Search This Blog

ধ্বনি পরিবর্তন (পর্ব ১): ধ্বনি পরিবর্তন পড়াতে যা জানা জরুরি- *.উচ্চারণবিধি ধ্বনি পরিবর্তন শব্দ ভাঙার কৌশল আদি স্বরাগম মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি : অন্ত্যস্বরাগম অপিনিহিতি অসমীকরণ স্বরসঙ্গতি সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ ধ্বনি বিপর্যয় সমীভবন বিষমীভবন দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা ব্যঞ্জন বিকৃতি ব্যঞ্জনচ্যুতি অন্তর্হতি অভিশ্রুতি র-কার লোপ হ-কার লোপ অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ধ্বনি পরিবর্তন : ভাষা সর্বদা পরিবর্তনশীল। কোন ভাষার পরিবর্তন নিয়ম বা ব্যাকরণ দিয়ে বন্ধ করে দিলে সে ভাষা আস্তে আস্তে মরে যায়। যেমন মরে গেছে সংস্কৃত ভাষা। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারণের সুবিধার্থে ভাষার শব্দ, মূলত শব্দের অন্তর্গত ধ্বনি নানাভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে এই পরিবর্তনও কিছু নিয়ম মেনে হয়ে থাকে। ধ্বনির এই পরিবর্তনই মূলত ভাষার পরিবর্তন ঘটায়। ধ্বনির পরিবর্তনের নিয়ম বা প্রক্রিয়াগুলো নিচে দেয়া হলো- [শব্দ ভাঙার কৌশল : ধ্বনি পরিবর্তন পড়ার আগে একটি কৌশল শিখে নেয়া জরুরি। শব্দের অন্তর্গত ধ্বনিগুলো আলাদা করার বা ভাঙার কৌশল। শব্দ ভাঙার সময় যেই ধ্বনি আগে উচ্চারিত হয়েছে, সেটিকে আগে লিখতে হবে। শব্দে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি পূর্ণাঙ্গ রূপে থাকার পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত রূপে কার ও ফলা আকারেও থাকে। শব্দ ভাঙার সময় এগুলোকেও বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া একটি স্বরধ্বনির কোন সংক্ষিপ্ত রূপ বা ‘কার’ নেই- ‘অ’-এর। এটি বিভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে মিলিত রূপে উচ্চারিত হয়, কিন্তু তার কোন প্রতীক বা ‘কার’ আমরা লেখি না। শব্দ ভাঙার সময় এই উহ্য ‘অ’-কেও লিখতে হবে। যেমন- ‘এখানে বসতি গাড়ে এক দঙ্গল পশু’ বাক্যটির সবগুলো শব্দ ভাঙলে হবে- এখানে = এ+খ+আ+ন+এ বসতি = ব+অ+স+অ+ত+ই গাড়ে = গ+আ+ড়+এ এক = এ+ক দঙ্গল = দ+ঙ+গ+অ+ল পশু = প+শ+উ উল্লেখ্য, যুক্তব্যঞ্জনের ভেতরে কোন উহ্য ‘অ’ থাকে না।] ১. আদি স্বরাগম : শব্দের আদিতে বা শুরচতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলা হয় আদি স্বরাগম। যেমন, ‘স্কুল’ শব্দটি উচ্চারণের সুবিধার জন্য শুরচতে ‘ই’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে ‘ইস্কুল’ হয়ে গেছে। এটি আদি স্বরাগম। এরকম- স্টেশন˃ ইস্টিশন, স্ট্যাবল˃ আস্তাবল, স্পর্ধা˃ আস্পর্ধা ২. মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি : শব্দের মাঝখানে স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে মধ্য স্বরাগম। যেমন, ‘রত্ন’ (র+অ+ত+ন+অ) শব্দের ‘ত’ ও ‘ন’-র মাঝখানে একটি অ যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘রতন’। এটি মধ্য স্বরাগম। এরকম- ধর্ম˃ ধরম, স্বপ্ন˃ স্বপন, হর্ষ˃ হরষ, প্রীতি˃ পিরীতি, ক্লিপ˃ কিলিপ, ফিল্ম˃ ফিলিম, মুক্তা˃ মুকুতা, তুর্ক˃ তুরুক, ভ্রু˃ ভুরু, গ্রাম˃ গেরাম, প্রেক˃ পেরেক, স্রেফ˃ সেরেফ, শ্লোক˃ শোলোক, মুরগ˃ মুরোগ˃ মোরোগ, ৩. অন্ত্যস্বরাগম : শব্দের শেষে একটা অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে অন্ত্যস্বরাগম। যেমন, ‘দিশ্’-র সঙ্গে অতিরিক্ত ‘আ’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘দিশা’। এরকম- পোক্ত্˃ পোক্ত, বেঞ্চ˃ বেঞ্চি, সত্য˃ সত্যি ৪. অপিনিহিতি : পরের ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন, ‘আজি (আ+জ+ই) শব্দের ‘ই’ আগে উচ্চারিত হয়ে হয়েছে ‘আইজ’ (আ+ই+জ)। এরকম- সাধু˃ সাউধ, রাখিয়া˃ রাইখ্যা, বাক্য˃ বাইক্য, সত্য˃ সইত্য, চারি˃ চাইর, মারি˃ মাইর ৫. অসমীকরণ : দুটো একই ধ্বনির পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনি যুক্ত হলে তাকে বলে অসমীকরণ। যেমন, ধপ+ধপ˃ (মাঝখানে একটি অতিরিক্ত আ যোগ হয়ে) ধপাধপ। এরকম- টপ+টপ˃ টপাটপ ৬. স্বরসঙ্গতি : দুটি স্বরধ্বনির মধ্যে সঙ্গতি রক্ষার্থে একটির প্রভাবে আরেকটি পরিবর্তিত হলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, ‘দেশি’ (দ+এ+শ+ই)˃ (‘ই’-র প্রভাবে ‘এ’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ই’ হয়ে) ‘দিশি’। স্বরসঙ্গতি ৫ প্রকার- ক. প্রগত :আগের স্বরধ্বনি অনুযায়ী পরের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মুলা˃ মুলো, শিকা˃ শিকে, তুলা˃ তুলো খ.পরাগত : পরের স্বরধ্বনি অনুযায়ী আগের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে পরাগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, আখো˃ আখুয়া˃ এখো, দেশি˃ দিশি গ. মধ্যগত : অন্যান্য স্বরধ্বনির প্রভাবে মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, বিলাতি˃ বিলিতি ঘ. অন্যোন্য : আগের ও পরের স্বরধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে যদি দুইটি-ই পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাকে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মোজা˃ মুজো ঙ. চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতি : গিলা˃ গেলা, মিলামিশা˃ মেলামেশা। মিঠা˃ মিঠে, ইচ্ছা˃ ইচ্ছে। মুড়া˃ মুড়ো, চুলা˃ চুলো। উড়ুনি˃ উড়নি, এখুনি˃ এখনি। ৭. সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ : শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ বলে। যেমন, ‘বসতি’ (ব+অ+স+অ+ত+ই)-র মাঝের ‘অ’ স্বরধ্বনি লোপ পেয়ে হয়েছে ‘বস্তি’ (ব+অ+স+ত+ই)। স্বরলোপ ৩ প্রকার- ক. আদিস্বরলোপ : শব্দের শুরুর স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন, অলাবু˃ লাবু˃ লাউ, এড়ন্ড˃ (‘এ’ লোপ পেয়ে) রেড়ী, উদ্ধার˃ উধার˃ ধার। খ. মধ্যস্বরলোপ : শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে মধ্যস্বরাগম বলে। যেমন, অগুরু˃ অগ্রু, সুবর্ণ˃ স্বর্ণ গ. অন্ত্যস্বরালোপ : শব্দের শেষের স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যেমন, আশা˃ আশ, আজি˃ আজ, চারি˃ চার, সন্ধ্যা˃ সঞ্ঝ্যা˃ সাঁঝ (স্বরলোপ স্বরাগম-এর বিপরীত প্রক্রিয়া।)

ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ ও উচ্চারণবিধি (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): স্পর্শ ব্যঞ্জন : ক থেকে ম পর্যন্ত প্রথম ২৫ টিব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস মুখগহবরের কোন না কোন জায়গা স্পর্শ করে যায়। এজন্য এই ২৫টি বর্ণকে বলা হয় স্পর্শধ্বনি বা স্পৃষ্টধ্বনি। অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ ধ্বনি :যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় বা ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাসের জোর বেশি থাকে, তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। আর যে ধ্বনিগুলোতে বাতাসের জোর কম থাকে, নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না, তাদেরকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। ক, গ, চ, জ- এগুলো অল্পপ্রাণ ধ্বনি। আর খ, ঘ, ছ, ঝ- এগুলো মহাপ্রাণ ধ্বনি। ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি :যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, অর্থাৎ গলার মাঝখানের উঁচু অংশে হাত দিলে কম্পন অনুভূত হয়, তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে। আর যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন, ক, খ, চ, ছ- এগুলো অঘোষ ধ্বনি। আর গ, ঘ, জ, ঝ- এগুলো ঘোষ ধ্বনি। উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি : শ, ষ, স, হ-এই চারটি ধ্বনি উচ্চারণের শেষে যতক্ষণ ইচ্ছা শ্বাস ধরে রাখা যায়, বা শিশ্ দেয়ার মতো করে উচ্চারণ করা যায়। এজন্য এই চারটি ধ্বনিকে বলা হয় উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি। এগুলোর মধ্যে শ, ষ, স- অঘোষ অল্পপ্রাণ,হ- ঘোষ মহাপ্রাণ।ঃ ঃ (বিসর্গ) :অঘোষ‘হ’-র উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনিই হলো‘ঃ’। বাংলায় একমাত্র বিস্ময়সূচক অব্যয়ের শেষে বিসর্গ ধ্বনি পাওয়া যায়। পদের মধ্যে ‘ঃ’ বর্ণটি থাকলে পরবর্তী ব্যঞ্জনের উচ্চারণ দুইবার হয়, কিন্তু ‘ঃ’ ধ্বনির উচ্চারণ হয় না। কম্পনজাত ধ্বনি- র :‘র’ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ কম্পিত হয়, বা কাঁপে এবং দন্তমূলকে কয়েকবার আঘাত করে ‘র’ উচ্চারিত হয়। এজন্য ‘র’-কে বলা হয় কম্পনজাত ধ্বনি। তাড়নজাত ধ্বনি- ড় ও ঢ় :‘ড়’ ও ‘ঢ়’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগের নিচের দিক বা তলদেশ ওপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে দ্রচত আঘাত করে বা তাড়না করে উচ্চারিত হয়। এজন্য এদেরকে তাড়নজাত ধ্বনি বলে। মূলত ‘ড’ ও ‘র’ দ্রচত উচ্চারণ করলে যে মিলিত রূপ পাওয়া যায় তাই ‘ড়’ এর উচ্চারণ। একইভাবে ‘ঢ়’, ‘ঢ’ ও ‘র’-এর মিলিত উচ্চারণ। পার্শ্বিক ধ্বনি- ল :‘ল’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ উপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে ঠেকিয়ে জিহবার দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের করে দেয়া হয়। দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে। আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম-এদের উচ্চারণের সময় এবংং, ঁকোন ধ্বনির সঙ্গে থাকলে তাদের উচ্চারণের সময় মুখ দিয়ে বাতাস বের হওয়ার সময় কিছু বাতাস নাক দিয়ে বা নাসারন্ধ্র দিয়েও বের হয়। উচ্চারণ করতে নাক বা নাসিক্যের প্রয়োজন হয় বলে এগুলোকে বলা হয় আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি। পরাশ্রয়ী বর্ণ : ং,ঃ,ঁ- এই ৩টি বর্ণ যে ধ্বনি নির্দেশ করে তারা কখনো স্বাধীন ধ্বনি হিসেবে শব্দে ব্যবহৃত হয় না। এই ধ্বনিগুলো অন্য ধ্বনি উচ্চারণের সময় সেই ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চারিত হয়। নির্দেশিত ধ্বনি নিজে নিজে উচ্চারিত না হয়ে পরের উপর আশ্রয় করে উচ্চারিত হয় বলে এই বর্ণগুলোকে পরাশ্রয়ী বর্ণ বলে। নিচে স্পর্শধ্বনির (ও অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধ্বনি) একটি পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা ছক আকারে দেয়া হলো- স্পর্শধ্বনি/ বর্গীয় ধ্বনি (বর্গগুলো এই পর্যন্ত সীমিত) নাম উচ্চারণ প্রণালী অঘোষ ঘোষ নাসিক্য অঘোষ অঘোষ ঘোষ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ মহাপ্রাণ ক-বর্গীয় ধ্বনি (কণ্ঠ্য ধ্বনি) জিহবার গোড়া নরম তালুর পেছনের অংশ স্পর্শ করে ক খ গ ঘ ঙ চ-বর্গীয় ধ্বনি (তালব্য ধ্বনি) জিহবার অগ্রভাগ চ্যাপ্টা ভাবে তালুর সামনের দিকে ঘষা খায় চ ছ জ ঝ ঞ য য় শ ট-বর্গীয় ধ্বনি (মূর্ধন্য ধ্বনি) জিহবার অগ্রভাগ কিছুটা উল্টিয়ে ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ স্পর্শ করে ট ঠ ড ঢ ণ র ড় ঢ় ষ ত-বর্গীয় ধ্বনি (দন্ত্য ধ্বনি) জিহবা সামনের দিকে এগিয়ে ওপরের দাঁতের পাটির গোড়া স্পর্শ করে ত থ দ ধ ন ল স প-বর্গীয় ধ্বনি (ওষ্ঠ্য ধ্বনি) দুই ঠোঁট বা ওষ্ঠ ও অধর জোড়া লেগে উচ্চারিত হয় প ফ ব ভ ম ঃ হ *.উল্লেখ্য, কণ্ঠ্য ধ্বনিকে জিহবামূলীয় এবং মূর্ধণ্য ধ্বনিকে দন্তমূল প্রতিবেষ্টিত ধ্বনিও বলে। অন্তঃস্থ ধ্বনি :য, র, ল, ব- এদেরকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয়। তবে অন্তঃস্থ ‘ব’ এখন আর বর্ণমালায় নেই, এবং এখন আর এটি শব্দে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় না। তবে ব্যাকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত সন্ধিতে এর প্রয়োগ দেখা যায়। কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ ক+ত = ক্ত জ+ঞ = জ্ঞ ত+ত = ত্ত ন+থ = ন্থ র+উ = রু ষ+ম = ষ্ম হ+উ = হু ক+ষ = ক্ষ ঞ+জ = ঞ্জ ত+থ = ত্থ ন+ধ = ন্ধ র+ঊ = রূ ষ+ণ = ষ্ণ হ+ঋ = হৃ ক+য = ক্য ঞ+চ = ঞ্চ ত+ম = ত্ম র+ধ = র্ধ স+র = স্র হ+ব = হ্ব ক+র = ক্র ঞ+ছ = ঞ্ছ ত+র = ত্র ব+ধ = ব্ধ ল+ল = ল্ল স+ন = স্ন হ+ণ = হ্ণ গ+উ = গু ট+ট = ট্ট ত+র+উ = ত্রু ভ+র = ভ্র স+ব = স্ব হ+ন = হ্ন ঙ+গ = ঙ্গ ণ+ড = ণ্ড দ+য = দ্য ভ+র+উ = ভ্রু শ+উ = শু স+ত = স্ত হ+ম = হ্ম ঙ+ক = ঙ্ক দ+ম = দ্ম ম+ব = ম্ব শ+র+উ = শ্রু স+য = স্য দ+ধ = দ্ধ শ+র+ঊ = শ্রূ স+থ = স্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.ড় এবং ঢ় (ঘ-২০০৫-০৬) *.দন্তমূলের শেষাংশ ও জিহবার সহযোগে সৃষ্ট ধ্বনি- (ঘ-২০০৬-০৭) *.যথাক্রমে ক্ষ, ষ্ণ হ্ন- তিনটি যুক্ত বর্ণের বিশ্লিষ্ট রূপ নির্দেশ কর- (ক-২০০৫-০৬) *.পার্শ্বিক ব্যঞ্জনের উদাহরণ কোনটি? (ক-২০০৬-০৭) *.মুখ বিবরের বায়ুপথ সংকীর্ণ হয়ে কোন জায়গায় ঘষা না খেয়ে উৎপণ্ন হয় যে-ধ্বনি- (ক-২০০৬-০৭) *.বাংলা বর্ণমালার স্বরবর্ণ অংশের মাত্রাহীন বর্ণের সংখ্যা- (ক-২০০৬-০৭) *.‘ত্রু’ এর বিশ্লিষ্ট রূপ- (ক-২০০৬-০৭) *.বাঙালি শিশু কোন বর্গের ধ্বনিগুলো আগে শেখে? (ক-২০০৭-০৮) *.‘ক্রমপুঞ্জিত শব্দটির যথার্থ উচ্চারণ হল (ক-২০০৭-০৮) *.‘তৃষ্ণা’ শব্দে কোন কোন বর্ণ আছে? (ক-২০০৮-০৯) *.‘ব্যাকরণ’ শব্দের যথাযথ উচ্চারণ হল- (ক-২০০৮-০৯) *.বাংলা অভিধানে ‘ক্ষ’-এর অবস্থান (ক-২০০৯-১০) *.কোনটি যৌগিক স্বরধ্বনি (ক-২০০৯-১০)

ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ ও উচ্চারণবিধি (পর্ব ১): ধ্বনি স্বরধ্বনি ব্যঞ্জনধ্বনি বর্ণ স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি বাংলা বর্ণমালা বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ ; কার ও ফলা উচ্চারণবিধি স্বরধ্বনির উচ্চারণ ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ স্পর্শ ব্যঞ্জন অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ ধ্বনি ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি উষ্মধ্বনি বা শিশ্ধ্বনি ঃ (বিসর্গ) কম্পনজাত ধ্বনি- র তাড়নজাত ধ্বনি- ড় ও ঢ় পার্শ্বিক ধ্বনি- ল আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম পরাশ্রয়ী বর্ণ : ং,ঃ,ঁ স্পর্শধ্বনির (ও অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধ্বনি) একটি পূর্ণাঙ্গ ছক অন্তঃস্থ ধ্বনি কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ধ্বনি : কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো ধ্বনি। ভাষাকে বা ভাষার বাক প্রবাহকে বিশেলষণ করলে কতগুলো ক্ষুদ্রতম একক বা মৌলিক ধ্বনি পাওয়া যায়। যেমন- অ, আ, ক্, খ্, ইত্যাদি। ধ্বনি মূলত ২ প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি। স্বরধ্বনি : ধ্বনি উচ্চারণের সময় মানুষ ফুসফুস থেকে কিছু বাতাস ছেড়ে দেয়। এবং সেই বাতাস ফুসফুস কণ্ঠনালী দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খেয়ে বা বাঁক খেয়ে একেক ধ্বনি উচ্চারণ করে। যে ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় এই বাতাস কোথাও বাধা পায় না, বা ধাক্কা খায় না, তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন, অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ইত্যাদি। এগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে মুখের বাহিরে আসতে কোথাও ধাক্কা খায় না। ব্যঞ্জনধ্বনি : যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস মুখের বাহিরে আসার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খায়, বা বাধা পায়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- ক্, খ্, গ্, ঘ্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস জিহবামূল বা কণ্ঠ্যে ধাক্কা খায়। তাই এগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি। বর্ণ : বিভিন্ন ধ্বনিকে লেখার সময় বা নির্দেশ করার সময় যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্ণ বলে। স্বরবর্ণ : স্বরধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণকে স্বরবর্ণ বলে। ব্যঞ্জনবর্ণ : ব্যঞ্জনধ্বনি নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত বর্ণকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি : আমরা যখন ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণ করি, তখন তার শেষে একটি স্বরধ্বনি ‘অ’-ও উচ্চারণ করি। যেমন, ‘ক্’ কে উচ্চারণ করি (ক্ + অ =) ‘ক’। উচ্চারণের সুবিধার জন্য আমরা এই কাজ করি। কিন্তু স্বরধ্বনি ছাড়া ‘ক্’ উচ্চারণ করলে সেটা প্রকাশ করার জন্য ‘ক’-এর নিচে যে চিহ্ন (& )দেয়া হয়, তাকে বলে হস্ / হল চিহ্ন। আর যে ধ্বনির পরে এই চিহ্ন থাকে, তাকে বলে হসন্ত বা হলন্ত ধ্বনি। কোন বর্ণের নিচে এই চিহ্ন দেয়া হলে তাকে বলে হসন্ত বা হলন্ত বর্ণ। বাংলা বর্ণমালা : বাংলা বর্ণমালায় বর্ণ আছে মোট ৫০টি। নিচে বর্ণমালা অন্যান্য তথ্য সহকারে দেয়া হলো- পূর্ণমাত্রা অর্ধমাত্রা মাত্রাহীন স্বরবর্ণ অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ* ও ঔ* ৬ ১ ৪ ব্যঞ্জনবর্ণ ক খ গ ঘ ঙ ২ ২ ১ চ ছ জ ঝ ঞ ৪ - ১ ট ঠ ড ঢ ণ ৪ ১ - ত থ দ ধ ন ৩ ২ - প ফ ব ভ ম ৪ ১ - য র ল ৩ - - শ ষ স হ ৩ ১ - ড় ঢ় য় ৎ ৩ - ১ ংঃ ঁ - - ৩ মোট স্বরবর্ণ ১১ মোট ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯ মোট বর্ণ ৫০ পূর্ণ, অর্ধ ও মাত্রাহীন বর্ণ ৩২ ৮ ১০ * এই দুটি স্বরধ্বনিকে দ্বিস্বর বা যুগ্ম স্বরধ্বনি বলে। কারণ, এই দুটি মূলত ২টি স্বরধ্বনির মিশ্রণ। যেমন- অ+ই = ঐ, অ+উ = ঔ বা ও+উ = ঔ। অর্থাৎ,বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি মূলত ৯টি। বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ ; কার ও ফলা : প্রতিটি স্বরবর্ণ ও কিছু কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ দুটো রূপে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, স্বাধীনভাবে শব্দের মাঝে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক সময় অন্য কোন বর্ণে যুক্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপে বা আশ্রিত রূপেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘আ’ বর্ণটি ‘আমার’ শব্দের স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, আবার ‘ম’-র সঙ্গে আশ্রিত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপেও (া ) ব্যবহৃত হয়েছে। স্বরবর্ণের এই আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে কার, আর ব্যঞ্জনবর্ণের আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা। উপরে ‘আমার’ শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে যুক্ত ‘আ’-র সংক্ষিপ্ত রূপটিকে (া ) বলা হয় আ-কার। এমনিভাবে ই-কার ( w ), ঈ-কার ( x ), উ-কার ( y ), ঊ-কার ( ~ ), ঋ-কার (ৃ ), এ-কার ( † ), ঐ-কার ( ˆ ), ও-কার ( ো), ঔ-কার ৌ) কার। তবে ‘অ’ এর কোন কার নেই। আবার আম্র শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে ‘র’ সংক্ষিপ্ত রূপে বা ফলা যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত রূপটি (ª ) র-ফলা। এরকম ম-ফলা ( ¨ ), ল-ফলা ( ­ ), ব-ফলা ( ^ ), ইত্যাদি। উচ্চারণবিধি স্বরধ্বনির উচ্চারণ স্বরধ্বনির উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে বের হয়ে কোথাও বাধা পায় না। মূলত জিহবার অবস্থান ও ঠোঁটের বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়। নিচে স্বরধ্বনির উচ্চারণ একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো- জিহবার অবস্থান জিহবা সামনে আগাবে ঠোঁটের প্রসারণ ঘটবে জিহবা শায়িত অবস্থায় ঠোঁট স্বাভাবিক/ বিবৃত জিহবা পিছিয়ে আসবে ঠোঁট গোলাকৃত হবে উচ্চে ই ঈ (উচ্চসম্মুখ স্বরধ্বনি) উ ঊ (উচ্চ পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) উচ্চমধ্যে এ (মধ্যাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি) ও (মধ্যাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) নিম্নমধ্যে অ্যা (নিম্নাবস্থিত সম্মুখ স্বরধ্বনি) অ (নিম্নাবস্থিত পশ্চাৎ স্বরধ্বনি) নিম্নে আ (কেন্দ্রীয় নিমণাবস্থিত স্বরধ্বনি, বিবৃত ধ্বনি) যৌগিক স্বরধ্বনি : পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে তারা উচ্চারণের সময় সাধারণত একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হলে মিলিত স্বরধ্বনিটিকে বলা হয়যৌগিক স্বর, সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর। বাংলা ভাষায়যৌগিক স্বর মোট ২৫টি। তবেযৌগিক স্বরবর্ণ মাত্র ২টি- ঐ, ঔ। অন্য যৌগিক স্বরধ্বনিগুলোর নিজস্ব প্রতীক বা বর্ণ নেই। ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ উচ্চারণ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

বাচ্য: বাচ্য পড়তে যে বিষয়েগুলো জানা জরুরি- ক্রিয়াপদ বাচ্য কর্তা কর্ম কর্তৃবাচ্য কর্মবাচ্য ভাববাচ্য কর্মকর্তৃবাচ্য বাচ্য : বাক্যের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশভঙ্গিকে বাচ্য বলে। একটি বাক্যকে বিভিন্নভাবে লেখা যেতে পারে। একেকভাবে লিখলে বাক্যটির মূল বক্তব্য একই থাকলেও, একেকবার একেকটি উপাদান অধিক প্রাধান্য পায়। একটি বাক্যের বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গিকেই বলে বাচ্য। বাংলা ভাষায় ৩টি বাচ্য পাওয়া যায়- কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্য। [বিভিন্ন ধরনের বাচ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে বাক্যের কর্তা ও কর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার। কর্তা : যেই পদ বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্তা বলে। অর্থাৎ, যে বাক্যের কাজটি করে, সে-ই কর্তা। যেমন- গরু ঘাস খায়। এখানে খাওয়ার কাজটি করছে ‘গরু’।- সুতরাং, এখানে ‘গরু’ কর্তা। টেবিলটি সকাল থেকে এরকম নড়বড় করছে।- এখানে ‘নড়বড় করা’র কাজটি করছে ‘টেবিল’। সুতরাং, এখানে কর্তা ‘টেবিল’। ক্রিয়াকে ‘কে/কারা‘ দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্তা পদ পাওয়া যায়। কর্ম : কর্তা যাকে আশ্রয় করে বা অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে কর্ম বলে। অর্থাৎ, কর্তা যার সাহায্যে কাজটি করে, তাই কর্ম। যেমন- গরু ঘাষ খায়।- এখানে ‘গরু’ ‘খাওয়া’র কাজটি করার জন্য ‘ঘাস’কে অবলম্বন হিসেবে নিয়েছে। সে ‘ঘাস’কে দিয়ে ‘খাওয়া’র কাজ করছে। সুতরাং, এখানে ‘ঘাস’ কর্ম। বাবা আমাকে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন।- এখানে ‘কিনে দেয়া’র কাজটি করেছেন ‘বাবা’। ‘বাবা’ এখানে কর্তা। ‘বাবা’ ‘কিনে দেয়া’র কাজ করার জন্য ‘আমাকে’ ও ‘ল্যাপটপ’-র সাহায্য নিয়েছেন। এখানে, ‘আমাকে’ ও ‘ল্যাপটপ’ কর্ম। ক্রিয়াকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্তা পদ পাওয়া যায়।] কর্তৃবাচ্য : বাক্যে কর্তার প্রাধান্য রক্ষিত হলে তাকে কর্তৃবাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে কর্তা অনুযায়ী ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয় এবং ক্রিয়া কর্তার অনুসারী হয়। কর্তৃবাচ্যের পদে কর্তায়- শূণ্য বিভক্তি হয়। কর্মে- দ্বিতীয়া বা ষষ্ঠী বিভক্তি হয়। (শূণ্য বিভক্তিও হতে পারে) যেমন- ছাত্ররা বাংলা পড়ছে। শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান। রোগী পথ্য সেবন করে। কর্মবাচ্য : কর্মপদ প্রধান রূপে প্রকাশিত হলে তাকে কর্মবাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে ক্রিয়াপদ কর্তা অনুযায়ী না হয়ে কর্মপদ অনুযায়ী হয় এবং কর্মপদের অনুসারী হয়। এ ধরনের বাক্যে কর্তায়- তৃতীয়া বিভক্তি হয়। কর্মে- শূণ্য বিভক্তি হয়। (কখনো কখনো দ্বিতীয়া বিভক্তিও হয়) যেমন- শিকারি কর্তৃক বাঘটি নিহত হয়েছে। আলেকজান্ডার কর্তৃক পারস্য বিজিত হয়। চোরটা ধরা পড়েছে। আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে। (কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি) ভাববাচ্য : বাক্যে ক্রিয়ার অর্থই বিশেষভাবে প্রকাশিত হলে তাকে ভাববাচ্য বলে। এ ধরনের বাক্যে কর্ম থাকে না এবং কর্তাও প্রধান হয় না। কাউকে কোন কিছু সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে বলতে গেলে ভাববাচ্যে বলা যায়। এ ধরনের বাক্যে কর্তায়- ষষ্ঠী, দ্বিতীয়া বা তৃতীয়া বিভক্তি হয়। নামপুরুষের ক্রিয়াপদ [ক্রিয়াপদ] হয়। মাঝে মাঝে মূল ক্রিয়াপদের সঙ্গে সহযোগী ক্রিয়াপদও যুক্ত হয়। কখনো কখনো কর্তা উহ্য থাকে, অর্থাৎ কর্তা অনুল্লেখিত থাকে। যেমন- আমার খাওয়া হল না। (নামপুরুষের ক্রিয়াপদ) তোমার যাওয়া হবে না। (নামপুরুষের ক্রিয়াপদ) এ পথে চলাযায়না। (সহযোগী ক্রিয়াপদ যুক্ত) কোথা থেকে আসাহচ্ছে। (সহযোগী ক্রিয়াপদ যুক্ত) এ ব্যাপারে আমাকে দায়ী করা চলে না। (কর্তা ‘তুমি’ উহ্য) এ রাস্তা আমার চেনা নেই। কর্মকর্তৃবাচ্য : এছাড়াও বাংলায় আরো এক ধরনের প্রকাশভঙ্গির বাক্য দেখা যায়। এ ধরনের বাক্যের বাচ্যকে বলা হয় কর্মকর্তৃবাচ্য। এ ধরনের বাক্যে কর্তাপদ উহ্য থাকে, তবে কর্মপদ থাকে। আর ওই কর্মপদই কর্তার কাজ করে। অর্থাৎ, যে বাক্যে কর্তা থাকে না, কর্মই কর্তার কাজ করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে। যেমন- কাজটা ভাল দেখায় না।- এখানে কর্তা নেই। কর্ম হল ‘কাজ’। কিন্তু ‘কাজ’ নিজেই কর্তার মত বাক্যকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরকম- বাঁশি বাজে এ মধুর লগনে। সুতি কাপড় অনেক দিন টেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.কোন বাক্যটি ভাববাচ্যে রচিত? (ঘ-১৯৯৮-৯৯) আমার যাওয়া হবে না *.‘তুমি কবে আসবে?’ বাক্যটিকে ভাববাচ্যে রূপান্তর করলে দাঁড়াবে (ঘ-২০০৫-০৬) *.কর্মবাচ্যের উদাহরণ (ঘ-২০০৮-০৯)ওকে খেতে ডেকে আন *.ভাববাচ্য কোনটি? (ক-২০০৫-০৬) সাহেবের কোথায় থাকা হয় *.ভাববাচ্যের উদাহরণ- (ক-২০০৯-১০) চোরটাকে ধরা গেল না। *.‘শিক্ষককে সকলেই সম্মান করে’- এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ? (গ-২০০৯-১০)

বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য হাইফেন ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, দুইটি পদ একসঙ্গে লিখতে গেলে হাইফেন দিয়ে লিখতে হয়। যেমন- সুখ-দুঃখ, মা-বাবা। ইলেক বা লোপ চিহ্ন কোন বর্ণ লোপ করে বা বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত উচ্চারণ বোঝাতে ইলেক বা লোপ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। কবিতা বা অন্যান্য সাহিত্যে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- মাথার ’পরে জ্বলছে রবি। (’পরে= ওপরে) পাগড়ি বাঁধা যাচ্ছে কা’রা? (কা’রা = কাহারা) উদ্ধরণ চিহ্ন বক্তার কথা হুবুহু উদ্ধৃত করলে সেটিকে এই চিহ্নের মধ্যে রাখতে হয়। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের মধ্যে রেখে লিখতে হয়। যেমন- ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছেন, ‘জন্মভূমি অথবা মৃত্যু’। ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন ( ).{ }. [ ] গণিতশাস্ত্রে এই তিনটির আলাদা গুরচত্ব থাকলেও ভাষার ক্ষেত্রে এদের আলাদা কোন গুরচত্ব নেই। তবে সাহিত্যে ও রচনায় ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য প্রথম বন্ধনী ব্যবহার করা হয়। যেমন- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে পরাজয় মেনে দলিলে স্বাক্ষর করে। ]ব্যাকরণিক চিহ্ন বিরাম চিহ্নের বাইরেও বাংলা ভাষায় কিছু চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এগুলো দিয়ে কোন বিরতি বা ছেদ বোঝানো হয় না। এগুলো ব্যাকরণের কতোগুলো টার্মস বোঝায়। ব্যাকরণের বিভিন্ন তথ্য বা টার্মস বোঝাতে যেই চিহ্নগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলোই ব্যাকরণিক চিহ্ন। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উলেলখযোগ্য কয়েকটি ব্যাকরণিক চিহ্ন হলো- বোঝায় চিহ্ন/ আকৃতি উদাহরণ ধাতু √ √স্থা = স্থা ধাতু পরবর্তী শব্দ হতে উৎপন্ন ˂ জাঁদরেল ˂ জেনারেল পূর্ববর্তী শব্দ হতে উৎপন্ন ˃ গঙ্গা ˃ গাঙ সমানবাচক বা সমস্তবাচক = নর ও নারী = নরনারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.যেখানে কমা অপেক্ষা অধিক বিরাম আবশ্যক সেখানে কোন চিহ্ন ব্যবহার হয়? (ঘ-২০০৩-০৪) *.কোন কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে বসে (ঘ-২০০৪-০৫) *.সেমিকোলনের বাংলা (ঘ-২০০৫-০৬) *.হাইফেন ব্যবহৃত হয়- (ক-২০০৫-০৬) *.বাক্যের সূচনায় সম্বোধন থাকলে যে বিরাম চিহ্ন বসে- (ক-২০০৬-০৭) *.বাক্যের প্রান্তিক চিহ্ন নয় কোনটি? (ক-২০০৬-০৭) *.অসম্পূর্ণ বাক্যের শেষে কোন বিরাম চিহ্ন বসে? (ক-২০০৮-০৯) *.পূর্ণ বাক্যে একাধিক স্বাধীন বাক্যাংশের পরে বসে- (ক-২০০৯-১০)