Search This Blog
সন্ধি (পর্ব ৩): ব্যঞ্জনসন্ধি যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটিও যদি ব্যঞ্জনধ্বনি হয়, তাহলেই সেই সন্ধিকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। ব্যঞ্জনসন্ধি ৩ ভাবে হতে পারে- ১. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি ২. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি ৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি ১. স্বরধ্বনির পর ‘ছ’ থাকলে তা দ্বিত্ব হয়, অর্থাৎ ‘ছ’-র বদলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন- অ+ছ = চ্ছ এক+ছত্র = একচ্ছত্র মুখ+ছবি = মুখচ্ছবি অঙ্গ+ছেদ = অঙ্গচ্ছেদ আলোক+ছটা= আলোকচ্ছটা প্র+ছদ = প্রচ্ছদ বৃক্ষ+ছায়া = বৃক্ষছায়া স্ব+ছন্দ = স্বচ্ছন্দ আ+ছ = চ্ছ কথা+ছলে = কথাচ্ছলে আচ্ছা+দন = আচ্ছাদন ই+ছ = চ্ছ পরি+ছদ = পরিচ্ছদ বি+ছেদ= বিচ্ছেদ পরি+ছদ = পরিচ্ছদ বি+ছিন্ন = বিচ্ছিন্ন প্রতি+ছবি = প্রতিচ্ছবি উ+ছ = চ্ছ অনু+ছেদ = অনুচ্ছেদ ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি ১.ক, চ, ট, ত, প থাকলে এবং তাদের পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়), দ, ব হয়। অর্থাৎ অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়। অর্থাৎ কোনো বর্গের প্রথম ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো সেই বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়। যেমন- ক্+অ = গ+অ দিক্+অন্ত = দিগন্ত ক্+আ = গ+আ বাক্+আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর ক্+ঈ = গ+ঈ বাক্+ঈশ = বাগীশ চ্+অ = জ+অ ণিচ্+অন্ত = ণিজন্ত ট্+আ = ড+আ ষট্+আনন = ষড়ানন ত্+অ = দ+অ তৎ+অবধি = তদবধি কৃৎ+অন্ত = কৃদন্ত ত্+আ = দ+আ সৎ+আনন্দ = সদানন্দ ত্+ই = দ+ই জগৎ+ইন্দ্র = জগদিন্দ্র ত্+উ = দ+উ সৎ+উপায় = সদুপায় সৎ+উপদেশ = সদুপদেশ প্+অ = ব+অ সুপ্+অন্ত = সুবন্ত ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি ১. ক) ‘ত/দ’ এরপরে ‘চ/ছ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্চ/চ্ছ’ হয়। যেমন- ত্+চ = চ্চ সৎ+চিন্তা = সচ্চিন্তা উৎ+চারণ = উচ্চারণ শরৎ+চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র সৎ+চরিত্র = সচ্চরিত্র সৎ+চিদানন্দ(চিৎ+আনন্দ) = সচ্চিদানন্দ ত্+ছ = চ্ছ উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ তৎ+ছবি = তচ্ছবি দ্+চ = চ্চ বিপদ+চয় = বিপচ্চয় দ্+ছ = চ্ছ বিপদ+ছায়া = বিপচ্ছায়া খ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘জ/ঝ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘জ্জ/জ্ঝ’ হয়। যেমন- ত+জ = জ্জ সৎ+জন = সজ্জন উৎ+জ্বল = উজ্জ্বল তৎ+জন্য = তজ্জন্য যাবৎ+জীবন = যাবজ্জীবন জগৎ+জীবন = জগজ্জীবন দ+জ = জ্জ বিপদ+জাল = বিপজ্জাল ত+ঝ = জ্ঝ কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা গ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘শ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন- ত+শ = চ+ছ = চ্ছ উৎ+শ্বাস = উচ্ছাস চলৎ+শক্তি = চলচ্ছক্তি উৎ+শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল ঘ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ড/ঢ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ড্ড/ড্ঢ’ হয়। যেমন- ত+ড = ড্ড উৎ+ডীন = উড্ডীন ত+ঢ = ড্ঢ বৃহৎ+ঢক্কা = বৃহড্ডক্কা ঙ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘হ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘দ্ধ’ হয়। যেমন- ত+হ = দ্ধ উৎ+হার = উদ্ধার উৎ+হৃত = উদ্ধৃত উৎ+হত = উদ্ধত দ+হ = দ্ধ পদ+হতি = পদ্ধতি তদ্+হিত = তদ্ধিত চ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ল’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ল্ল’ হয়। যেমন- ত+ল = ল্ল উৎ+লাস = উল্লাস উৎ+লেখ = উল্লেখ উৎ+লিখিত = উল্লিখিত উৎ+লেখ্য = উল্লেখ্য উৎ+লঙ্ঘন = উল্লঙ্ঘন ২. কোনো অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি তার নিজের বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়। অর্থাৎ, ক, চ, ট, ত, প- এদের পরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা য, র, ব থাকলে প্রথম ধ্বনি (ক, চ, ট, ত, প) তার নিজের বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড, দ, ব) হয়ে যায়। অর্থাৎ, বর্গের প্রথম ধ্বনিগুলোর কোনোটি থাকলে, এবং তার পরে বর্গের তৃতীয় বা চতুর্থ ধ্বনিগুলোর কোনোটি বা য, র, ব (এরা সবাই ঘোষ ধ্বনি) আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় ধ্বনি হয়। যেমন- ক+দ = গ+দ বাক+দান = বাগদান বাক+দেবী = বাগ্দেবী ক+ব = গ+ব দিক+বিজয় = দিগ্বিজয় ক+জ = গ+জ বাক+জাল = বাগ্জাল ট+য = ড+য ষট+যন্ত্র = ষড়যন্ত্র ত+গ = দ+গ উৎ+গার = উদ্গার উৎ+গিরণ =উদ্গিরণ সৎ+গুরু = সদ্গুরু ত+ঘ = দ+ঘ উৎ+ঘাটন = উদ্ঘাটন ত+ভ = দ+ভ উৎ+ভব = উদ্ভব ত+য = দ+য উৎ+যোগ = উদ্যোগ উৎ+যম = উদ্যম ত+ব = দ+ব উৎ+বন্ধন = উদ্বন্ধন ত+র = দ+র তৎ+রূপ = তদ্রূপ ৩.নাসিক্য ধ্বনির পরে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি নিজ বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি বা নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়। অর্থাৎ, ঙ, ঞ, ণ, ন, ম- এদের পরে ক, চ, ট, ত, প থাকলে ক, চ, ট, ত, প যথাক্রমে গ, জ, ড, দ, ব অথবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম হয়ে যায়। অর্থাৎ, বর্গের পঞ্চম/ শেষ ধ্বনির পরে বর্গের প্রথম ধ্বনি আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় বা পঞ্চম/ শেষ ধ্বনি হয়ে যায়। ক+ন = গ/ঙ+ন দিক+নির্ণয় = দিগনির্ণয়/ দিঙনির্ণয় ক+ম = গ/ঙ+ম বাক+ময় = বাঙময় ত+ন = দ/ন+ন জগৎ+নাথ = জগন্নাথ উৎ+নয়ন = উন্নয়ন উৎ+নীত = উন্নীত ত+ম = দ/ন+ম তৎ+মধ্যে = তদমধ্যে/ তন্মধ্যে মৃৎ+ময় = মৃন্ময় তৎ+ময় = তন্ময় চিৎ+ময় = চিন্ময় উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির চেয়ে নাসিক্য ধ্বনিই অধিক প্রচলিত। ৪. ‘ম’-এর পরে কোনো বর্গীয় ধ্বনি বা স্পর্শ ধ্বনি আসলে ‘ম’ তার পরের ধ্বনির নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়। অর্থাৎ, ‘ম’-এর পরে যে বর্গীয় ধ্বনি আসে, ‘ম’ সেই ধ্বনির বর্গের পঞ্চম ধ্বনি হয়ে যায়। ম+ক = ঙ+ক শম+কা = শঙ্কা ম+ভ = ম+ভ কিম+ভূত = কিম্ভূত ম+চ = ঞ+চ সম+চয় = সঞ্চয় ম+ন = ন্ন কিম+নর = কিন্নর ম+ত = ন+ত সম+তাপ = সন্তাপ সম+ন্যাস = সন্ন্যাস ম+দ = ন+দ সম+দর্শন = সন্দর্শন ম+ধ = ন্ধ সম+ধান = সন্ধান উল্লেখ্য, আধুনিক বাংলায় ‘ম’-এর পরে ক-বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ক-বর্গের নাসিক্য/ পঞ্চম ধ্বনি ‘ঙ’-র বদলে ‘ং’ হয়। যেমন, ‘সম+গত’-এ ‘ম’ ও ‘গ (ক-বর্গীয় ধ্বনি)’ সন্ধি হয়ে ‘ম’, ‘ঙ’ না হয়ে ‘ং’ হয়ে ‘সংগত’। এরকম- অহম+কার = অহংকার সম+খ্যা = সংখ্যা
সন্ধি (পর্ব ২): ২. ‘অ/আ’ এরপরে ‘ই/ঈ’ থাকলে উভয় মিলে ‘এ’ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। অ+ই = এ শুভ+ইচ্ছা = শুভেচ্ছা পূর্ণ+ইন্দু = পূর্ণেন্দু স্ব+ইচ্ছা = স্বেচ্ছা নর+ইন্দ্র = নরেন্দ্র অ+ঈ = এ পরম +ঈশ = পরমেশ নর+ঈশ = নরেশ আ+ই = এ যথা+ইষ্ট = যথেষ্ট আ+ঈ = এ মহা+ঈশ = মহেশ রমা+ঈশ = রমেশ ৩. ‘অ/আ’ এরপরে ‘উ/ঊ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ও’ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। অ+উ = ও সূর্য+উদয় = সূর্যোদয় নীল+উৎপল = নীলোৎপল ফল+উদয় = ফলোদয় হিত+উপদেশ = হিতোপদেশ পর+উপকার = পরোপকার প্রশ+উত্তর = প্রশ্নোত্তর অ+ঊ = ও গৃহ+ঊর্ধ্ব = গৃহোর্ধ্ব চল+ঊর্মি = চলোর্মি নব+ঊঢ়া = নবোঢ়া আ+উ = ও যথা+উচিত = যথোচিত মহা+উৎসব = মহোৎসব যথা+উপযুক্ত = যথোপযুক্ত আ+ঊ = ও গঙ্গা+ঊর্মি = গঙ্গোর্মি ৪. অ/আ এরপরে ঋ কার থাকলে উভয়ে মিলে অর হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। অ+ঋ = অর দেব+ঋষি = দেবর্ষি অধম +ঋণ = অধমর্ণ উত্তম+ঋণ = উত্তমর্ণ আ+ঋ = অর মহা+ঋষি = মহর্ষি রাজা+ঋষি = রাজর্ষি ৫. অ/আ এরপরে ঋত থাকলে অ/আ ও ঋত-র ঋ মিলে আর হয় এবং আর’, ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। অ+ঋ (ঋত) = আর শীত+ঋত = শীতার্ত ভয়+ঋত = ভয়ার্ত আ+ ঋ (ঋত) = আর তৃষ্ণা+ঋত = তৃষ্ণার্ত ক্ষুধা+ঋত = ক্ষুধার্ত ৬. অ/আ এরপরে এ/ঐ থাকলে উভয়ে মিলে ঐ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। অ+এ = ঐ জন+এক = জনৈক হিত+এষী = হিতৈষী সর্ব+এব = সর্বৈব অ+ঐ = ঐ মত+ঐক্য = মতৈক্য অতুল+ঐশ্বর্য = অতুলৈশ্বর্য আ+এ = ঐ সদা+এব = সদৈব আ+ঐ = ঐ মহা+ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য ৭. অ/আ এরপরে ও/ঔ থাকলে উভয়ে মিলে ঔ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। অ+ও = ঔ বন+ওষধি = বনৌষধি অ+ঔ = ঔ পরম+ঔষধ = পরমৌষধ আ+ও = ঔ মহা+ওষধি = মহৌষধি আ+ঔ = ঔ মহা+ঔষধ = মহৌষধ ৮. ই/ঈ এরপরে ই/ঈ থাকলে উভয়ে মিলে ঈ হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। ই+ই = ঈ অতি+ইত = অতীত গিরি+ইন্দ্র= গিরীন্দ্র অতি+ইব= অতীব প্রতি+ইত= প্রতীত রবি+ইন্দ্র = রবীন্দ্র ই+ঈ = ঈ পরি+ঈক্ষা = পরীক্ষা প্রতি+ঈক্ষা= প্রতীক্ষা ঈ+ই = ঈ সতী+ইন্দ্র = সতীন্দ্র মহী+ইন্দ্র = মহীন্দ্র ঈ+ঈ = ঈ সতী+ঈশ = সতীশ ক্ষিতী+ঈশ= ক্ষিতীশ শ্রী+ঈশ = শ্রীশ পৃথ্বী+ঈশ = পৃথ্বীশ দিললী+ঈশ্বর = দিল্লীশ্বর ৯. ই/ঈ এরপরে ই/ঈ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনি থাকলে ই/ঈ-র জায়গায় য (য-ফলা,্য) হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। ই+অ = য-ফলা + অ অতি+অন্ত = অত্যন্ত প্রতি+অহ = প্রত্যহ অতি+অধিক = অত্যধিক আদি+অন্ত = আদ্যন্ত যদি+অপি = যদ্যপি পরি+অন্ত = পর্যন্ত ই+আ = য-ফলা + আ ইতি+আদি = ইত্যাদি প্রতি+আশা = প্রত্যাশা প্রতি+আবর্তন = প্রত্যাবর্তন অতি+আশ্চর্য = অত্যাশ্চর্য ই+উ = য-ফলা+ উ অতি+উক্তি = অত্যুক্তি অভি+উত্থান = অভূত্থান অগ্নি+উৎপাত = অগ্নুৎপাত প্রতি+উপকার = প্রত্যুপকার ই+ঊ = য-ফলা+ ঊ প্রতি+উষ = প্রত্যূষ ঈ+আ= য-ফলা+ আ মসী+আধার = মস্যাধার ই+এ = য-ফলা+এ প্রতি+এক = প্রত্যেক ঈ+অ = য-ফলা+অ নদী+অম্বু = নদ্যম্বু ১০. উ/ঊ এরপরে উ/ঊ থাকলে উভয়ে মিলে ঊ হয় এবং তা উ/ঊ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। উ+উ = ঊ মরু+উদ্যান = মরূদ্যান উ+ঊ = ঊ বহু+ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব ঊ+উ = ঊ বধূ+উৎসব = বধূৎসব ঊ+ঊ = ঊ ভূ+ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব ১১. উ/ঊ এরপরে উ/ঊ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনি থাকলে উ/ঊ-র জায়গায় ব (ব-ফলা, ব) হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। উ+অ = ব-ফলা+অ সু+অল্প = স্বল্প পশু+অধম = পশ্বধম অনু+অয় = অন্বয় মনু+অন্তর = মন্বন্তর উ+আ = ব-ফলা+আ সু+আগত = স্বাগত পশু+আচার = পশ্বাচার উ+ই = ব-ফলা+ই অনু+ইত = অন্বিত উ+ঈ = ব-ফলা+ঈ তনু+ঈ = তন্বী উ+এ = ব-ফলা+এ অনু+এষণ = অন্বেষণ ১২. ঋ এরপরে ঋ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি থাকলে ঋ এর জায়গায় র (র-ফলা, ্র ) এবং র-ফলা ঋ এর আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন, পিতৃ(প+ই+তঋ) + আলয় = পিত্রালয় পিতৃ + আদেশ = পিত্রাদেশ ১৩. (ক) এ/ঐ এরপরে অন্য কোন স্বরধ্বনি আসলে ‘এ’ এর জায়গায় ‘অয়’ এবং ‘ঐ’ এর জায়গায় ‘আয়’ হয়। এ+অ = অয়+অ নে+অন = নয়ন শে+অন = শয়ন ঐ+অ = আয়+অ নৈ+অক = নায়ক গৈ+অক = গায়ক (খ) ও/ঔ এরপরে অন্য কোন স্বরধ্বনি আসলে ‘ও’ এর জায়গায় ‘অব’ এবং ‘ঔ’ এর জায়াগায় ‘আব’ হয়। ও+অ = অব+অ পো+অন = পবন লো+অন = লবন ঔ+অ = আব+অ পৌ+অক = পাবক ও+আ = অব+আ গো+আদি = গবাদি ও+এ = অব+এ গো+এষণা = গবেষণা ও+ই = অব+ই পো+ইত্র = পবিত্র ঔ+ই = আব+ই নৌ+ইক = নাবিক ঔ+উ = আব+উ ভৌ+উক = ভাবুক ১৪. যেসব স্বরসন্ধি নিয়ম মানে না, নিয়ম ভেঙে সন্ধি হয় তাদেরনিপাতনে সিদ্ধসন্ধি বলে। যেমন, ‘কুল+অটা’ সন্ধি করে হওয়ার কথা ‘কুলাটা’ (অ+অ = আ)। কিন্তু সন্ধি হওয়ার পর তা হয়ে গেছে ‘কুলটা’। তাই এটানিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। যেমন- নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি কুল+অটা = কুলটা (কুলাটা নয়) গো+অক্ষ = গবাক্ষ (গবক্ষ নয়) প্র+ঊঢ় = প্রৌঢ় (প্রোঢ় নয়) অন্য+অন্য = অন্যান্য (অন্যোন্য নয়) মার্ত+অন্ড = মার্তন্ড (মার্তান্ড নয়) শুদ্ধ+ওদন = শুদ্ধোদন (শুদ্ধৌদন নয়)
সন্ধি (পর্ব ১): পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। অর্থাৎ, এখানে দুটি ধ্বনির মিলন হবে, এবং সেই দুটি ধ্বনি পাশাপাশি অবস্থিত হবে। যেমন, ‘নর + অধম = নরাধম’। এখানে ‘নর’র শেষ ধ্বনি ‘অ’ (ন+অ+র+ অ), এবং ‘অধম’র প্রথম ধ্বনি ‘অ’। এখানে ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হয়েছে। অর্থাৎ পাশাপাশি অবস্থিত দুইট ধ্বনি ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হলো। সন্ধি ধ্বনির মিলন: সন্ধি নতুন শব্দ তৈরির একটি কৌশল, তবে এখানে সমাসের মতো নতুনভাবে সম্পূর্ণ শব্দ তৈরি হয় না। কেবল দুটো শব্দ মিলিত হওয়ার সময় পাশাপাশি অবস্থিত ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। এই দুটি ধ্বনির মিলনের মধ্য দিয়ে দুটি শব্দ মিলিত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে। অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয় না, ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। উল্লেখ্য, একাধিক শব্দের বা পদের মিলন হলে তাকে বলে সমাস। সন্ধির উদ্দেশ্য: সন্ধি মূলত দুটো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয়। সুতরাং যেখানে সন্ধির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, সেখানেই কেবল সন্ধি করা যাবে। এগুলো হলো- ১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা), ২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন) [সন্ধি পড়ার জন্যস্পর্শ বর্ণের তালিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধ্বনি প্রকরণ ও উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে আবারো দেয়া হলো- নাম অঘোষ ঘোষ নাসিক্য অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ ক-বর্গীয় ধ্বনি (কণ্ঠ্য ধ্বনি) ক খ গ ঘ ঙ চ-বর্গীয় ধ্বনি (তালব্য ধ্বনি) চ ছ জ ঝ ঞ ট-বর্গীয় ধ্বনি (মূর্ধন্য ধ্বনি) ট ঠ ড ঢ ণ ত-বর্গীয় ধ্বনি (দন্ত্য ধ্বনি) ত থ দ ধ ন প-বর্গীয় ধ্বনি (ওষ্ঠ্য ধ্বনি) প ফ ব ভ ম সন্ধি প্রথমত ২ প্রকার- বাংলা শব্দের সন্ধি ও তৎসম সংস্কৃত শব্দের সন্ধি। বাংলা শব্দের সন্ধি খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের যে সন্ধি, সেগুলোকেই বাংলা শব্দের সন্ধি বলে। বাংলা শব্দের সন্ধি ২ প্রকার- স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি। স্বরসন্ধি স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বলে স্বরসন্ধি। বাংলা শব্দের স্বরসন্ধিতে দুটো সন্নিহিত স্বরের একটি লোপ পায়। যেমন, অ+এ = এ (অ লোপ) শত+এক = শতেক কত+এক = কতেক আ+আ = আ (একটা আ লোপ) শাঁখা+আরি =শাঁখারি রূপা+আলি = রূপালি আ+উ = উ (আ লোপ) মিথ্যা+উক = মিথ্যুক হিংসা+উক = হিংসুক নিন্দা+উক = নিন্দুক ই+এ = ই (এ লোপ) কুড়ি+এক = কুড়িক ধনি+ইক = ধনিক গুটি+এক = গুটিক আশি+এর = আশির ব্যঞ্জনসন্ধি স্বর আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরধ্বনিতে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। খাঁটি বাংলা শব্দের ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত ধ্বনি পরিবর্তনের সমীভবনের নিয়ম মেনে হয়। এবং ব্যঞ্জনসন্ধির ফলে সৃষ্ট শব্দগুলো মূলত কথ্যরীতিতেই সীমাবদ্ধ। [সমীভবন: দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার- ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি। খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি। গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি।] ১. অঘোষ ধ্বনির পর ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ ধ্বনিটিও ঘোষ ধ্বনি হয়ে যাবে। যেমন, ছোট+দা = ছোড়দা। ২. হলন্ত র (র্) -এর পরে অন্য কোন ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে ‘র্’ লুপ্ত হবে, পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি দ্বিত্ব হবে। যেমন, আর্+না = আন্না, চার্+টি = চাট্টি, ধর্+না = ধন্না, দুর্+ছাই = দুচ্ছাই ৩. ত-বর্গীয় ধ্বনির (ত, থ, দ, ধ, ন) পরে চ-বর্গীয় ধ্বনি (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ) আসলে আগের ধ্বনি লোপ পায়, পরের ধ্বনি (চ-বর্গীয় ধ্বনি) দ্বিত্ব হয়। যেমন, নাত্+জামাই = নাজ্জামাই, বদ্+জাত = বজ্জাত, হাত+ছানি = হাচ্ছানি ৪. ‘প’ এর পরে ‘চ’ এলে আর ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে ‘চ’ ও ‘ত’ এর জায়গায় ‘শ’ হয়। যেমন, পাঁচ+শ = পাঁশশ, সাত+শ = সাশশ, পাঁচ+সিকা = পাঁশশিকা ৫. হলন্ত ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরধ্বনিটি লোপ পাবে না। যেমন, বোন+আই = বোনাই, চুন+আরি = চুনারি, তিল+এক = তিলেক, বার+এক = বারেক, তিন+এক = তিনেক ৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন, কাঁচা+কলা = কাঁচকলা, নাতি+বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি তৎসম শব্দের সন্ধি তৎসম শব্দ অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ অবিকৃত অবস্থায় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দের যে সন্ধি হয়, তাকে বলে তৎসম শব্দের সন্ধি। মূলত সন্ধি বলতে এই তৎসম শব্দের সন্ধিকেই বোঝানো হয়। বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের তৎসম শব্দের সন্ধি হয়- স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি। স্বরসন্ধি স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির সন্ধি হলে তাকে বলে স্বরসন্ধি। নিচে স্বরসন্ধির নিয়মগুলো দেয়া হলো- ১. ‘অ/আ’ এরপরে ‘অ/আ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘আ’ হয় এবং তা প্রথম ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। অ+অ = আ নর+অধম = নরাধম প্রাণ+অধিক = প্রাণাধিক হিম+অচল = হিমাচল হস্ত+অন্তর = হস্তান্তর হিত+অহিত = হিতাহিত অ+আ = আ হিম+আলয় = হিমালয় দেব+আলয় = দেবালয় রত্ন+আকর = রত্নাকর সিংহ+আসন= সিংহাসন আ+অ = আ যথা+অর্থ = যথার্থ আশা+অতীত = আশাতীত মহা+অর্ঘ = মহার্ঘ কথা+অমৃত = কথামৃত আ+আ = আ বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয় কারা+আগার = কারাগার মহা+আশয় = মহাশয় সদা+আনন্দ = সদানন্দ
সমাস (পর্ব ৩ ও শেষ পর্ব): প্রাদি সমাস প্র, প্রতি, অনু, পরি, ইত্যাদি অব্যয় বা উপসর্গের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যর সমাস হলে তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন। এখানে বচন সমস্যমান পদটি একটি বিশেষ্য, যার মূল (ধাতু)বচ ধাতু বা কৃৎ প্রত্যয়। ‘প্র’ অব্যয়ের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্য ‘বচন’র সমাস হয়ে সমস্ত পদ ‘প্রবচন’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। সুতরাং, এটি প্রাদি সমাস। নিত্য সমাস যে সমাসের সমস্ত পদই ব্যাসবাক্যের কাজ করে, আলাদা করে ব্যাসবাক্য তৈরি করতে হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন, অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর। এখানে ‘অন্য গ্রাম’ আর ‘গ্রামান্তর’, এই বাক্যাংশ ও শব্দটির মধ্যে তেমন বিশেষকোন পার্থক্য নেই। কেবল ‘অন্য’ পদের বদলে ‘অন্তর’ পদটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এটি নিত্য সমাস। ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র শকুন্তলা শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম বনমধ্যে বনের মধ্যে ষষ্ঠী তৎপুরুষ প্রাণভয় প্রাণ যাওয়ার ভয় মধ্যপদলোপী কর্মধারয় রথারোহণ রথে আরোহণ সপ্তমী তৎপুরুষ রথচালন রথকে চালন দ্বিতীয় তৎপুরুষ শরনিক্ষেপ শরকে নিক্ষেপ দ্বিতীয় তৎপুরুষ শরের নিক্ষেপ ষষ্ঠী তৎপুরুষ প্রাণবধ প্রাণের বধ ষষ্ঠী তৎপুরুষ অতিমাত্র মাত্রাকে অতিক্রান্ত প্রাদি বেগসংবরণ বেগকে সংবরণ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ বজ্রসম বজ্রের সম ষষ্ঠী তৎপুরুষ ক্ষীণজীবী ক্ষীণভাবে বাঁচে যে উপপদ তৎপুরুষ অল্পপ্রাণ অল্পপ্রাণ যার বহুব্রীহি পুত্রলাভ পুত্রকে লাভ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ কার্যক্ষতি কার্যরে ক্ষতি ষষ্ঠী তৎপুরুষ অতিথি সৎকার অতিথির সৎকার ষষ্ঠী তৎপুরুষ ধর্মকার্য ধর্মবিহিত কার্য মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ভুজবল ভুজের বল ষষ্ঠী তৎপুরুষ ভারার্পণ ভারের অর্পণ ষষ্ঠী তৎপুরুষ তপোবন তপের নিমিত্ত বন চতুর্থী তৎপুরুষ তপোবনদর্শন তপোবনকে দর্শন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ কোটরস্থিত কোটরে স্থিত সপ্তমী তৎপুরুষ মুখভ্রষ্ট মুখ থেকে ভ্রষ্ট পঞ্চমী তৎপুরুষ উপলখণ্ড উপলের খণ্ড ষষ্ঠী তৎপুরুষ বিস্ময়াপন্ন বিস্ময়কে আপন্ন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ কর্ণকুহর কর্ণের কুহর ষষ্ঠী তৎপুরুষ তপস্বিকন্যা তপস্বীর কন্যা ষষ্ঠী তৎপুরুষ অনতিবৃহৎ নয় অতি বৃহৎ নঞ তৎপুরুষ সেচনকলস সেচনের নিমিত্ত কলস চতুর্থী তৎপুরুষ জলসেচন জলদ্বারা সেচন তৃতীয়া তৎপুরুষ অনসূয়া নেই অসূয়া (ঈর্ষা) যার বহুব্রীহি প্রিয়ংবদা প্রিয়ম্ (প্রিয়বাক্য) বলে যে (স্ত্রী) উপপদ কণ্বতনয়া কণ্বের তনয়া ষষ্ঠী তৎপুরুষ মনোহারিণী মন হরণ করে যে নারী উপপদ তৎপুরুষ স্বভাবসিদ্ধ স্বভাব দ্বারা সিদ্ধ তৃতীয়া তৎপুরুষ অঙ্গুলি সংকেত অঙ্গুলি দ্বারা সংকেত তৃতীয়া তৎপুরুষ নবযৌবন নব যে যৌবন কর্মধারয় যৌবনের গান শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম মমতারস মমতা মিশ্রিত রস মধ্যপদলোপী কর্মধারয় অলসতন্দ্রা অলস যে তন্দ্রা কর্মধারয় মোহনিদ্রা মোহ রূপ নিদ্রা রূপক কর্মধারয় সৈন্যসামন্ত সৈন্য ও সামন্ত দ্বন্দ্ব সংগীতগুঞ্জন সংগীতের গুঞ্জন ষষ্ঠী তৎপুরুষ ঝরনাধারা ঝরনার ধারা ষষ্ঠী তৎপুরুষ জবাকুসুমসঙ্কাশ জবাকুসুমের সঙ্কাশ ষষ্ঠী তৎপুরুষ তিমিরবিদারী তিমিরকে বিদীর্ণ করে যা কর্মধারয় যৌবনসূর্য যৌবন রূপ সূর্য রূপক কর্মধারয় তিমিরকুন্তলা তিমিরের ন্যায় কুন্তল যার উপমিত কর্মধারয় পাষাণস্তুপ পাষাণের স্তুপ ষষ্ঠী তৎপুরুষ আলোকপিয়াসী আলোকের পিয়াসী ষষ্ঠী তৎপুরুষ প্রাণচঞ্চল প্রাণ চঞ্চল যার বহুব্রীহি মেঘলুপ্ত মেঘে লুপ্ত সপ্তমী তৎপুরুষ জয়মুকুট জয়ের জন্য যে মুকুট মধ্যপদলোপী কর্মধারয় মার্তণ্ডপ্রায় মার্তণ্ডের প্রায় ষষ্ঠী তৎপুরুষ নবপৃথিবী নব যে পৃথিবী কর্মধারয় সলিলসমাধি সলিলে সমাধি সপ্তমী তৎপুরুষ একটি তুলসী গাছের কাহিনী শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম গল্পপ্রেমিক গল্প প্রেমিক যে কর্মধারয় পুষ্পসৌরভ পুষ্পের সৌরভ ষষ্ঠী তৎপুরুষ জ্যোৎস্নারাত জ্যোৎস্না শোভিত রাত মধ্যপদলোপী কর্মধারয় পৃষ্ঠপ্রদর্শন পৃষ্ঠকে প্রদর্শন দ্বিতীয়া তৎপুরুষ দেশভঙ্গ দেশকে ভঙ্গ দ্বিতীয়া তৎপুরুষ জনমানব জন ও মানব দ্বন্দ্ব দেশপলাতক দেশ থেকে পলাতক পঞ্চমী তৎপুরুষ আম-কুড়ানো আমকে কুড়ানো দ্বিতীয়া তৎপুরুষ অনাশ্রিত নয় আশ্রিত যে বহুব্রীহি সমবেদনা-ভরা সমবেদনা দিয়ে ভরা তৃতীয়া তৎপুরুষ মন্দভাগ্য মন্দ যে ভাগ্য কর্মধারয় মন্দ ভাগ্য যার বহুব্রীহি ন্যায়সঙ্গত ন্যায় দ্বারা সঙ্গত তৃতীয়া তৎপুরুষ জীবনসঞ্চার জীবনের সঞ্চার ষষ্ঠী তৎপুরুষ আবর্জনা-ভরা আবর্জনা দ্বারা ভরা তৃতীয়া তৎপুরুষ গানের আসর গানের আসর অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ রান্নাঘর রান্না করা ঘর মধ্যপদলোপী কর্মধারয় রান্নার নিমিত্ত ঘর চতুর্থী তৎপুরুষ বেওয়ারিশ বে (নেই) ওয়ারিশ যার নঞর্থক বহুব্রীহি সন্ধ্যাপ্রদীপ সন্ধ্যার প্রদীপ ষষ্ঠী তৎপুরুষ জীবনপ্রদীপ জীবন রূপ প্রদীপ রূপক কর্মধারয় সুখসময় সুখের সময় ষষ্ঠী তৎপুরুষ গৃহকর্ত্রী গৃহের কর্ত্রী ষষ্ঠী তৎপুরুষ বাকবিতণ্ডা বাক দ্বারা বিতণ্ডা তৃতীয়া তৎপুরুষ অত্যাচার অবিচার অত্যাচার ও অবিচার দ্বন্দ্ব শ্বাস-প্রশ্বাস শ্বাস ও প্রশ্বাস দ্বন্দ্ব কচুকাটা কচুর মত কাটা উপমান কর্মধারয় অক্ষত নয় ক্ষত নঞ তৎপুরুষ অবিশ্বাস্য নয় বিশ্বাস্য নঞ তৎপুরুষ বেআইনি বে (নয়) আইনি নঞ তৎপুরুষ অপর্যাপ্ত নয় পর্যাপ্ত নঞ তৎপুরুষ যৌবনের গান শব্দ ব্যাসবাক্য সমাসের নাম শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন শ্রম-কিণাঙ্কের ন্যায় কঠিন উপমান কর্মধারয় বন্য-শ্বাপদ-সঙ্কুল বন্য-শ্বাপদে সঙ্কুল সপ্তমী তৎপুরুষ জরা-মৃত্যু-ভীষণা জরা-মৃত্যুতে ভীষণা সপ্তমী তৎপুরুষ ধরণী-মেরী ধরনী রূপ মেরী রূপক কর্মধারয় খেয়াল-খুশি খেয়াল ও খুশি দ্বন্দ্ব জীবন-আবেগ জীবনের আবেগ ষষ্ঠী তৎপুরুষ উদ্ধত-শির উদ্ধত শির যার বহুব্রীহি সিন্ধু-নীর সিন্ধুর নীর ষষ্ঠী তৎপুরুষ যৌবন-বেগ যৌবনের বেগ ষষ্ঠী তৎপুরুষ মরু-কবি মরুর কবি ষষ্ঠী তৎপুরুষ বিপ্লব-অভিযান বিপ্লব ও অভিযান দ্বন্দ্ব গরল-পিয়ালা গরলের পিয়ালা ষষ্ঠী তৎপুরুষ গিরি-নিঃস্রাব গিরি হতে নিঃসৃত যা বহুব্রীহি কূপমণ্ডুক কূপের মণ্ডুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ
সমাস (পর্ব ২): কর্মধারয় সমাস মূলত ৪ প্রকার- মধ্যপদলোপী কর্মধারয়:যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদগুলো লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন, ‘স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ’। এখানে ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদ ‘রক্ষার্থে’ লোপ পেয়েছে। পূর্বপদ ‘স্মৃতি’ এখানে বিশেষণ ভাব বোঝাচ্ছে। আর ‘সৌধ’ বিশেষ্য। এটিরই অর্থ প্রধান। সুতরাং এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। (উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম।কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়। আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান। আর উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম। যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’। এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।) উপমান কর্মধারয় সমাস:সাধারণ ধর্মবাচক পদের সঙ্গে উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। অর্থাৎ, উপমান ও উপমেয় কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে, সেটিই উপমান কর্মধারয়। যেমন, তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র। এখানে ‘তুষার’র সঙ্গে কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে তুলনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি উপমান। আর সাধারণ ধর্ম হলো ‘শুভ্র’। উপমেয় এখানে নেই। সুতরাং, এটি উপমান কর্মধারয় সমাস। উপমিত কর্মধারয় সমাস:উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। এই সমাসে সাধারণ ধর্ম উল্লেখ করা থাকে না। অর্থাৎ, উপমান ও উপমিত কর্মধারয়ের মধ্যে যেটিতে সাধারণ ধর্মবাচক পদ থাকবে না, সেটিই উপমিত কর্মধারয় সমাস। যেমন, ‘পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ’। এখানে ‘পুরুষ’কে ‘সিংহ’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে ‘পুরুষ’ উপমেয় আর ‘সিংহ’ উপমান। সাধারণ ধর্মের উল্লেখ নেই। সুতরাং, এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস। রূপক কর্মধারয় সমাস:উপমান ও উপমেয় পদের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এটির ব্যাসবাক্যে উপমেয় ও উপমান পদের মাঝে ‘রূপ’ শব্দটি অথবা ‘ই’ শব্দাংশটি ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘মন রূপ মাঝি = মনমাঝি’। এখানে ‘মন’ উপমেয় ও ‘মাঝি’ উপমান। কিন্তু এখানে তাদের কোন নির্দিষ্ট গুণের তুলনা করা হয়নি। মনকেই মাঝি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। তৎপুরুষ সমাস যে সমাসে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পায়, এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। পূর্বপদের যে বিভক্তি লোপ পায়, সেই বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসের নামকরণ করা হয়। তবে মাঝে মাঝে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে অবিকৃত থেকে যায়। তখন সেটাকে বলা হয় অলুক তৎপুরুষ। (অলুক মানে লোপ না পাওয়া, অ-লোপ)। যেমন, দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত। এখানে পূর্বপদ ‘দুঃখ’র সঙ্গে থাকা দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ পেয়েছে। আবার পরপদ ‘প্রাপ্ত’র অর্থই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুঃখ প্রাপ্ত হয়েছে বলেই নতুন শব্দের প্রয়োজন হয়েছে, যার জন্য বাক্যাংশটিকে সমাস করে নতুন শব্দ বানানো হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে পূর্বপদের শেষের বিভক্তি লোপ পেয়েছে, এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি তৎপুরুষ সমাস। বহুব্রীহি সমাস যে সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনটিরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয় না, বরং সমস্ত পদ তৃতীয় কোন শব্দকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন, মহান আত্মা যার = মহাত্মা। এখানে পূর্বপদ ‘মহান’ (মহা) ও পরপদ ‘আত্মা’। কিন্তু সমস্ত পদ ‘মহাত্মা’ দ্বারা মহান বা আত্মা কোনটাকেই না বুঝিয়ে এমন একজনকে বোঝাচ্ছে, যিনি মহান, যার আত্মা বা হৃদয় মহৎ। আবার, মহাত্মা বলতে মহাত্মা গান্ধীকেও বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু কোন অর্থেই পূর্বপদ বা পরপদকে বোঝানো হচ্ছে না। অর্থাৎ, পূর্বপদ বা পরপদ, কোনটারই অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে না। সুতরাং, এটি বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ। (উল্লেখ্য, বহুব্রীহি সমাস, বিশেষ করে কিছু ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস ও উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সমস্ত পদ প্রায় একই ধরনের হয়। ফলে এদের সমস্ত পদ দেখে আলাদা করে চেনার তেমন কোন উপায় নেই। এগুলোর সমাস নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাই একই ব্যাসবাক্য ও সমাস নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর পরীক্ষায় মূলত এগুলো উপপদ তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ হিসেবেই আসে।) দ্বিগু সমাস দ্বিগু সমাসের সঙ্গে কর্মধারয় সমাসের বেশ মিল রয়েছে। এজন্য একে অনেকেই কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। দ্বিগু সমাসেও পরপদের অর্থই প্রধান। এবং এই সমাসেও বিশেষণ পদের সঙ্গে বিশেষ্য পদের সমাস হয়। তবে এখানে বিশেষণ পদটি সর্বদাই সংখ্যাবাচক হয়, এবং সমাস হয় সমাহার বা মিলন অর্থে। অর্থাৎ, সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয়, এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন, ‘অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু’। এখানে পূর্বপদ ‘অষ্ট’ একটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ। আর পরপদ ‘ধাতু’ বিশেষ্য। অষ্ট ধাতুর মিলন বা সমাহার অর্থে সমাস হয়ে ‘অষ্টধাতু’ সমস্ত পদটি তৈরি হয়েছে যাতে ‘ধাতু’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, পরপদের অর্থ প্রধান হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুতরাং, এটি দ্বিগু সমাস। অব্যয়ীভাব সমাস সমাসের পূর্বপদ হিসেবে যদি অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, এবং সেই অব্যয়ের অর্থই প্রধান হয়, তবে সেই সমাসকে বলা হয় অব্যয়ীভাব সমাস। যেমন, ‘মরণ পর্যন্ত = আমরণ’। এখানে পূর্বপদ হিসেবে পর্যন্ত অর্থে ‘আ’ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আর পরপদ ‘মরণ’। কিন্তু এখানে সমস্ত পদটিকে নতুন অর্থ দিয়েছে ‘আ’ উপসর্গটি। অর্থাৎ, এখানে ‘আ’ উপসর্গ বা অব্যয় বা পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। তাই এটি অব্যয়ীভাব সমাস। (উপসর্গ এক ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশ। উপসর্গ বচন বা লিঙ্গ ভেদে পরিবর্তিত হয় না কিংবা বাক্যের অন্য কোন পদের পরিবর্তনেও এর কোন পরিবর্তন হয় না। এরকম আরেকটি অব্যয়সূচক শব্দাংশ হলো অনুসর্গ।)
Subscribe to:
Posts (Atom)