Search This Blog

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): ৩. ইকা-প্রত্যয় : (ক) শব্দের শেষে অক থাকলে ইকা-প্রত্যয় যোগ হয় এবং অক’-র স্থলে ইকা হয়। যেমন- বালক-বালিকা, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেবক-সেবিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা। ব্যতিক্রম : গণক-গণকী (গণিকা- বেশ্যা), নর্তক-নর্তকী, চাতক-চাতকী, রজক-রজকী/ রজকিনী (বাংলায়) (খ) অনেক সময় ক্ষুদ্রার্থেও ইকা প্রত্যয় যোগ হয়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না, এগুলো ক্ষুদ্রার্থক প্রত্যয়। যেমন- নাটক-নাটিকা (ক্ষুদ্র নাটক, নাটকের স্ত্রী রূপ নয়), মালা-মালিকা (ক্ষুদ্র মালা), গীত-গীতিকা (ক্ষুদ্র গান), পুস্তক-পুস্তিকা (ক্ষুদ্র বই)। ৪. আনী-প্রত্যয় : ইন্দ্র-ইন্দ্রানী, মাতুল-মাতুলানী, আচার্য-আচার্যানী (আচার্যের স্ত্রী, কিন্তু আচার্যের কাজে নিয়োজিত নারীও ‘আচার্য’), শূদ্র-শূদ্রানী (শূদ্রের স্ত্রী, সাধারণ শূদ্র জাতীয় মহিলা ‘শূদ্রা’), ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়ানী (ক্ষত্রিয়ের স্ত্রী, ক্ষত্রিয় জাতের মহিলা ক্ষত্রিয়া) কখনো কখনো আনী-প্রত্যয় অর্থেরও পরিবর্তন ঘটায়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না। যেমন- অরণ্য-অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), হিম-হিমানী (জমানো বরফ)। ৫. নী, ঈনী-প্রত্যয় : মায়াবী-মায়াবিনী, কুহক-কুহকিনী, যোগী-যোগিনী, মেধাবী-মেধাবিনী, দুঃখী-দুঃখিনী বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ : ১. যে সব পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ আছে, সেগুলোর শেষে ‘ত্রী’ হয়। যেমন- ধাতা-ধাত্রী, নেতা-নেত্রী, কর্তা-কর্ত্রী, শ্রোতা- শ্রোত্রী ২. পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত, বান, মান, ঈয়ান থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে যথাক্রমে অতী, বতী, মতী, ঈয়সী হয়। যেমন- সৎ-সতী, মহৎ-মহতী, গুণবান-গুণবতী, রূপবান-রূপবতী, শ্রীমান-শ্রীমতি, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, গরীয়ান-গরিয়সী ৩. বিশেষ নিয়মে গঠিত স্ত্রীবাচক শব্দ : সম্রাট- সম্রাজ্ঞী, রাজা-রাণী, যুবক-যুবতী, শ্বশুর-শ্বশ্রূ, নর-নারী, বন্ধু-বান্ধবী, দেবর- জা, শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী, স্বামী-স্ত্রী, পতি-পত্নী, সভাপতি-সভানেত্রী নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ : কতগুলো সংস্কৃত শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। অর্থাৎ, এগুলো সর্বদাই স্ত্রীবাচক, এগুলোর কোন পুরুষবাচক শব্দই নেই। যেমন- সতীন, সৎমাতা, সধবা, কুলটা ইত্যাদি। বিদেশি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ খান- খানম মরদ- জেনানা মালেক- মালেকা মুহতারিম- মুহতারিমা সুলতান- সুলতানা দ্রষ্টব্য : ১. কতোগুলো বাংলা শব্দ পুরুষ ও স্ত্রী দুই-ই বোঝায়। যেমন-জন, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু ২. কতোগুলো শব্দ শুধু পুরুষ বোঝায়। যেমন-কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার ৩. কতোগুলো শব্দ শুধু স্ত্রীবাচক হয়। যেমন-সতীন, সৎমা, সধবা ৪. কিছু পুরুষবাচক শব্দের দুটো করে স্ত্রীবাচক শব্দ আছে- দেবর- ননদ (দেবরের বোন), জা (দেবরের স্ত্রী) ভাই- বোন, ভাবি/ বৌদি (ভাইয়ের স্ত্রী) শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী (নারী শিক্ষক), শিক্ষকপত্নী (শিক্ষকের স্ত্রী) বন্ধু- বান্ধবী মেয়ে বন্ধু), বন্ধুপত্নী (বন্ধুর স্ত্রী) দাদা-দিদি (বড় বোন), বৌদি (দাদার স্ত্রী) ৫. বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের বিশেষণ স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- সুন্দর বলদ- সুন্দর গাই, সুন্দর ছেলে- সুন্দর মেয়ে, মেজ খুড়ো, মেজ খুড়ি ৬. বাংলায় বিশেষণ পদের স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে (পাগলি হবে না)। নদী ভয়ে অস্থির হয়ে গেছে (অস্থিরা হবে না)। ৭. কুল-উপাধি-বংশ ইত্যাদিরও স্ত্রীবাচক রূপ আছে। যেমন- ঘোষ- ঘোষজা (কন্যা অর্থে), ঘোষজায়া (পত্নী অর্থে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.ক্ষুদ্রার্থে ‘ইকা’ প্রত্যয়যোগে গঠিত? (ঘ-২০০৪-০৫) *.দুটি পুরম্নষবাচক রম্নপ রয়েছে কোন শব্দের ? (ঘ-২০০৮-০৯) *.লিঙ্গান্তর হয় না এমন শব্দ কোনটি? (গ-২০০৪-০৫)

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) (পর্ব ১): লিঙ্গ পুরুষবাচক শব্দ স্ত্রীবাচক শব্দ পতি ও পত্নীবাচক অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ সাধারণ পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বাংলা শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ বিদেশি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ দ্রষ্টব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন লিঙ্গ : ছেলে মেয়ের ধারণাকে বলা হয় লিঙ্গ। অর্থাৎ, পুংলিঙ্গ মানে পুরুষ, আর স্ত্রীলিঙ্গ মানে নারী বা মেয়ে বা স্ত্রী। এই বিভাজনই হলো লিঙ্গভেদ। অন্যান্য ভাষার মতোই বাংলা ভাষাতেও লিঙ্গভেদে শব্দের রূপ পরিবর্তিত হয়। আবার অনেক সময় দুই লিঙ্গের দুইটি পৃথক শব্দও ব্যবহৃত হয়। পুরুষবাচক শব্দ : যে শব্দ পুরুষ বা ছেলে বোঝায়, তাকে পুরুষবাচক শব্দ বলে। যেমন- বাপ, ভাই, ছেলে, ইত্যাদি। স্ত্রীবাচক শব্দ : যে শব্দ নারী বা স্ত্রী বা মেয়ে বোঝায়, তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলে। যেমন- মা, বোন, মেয়ে, ইত্যাদি। উলেলখ্য, মূলত বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ আছে। সংস্কৃত ভাষায় পুরুষবাচক বিশেষ্য পদের সঙ্গে পুরুষবাচক বিশেষণ পদ আর স্ত্রীবাচক বিশেষ্য পদের স্ত্রীবাচক বিশেষণ পদ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষায় এই নিয়ম মানা হয় না। বাংলা ভাষায় বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ করা হয় না। অর্থাৎ, বাংলা ভাষায় কেবল বিশেষ্য পদের লিঙ্গভেদ হয়। যেমন- সংস্কৃত ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দরী বালিকা’। কিন্তু বাংলা ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা’। পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দগুলোকে সাধারণত ২টি ভাগে ভাগ করা যায়- ১. পতি ও পত্নীবাচক অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ : আববা-আম্মা, বাবা-মা, চাচা-চাচি, কাকা-কাকি, জেঠা-জেঠি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নন্দাই-ননদ, দেওর-জা, ভাই-ভাবি/বৌদি, ইত্যাদি। ২. সাধারণ পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ : খোকা-খুকি, পাগল-পাগলি, বামন-বামনি, ভেড়া-ভেড়ী, মোরগ-মুরগি, বালক-বালিকা, দেওর-ননদ, ইত্যাদি। পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন মূলত পুরুষবাচক শব্দের শেষে স্ত্রীবাচক প্রত্যয় যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। অর্থাৎ, পুরুষবাচক শব্দের শেষে একটি অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। এই স্ত্রীবাচক প্রত্যয় ২ প্রকার- বাংলা স্ত্রী বাচক প্রত্যয় ও সংস্কৃত স্ত্রী বাচক প্রত্যয়। বাংলা স্ত্রী বাচক প্রত্যয়গুলো বাংলা শব্দের সঙ্গে আর সংস্কৃত স্ত্রী বাচক প্রত্যয়গুলো সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়। শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হওয়া ছাড়াও আরো কিছু বিশেষ নিয়মে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। নিচে বাংলা ও সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। বাংলা শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বাংলা স্ত্রী প্রত্যয় যোগে পুরুষ হতে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন : ১. ঈ-প্রত্যয় : বেঙ্গম-বেঙ্গমী, ভাগনা/ভাগনে- ভাগনী ২. নী-প্রত্যয় : কামার-কামারনী, জেলে-জেলেনী, কুমার-কুমারনী, ধোপা-ধোপানী, মজুর-মজুরনী পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে নী-প্রত্যয় যোগ হলে আগের ‘ঈ’, ‘ই’ হয়। যেমন- ভিখারী- ভিখারিনী ৩. আনী-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকুরানী, নাপিত-নাপিতানী, মেথর-মেথরানী, চাকর-চাকরানী ৪. ইনী-প্রত্যয় : কাঙাল-কাঙালিনী, গোয়ালা- গোয়ালিনী, বাঘ-বাঘিনী ৫. উন-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকরুন ৬. আইন-প্রত্যয় : (এরকম আরো নতুন নতুন প্রত্যয়ের প্রয়োগ দেখা যায়) ঠাকুর-ঠাকুরাইন নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ : কতগুলো শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। অর্থাৎ, এগুলো সর্বদাই স্ত্রীবাচক, এগুলোর কোন পুরুষবাচক শব্দই নেই। যেমন- সতীন, সৎমা, এয়ো, দাই, সধবা, ইত্যাদি। শব্দের আগে পৃথক শব্দ যোগ করে : কতগুলো শব্দের আগে পুরুষবাচক শব্দ গঠনের জন্য নর, মদ্দা, ইত্যাদি ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠনের জন্য স্ত্রী, মাদী, মাদা, ইত্যাদি শব্দ যোগ করা হয়। যেমন- মর/ মদ্দা/ হুলো বিড়াল- মেনি বিড়াল, মদ্দা হাঁস- মাদী হাঁস, মদ্দা ঘোড়া- মাদী ঘোড়া, পুরুষলোক-মেয়েলোক, বেটাছেলে- মেয়েছেলে, পুরুষ কয়েদী- স্ত্রী/ মেয়ে কয়েদী, এঁড়ে বাছুর-বকনা বাছুর, বলদ গরু- গাই গরু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগে : কিছু কিছু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- কবি- মহিলা কবি, ডাক্তার- মহিলা ডাক্তার, সভ্য- মহিলা সভ্য, কর্মী- মহিলা কর্মী, শিল্পী- মহিলা শিল্পী/ নারী শিল্পী, সৈন্য- নারী সৈন্য/ মহিলা সৈন্য, পুলিশ- মহিলা পুলিশ শব্দের শেষে পৃথক শব্দ যোগ করে : শব্দের শেষে পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করেও পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ তৈরি করা যায়। যেমন- বোন-পো- বোন-ঝি, ঠাকুর-পো- ঠাকুর-ঝি, ঠাকুর দাদা/ ঠাকুরদা- ঠাকুরমা, গয়লা- গয়লা-বউ, জেলে- জেলে-বউ ভিন্ন শব্দ প্রয়োগে : দুটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দের মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী বাচক বোঝানো যেতে পারে। যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, কর্তা-গিন্নী, ছেলে-মেয়ে, সাহেব- বিবি, জামাই-মেয়ে, বর-কনে, দুলহা-দুলাইন/ দুলহিন, বেয়াই-বেয়াইন, তাঐ-মাঐ, বাদশা-বেগম, শুক-সারী সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয় যোগে পুরুষ হতে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন : ১. আ-প্রত্যয় : মৃত-মৃতা, বিবাহিত-বিবাহিতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রিয়-প্রিয়া, প্রথম-প্রথমা, চতুর-চতুরা, চপল-চপলা, নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা, অজ-অজা, কোকিল-কোকিলা, শিষ্য-শিষ্যা, ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া, শূদ্র-শূদ্রা ২. ঈ-প্রত্যয় : নিশাচর-নিশাচরী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, সুন্দর-সুন্দরী, চতুর্দশ-চতুর্দশী, ষোড়শ-ষোড়শী, সিংহ-সিংহী, ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী, মানব-মানবী, বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী, কুমার-কুমারী, ময়ূর-ময়ূরী

প্রকৃতি ও প্রত্যয় (পর্ব ৩ ও শেষ পর্ব): তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তদ্ধিত প্রত্যয় ৩ প্রকার। যেমন- বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়, বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় ও তৎসম বা সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়। বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন আ চোর+আ = চোরা কেষ্ট+আ = কেষ্টা ডিঙি+আ = ডিঙা বাঘ+আ = বাঘা হাত+আ = হাতা কাল+আ = কালা জল+আ = জলা গোদ+আ = গোদা রোগ+আ = রোগা বড়+আই = বড়াই চড়া+আই = চড়াই কানু+আই = কানাই নিম+আই = নিমাই বোন+আই = বোনাই ননদ+আই = নন্দাই জেঠা+আই = জেঠাই মিঠা+আই = মিঠাই ঢাকা+আই = ঢাকাই পাবনা+আই = পাবনাই চোর+আই = চোরাই মোগল+আই = মোগলাই আমি/আম/ আমো/মি ইতর+আমি = ইতরামি পাগল+আমি = পাগলামি চোর+আমি = চোরামি বাঁদর+আমি = বাঁদরামি ফাজিল+আমো = ফাজলামো ঠক+আমো = ঠকামো ঘর+আমি = ঘরামি জেঠা+মি = জেঠামি ছেলে+মি = ছেলেমি ই/ঈ বাহাদুর+ই = বাহাদুরি উমেদার+ই = উমেদারি ডাক্তার+ঈ = ডাক্তারী মোক্তার+ঈ = মোক্তারী পোদ্দার+ঈ = পোদ্দারী ব্যাপার+ঈ = ব্যাপারী চাষ+ঈ = চাষী জমিদার+ঈ = জমিদারী দোকান+ঈ = দোকানী ভাগলপুর+ঈ = ভাগলপুরী মাদ্রাজ+ঈ = মাদ্রাজী রেশম+ঈ = রেশমী সরকার+ঈ = সরকারী ইয়া ˃ এ সেকাল+এ = সেকেলে একাল+এ = একেলে ভাদর+ইয়া = ভাদরিয়া ˃ ভাদুরে পাথর+ইয়া = পাথুরিয়া ˃ পাথুরে মাটি+ইয়া = মেটে বালি+ইয়া = বেলে জাল+ইয়া = জালিয়া ˃ জেলে মোট+ইয়া = মুটে খুন+ইয়া = খুনিয়া ˃ খুনে না+ইয়া = নাইয়া ˃ নেয়ে দেমাক+এ = দেমাকে টনটন+এ = টনটনে কনকন+এ = কনকনে গনগন+এ = গনগনে চকচক+এ = চকচকে উয়া ˃ ও জ্বর+উয়া = জ্বরুয়া ˃ জ্বরো বাত+উয়া = বাতুয়া ˃ বেতো টাক+উয়া = টাকুয়া ˃ টেকো খড়+ও = খড়ো ধান+উয়া = ধেনো মাঠ+উয়া = মেঠো গাঁ+উয়া = গাঁইয়া ˃ গেঁয়ো মাছ+উয়া = মাছুয়া ˃ মেছো দাঁত+উয়া = দেঁতো ছাঁদ+উয়া = ছেঁদো তেল+উয়া = তেলো ˃ তেলা কুঁজ+উয়া = কুঁজো উ ঢাল+উ = ঢালু কল+উ = কলু উক লাজ+উক = লাজুক মিশ+উক = মিশুক মিথ্যা+উক = মিথ্যুক আরি/আরী/ আরু ভিখ+আরী = ভিখারী শাঁখ+আরী = শাঁখারী বোমা+আরু = বোমারু আলি/আলো/ আল˃এল দাঁত+আল = দাঁতাল লাঠি+আল = লাঠিয়াল ˃ লেঠেল তেজ+আল = তেজাল ধার+আল = ধারাল শাঁস+আল = শাঁসাল জমক+আল = জমকালো দুধ+আল = দুধাল ˃ দুধেল হিম+আল = হিমাল ˃ হিমেল চতুর+আলি = চতুরালি ঘটক+আলি = ঘটকালি সিঁদ+আল˃এল = সিঁদেল গাঁজা+আল˃এল = গেঁজেল উরিয়া˃উড়িয়া/ উড়ে/রে হাট+উরিয়া = হাটুরিয়া ˃ হাটুরে সাপ+উড়িয়া = সাপুড়িয়া ˃ সাপুড়ে কাঠ+উরিয়া = কাঠুরিয়া ˃ কাঠুরে উড় লেজ+উড় = লেজুড় উয়া/ওয়া˃ও ঘর+ওয়া = ঘরোয়া জল+উয়া = জলুয়া ˃ জলো আটিয়া/টে তামা+আটিয়া = তামাটিয়া ˃ তামাটে ঝগড়া+আটিয়া = ঝগড়াটে ভাড়া+আটিয়া = ভাড়াটে রোগা+আটিয়া = রোগাটে অট˃ট ভরা+ট = ভরাট জমা+ট = জমাট লা মেঘ+লা = মেঘলা এক+লা = একলা আধ+লা = আধলা সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন বিশেষ নিয়ম মূল যুক্ত হয় ইত কুসুম+ইত = কুসুমিত তরঙ্গ+ইত = তরঙ্গিত কণ্টক+ইত = কণ্টকিত ইমন ইমা নীল+ইমন = নীলিমা মহৎ+ইমন = মহিমা ইল পঙ্ক+ইল = পঙ্কিল ঊর্মি+ইল = ঊর্মিল ফেন+ইল = ফেনিল ইষ্ঠ গুরু+ইষ্ঠ = গরিষ্ঠ লঘু+ইষ্ঠ = লঘিষ্ঠ ইন/ঈ/ইনী জ্ঞান+ইন = জ্ঞানিন সুখ+ইন = সুখিন গুণ+ইন = গুণিন মান+ইন = মানিন জ্ঞান+ইনী = জ্ঞানিনী গুণ+ইনী = গুণিনী জ্ঞান+ইন(ঈ)= জ্ঞানী গুণ+ইন(ঈ)= গুণী তা/ত্ব শত্রু+তা = শত্রুতা বন্ধু+তা = বন্ধুতা বন্ধু+ত্ব = বন্ধুত্ব গুরু+ত্ব = গুরুত্ব ঘন+ত্ব = ঘনত্ব মহৎ+ত্ব = মহত্ত্ব তর/তম মধুর+তর = মধুরতর প্রিয়+তর = প্রিয়তর প্রিয়+তম = প্রিয়তম নীন ঈন(ন ইৎ) সর্বজন+নীন = সর্বজনীন কুল+নীন = কুলীন নব+নীন = নবীন নীয় ঈয়(ন ইৎ) জল+নীয় = জলীয় বায়ু+নীয় = বায়বীয় বর্ষ+নীয় = বর্ষীয় পর+নীয় = পরকীয় স্ব+নীয় = স্বকীয় রাজা+নীয় = রাজকীয় বতুপ/মতুপ বান/মান গুণ+বতুপ = গুণবান দয়া+বতুপ = দয়াবান শ্রী+মতুপ = শ্রীমান বুদ্ধি+মতুপ = বুদ্ধিমান বিন বী মেধা+বিন = মেধাবী মায়া+বিন = মায়াবী তেজঃ+বিন = তেজস্বী যশঃ+বিন = যশস্বী র মধু+র = মধুর মুখ+র = মুখর ল শীত+ল = শীতল বৎস+ল = বৎসল ষ্ণ(অ) মনু+ষ্ণ = মানব যদু+ষ্ণ = যাদব শিব+ষ্ণ = শৈব জিন+ষ্ণ = জৈন শক্তি+ষ্ণ = শাক্ত বুদ্ধ+ষ্ণ = বৌদ্ধ বিষ্ণু+ষ্ণ = বৈষ্ণব শিশু+ষ্ণ = শৈশব গুরু+ষ্ণ = গৌরব কিশোর+ষ্ণ = কৈশোর পৃথিবী+ষ্ণ = পার্থিব দেব+ষ্ণ = দৈব চিত্র+ষ্ণ = চৈত্র নিপাতনে সিদ্ধ : সূর্য+ষ্ণ = সৌর (সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সুর+ষ্ণ = সৌর) ষ্ণ্য(য) মনুঃ+ষ্ণ্য = মনুষ্য জমদগ্নি+ষ্ণ্য = জামদগ্ন্য সুন্দর+ষ্ণ্য = সৌন্দর্য শূর+ষ্ণ্য = শৌর্য ধীর+ষ্ণ্য = ধৈর্য কুমার+ষ্ণ্য = কৌমার্য পর্বত+ষ্ণ্য = পার্বত্য বেদ+ষ্ণ্য = বৈদ্য ষ্ণি(ই) রাবণ+ষ্ণি = রাবণি দশরথ+ষ্ণ্যি = দাশরথি ষ্ণিক(ইক) সাহিত্য+ষ্ণিক = সাহিত্যিক বেদ+ষ্ণিক = বৈদিক বিজ্ঞান+ষ্ণিক = বৈজ্ঞানিক সমুদ্র+ষ্ণিক = সামুদ্রিক নগর+ষ্ণিক = নাগরিক মাস+ষ্ণিক = মাসিক ধর্ম+ষ্ণিক = ধার্মিক সমর+ষ্ণিক = সামরিক সমাজ+ষ্ণিক = সামাজিক হেমন্ত+ষ্ণিক = হৈমন্তিক অকস্মাৎ+ষ্ণিক = আকস্মিক ষ্ণেয়(এয়) ভগিনী+ষ্ণেয় = ভগিনেয় অগ্নি+ষ্ণেয় = আগ্নেয় বিমাতৃ+ষ্ণেয় = বৈমাত্রেয় বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন হিন্দি ওয়ালা˃আলা বাড়ি+ওয়ালা = বাড়িওয়ালা দিল্লি+ওয়ালা = দিল্লিওয়ালা মাছ+ওয়ালা = মাছওয়ালা দুধ+ওয়ালা = দুধওয়ালা ওয়ান˃আন গাড়ি+ওয়ান = গাড়োয়ান দার+ওয়ান = দারোয়ান আনা˃আনি মুনশী+আনা = মুনশীআনা/মুন্সিয়ানা বিবি+আনা = বিবিআনা/বিবিয়ানা ছেলে+পনা = ছেলেপনা গিন্নী+পনা = গিন্নীপনা বেহায়া+পনা = বেহায়াপনা সা˃সে পানি+সা = পানিসা ˃ পানসে এক+সা = একসা কাল+সা = কালসা ˃ কালসে ফারসি গর˃কর কারি+গর = কারিগর বাজি+গর = বাজিগর ˃ বাজিকর সওদা+গর = সওদাগর দার খবর+দার = খবরদার তাঁবে+দার = তাঁবেদার বুটি+দার = বুটিদার দেনা+দার = দেনাদার চৌকি+দার = চৌকিদার পাহারা+দার = পাহারাদার ধোঁকা+বাজ = ধোঁকাবাজ গলা+বাজ = গলাবাজ+ই = গলাবাজি বন্দী/বন্দ জবান+বন্দী = জবানবন্দী সারি+বন্দী = সারিবন্দী কোমর+বন্দ = কোমরবন্দ সই (মত অর্থে) জুত+সই = জুতসই মানান+সই = মানানসই টেক+সই = টেকসই দ্রষ্টব্য : টিপসই ও নামসই- শব্দ দু’টোর ‘সই’ প্রত্যয় নয়, স্বাধীন শব্দ; সহি˃সই (স্বাক্ষর)।

প্রকৃতি ও প্রত্যয় (পর্ব ২): কৃৎ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত কৃৎ প্রত্যয় ২ প্রকার- বাংলা কৃৎ প্রত্যয় ও সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়। বাংলা কৃৎ প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন বিশেষ নিয়ম শূণ্য প্রত্যয় (প্রত্যয় ছাড়া কোনো ক্রিয়া প্রকৃতি বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হলে সেখানে শূণ্য প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে বলে ধরা হয়।) জিত্ হার্ ধরপাকড় (ধর ও পাকড় একত্রে ব্যবহৃত হয়েছে) অ √ধর+অ= ধর √মার+অ = মার বি:দ্র: আধুনিক বাংলায় সর্বত্র অ-প্রত্যয় উচ্চারিত হয় না। যেমন- √হার+অ = হার্ দ্বিত্ব প্রয়োগ (আসন্ন সম্ভাব্যতা অর্থে) : √কাঁদ+অ = কাঁদকাঁদ √মর+অ = মরমর অন (ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়) √কাঁদ+অন = কাঁদন √নাচ+অন = নাচন √বাড়+অন= বাড়ন √ঝুল+অন = ঝুলন √দুল+অন = দোলন ধাতুর শেষে ‘আ-কার’ থাকলে ‘ওন’ হয়। যেমন- √খা+অন = খাওন √ছা+অন = ছাওন √দে+অন = দেওন অনা √দুল+অনা = দোলনা √খেল+অনা = খেলনা অনি/উনি √চির+অনি = চিরনি ˃ চিরুনি √বাঁধ+অনি = বাঁধুনি √আঁট+অনি = আঁটুনি অন্ত (বিশেষণ গঠনে ব্যবহৃত হয়) √উড়+অন্ত = উড়ন্ত √ডুব+অন্ত = ডুবন্ত অক √মুড়+অক = মোড়ক √ঝল+অক = ঝলক আ √পড়+আ = পড়া √রাঁধ+আ = রাঁধা √কেন+আ = কেনা? √কাচ+আ = কাচা √ফুট+আ = ফোটা? আই (ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়) √চড়+আই = চড়াই √সিল+আই = সিলাই আও (ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়) √পাকড়+আও = পাকড়াও √চ+আও = চড়াও আন(আনো) (প্রযোজক ধাতু ও কর্মবাচ্যের ধাতুর পরে বসে) √জানা+আন = জানানো √শোনা+আন = শোনানো √ভাসা+আন = ভাসানো √চাল+আন = চালানো/চালান √মান+আন = মানান/মানানো আনি √জান+আনি = জানানি √শুন+আনি = শুনানি √উড়+আনি = উড়ানি (√উড়+উনি = উড়ুনি) আরি/আরী/রি/উরি √ডুব+আরি/উরি = ডুবুরি √ধুন+আরী = ধুনারী √পূজা+আরী = পূজারী আল √মাত+আল = মাতাল √মিশ+আল = মিশাল ই √ভাজ+ই = ভাজি √বেড়+ই = বেড়ি ইয়া/ইয়ে √মর+ইয়া = মরিয়া √বল+ইয়ে = বলিয়ে √নাচ+ইয়ে = নাচিয়ে √গা+ইয়ে = গাইয়ে √লিখ+ইয়ে = লিখিয়ে √বাজ+ইয়ে = বাজিয়ে √ক+ইয়ে = কইয়ে উ √ডাক+উ = ডাকু √ঝাড়+উ = ঝাড়ু দ্বিত্বপ্রয়োগ : √উড়+উ = উড়ুউড়ু উয়া/ও √পড়+উয়া = পড়ুয়া √উড়+উয়া = উড়ুয়া ˃ উড়ো/ √উড়+ও = উড়ো তা (বিশেষণ গঠনে ব্যবহৃত হয়) √ফির+তা = ফিরতা ˃ ফেরতা √পড়+তা = পড়তা √বহ+তা = বহতা তি (বিশেষণ গঠনে ব্যবহৃত হয়) √ঘাট+তি = ঘাটতি √বাড়+তি = বাড়তি √কাট+তি = কাটতি √উঠ+তি = উঠতি না (বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়) √কাঁদ+না = কাঁদনা ˃ কান্না √রাঁধ+না = রাঁধনা ˃ রান্না √ঝর+না = ঝরনা সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় প্রত্যয় শব্দ গঠন বিশেষ নিয়ম মূল ইৎ/লোপ থাকে অনট ট অন √নী+অনট ˃ নে+অন* = নয়ন √শ্রু+অনট = শ্রবণ* √স্থা+অনট = স্থান √ভোজ+অনট = ভোজন √নৃত+অন = নর্তন* √দৃশ+অন = দর্শন* √নন্দি+অনট = নন্দন ক্ত ক ত √জ্ঞা+ক্ত = জ্ঞাত √খ্যা+ক্ত = খ্যাত ক) কিছু কিছু ধাতুর শেষে ‘ই-কার’ যুক্ত হয়। যেমন- √পঠ+ক্ত = পঠিত √লিখ+ক্ত = লিখিত √বিদ+ক্ত = বিদিত √বেষ্ট+ক্ত = বেষ্টিত √চল+ক্ত = চলিত √পত+ক্ত = পতিত √লুণ্ঠ+ক্ত = লুণ্ঠিত √ক্ষুধ+ক্ত = ক্ষুধিত √শিক্ষ+ক্ত = শিক্ষিত খ) ধাতুর শেষে ‘চ/জ’ থাকলে তা ‘ক’ হয়। যেমন- √মুচ+ক্ত = মুক্ত √ভুজ+ক্ত = ভুক্ত গ) নিপাতনে সিদ্ধ : √গম+ক্ত = গত √গ্রন্থ+ক্ত = গ্রথিত √চুর+ক্ত = চূর্ণ √ছিদ+ক্ত = ছিন্ন √জন+ক্ত = জাত √হন+ক্ত = হত √দা+ক্ত = দত্ত √দহ+ক্ত = দগ্ধ √মুহ+ক্ত = মুগ্ধ √যুধ+ক্ত = যুদ্ধ √লভ+ক্ত = লব্ধ √বচ+ক্ত = উক্ত √বপ+ক্ত = উপ্ত √স্বপ+ক্ত = সুপ্ত √সৃজ+ক্ত = সৃষ্ট ক্তি ক তি √গম+ক্তি = গতি ক) কিছু ধাতুর শেষের ব্যঞ্জন লোপ পায়। যেমন- √মন+ক্তি = মতি √রম+ক্তি = রতি খ) কিছু ধাতুর প্রথম ব্যঞ্জনে আ-কার যুক্ত হয়। যেমন- √শ্রম+ক্তি = শ্রান্তি √শম+ক্তি = শান্তি গ) ধাতুর শেষে ‘চ/জ’ থাকলে তা ‘ক’ হয়। যেমন- √বচ+ক্তি = উক্তি √মুচ+ক্তি = মুক্তি √ভজ+ক্তি = ভক্তি ঘ) নিপাতনে সিদ্ধ : √বচ+ক্তি = উক্তি √গৈ+ক্তি = গীতি √সিধ+ক্তি = সিদ্ধি √বুধ+ক্তি = বুদ্ধি √শক+ক্তি = শক্তি তব্য √কৃ+তব্য = কর্তব্য* √দা+তব্য = দাতব্য √পঠ+তব্য = পঠিতব্য অনীয় √কৃ+অনীয় = করণীয়* √রক্ষ+অনীয় = রক্ষণীয় √দৃশ+অনীয় = দর্শনীয়* √পান+অনীয় = পানীয় √শ্রু+অনীয় = শ্রবণীয় √পালন+অনীয় = পালনীয় তৃচ চ তৃ √দা+তৃচ = দাতা √মা+তৃচ = মাতা √ক্রী+তৃচ = ক্রেতা √যুধ+তৃচ = যোদ্ধা ণক ণ অক √পঠ+ণক = পাঠক° √ণী+ণক ˃ নৈ+অক = নায়ক° √গৈ+ণক = গায়ক √লিখ+ণক = লেখক* ক) প্রযোজক ধাতুর শেষে ‘ই-কার’ থাকলে লোপ পায়- √পূঁজি+ণক = পূজক √জনি+ণক = জনক √চালি+ণক = চালক √স্তাবি+ণক = স্তাবক খ) ধাতুর শেষে ‘আ-কার’ থাকলে অতিরিক্ত ‘য়’ যুক্ত হয়। যেমন- √দা+ণক = দায়ক বি+√ধা+ণক = বিধায়ক ঘ্যণ ঘ, ণ য-ফলা √কৃ+ঘ্যণ = কার্য্য ˃ কার্য √ধৃ+ঘ্যণ = ধার্য √বাচ+ঘ্যণ = বাচ্য √ভোজ+ঘ্যণ = ভোজ্য √যোগ+ঘ্যণ = যোগ্য √হাস+ঘ্যণ = হাস্য পরি+√হার+ঘ্যণ = পরিহার্য য য ˃ য় √দা+য ˃ √দে+য = দেয় √হা+য ˃ √হে+য = হেয় বি+√ধা+য = বিধেয় অ+√জি+য = অজেয় পরি+√মা+য = পরিমেয় অনু+√মা+য = অনুমেয় ক)শেষে ব্যঞ্জন থাকলে য-ফলা হয়। যেমন- √গম+য = গম্য √লভ+য = লভ্য ণিন ণ ইন˃ঈ-কার √গ্রহ+ণিন = গ্রাহী √পা+ণিন = পায়ী √কৃ+ণিন = কারী √দ্রোহ+ণিন = দ্রোহী সত্য+√বাদ+ণিন = সত্যবাদী √ভাব+ণিন = ভাবী √স্থা+ণিন = স্থায়ী √গম+ণিন = গামী ‘হন’ ধাতুর ক্ষেত্রে- √হন+ণিন = ঘাতী : আত্ম+√হন+ণিন = আত্মঘাতী ইন ইন˃ঈ-কার √শ্রম+ইন = শ্রমী অল ল অ √জি+অল = জয় √ক্ষি+অল = ক্ষয় √নিচ+অল = নিচয় √বিন+অল = বিনয় √বিল+অল = বিলয় √হন+অল = বধ ইষ্ণু √চল+ইষ্ণু = চলিষ্ণু √ক্ষয়+ইষ্ণু = ক্ষয়িষ্ণু √বর্ধ+ইষ্ণু = বর্ধিষ্ণু বর √ঈশ+বর = ঈশ্বর √ভাস+বর = ভাস্বর √নশ+বর = নশ্বর √স্থা+বর = স্থাবর র √হিন+স+র = হিংস্র √নম+র = নম্র উক/ঊক √ভু+উক ˃ ভৌ+উক = ভাবুক √জাগৃ+ঊক = জাগরূক শানচ শ, চ আন/মান √দীপ+শানচ = দীপ্যমান √চল+শানচ = চলমান √বৃধ+শানচ = বর্ধমান ঘঞ ঘ, ঞ অ √বস+ঘঞ = বাস √যুজ+ঘঞ = যোগ √ক্রুধ+ঘঞ = ক্রোধ √খদ+ঘঞ = খেদ √ভিদ+ঘঞ = ভেদ √ত্যজ+ঘঞ = ত্যাগ √পচ+ঘঞ = পাক √শুচ+ঘঞ = শোক * গুণ হয়েছে। ° বৃদ্ধি হয়েছে।

প্রকৃতি-প্রত্যয় (পর্ব ১): প্রাতিপদিক ক্রিয়ামূল বা ধাতু প্রকৃতি প্রত্যয় নাম প্রকৃতি ক্রিয়া প্রকৃতি কৃৎ প্রত্যয় তদ্ধিত প্রত্যয় কৃদন্ত পদ তদ্ধিতান্ত পদ গুণ বৃদ্ধি ইৎ কৃৎ প্রত্যয় বাংলা কৃৎ প্রত্যয় সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন [বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের কিছু বিশেষ কৌশল আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সমাস, সন্ধি, উপসর্গ যোগে ও প্রত্যয় সাধিত হয়ে শব্দ গঠন।] [মূলত শব্দমূল বা প্রকৃতির সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে। এটি নতুন শব্দ গঠনের অন্যতম কৌশল। অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যয়সাধিত শব্দের প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠনের প্রক্রিয়া সন্ধির সঙ্গে মিলে যায়।] [প্রত্যয়সাধিত হয়ে সবসময় নামপদ তৈরি হয়।] প্রাতিপদিক : বিভক্তিহীন নামশব্দকে প্রাতিপদিক বলে। নামপদের যেই অংশকে আর বিশ্লেষণ করা বা ভাঙা যায় না, তাকেই প্রাতিপদিক বলে। যেমন- ‘হাত’। এই নাম শব্দের সঙ্গে কোনো বিভক্তি নেই। এর সঙ্গে ‘আ’ যুক্ত করে নতুন শব্দ ‘হাতা’ তৈরি করা যেতে পারে। এটিও একটি নাম শব্দ। আবার এর সঙ্গে ‘অল’ শব্দাংশ যুক্ত করে ‘হাতল’ আরেকটি নামশব্দ তৈরি করা যেতে পারে। ক্রিয়ামূল বা ধাতু : ক্রিয়াপদের মূলশব্দকে বলা হয় ক্রিয়ামূল বা ধাতু। যেমন- ‘পড়্’। এটি নিজেই একটি ক্রিয়াপদ (বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ)। আবার এর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে কাল ও পুরুষভেদে ক্রিয়াটির রূপ পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন- পড়ো, পড়ুন, পড়বে, পড়ছি, পড়ছিলাম, পড়েছি, ইত্যাদি। বাংলা ব্যাকরণে ধাতু চিহ্নিত করার জন্য একটি আলাদা ব্যাকরণিক চিহ্ন (√) ব্যবহৃত হয়। একে বলা হয় ধাতু চিহ্ন। অর্থাৎ √পড় মানে ‘পড়’ ধাতু। প্রকৃতি : শব্দমূল বা শব্দের যে অংশকে আর ভাঙা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে।প্রত্যয় যুক্তপ্রতিটি মৌলিক শব্দ তথা প্রত্যয় যুক্তপ্রতিটি প্রাতিপদিক ও ধাতুই একেকটি প্রকৃতি।কিন্তু মৌলিক শব্দকে প্রকৃতি বলা যায় না। যখনই সেই শব্দের সঙ্গে বা অতিরিক্ত শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তখনই কেবল নতুন সৃষ্ট শব্দটির মূল শব্দটিকে প্রকৃতি বলা যায়। অর্থাৎ, প্রত্যয় সাধিত শব্দের মূলশব্দকে বলা হয় প্রকৃতি। কিন্তু শব্দটি থেকে প্রত্যয় সরিয়ে ফেললে, মূলশব্দটিকে তখন আর প্রকৃতি বলা যাবে না। যেমন- লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলোর মূলশব্দ যথাক্রমে লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত। এখানে, লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলো প্রত্যয়সাধিত (মূলশব্দের সঙ্গে অতিরিক্ত শব্দাংশ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে।) আর এই শব্দগুলোর মূলশব্দ লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত। অর্থাৎ লাজ, বড়, ঘর, পড়, নাচ, জিত- এগুলো লাজুক, বড়াই, ঘরামি, পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা শব্দগুলোর প্রকৃতি। কিন্তু আলাদাভাবে উল্লেখ করলে এগুলো আর প্রকৃতি নয়, এগুলো তখন স্রেফ কতোগুলো মৌলিক শব্দ। প্রত্যয় :মূলশব্দ বা মৌলিক শব্দের সঙ্গে যে অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন নামপদ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে।অর্থাৎ, প্রাতিপদিক ও ধাতুর সঙ্গে যেই শব্দাংশ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদেরকেই প্রত্যয় বলে। উপরের উদাহরণে, লাজুক শব্দের প্রকৃতি ‘লাজ’-এর সঙ্গে প্রত্যয় ‘উক’ যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে ‘লাজুক’ শব্দটি। এমনিভাবে প্রকৃতি + প্রত্যয় = প্রত্যয়সাধিত শব্দ বড় + আই = বড়াই ঘর + আমি = ঘরামি পড় + উয়া = পড়ুয়া নাচ + উনে = নাচুনে জিত + আ = জিতা প্রকৃতি ২ প্রকার- নাম প্রকৃতি : প্রাতিপদিকের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকটিকে নাম প্রকৃতি বলে। যেমন, উপরের লাজ, বড়, ঘর- এগুলো নাম প্রকৃতি। ক্রিয়া প্রকৃতি : ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুটিকে ক্রিয়া প্রকৃতি বলে। যেমন, উপরের √পড়, √নাচ, √জিত- এগুলো ক্রিয়া প্রকৃতি। প্রত্যয় ২ প্রকার- কৃৎ প্রত্যয় : ক্রিয়া প্রকৃতির সঙ্গে যেই প্রত্যয় যুক্ত হয়, তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন, উপরের উদাহরণে, ‘√পড়’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘উয়া’, ‘√নাচ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘উনে’ এবং ‘√জিত’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘আ’ কৃৎ প্রত্যয়। তদ্ধিত প্রত্যয় : নাম প্রকৃতির সঙ্গে যেই প্রত্যয় যুক্ত হয়, তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন, উপরের উদাহরণে, ‘লাজ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘উক’, ‘বড়’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘আই’, ‘ঘর’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ‘আমি’ তদ্ধিত প্রত্যয়। কৃদন্ত পদ : কৃৎ প্রত্যয় সাধিত পদটিকে বলা হয় কৃদন্ত পদ। অর্থাৎ যে নাম পদ (বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ) ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যোগ হয়ে গঠিত, তাকে কৃদন্ত পদ বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ক্রিয়ামূল বা ধাতু থেকে গঠিত বিশেষ্য বা বিশেষণ পদকেই কৃদন্ত পদ বলে। যেমন, উপরের পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা। তদ্ধিতান্ত পদ : তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত শব্দকে তদ্ধিতান্ত পদ বলে। যেমন, উপরের লাজুক, বড়াই, ঘরামি। অনেক সময় কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতুর আদিস্বর অনেক সময় পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন যথেচ্ছভাবে হয় না, কিছু নিয়ম অনুসরণ করে হয়। কৃৎ প্রত্যয় ব্যবহৃত হওয়ার সময় পরিবর্তন হওয়ার নিয়ম ২টি- গুণ ও বৃদ্ধি। গুণ : ই/ঈ-স্থলে এ √চিন+আ= চেনা, √নী+আ= নেওয়া উ/ঊ-স্থলে ও √ধু+আ= ধোয়া ঋ-স্থলে অর √কৃ+তা = করতা ˃ ক্রেতা বৃদ্ধি: অ-স্থলে আ √পচ+ণক(অক) = পাচক ই/ঈ-স্থলে ঐ √শিশু+ষ্ণ = শৈশব উ/ঊ-স্থলে ঔ √যুব+অন= যৌবন ঋ-স্থলে আর √কৃ+ঘ্যণ(য-ফলা)= কার্য ইৎ : প্রত্যয় প্রাতিপদিক বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় প্রায়ই সম্পূর্ণ বা অখণ্ড অবস্থায় যুক্ত হয় না; এর কিছু অংশ লোপ পায়। যুক্ত হওয়ার সময় প্রত্যয়ের কিছু অংশ লোপ পাওয়াকে বলা হয় ইৎ। সাধারণত বাংলা প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার সময় ইৎ হয় না বা লোপ পায় না। অন্যদিকে অধিকাংশ সংস্কৃত প্রত্যয়-ই ইৎ হয়ে বা আংশিক লোপ পেয়ে যুক্ত হয় বা ব্যবহৃত হয়। উচ্চারণ বা ব্যবহার সহজ করার জন্যই এই লোপ পাওয়ার ঘটনা বা ইৎ ঘটে। শব্দের মতো সংস্কৃত প্রত্যয়ও বাংলা ভাষায় পরিবর্তিত হয়ে ব্যবহৃত হয়। আর এই পরিবর্তনের জন্য সংস্কৃত প্রত্যয়ের লোপ পাওয়া-ই ইৎ। যেমন, √স্থা+অনট = √স্থা+অন(ট ইৎ বা লোপ) = স্থান