথ্য রীতি:বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজেদের মধ্যে যে বাংলা ভাষায় কথা বলে, তাকেই আঞ্চলিক কথ্য রীতি বা আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে। সকল ভাষাতেই আঞ্চলিক ভাষা থাকে। এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এগুলো কোনোভাবেই বিকৃত ভাষা নয়, এগুলো শুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক ভাষারীতি। প্রকৃতঅর্থে, প্রমিত চলিত ভাষারীতিও একটি অঞ্চলের কথ্য রীতির উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেবল- ভাগীরথী-তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষাকে তখন প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, অন্যগুলোকে প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। তবে আঞ্চলিক কথ্য রীতি লেখ্য ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেটি সর্বজনগ্রাহ্য নয়, সকল অঞ্চলের মানুষ কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা বুঝবে না। তবে কোনো অঞ্চলকে কেন্দ্র করে কোনো সাহিত্য রচিত হলে সেখানে আঞ্চলিক ভাষা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। সম্পূর্ণ বা পুরোটুকুই আঞ্চলিক ভাষায় রচিত একটি শিল্পসম্মত উপন্যাস হলো হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’।
উপসর্গ (পর্ব ৩ ও শেষ পর্ব): আরবি উপসর্গ- উপসর্গ অর্থ উদাহরণ/ প্রয়োগ ১ আম সাধারণ আমদরবার, আমমোক্তার ২ খাস বিশেষ খাসমহল, খাসখবর, খাসকামরা, খাসদরবার ৩ লা না লাজওয়াব, লাখেরাজ, লাওয়ারিশ, লাপাত্তা ৪ গর অভাব গরমিল, গরহাজির, গররাজি ইংরেজি উপসর্গ- উপসর্গ অর্থ উদাহরণ/ প্রয়োগ ১ ফুল পূর্ণ ফুলহাতা, ফুলশার্ট, ফুলবাবু, ফুলপ্যান্ট ২ হাফ আধা হাফহাতা, হাফটিকেট, হাফস্কুল, হাফপ্যান্ট ৩ হেড প্রধান হেডমাস্টার, হেডঅফিস, হেডপন্ডিত, হেডমৌলভী ৪ সাব অধীন সাব-অফিস, সাব-জজ, সাব-ইন্সপেক্টর উর্দু-হিন্দিউপসর্গ- উপসর্গ অর্থ উদাহরণ/ প্রয়োগ হর প্রত্যেক হররোজ, হরমাহিনা, হরকিসিম, হরহামেশা,হরেক ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র শকুন্তলা উপর্গযোগে গঠিত শব্দ : উপসর্গ শব্দ অ অদ্বিতীয়, অনিমিষ অতি অতিমাত্র, অতিশয়, অতীত (অতি+ইত), অতিমুক্তলতা অনু অনুসন্ধান, অনুষ্ঠান অব অবলোকন, অবকাশ, অবতীর্ণ আ আদেশ, আকার নিঃ নিরপরাধ (নিঃ+অপরাধ), নির্বিঘ্ন (নিঃ+বিঘ্ন), নিঃশঙ্ক পরি পরিত্রাণ, পরিণয়, পরিধান, পরিচালিত, পরিহাস, পরিতাপ প্র প্রবেশ, প্রবিষ্ট সম সমভিব্যাহারে, সম্মুখ, সমাগত, সংযত (সম+যত), সম্বোধন, সন্নিহিত (সম+নিহিত) একাধিক উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ : শব্দ গঠন শব্দ গঠন অনতিবৃহৎ অন+অতি+বৃহৎ অনুসন্ধান অনু+সম+ধান সমভিব্যাহার সম+অভি+বি+আ+হার নিরপাধ নি+অপ+রাধ সাতিশয় স+অতি+শয় প্রতিসংহার প্রতি+সম+হার বঙ্গভাষা অ, অন- উপসর্গ অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দটাকে না-বোধক অর্থ দেয়। যেমন : উপসর্গ মূল শব্দ উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ অ বোধ অবোধ অ নিদ্রা অনিদ্রা অ বরেণ্য অবরেণ্য অ জ্ঞান অজ্ঞান অন আহার অনাহার অন আগ্রহ অনাগ্রহ আমার পূর্ব বাংলা অ- উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ মূল শব্দ অ-উপসর্গযোগে তল অতল শেষ অশেষ ফুরন্ত অফুরন্ত অলসতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.কোনটি তৎসম উপসর্গ নয়? (গ-২০০২-০৩) *.খাঁটি বাংলা উপসর্গ এর সংখ্যা- (গ-২০০৩-০৪) *.খাঁটি বাংলা উপসর্গ কোনটি? (গ-২০০৪-০৫) *.নিলাজ এর ‘নি’ উপসর্গটি: (গ-২০০৫-০৬) *.অজ *.নিচের কোনটি তৎসম উপসর্গ নয়? (গ-২০০৭-০৮) *.কোন শব্দটি খাঁটি বাংলা উপসর্গ দিয়ে গঠিত হয়েছে? (গ-২০০৭-০৮) *.‘হা’ উপসর্গটি কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়? (গ-২০০৮-০৯) *.‘প্রণয়’- কোন উপসর্গ? (গ-২০১০-১১) *.উপসর্গযুক্ত শব্দ- (ক-২০০৯-১০) *.‘নিমরাজি’ শব্দের ‘নিম’ উপসর্গ কী অর্থ নির্দেশ করে? (ক-২০০৭-০৮) *.কোন শব্দ উপসর্গ সহযোগে গঠিত নয়? (ক-২০০৭-০৮) *.‘বেকার’ শব্দের ‘বে’ শব্দাংশকে ব্যাকরণে কী নামে অভিহিত করা হয়? (ক-২০০৬-০৭) *.উপসর্গজাত শব্দ (ক-২০০৬-০৭) *.একাধিক উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ কোনটি? (ক-২০০৬-০৭) *.‘কদবেল’ শব্দে ‘কদ’ উপসর্গটি ব্যবহৃত হয়েছে- (ঘ-২০১০-১১) *.অনতিবৃহৎ নিরপরাধ হরিণ সংহারে নিবৃত্ত হোন।– বাক্যটিতে উপসর্গ আছে- (ঘ-২০১০-১১) *.কোন শব্দটি উপসর্গ সহযোগে গঠিত নয়- (ঘ-২০০৯-১০) *.‘বিনির্মাণ’ শব্দে ‘বি’ উপসর্গটি কী অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে? (ঘ-২০০৯-১০) *.উপসর্গযুক্ত শব্দ (ঘ-২০০৮-০৯) *.উপসর্গযুক্ত শব্দ (ঘ-২০০৬-০৭) *.‘সমভিব্যাহার’ শব্দে উপসর্গের সংখ্যা (ঘ-২০০৩-০৪) *.নিচের শব্দগুলির কোনটিতে ‘উপ’ উপসর্গটি ভিন্নার্থে প্রযুক্ত? (ঘ-২০০৩-০৪) *.‘অপ’ উপসর্গঘটিত কোন শব্দের অর্থ ইতিবাচক? (ঘ-২০০২-০৩) *.‘সমভিব্যাহার’ শব্দের উপসর্গ কয়টি? (ঘ-২০০১-০২) *.অতি *.পরি *.প্রতি *.উপ *.ইতি *.অনা
উপসর্গ (পর্ব ২): তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ :সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ তৎসম শব্দের মতো অবিকৃত অবস্থায় হুবুহু বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ। তৎসম উপসর্গ শুধুমাত্র তৎসম শব্দের আগে বসে। তৎসম উপসর্গ মোট ২০টি- প্র পরা অপ সম নি অনু অব নির দুর বি অধি সু উৎ পরি প্রতি অতি অপি অভি উপ আ নিচে সংস্কৃত উপসর্গগুলোর প্রয়োগ দেখানো হলো- উপগর্স অর্থ উদাহরণ/ প্রয়োগ ১ প্র প্রকৃষ্ট/ সম্যক প্রচলন (প্রকৃষ্ট রূপ চলন/ চলিত যা)প্রভাব, , প্রস্ফুটিত খ্যাতি প্রসিদ্ধ, প্রতাপ আধিক্য প্রবল (বলের আধিক্য), প্রগাঢ়, প্রচার, প্রসার গতি প্রবেশ, প্রস্থান ধারা-পরম্পরা প্রপৌত্র, প্রশাখা, প্রশিষ্য ২ পরা আতিশয্য পরাকাষ্ঠা, পরাক্রান্ত, পরায়ণ বিপরীত পরাজয়, পরাভব ৩ অপ বিপরীত অপমান, অপকার, অপচয়, অপবাদ নিকৃষ্ট অপসংস্কৃতি (নিকৃষ্ট সংস্কৃতি), অপকর্ম, অপসৃষ্টি, অপযশ স্তানান্তর অপসারণ, অপহরণ, অপনোদন বিকৃত অপমৃত্যু সুন্দর অপরূপ ৪ সম সম্যক রূপে সম্পূর্ণ, সমৃদ্ধ, সমাদর সম্মুখে সমাগত, সম্মুখ ৫ নি নিষেধ নিবৃত্তি, নিবারণ নিশ্চয় নির্ণয় আতিশয্য নিদাঘ, নিদারুণ অভাব নিষ্কলুষ (কলুষতাহীন), নিষ্কাম ৬ অনু পশ্চাৎ অনুশোচনা (পূর্বের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা), অনুগামী (পশ্চাদ্ধাবনকারী), অনুজ, অনুচর, অনুতাপ, অনুকরণ সাদৃশ্য অনুবাদ, অনুরূপ, অনুকার পৌনঃপুন্য অনুশীলন (বারবার করা) , অনুক্ষণ, অনুদিন সঙ্গে অনুকূল, অনুকম্পা ৭ অব হীনতা অবজ্ঞা, অবমাননা সম্যক ভাবে অবরোধ, অবগাহন, অবগত নিমেণ/ অধোমুখিতা অবতরণ, অবরোহণ অল্পতা অবশেষ, অবসান, অবেলা ৮ নির অভাব নিরক্ষর, নির্জীব, নিরহঙ্কার, নিরাশ্রয়, নির্ঘন নিশ্চয় নির্ধারণ, নির্ণয়, নির্ভর বাহির/ বহির্মুখিতা নির্গত,নিঃসরণ, নির্বাসন ৯ দুর মন্দ দুর্ভাগা, দর্দশা, দুর্নাম কষ্টসাধ্য দুর্লভ, দুর্গম, দুরতিক্রম্য ১০ অধি আধিপত্য অধিকার, অধিপতি, অধিবাসী উপরি অধিরোহণ, অধিষ্ঠান ব্যাপ্তি অধিকার,অধিবাস, অধিগত ১১ বি বিশেষ রূপে বিধৃত, বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিবস্ত্র, বিশুষ্ক,বিনির্মাণ অভাব বিনিদ্র, বিবর্ণ, বিশৃঙ্খল, বিফল গতি বিচরণ, বিক্ষেপ অপ্রকৃতিস্থ বিকার, বিপর্যয় ১২ সু উত্তম সুকণ্ঠ, সুকৃতি, সুচরিত্র, সুপ্রিয়, সুনীল সহজ সুগম, সুসাধ্য, সুলভ আতিশয্য সুচতুর, সকঠিন, সুধীর, সুনিপুণ, সুতীক্ষ্ণ ১৩ উৎ ঊর্ধ্বমুখিতা উদ্যম, উন্নতি, উৎক্ষিপ্ত, উদগ্রীব, উত্তোলন আতিশয্য উচ্ছেদ, উত্তপ্ত, উৎফুলল, উৎসুক, উৎপীড়ন প্রস্ত্ততি উৎপাদন, উচ্চারণ অপকর্ষ উৎকোচ, উচ্ছৃঙ্খল, উৎকট ১৪ পরি বিশেষ রূপ পরিপক্ব, পরিপূর্ণ, পরিবর্তন শেষ পরিশেষ সম্যক রূপে পরিশ্রান্ত, পরীক্ষা, পরিমাণ চতুর্দিক পরিক্রমণ, পরিমন্ডল ১৫ প্রতি সদৃশ প্রতিমূর্তি, প্রতিধ্বনি বিরোধ প্রতিবাদ, প্রতিদ্বন্দ্বী পৌনঃপুন্য প্রতিদিন, প্রতি মাস অনুরূপ কাজ প্রতিঘাত, প্রতিদান, প্রত্যুপকার ১৬ অতি আতিশয্য অতিকায়, অত্যাচার, অতিশয় অতিক্রম অতিমানব, অতিপ্রাকৃত ১৭ অপি অপিচ ১৮ অভি সম্যক অভিব্যক্তি, অভিজ্ঞ, অভিভূত গমন অভিযান, অভিসার সম্মুখ বা দিক অভিমুখ, অভিবাদন ১৯ উপ সামীপ্য উপকূল, উপকণ্ঠ সদৃশ উপদ্বীপ, উপবন ক্ষুদ্র উপগ্রহ, উপসাগর, উপনেতা বিশেষ উপনয়ন (পৈতা), উপভোগ ২০ আ পর্যন্ত আকণ্ঠ, আমরণ, আসমুদ্র ঈষৎ আরক্ত, আভাস বিপরীত আদান, আগমন বিশেষ দ্রষ্টব্য :আ, সু, বি, নি-এই চারটি উপসর্গ তৎসম ও বাংলা উভয় উপসর্গ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। রূপের বদল না হলেও এই চারটি উপসর্গকে বাংলা উপসর্গ বলার কারণ, তৎসম শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত হলে সেই উপসর্গকে তৎসম উপসর্গ আর তদ্ভব বা খাঁটি বাংলা শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত হলে সেই উপসর্গকে বাংলা উপসর্গ বলা হয়। তাই এই উপসর্গগুলো যখন তদ্ভব শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়, তখন এগুলোকে বলা হয় বাংলা উপসর্গ। আর যখন তৎসম শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়, তখন বলা হয় তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ। যেমন, ‘আলুনি’তে আ বাংলা উপসর্গ, আর ‘আকণ্ঠ’তে আ সংষ্কৃত বা তৎসম উপসর্গ। বিদেশি উপসর্গ :বিভিন্ন বিদেশি ভাষার সঙ্গে সঙ্গে সে সব ভাষার কিছু কিছু উপসর্গও বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে। এই সব বিদেশি ভাষার উপসর্গগুলোই বিদেশি উপসর্গ। তবে এই উপসর্গগুলো বাংলা বা সংস্কৃত উপসর্গের মতো নিয়ম মানে না। এগুলো যে কোন শব্দের সঙ্গেই যুক্ত হতে পারে। বিদেশি উপসর্গের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি শব্দের মতোই নতুন নতুন বিদেশি উপসর্গও বাংলায় গৃহীত হচ্ছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি উপসর্গ নিচে দেয়া হলো- কার দর না নিম ফি বদ বে বর ব কম ফারসি উপসর্গ- ফারসি উপসর্গের প্রয়োগ- উপসর্গ অর্থ উদাহরণ/ প্রয়োগ ১ কার কাজ কারখানা, কারসাজি, কারচুপি, কারবার, কারদানি ২ দর মধ্যস্থ, অধীন দরপত্তনী, দরপাট্টা, দরদালান ৩ না না নাচার, নারাজ, নামঞ্জুর, নাখোশ, নালায়েক ৪ নিম আধা নিমরাজি, নিমখুন ৫ ফি প্রতি ফি-রোজ, ফি-হপ্তা, ফি-বছর, ফি-সন, ফি-মাস ৬ বদ মন্দ বদমেজাজ, বদরাগী, বদমাশ, বদহজম, বদনাম ৭ বে না বেআদব, বেআক্কেল, বেকসুর, বেকায়দা, বেগতিক, বেতার, বেকার ৮ বর বাইরে, মধ্যে বরখাস্ত, বরদাস্ত, বরখেলাপ, বরবাদ ৯ ব সহিত বমাল, বনাম, বকলম ১০ কম স্বল্প কমজোর, কমবখত
Subscribe to:
Posts (Atom)