Search This Blog
উপসর্গ (পর্ব ১): উপসর্গ উপসর্গের নিজস্ব অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে বাংলা উপসর্গ তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ আ, সু, বি, নি বিদেশি উপসর্গ ফারসি উপসর্গ আরবি উপসর্গ ইংরেজি উপসর্গ উর্দু-হিন্দিউপসর্গ ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র শকুন্তলা বঙ্গভাষা আমার পূর্ব বাংলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন উপসর্গ : বাংলা ভাষায় কিছু কিছু অব্যয়সূচক শব্দাংশ বাক্যে পৃথকভাবে স্বাধীন কোনো পদ হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে বিভিন্ন শব্দের শুরুতে আশ্রিত হয়ে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে বলা হয় উপসর্গ। এগুলোর নিজস্ব কোন অর্থ নেই, তবে এগুলো শব্দের পূর্বে ব্যবহৃত হয়ে শব্দের অর্থের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংকোচন সাধন করে। উপসর্গ কোন শব্দ নয়, শব্দাংশ। এটি শুধুমাত্র শব্দের শুরুতে যোগ হয়। খেয়াল রাখতে হবে, উপসর্গ শুধুমাত্র শব্দেরই আগে বসে, কোন শব্দাংশের আগে বসে না। সুতরাং যে শব্দকে ভাঙলে বা সন্ধিবিচ্ছেদ করলে কোন মৌলিক শব্দ পাওয়া যায় না, তার শুরুতে কোন উপসর্গের মতো শব্দাংশ থাকলেও সেটা উপসর্গ নয়। এক্ষেত্রে নতুন শব্দের সঙ্গে মৌলিক শব্দটির কোন অর্থগত সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। শব্দের শুরুতে যোগ হয়ে এটি- নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে, অর্থের সম্প্রসারণ করতে পারে, অর্থের সংকোচন করতে পারে এবং অর্থের পরিবর্তন করতে পারে। উপসর্গের নিজস্ব অর্থবাচকতা বা অর্থ নেই, কিন্তু অন্য কোন শব্দের আগে বসে নতুন শব্দ তৈরির ক্ষমতা বা অর্থদ্যোতকতা আছে। যেমন, ‘আড়’ একটি উপসর্গ, যার নিজস্ব কোন অর্থ নেই। কিন্তু এটি যখন ‘চোখে’র আগে বসবে তখন একটি নতুন শব্দ ‘আড়চোখে’ তৈরি করে, যার অর্থ বাঁকা চোখে। অর্থাৎ, এখানে আড় উপসর্গটি চোখে শব্দের অর্থের পরিবর্তন করেছে। আবার এটিই ‘পাগলা’র আগে বসে তৈরি করে ‘আড়পাগলা’, যার অর্থ পুরোপুরি নয়, বরং খানিকটা পাগলা। এখানে পাগলা শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটেছে। আবার ‘গড়া’ শব্দের আগে বসে তৈরি করে ‘আড়গড়া’ শব্দটি, যার অর্থ আস্তাবল। এখানে আবার শব্দের অর্থ পুরোপুরিই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, উপসর্গের নিজস্ব অর্থবাচকতা না থাকলেও তার অর্থদ্যোতকতা আছে। উপসর্গ অন্য কোন শব্দের আগে বসে নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উপসর্গ মূলত ৩ প্রকার- বাংলা উপসর্গ, তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ ও বিদেশি উপসর্গ। বাংলা উপসর্গ :বাংলা ভাষায় বাংলা উপসর্গ মোট ২১ টি। বাংলা উপসর্গ সবসময় খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের পূর্বে ব্যবহৃত হয়। বাংলা উপসর্গগুলো হলো- অ অঘা অজ অনা আ আড় আন আব ইতি ঊন (ঊনা) কদ কু নি পাতি বি ভর রাম স সা সু হা নিচে বাংলা উপসর্গগুলোর প্রয়োগ দেখানো হলো- উপসর্গ অর্থ উদাহরণ/ প্রয়োগ ১ অ নিন্দিত অকেজো (নিন্দিত কাজ করে যে), অচেনা, অপয়া অভাব অচিন (চিন-পরিচয়ের অভাব), অজানা, অথৈ ক্রমাগত অঝোর (ক্রমাগতভাবে ঝরতে থাকা), অঝোরে ২ অঘা বোকা অঘারাম, অঘাচন্ডী ৩ অজ নিতান্ত/ মন্দ অজপাড়াগাঁ (একেবারে নিতান্তই পাড়াগাঁ), অজমূর্খ, অজপুকুর ৪ অনা অভাব অনাবৃষ্টি (বৃষ্টির অভাব), অনাদর ছাড়া অনাছিষ্টি (সৃষ্টিছাড়া), অনাচার অশুভ অনামুখো (অশুভ, মুখ যার অশুভ) ৫ আ অভাব আলুনি (লবনের অভাব), আকাঁড়া, আধোয়া বাজে, নিকৃষ্ট আকাঠা, আগাছা ৬ আড় বক্র/ বাঁকা আড়চোখে (বাঁকা চোখে), আড়নয়নে আধা, প্রায় আড়পাগলা (আধা পাগলা), আড়ক্ষ্যাপা, আড়মোড়া বিশিষ্ট আড়গড়া (আস্তাবল), আড়কোলা, আড়কাঠি ৭ আন না আনকোরা (যা এখনো কোরা হয়নি, একদম নতুন) বিক্ষিপ্ত আনচান, আনমনা (মনের বিক্ষিপ্ত অবস্থা) ৮ আব অস্পষ্টতা আবছায়া (অস্পষ্ট ছায়া), আবডাল ৯ ইতি এ বা এর ইতিপূর্বে (পূর্বেই) , ইতিকর্তব্য পুরনো ইতিকথা (বহু পুরনো কথা), ইতিহাস ১০ ঊন (ঊনা) কম ঊনিশ (বিশ হতে ১ ঊন) , ঊনপাঁজুরে ১১ কদ্ নিন্দিত কদাকার (নিন্দিত/ কুৎসিত আকার) , কদবেল, কদর্য ১২ কু কুৎসিত/ অপকর্ষ কুঅভ্যাস (কুৎসিত/ খারাপ অভ্যাস), কুকথা, কুনজর, কুসঙ্গ,কুজন ১৩ নি নাই/ নেতি নিখুঁত (খুঁত নেই যার), নিখোঁজ, নিলাজ, নিভাঁজ, নিরেট ১৪ পাতি ক্ষুদ্র পাতিহাঁস (ক্ষুদ্র প্রজাতির হাঁস), পাতিশিয়াল, পাতিলেবু, পাতকুয়ো ১৫ বি ভিন্নতা/ নাই বা নিন্দনীয় বিপথ (ভিন্ন পথ), বিভূঁই, বিফল ১৬ ভর পূর্ণতা ভরপেট (পেটের ভর্তি/ পূর্ণ অবস্থা), ভরসাঁঝ, ভরপুর, ভরদুপুর, ভরসন্ধ্যে ১৭ রাম বড়/ উৎকৃষ্ট রামছাগল (বড় বা উৎকৃষ্ট প্রজাতির ছাগল), রামদা, রামশিঙ্গা, রামবোকা ১৮ স সঙ্গে সলাজ (লাজের সঙ্গে), সরব, সঠিক, সজোর, সপাট ১৯ সা উৎকৃষ্ট সাজিরা (উৎকৃষ্ট মানের এক প্রকার জিরা), সাজোয়ান ২০ সু উত্তম সুদিন (উত্তম দিন), সুনজর, সুখবর, সুনাম, সুকাজ ২১ হা অভাব হাভাতে (ভাতের অভাব), হাপিত্যেশ, হাঘরে
উক্তি পরিবর্তন: উক্তি প্রত্যক্ষ উক্তি পরোক্ষ উক্তি উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম সর্বনাম ও কালসূচক পদের পরিবর্তন প্রশ্নবোধক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন আবেগসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন উক্তি : কারো বক্তব্য বা কথাকেই উক্তি বলে। কোন বক্তা বা কথকের বাককর্ম বা কথাকেই বলা হয় উক্তি। উক্তি ২ প্রকার- প্রত্যক্ষ উক্তি ও পরোক্ষ উক্তি। প্রত্যক্ষ উক্তি : যে বাক্যে বক্তার কথা অবিকল উদ্ধৃত হয়, তাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে। প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার কথা উদ্ধরণ চিহ্ন (‘ ’/“ ”)-এর মধ্যে থাকে এবং বক্তার কথা উদ্ধৃত করার আগে কমা (,) ব্যবহার করা হয়। এগুলো দেখে সহজেই প্রত্যক্ষ উক্তি চেনা যায়। পরোক্ষ উক্তি : যে বাক্যে বক্তার কথা অন্যের জবানীতে পরিবর্তিত/রূপান্তরিত ভাবে প্রকাশিত হয়, তাকে পরোক্ষ উক্তি বলে। পরোক্ষ উক্তিতে কোনো উদ্ধরণ চিহ্ন থাকে না, এবং প্রধম উদ্ধরণ চিহ্নে জায়গায় ‘যে’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বেশিরভাগ পরোক্ষ উক্তিতেই ‘যে’ সংযোজক অব্যয়টি থাকে বলে একে দেখে পরোক্ষ উক্তি চেনা যেতে পারে। তবে ‘যে’ ছাড়াও অনেক পরোক্ষ উক্তি গঠিত হতে পারে। উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম : [উক্তি পরিবর্তন অনেকটাই ইংরেজি Narration-এর নিয়ম অনুযায়ী করা হয়।] ১. উদ্ধরণি চিহ্ন (‘ ’/“ ”) তুলে দিতে হবে এবং প্রথম উদ্ধরণ চিহ্নের জায়গায় ‘যে’ সংযোজক অব্যয় বসাতে হবে। যেমন- প্রত্যক্ষ : আমি বললাম, ‘আমি খেলছি।’ পরোক্ষ : খোকন বললাম যে আমি খেলছি। ২. প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বনামের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন- খোকন বলল, ‘আমি খেলছি।’ খোকন বলল যে খোকন খেলছে। খোকন বলল, ‘আমার বাবা কাজ করছে।’ খোকন বলল যে ওর বাবা কাজ করছে। খোকন ছোটনকে বলল, ‘তুমি খুব ভালো ছেলে।’ খোকন ছোটনকে বলল যে ছোটন খুব ভালো ছেলে। খোকন ছোটনকে বলল, ‘তোমার বাবা কাজ করছে।’ খোকন ছোটনকে বলল যে ছোটনের বাবা কাজ করছে। ৩. নিম্নোক্ত সর্বনাম ও কালসূচক পদগুলো উল্লিখিতভাবে পরিবর্তন করতে হবে : প্রত্যক্ষ উক্তিতে পরোক্ষ উক্তিতে প্রত্যক্ষ উক্তিতে পরোক্ষ উক্তিতে এই সেই গত কাল আগের দিন ইহা তাহা গত কল্য পূর্ব দিন এ সে ওখানে ঐখানে আজ সে দিন এখানে সেখানে আগামী কাল পর দিন এখন তখন আগামীকল্য পরবর্তী দিন যেমন- খোকন বলল, ‘কাল স্কুল ছুটি’। খোকন বলল যে পর দিন স্কুল ছুটি। খোকন বলল, ‘আমি এখনই খাব।’ খোকন বলল যে সে তখনই খাবে। ৪. প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রিয়াপদের পরিবর্তন করতে হবে। যেমন- খোকন বলল, ‘আমি খাচ্ছি।’ খোকন বলল যে সে খাচ্ছে। খোকন বলল, ‘আমি এখনই আসছি।’ খোকন বলল যে সে তখনই যাচ্ছে। খোকন বলেছিল, ‘আমি খেলছি।’ খোকন বলেছিল যে সে খেলছিলো। তবে অনেক সময় ক্রিয়াপদকে কাল অনুযায় পরিবর্তন না করলেও চলে। খোকন বলেছিল, ‘শহরে খুব গরম পড়েছে’। খোকন বলেছিল যে শহরে খুব গরম পড়েছিল। অথবা, খোকন বলেছিল যে শহরে খুব গরম পড়েছে। খোকন বলেছিল, ‘আমি বাজারে যাচ্ছি।’ খোকন বলেছিল যে সে বাজারে যাচ্ছিলো। অথবা, খোকন বলেছিল যে সে বাজারে যাচ্ছে। ৫. প্রত্যক্ষ উক্তিতে কোন চিরন্তন সত্যের উদ্ধৃতি থাকলে উক্তির কালের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন- খোকন বলেছিল, ‘সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে।’ খোকন বলেছিল যে সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে। ৬. প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাসূচক বা আবেগসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন করতে হয় বাক্যের ভাব অনুযায়ী। যেমন- প্রশ্নবোধক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন- খোকন বলল, ‘আজ কি স্কুল ছুটি?’ খোকন জিজ্ঞাসা করল, আজ স্কুল ছুটি কি না। বাবা খোকনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার পরীক্ষার ফল দিয়েছে?’ বাবা খোকনকে জিজ্ঞাসা করলেন, খোকনদের পরীক্ষার ফল দিয়েছে কি না। অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন- খোকন বলল, ‘তোমরা আগামীকাল একবার এসো।’ খোকন তাদেরকে পরদিন একবার আসতে(বা যেতে) বলল। খোকন তার গৃহশিক্ষককে বলল, ‘দয়া করে ভেতরে আসুন।’ খোকন তার গৃহশিক্ষককে ভেতরে আসতে অনুরোধ করল। আবেগসূচক বাক্যের উক্তি পরিবর্তন- খোকন বলল, ‘বাঃ! পাখিটি তো চমৎকার।’ খোকন অবাক হয়ে/আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটি চমৎকার। খোকন বলল, ‘ইস! শীতে কতো মানুষই না কষ্ট পায়।’ খোকন দুঃখের সাথে বলল যে, শীতে অনেক মানুষ কষ্ট পায়। খোকন দুঃখের সাথে বলল, ‘শীতে আমরা কতোই না কষ্ট পাই।’ খোকন দুঃখের সাথে বলল যে শীতে তারা(খোকনরা) বড়/অনেক কষ্ট পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.‘তিনি বললেন, দয়া করে ভিতরে আসুন’- বাক্যটি কিসের উদাহরণ? (গ-২০১০-১১)
সংখ্যাবাচক শব্দ: সংখ্যাবাচক শব্দ: সংখ্যা বলতে গণনার ধারণা বোঝায়। যে সব শব্দ কোন বিশেষ্য পদ, অর্থাৎ কোন ব্যাক্তি বা বস্ত্ত বা কোন কিছুর সংখ্যার ধারণা প্রকাশ করে, তাকে সংখ্যাবাচক শব্দ বলে। যেমন- এক টাকা, দশটা গরম্ন, ইত্যাদি। প্রকারভেদ: সংখ্যাবাচক শব্দ ৪ প্রকার- ১. অঙ্কবাচক সংখ্যা ২. পরিমাণ বা গণনাবাচক সংখ্যা ৩. ক্রম বা পূরণবাচক সংখ্যা ৪. তারিখবাচক সংখ্যা ১.অঙ্কবাচক সংখ্যা: কোন কিছুর সংখ্যা বা পরিমাণ অঙ্কে বা সংখ্যায় লিখলে তাকে বলে অঙ্কবাচক সংখ্যা। যেমন- ১ টাকা, ১০টি গরম্ন। অর্থাৎ, অঙ্কবাচক সংখ্যা হলো- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ ইত্যাদি। ২.পরিমাণ বা গণনাবাচক সংখ্যা :কোন কিছুর সংখ্যা বা পরিমাণ অঙ্কে না লিখে ভাষায় লিখলে তাকে পরিমাণ বা গণনাবাচক সংখ্যা বলে। যেমন- এক টাকা, দশটি গরম্ন। অর্থাৎ,পরিমাণ বা গণনাবাচক সংখ্যাহলো- এক, দই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগারো, বার, ইত্যাদি। পূর্ণসংখ্যার গুণবাচক সংখ্যা : পূর্ণসংখ্যার গুণবাচক সংখ্যা নিচে দেখানো হলো- এক গুণ = এক্কে। যেমন- সাতেক্কে সাত দুই গুণ = দু গুণে। যেমন- পাঁচ দু গুণে দশ তিন গুণ = তিরিক্কে। যেমন- তিন তিরিক্কে নয় চার গুণ = চার বা চৌকা। যেমন- চার চারে বা চৌকা ষোল পাঁচ গুণ = পাঁচা। যেমন-পাঁচ পাঁচা পঁচিশ ছয় গুণ = ছয়ে। যেমন- চার ছয়ে চবিবশ সাত গুণ = সাতা। যেমন- তিন সাতা একুশ আট গুণ = আটা। যেমন- আট আটা চৌষট্টি নয় গুণ = নং বা নয়। যেমন- সাত নং তেষট্টি দশ গুণ = দশং বা দশ। যেমন-দশ দশং একশ’ বিশ গুণ = বিশং বা বিশ। যেমন- তিন বিশং ষাট ত্রিশ গুণ = ত্রিশং বা ত্রিশ। যেমন- তিন ত্রিশং নববই পূর্ণসংখ্যার ন্যূনতা বা আধিক্য বাচক ‘সংখ্যা শব্দ’: পূর্ণসংখ্যার চেয়েও কম বা বেশি বোঝাতে কিছু সংখ্যাবাচক শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এগুলোও সংখ্যার নির্দিষ্ট ধারণাকে বোঝায়। এবং কোন সংখ্যার সাহায্যে না লিখে এগুলোকে ভাষায় ব্যবহার করা হয় বলে এগুলোও পরিমাণ বা গণনাবাচক শব্দ। যেমন- (ক) ন্যূনতা বাচক সংখ্যা শব্দ চৌথা, সিকি বা পোয়া = এক এককের চারভাগের এক ভাগ তেহাই = এক এককের তিনভাগের এক ভাগ অর্ধ বা আধা = এক এককের দুইভাগের এক ভাগ আট ভাগের এক বা এক অষ্টমাংশ = এক এককের আটভাগের এক ভাগ এরকম, চার ভাগের তিন বা তিন চতুর্থাংশ, পাঁচ ভাগের এক বা এক পঞ্চমাংশ, ইত্যাদি। পোয়া = কোন এককের চার ভাগের তিন অংশকে তার পরবর্তী এককের পোয়া অংশ বলে। অর্থাৎ, (খ) আধিক্যবাচক সংখ্যা শব্দ সওয়া - দেড় -আধা কম দুই - আড়াই - আধা কম তিন - ৩.ক্রম বা পূরণবাচক শব্দ: একই সারি, দল বা শ্রেণীতে অবস্থিত কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর ক্রম বা পর্যায় বোঝাতে যে সংখ্যাবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়, তাকে ক্রম বা পূরণবাচক শব্দ বলে। যেমন- প্রথম ছেলে, দশম গরম্ন। অর্থাৎ, ক্রম বা পূরণবাচক শব্দ হলো- প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, ইত্যাদি। ৪.তারিখবাচক শব্দ: বাংলা মাসের তারিখ বোঝাতে যে সংখ্যাবাচক শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাদের তারিখবাচক শব্দ বলে। যেমন- পহেলা বৈশাখ, চৌদ্দই ফাল্গুন। বাংলা তারিখবাচক শব্দের প্রথম চারটি (১-৪) হিন্দি নিয়মে গঠিত। বাকিগুলো অবশ্য বাংলার নিজস্ব নিয়মেই গঠিত হয়েছে। নিচে একটি ছকের মাধ্যমে অঙ্কবাচক, পরিমাণ বা গণনাবাচক, ক্রম বা পূরণবাচক ও তারিখবাচক শব্দগুলো দেখানো হলো- অঙ্ক বা সংখ্যা বাচক শব্দ পরিমাণ বা গণনা বাচক শব্দ ক্রম বা পূরণ বাচক শব্দ তারিখবাচক শব্দ ১ এক প্রথম পহেলা ২ দুই দ্বিতীয় দোসরা ৩ তিন তৃতীয় তেসরা ৪ চার চতুর্থ চৌঠা ৫ পাঁচ পঞ্চম পাঁচই ৬ ছয় ষষ্ঠ ছউই ৭ সাত সপ্তম সাতই ৮ আট অষ্টম আটই ৯ নয় নবম নউই ১০ দশ দশম দশই ১১ এগার একাদশ এগারই ১২ বার দ্বাদশ বারই ১৩ তের ত্রয়োদশ তেরই ১৪ চৌদ্দ চতুর্দশ চৌদ্দই ১৫ পনের পঞ্চদশ পনেরই ১৬ ষোল ষষ্ঠদশ ষোলই ১৭ সতের সপ্তদশ সতেরই ১৮ আঠার অষ্টাদশ আঠারই ১৯ উনিশ ঊনবিংশ উনিশই ২০ বিশ বিংশ বিশে ২১ একুশে একবিংশ একুশে *ছকটা ভালো করে দেখে কোনটি কোন শব্দ তা মনে রাখা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.‘চৌঠা’ কোন বাচক শব্দ (ঘ-২০০৯-১০)
সন্ধি (পর্ব ৫ ও শেষ): ২. ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। অর্থাৎ, ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ কিংবা, গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। অর্থাৎ, ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধ্বনি কিংবা য, র, ল, ব কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। যেমন- নিঃ+আকার = নিরাকার (ই+ঃ+আ) দুঃ+যোগ = দুর্যোগ (উ+ঃ+য) নিঃ+আকরণ = নিরাকরণ (ই+ঃ+আ) দুঃ+লোভ = দুর্লোভ (উ+ঃ+ল) নিঃ+জন = নির্জন (ই+ঃ+জ) দুঃ+অন্ত = দুরন্ত (উ+ঃ+অ) আশীঃ+বাদ = আশীর্বাদ (ঈ+ঃ+ব) প্রাদুঃ+ভাব = প্রাদুর্ভাব (উ+ঃ+ভ) জ্যোতিঃ+ময় = জ্যোতির্ময় (ই+ঃ+ম) বহিঃ+গত = বহির্গত (ই+ঃ+গ) ব্যতিক্রম: ‘ই/উ+ঃ+র’ হলে ‘ঃ’ লোপ পায় এবং ‘ঃ’-র আগের হ্রস্ব স্বরধ্বনি দীর্ঘ হয়। যেমন- ‘নিঃ+রব’, এখানে ‘ন+ই+ঃ’-এর ‘ই+ঃ’-এর পরে ‘র’ ধ্বনির সন্ধি হয়েছে। সুতরাং এখানে ‘ঃ’ লোপ পাবে এবং ‘ই’-র জায়গায় ‘ঈ’ হবে। অর্থাৎ সন্ধি হয়ে হবে‘নিঃ+রব = নীরব’। এরকম-নিঃ+রস = নীরস। ৩.বিসর্গের পরে তালব্য অঘোষ ধ্বনি (চ, ছ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় তালব্য শিশ (শ) ধ্বনি, বিসর্গের পরে মূর্ধণ্য অঘোষ ধ্বনি (ট, ঠ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় মূর্ধণ্য শিশ (ষ) ধ্বনি, বিসর্গের পরে দন্ত্য অঘোষ ধ্বনি (ত, থ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় দন্ত্য শিশ (স) ধ্বনি হয়। অর্থাৎ, ‘ঃ’-এর পরে ‘চ/ছ’ (তালব্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘শ’ ‘ঃ’-এর পরে ‘ট/ঠ’ (মূর্ধণ্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘ষ’ ‘ঃ’-এর পরে ‘ত/থ’ (দন্ত্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘স’ হয়। যেমন-ঃ +চ/ছ = শ+চ/ছ নিঃ+চয় = নিশ্চয় শিরঃ+ছেদ = শিরশ্ছেদঃ +ট/ঠ = ষ+ট/ঠ ধনুঃ+টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার নিঃ+ঠুর = নিষ্ঠুরঃ +ত/থ = স+ত/থ দুঃ+তর = দুস্তর দুঃ+থ = দুস্থ ৪. (ক) ‘অ/আ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় অঘোষ দন্ত্য শিশ ধ্বনি (স) হয়। অর্থাৎ, ‘অ/আ’-এর পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ‘ক/খ/প/ফ’ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘স’ হয়। (খ) ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় অঘোষ মূর্ধণ্য শিশ ধ্বনি (ষ) হয়। অর্থাৎ, ‘অ/আ’-এর পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ‘ক/খ/প/ফ’ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘ষ’ হয়। যেমন- (ক) অ/আ+ঃ+ক/খ/প/ফ (খ) ই/ঈ/উ/ঊ/এ/ঐ/ও/ঔ +ঃ+ক/খ/প/ফ নমঃ+কার = নমস্কার পদঃ+খলন = পদস্খলন নিঃ+কার = নিষ্কর দুঃ+কার = দুষ্কর পুরঃ+কার = পুরস্কার নিঃ+ফল = নিষ্ফল দুঃ+প্রাপ্য = দুষ্প্রাপ্য মনঃ+কামনা = মনস্কামনা বাচঃ+পতি = বাচস্পতি নিঃ+পাপ = নিষ্পাপ দুঃ+কৃতি = দুষ্কৃতি তিরঃ+কার = তিরস্কার বহিঃ+কৃত = বহিষ্কৃত চতুঃ+কোণ = চতুষ্কোণ ভাঃ+কর = ভাস্কর বহিঃ+কার = বহিষ্কার চতুঃ+পদ = চতুষ্পদ আবিঃ+কার = আবিষ্কার ৫. ‘ঃ’-র পরে স্ত, স্থ কিংবা স্প যুক্তব্যঞ্জনগুলো থাকলে পূর্ববর্তী ‘ঃ’ অবিকৃত থাকে কিংবা লোপ পায়। যেমন- নিঃ+স্তব্ধ = নিঃস্তব্ধ/ নিস্তব্ধ দুঃ+স্থ = দুঃস্থ/ দুস্থ নিঃ+স্পন্দ = নিঃস্পন্দ/ নিস্পন্দ ৬. কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্ধির পরও ‘ঃ’ থেকে যায়। যেমন- প্রাতঃ+কাল = প্রাতঃকাল মনঃ+কষ্ট = মনঃকষ্ট শিরঃ+পীড়া = শিরঃপীড়া ৭. কয়েকটিবিশেষ বিসর্গ সন্ধি(এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নিপাতনে সিদ্ধ বা বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি নয়। এগুলো কেবলই বিসর্গ সন্ধি)- বিশেষ বিসর্গ সন্ধি বাচঃ+পতি = বাচস্পতি অহঃ+নিশা = অহর্নিশ ভাঃ+কর = ভাস্কর অহঃ+অহ = অহরহ ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র বাংলাদেশ বিসর্গসন্ধি বিসর্গযুক্ত ‘ই/উ’ ধ্বনির পরে ‘গ/দ’ থাকলে বিসর্গ স্থলে রেফ হয়। (আসলে গ/ঘ ও দ/ধ, ঘোষ ধ্বনি থাকলে) (নিয়ম ২; বিসর্গসন্ধি) ই+ঃ+গ নিঃ+গত = নির্গত ই+ঃ+দ নিঃ+দেশ = নির্দেশ নিঃ+দোষ = নির্দোষ উ+ঃ+গ দুঃ+গত = দুর্গত চতুঃ+গুণ = চতুর্গুণ উ+ঃ+ঘ দুঃ+ঘটনা = দুর্ঘটনা উ+ঃ+দ চতুঃ+দিক = চতুর্দিক আঠারো বছর বয়স বিসর্গসন্ধি দুঃ-উপসর্গের পরে ‘স’ থাকলে সন্ধিবদ্ধ শব্দে বিসর্গ বজায় থাকে। কিন্তু ‘ব’ বা ‘য’ থাকলে বিসর্গের বদলে রেফ হয়। (‘ব’ ঘোষ ধ্বনি এবং ‘য’ অন্তস্থ ধ্বনি বলে বিসর্গের বদলে রেফ হয়।) (নিয়ম ২; বিসর্গসন্ধি) ‘দুঃ+স’ থাকলে বিসর্গ থাকে ‘দুঃ+ব’ বা ‘দুঃ+য’ থাকলে বিসর্গ রেফ হয়ে যায় দুঃ+স দুঃ+ব দুঃ+য দুঃ+সাহস = দুঃসাহস দুঃ+সাধ্য = দুঃসাধ্য দুঃ+বার = দুর্বার দুঃ+যোগ = দুর্যাগ দুঃ+সংবাদ = দুঃসংবাদ দুঃ+সময় = দুঃসময় দুঃ+বিনীত = দুর্বিনীত দুঃ+সহ = দুঃসহ দুঃ+বিষহ = দুর্বিষহ দুঃ+ব্যবহার = দুর্ব্যবহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.কোনটি সন্ধিজাত শব্দ সন্ধি (ঘ-১৯৯৯-২০০০) *.‘উচ্ছৃঙ্খল’ এর সন্ধি বিচ্ছেদ কর? (ঘ-২০০১-০২) *.‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ কিভাবে গঠিত হয়েছে? (ঘ-২০০২-০৩) *.‘নীরস’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হল- (ঘ-২০০৩-০৪) *.নিপাতনে সিদ্ধ হয়ে সন্ধিবদ্ধ হয়েছে কোনটি? (ঘ-২০০৪-০৫) *.‘পর্যবেক্ষণ’- এর সন্ধিবিচ্ছেদ (ঘ-২০০৫-০৬) *.নিচের কোনটির সন্ধিবিচ্ছেদ সঠিকভাবে হয়নি (ঘ-২০০৬-০৭) *.৮. ভুল সন্ধি (ঘ-২০০৮-০৯) *.কোন শব্দটি সন্ধিজাত? সংখ্যা (ঘ-২০১০-১১) *.উপরি+উক্ত মিলে কোন শব্দটি গঠিত হয়? (ক-২০০৫-০৬) *.সদ্যোজাত’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ (ক-২০০৬-০৭) *.‘প্রিয়ংবদা’-র সন্ধিবিচ্ছেদ কর- (ক-২০০৬-০৭) *.‘আদ্যোপান্ত’ এর সন্ধিবিচ্ছেদ হল (ক-২০০৭-০৮) *.‘দৃশ্য’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হলো- (ক-২০০৮-০৯) *.‘শান্ত’- শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ (ক-২০০৯-১০) *.‘ব্যর্থ’ শব্দটির সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি? (গ-২০১০-১১) *.নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি কোনটি? (গ-২০০৯-১০) *.গো+পদ=গোস্পদ *.‘সন্ধি’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হবে: (গ-২০০৯-১০) *.কোনটি ‘অন্তরঙ্গ’ এর সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ? (গ-২০০৭-০৮) *.কোন বাংলা পদের সাথে সন্ধি হয় না? (গ-২০০৬-০৭) *.‘প্রেম’ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ: (গ-২০০৫-০৬) *.‘গো+অক্ষ=গবাক্ষ’- এটি কোন প্রকার সন্ধি? (গ-২০০৪-০৫)
সন্ধি (পর্ব ৪): ৫. ‘ম’-এর পরে অন্তঃস্থ ধ্বনি (য, র, ল, ব) কিংবা উষ্ম ধ্বনি (শ, ষ, স, হ) থাকলে ‘ম’-এর জায়গায় ‘ং’ হয়। সম+যম = সংযম সম+বাদ = সংবাদ সম+রক্ষণ = সংরক্ষণ সম+লাপ = সংলাপ সম+শয় = সংশয় সম+সার = সংসার সম+হার = সংহার বারম+বার = বারংবার কিম+বা = কিংবা সম+বরণ = সংবরণ সম+যোগ = সংযোগ সম+যোজন = সংযোজন সম+শোধন = সংশোধন সর্বম+সহা = সর্বংসহা স্বয়ম+বরা = স্বয়ম্বরা উল্লেখ্য, এই নিয়মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম- সম+রাট = সম্রাট। ৬. তালব্য অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে নাসিক্য ধ্বনি আসলে নাসিক্য ধ্বনিটিও তালব্য নাসিক্য ধ্বনি হয়। অর্থাৎ, ‘চ/জ’ এর পরে ঙ, ঞ, ণ, ন, ম (নাসিক্য ধ্বনি) থাকলে সেগুলো ‘ঞ’ হয়ে যায়। চ+ন = চ+ঞ যাচ+না = যাচ্ঞা রাজ+নী = রাজ্ঞী জ+ন = জ+ঞ যজ+ন = যজ্ঞ ৭. ‘দ/ধ’-এর পরে অঘোষ বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ (অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি) হয়। অর্থাৎ, ‘দ/ধ’-এর পরে ক, চ, ট, ত, প কিংবা খ, ছ, ঠ, থ, ফ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়। দ˃ ত তদ্+কাল = তৎকাল হৃদ+কম্প = হৃৎকম্প তদ+পর = তৎপর তদ+ত্ব = তত্ত্ব ধ˃ ত ক্ষুধ+পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা ৮. ঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (দ/ধ) এর পরে ‘স’ (দন্ত্য স ধ্বনি) থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় দন্ত্য অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ হয়। অর্থাৎ, ‘দ/ধ’ এর পরে ‘স’ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়। যেমন- বিপদ+সংকুল = বিপৎসংকুল (‘দ’ এরপরে ‘স’ থাকায় ‘দ’, ‘ত’ হয়ে গেছে) তদ+সম = তৎসম ৯. ‘ষ’ (মূর্ধণ্য ষ ধ্বনি) এর পরে অঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (ত, থ) থাকলে সেগুলো অঘোষ মূর্ধণ্য ধ্বনি (ট, ঠ) হয়ে যায়। অর্থাৎ, ‘ষ’ এর পরে ‘ত/থ’ থাকলে সেগুলো যথাক্রমে ‘ট/ঠ’ হয়ে যায়। যেমন- কৃষ+তি = কৃষ্টি (ষ+ত = ষ+ট) ষষ+থ = ষষ্ঠ (ষ+থ = ষ+ঠ) ১০. কিছু কিছু সন্ধি কিছু বিশেষ নিয়মে হয়। এগুলোকেবিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধিবলে। বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি উৎ+স্থান = উত্থান উৎ+স্থাপন = উত্থাপন পরি+কৃত = পরিষ্কৃত পরি+কার = পরিষ্কার সম+কৃত = সংস্কৃত সম+কৃতি = সংস্কৃতি সম+কার = সংস্কার মনে রাখার জন্য : উত্থান, উত্থাপন পরিষ্কৃত, পরিষ্কার সংস্কৃত, সংস্কৃতি, সংস্কার ১১. যে সকল ব্যঞ্জনসন্ধি কোনো নিয়ম না মেনে, বরং নিয়মের ব্যতিক্রম করে সন্ধি হয়, তাদেরকেনিপাতনে সিদ্ধ সন্ধিবলে। যেমন, ‘পতৎ+অঞ্জলি’, এখানে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ এর সঙ্গে স্বরধ্বনি ‘অ’ এর সন্ধি হয়েছে। সুতরাং, সন্ধির নিয়ম অনুসারে ‘ত’ এর জায়গায় ‘দ’ হওয়ার কথা। তার বদলে একটি ‘ত’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘পতঞ্জলি’। এরকম- নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি আ+চর্য = আশ্চর্য গো+পদ = গোষ্পদ বন+পতি = বনস্পতি বৃহৎ+পতি = বৃহস্পতি তৎ+কর = তস্কর পর+পর = পরস্পর ষট+দশ = ষোড়শ এক+দশ = একাদশ পতৎ+অঞ্জলি = পতঞ্জলি মনস+ঈষা = মনীষা মনে রাখার জন্য : আশ্চর্য, গোষ্পদ বনস্পতি, বৃহস্পতি তস্কর, পরস্পর ষোড়শ, একাদশ পতঞ্জলি, মনীষা বিসর্গ সন্ধি যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটি যদি বিসর্গ হয়, তবে তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। বিসর্গ সন্ধি ২ ভাবে সম্পাদিত হয়- ১. বিসর্গ + স্বরধ্বনি ২. বিসর্গ + ব্যঞ্জনধ্বনি [বিসর্গসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধির সম্পর্ক: সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী শব্দ বা পদের শেষে ‘র্’ বা ‘স্’ থাকলে তাদের বদলে ‘ঃ’ বা অঘোষ ‘হ’ উচ্চারিত হয়। এর উপর ভিত্তি করে বিসর্গকে ২ভাগে ভাগ করা হয়েছে- র-জাত বিসর্গ: ‘র্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে র-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : অন্তর- অন্তঃ, প্রাতর- প্রাতঃ, পুনর- পুনঃ, ইত্যাদি। স-জাত বিসর্গ :‘স্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে স-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : নমস- নমঃ, পুরস- পুরঃ, শিরস- শিরঃ, ইত্যাদি। মূলত, ‘ঃ’ হলো ‘র্’ ও ‘স্’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই র-জাত বিসর্গ ও স-জাত বিসর্গ উভয়েই মূলত ব্যঞ্জনধ্বনিরই অন্তর্গত। এই কারণে অনেকে বিসর্গ সন্ধিকেও ব্যঞ্জনসন্ধিরই অন্তর্গত বলে মনে করে।] বিসর্গ+স্বরধ্বনি ‘অ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে আবার ‘অ’ থাকলে অ+ঃ+অ = ‘ও’ হয়। যেমন- ততঃ+অধিক = ততোধিক বিসর্গ+ব্যঞ্জনধ্বনি ১. (ক) ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে, ‘ঃ’-র জায়গায় ‘ও’ হয়। অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব অথবা হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়। অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম ধ্বনি থাকলে কিংবা য, র, ল, ব, হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়। যেমন- তিরঃ+ধান = তিরোধান (অ+ঃ+ধ) মনঃ+রম = মনোরম (অ+ঃ+র) তপঃ+বন = তপোবন (অ+ঃ+ব) মনঃ+হর = মনোহর (অ+ঃ+হ) (খ) ‘অ’-এর পরে র-জাত ‘ঃ’ থাকলে, এবং তারপরে স্বরধ্বনি কিংবা ঐ একই ধ্বনিগুলো থাকলে (ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি ও হ), ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। যেমন- অন্তঃ+গত = অন্তর্গত (অ+ঃ+গ) পুনঃ+আয় = পুনরায় (অ+ঃ+আ) অন্তঃ+ধান = অন্তর্ধান (অ+ঃ+ধ) পুনঃ+উক্ত = পুনরুক্ত (অ+ঃ+উ) অন্তঃ+ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত (অ+ঃ+ভ) পুনঃ+জন্ম = পুনর্জন্ম (অ+ঃ+জ) অন্তঃ+বর্তী = অন্তর্বর্তী (অ+ঃ+ব) পুনঃ+বার = পুনর্বার (অ+ঃ+ব) অহঃ+অহ = অহরহ (অ+ঃ+অ) পুনঃ+অপি = পুনরপি (অ+ঃ+অ) প্রাতঃ+উত্থান = প্রাতরুত্থান (অ+ঃ+উ)
Subscribe to:
Posts (Atom)