Search This Blog

সমাস (পর্ব ১): সমাস ব্যাসবাক্য সমস্ত পদ সমস্যমান পদ পূর্বপদ পরপদ/ উত্তরপদ প্রকারভেদ অর্থ প্রাধান্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ দ্বন্দ্ব সমাস কর্মধারয় সমাস কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম মধ্যপদলোপী কর্মধারয় উপমেয় উপমান সাধারণ ধর্ম উপমান কর্মধারয় সমাস উপমিত কর্মধারয় সমাস রূপক কর্মধারয় সমাস তৎপুরুষ সমাস বহুব্রীহি সমাস দ্বিগু সমাস অব্যয়ীভাব সমাস প্রাদি সমাস নিত্য সমাস ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র শকুন্তলা যৌবনের গান একটি তুলসী গাছের কাহিনী যৌবনের গান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন সমাস:সমাস শব্দের অর্থ মিলন। অর্থ সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের মিলিত হয়ে একটি নতুন শব্দ তৈরির ব্যাকরণ সম্মত প্রক্রিয়াকেই বলা হয় সমাস। মূলত, সমাসে একটি বাক্যাংশ একটি শব্দে পরিণত হয়। সমাসের রীতি বাংলায় এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সমাস ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, সমাস অর্থ সম্বন্ধপূর্ণ একাধিক শব্দের মিলন। আর সন্ধি পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি ধ্বনির মিলন। সমাসের জন্য কয়েকটি সংজ্ঞা/ টার্মস জানা খুবই জরুরি। এগুলো হলো- ব্যাসবাক্য: যে বাক্যাংশ থেকে সমাসের মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। একে সমাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্যও বলা হয়। সমস্ত পদ:ব্যাসবাক্য থেকে সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলা হয় সমস্ত পদ। সমস্যমান পদ:ব্যাসবাক্যের যে সব শব্দ সমস্ত পদে অন্তর্গত থাকে, সমস্ত পদের সেই সব শব্দকে সমস্যমান পদ বলে। পূর্বপদ : সমস্ত পদের প্রথম অংশ/ শব্দকে পূর্বপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের প্রথম সমস্যমান পদই পূর্বপদ। পরপদ/ উত্তরপদ:সমস্ত পদের শেষ অংশ/ শব্দকে পরপদ/ উত্তরপদ বলে। অর্থাৎ, সমস্ত পদের শেষ সমস্যমান পদই পরপদ। যেমন, সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন এখানে ব্যাসবাক্য হলো- ‘সিংহ চিহ্নিত আসন’। আর সমস্ত পদ হলো ‘সিংহাসন’। সমস্যমান পদ হলো ‘সিংহ’ আর ‘আসন’। এদের মধ্যে ‘সিংহ’ পূর্বপদ, আর ‘আসন’ পরপদ। আবার, আমিষের অভাব = নিরামিষ এখানে, পূর্বপদ ‘নিঃ’ বা অভাব। আর পরপদ হলো ‘আমিষ’। উলেলখ্য, একই সমস্ত পদ কয়েকভাবে ভেঙে কয়েকটি ব্যাসবাক্য তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সঠিক ব্যাসবাক্যও কয়েকটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যাসবাক্য অনুযায়ী সেটি কোন সমাস তা নির্ণয় করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাসবাক্যের সঙ্গে সমস্ত পদের অর্থসঙ্গতি যেন ঠিক থাকে। যেমন, ‘বিপদে আপন্ন = বিপদাপন্ন’, এই সমাসটি এভাবে ভাঙলে তা ভুল হবে। এটা করতে হবে ‘বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন’। প্রকারভেদ:সমাসপ্রধানত ৬ প্রকার- দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব। তবে অনেকেই দ্বিগু সমাসকে কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। আবার অনেকে কর্মধারয় সমাসকে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন। সমস্যমান পদের অর্থ প্রাধান্য বিবেচনা করে তারা এই মত দিয়ে থাকেন।সমস্যমান পদ বা পূর্বপদ-পরপদের অর্থ প্রাধান্য বিবেচনা করলে মূলত সমাস ৪ প্রকার- দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব। এছাড়াও কিছু অপ্রধান সমাসও রয়েছে। যেমন- প্রাদি, নিত্য, অলুক, প্রভৃতি। অর্থ প্রাধান্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ : পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পরপদের অর্থ প্রাধান্য সমাস আছে আছে দ্বন্দ্ব নেই আছে কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু আছে নেই অব্যয়ীভাব নেই নেই বহুব্রীহি নিচে বিভিন্ন সমাসের বর্ণনা দেয়া হলো। দ্বন্দ্বসমাস যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ- উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ স্থাপনে ও, এবং, আর- এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন- মা ও বাপ = মা-বাপ। এখানে পূর্বপদ ‘মা’ ও পরপদ ‘বাপ’। ব্যাসবাক্যে ‘মা’ ও ‘বাপ’ দুইজনকেই সমান প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এবং দুজনকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্বপদ ও পরপদ, উভয়েরই অর্থের প্রাধান্য রক্ষিত হয়েছে। তাই এটি দ্বন্দ্ব সমাস। কর্মধারয় সমাস কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। মূলত, এই সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদ পূর্বপদ ও বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদ পরপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর ব্যাসবাক্যটিতে ঐ বিশেষ্য বা বিশেষ্য ভাবাপন্ন পদটি সম্পর্কে কিছু বলা হয়। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম। এখানে, পূর্বপদ ‘নীল’ বিশেষণ ও পরপদ ‘পদ্ম’ বিশেষ্য। ব্যাসবাক্যে ‘পদ্ম’ সম্পর্কে বলা হয়েছে পদ্মটি ‘নীল’ রঙের। অর্থাৎ, ‘পদ্ম’ বা পরপদের অর্থই এখানে প্রধান, পরপদ ছাড়া পূর্বপদের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই এটি কর্মধারয় সমাস। কর্মধারয় সমাসের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম- *.দুইটি বিশেষণ একই বিশেষ্য বোঝালে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। এখানে পরবর্তী বিশেষ্যটি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে এটি দ্বন্দ্ব সমাস হবে না। *.দুইটি বিশেষ্য একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে সেটিও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, যিনি জজ তিনি সাহেব = জজসাহেব। একই কারণে এটি দ্বন্দ্ব না কর্মধারয় হবে। *.কার্যে পরপম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ বা ক্রিয়াবাচক বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন, আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা। এখানে ‘মোছা’ কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। *.পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে তা পুরুষবাচক হয়ে যাবে। যেমন, সুন্দরী যে লতা = সুন্দরলতা *.বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে মহা হয়। মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান *.পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’, ‘কৎ’ হয়। যেমন, কু যে অর্থ = কদর্থ। *.পরপদে ‘রাজা’ থাকলে ‘রাজ’ হয়। যেমন, মহান যে রাজা = মহারাজ। *.বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষ্য আগে এসে বিশেষণ পরে চলে যায়। যেমন, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।

শব্দের শ্রেণীবিভাগ (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): এছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয়মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন- রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি) হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি) হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি) হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম) খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম) ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি) পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা) চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি) শব্দের গঠনমূলক শ্রেণীবিভাগ গঠন অনুসারে শব্দ ২ প্রকার- মৌলিক শব্দ:যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, যে সব শব্দকে ভাঙলে আর কোন অর্থসঙ্গতিপূর্ণ শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন- গোলাপ, নাক, লাল, তিন, ইত্যাদি। এই শব্দগুলোকে আর ভাঙা যায় না, বা বিশ্লেষণ করা যায় না। আর যদি ভেঙে নতুন শব্দ পাওয়াও যায়, তার সঙ্গে শব্দটির কোন অর্থসঙ্গতি থাকে না। যেমন, উদাহরণের গোলাপ শব্দটি ভাঙলে গোল শব্দটি পাওয়া যায়। কিন্তু গোলাপ শব্দটি গোল শব্দ থেকে গঠিত হয়নি। এই দুটি শব্দের মাঝে কোন অর্থসঙ্গতিও নেই। তেমনি নাক ভেঙে না বানানো গেলেও নাক না থেকে আসেনি। অর্থাৎ, এই শব্দগুলোই মৌলিক শব্দ। ‘গোলাপ’ শব্দটির সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যোগ করে আমরা ‘গোলাপী’ শব্দটি বানাতে পারি। তেমনি ‘নাক’-র সঙ্গে ‘ফুল’ শব্দটি যোগ করে আমরা ‘নাকফুল’ শব্দটি গঠন করতে পারি। সাধিত শব্দ:যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থসঙ্গতিপূর্ণ ভিন্ন একটি শব্দ পাওয়া যায়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই বিভিন্ন ব্যাকরণসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ গঠিত হয়। মৌলিক শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন- সমাসবদ্ধ হয়ে- চাঁদের মত মুখ = চাঁদমুখ প্রত্যয় সাধিত- ডুব+উরি = ডুবুরি উপসর্গযোগে- প্র+শাসন = প্রশাসন অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ শব্দের অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ জানার আগে শব্দেরব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থসম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা দরকার। ব্যুৎপত্তিগত অর্থ:কোন শব্দ যে শব্দ বা শব্দমূল হতে গঠিত হয়েছে তার অর্থ দিয়ে শব্দটির যে অর্থ ধারণ করার কথা, তাকে শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে। অর্থাৎ, উৎপত্তিগত ভাবে শব্দটির যে অর্থ দাঁড়ায়, তাকেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে। যেমন, ‘মধুর’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘মধু+র’ অর্থাৎ ‘মধু’ শব্দ হতে। তাই ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত মধু সংশ্লিষ্ট কোন অর্থ। আর ‘মধুর’ শব্দের অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’। অর্থাৎ, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থেকেছে। আবার, ‘হস্তী’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘হস্ত+ইন’ অর্থাৎ ‘হস্ত’ শব্দ হতে। তাই ‘হস্তী’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত হস্ত বা হাত সংশ্লিষ্ট। কিন্তু ‘হস্তী’ বলতে একটি বিশেষ পশুকে বোঝায়, যার আদপে কোন হাত-ই নেই। অর্থাৎ, শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থাকেনি। ব্যবহারিক অর্থ:কোন শব্দ প্রকৃতঅর্থে যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, বা যে অর্থ প্রকাশ করে, তাকে সেই শব্দের ব্যবহারিক অর্থ বলে। যেমন, উপরের উদাহরণগুলোতে, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যবহারিক অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’, আর ‘হস্তী’র ব্যবহারিক অর্থ ‘একটি বিশেষ পশু’। অর্থগত ভাবে শব্দসমূহকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়- যৌগিক শব্দ:যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই, তাদের যৌগিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ পরিবর্তিত হয় না, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন (অর্থ) অর্থ গায়ক গৈ+অক যে গান করে কর্তব্য কৃ+তব্য যা করা উচিত বাবুয়ানা বাবু+আনা বাবুর ভাব মধুর মধু+র মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত দৌহিত্র দুহিতা+ষ্ণ্য (দুহিতা= মেয়ে, ষ্ণ্য= পুত্র) কন্যার মত, নাতি চিকামারা চিকা+মারা দেওয়ালের লিখন রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ:প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে গঠিত যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যবহারিক/ মূল অর্থ হস্তী হস্ত+ইন ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা বাঁশি বাঁশ+ইন বাঁশ দিয়ে তৈরি বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র তৈল তিল+ষ্ণ্য তিল থেকে তৈরি সেণহ পদার্থ উদ্ভিদ থেকে তৈরি যে কোন সেণহ পদার্থ প্রবীণ প্র+বীণা প্রকৃষ্টরূপে বীণা বাজায় যিনি অভিজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তি সন্দেশ সম+দেশ সংবাদ মিষ্টান্ন বিশেষ যোগরূঢ় শব্দ:সমাসনিষ্পন্ন যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন ব্যবহারিক অর্থ পঙ্কজ পঙ্কে জন্মে যা পদ্মফুল রাজপুত রাজার পুত্র একটি জাতি বিশেষ, ভারতের একটি জাতি মহাযাত্রা মহাসমারোহে যাত্রা মৃত্যু জলধি জল ধারণ করে যা/ এমন সাগর ]৪.নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ:বিভিন্ন বিদেশি শব্দের অনুকরণে ভাবানুবাদমূলক যেসব প্রতিশব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোকে নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ বলে। মূলত প্রচলিত বিদেশি শব্দেরই এরকম পারিভাষিক শব্দ তৈরি করা হয়েছে। যেমন- পারিভাষিক শব্দ মূল বিদেশি শব্দ পারিভাষিক শব্দ মূল বিদেশি শব্দ অম্লজান Oxygen সচিব Secretary উদযান Hudrogen স্নাতক Graduate নথি File স্নাতকোত্তর Post Graduate প্রশিক্ষণ Training সমাপ্তি Final ব্যবস্থাপক Manager সাময়িকী Periodical বেতার Radio সমীকরণ Equation মহাব্যবস্থাপক General Manager [কিন্তু,যেসব বিদেশি শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত হয়ে গেছে, আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে, সেগুলোও বাংলা ভাষার শব্দ; সেই শব্দগুলোও আমাদের ভাষার সম্পদ। সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার একটি সমৃদ্ধ ভাষার সবচেয়ে বড়ো লক্ষণ। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যতো বড়ো, সেই ভাষা ততো বেশি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভাষা। আর শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির একটি প্রধান কৌশল বিদেশি শব্দ আত্মীকরণ বা গ্রহণ।আর তাই বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক কঠিনতর পরিভাষা তৈরি করা নিষ্প্রয়োজন। এবং তা সাধারণ মানুষ গ্রহণও করে না। ভাষায় তা-ই টিকে থাকে, যা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে।

শব্দের শ্রেণীবিভাগ (পর্ব ১): শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ বাংলা ভাষার উৎপত্তি তৎসম শব্দ অর্ধ-তৎসম শব্দ তদ্ভব শব্দ দেশি শব্দ বিদেশি শব্দ আরবি শব্দ ফারসি শব্দ ইংরেজি শব্দ পর্তুগিজ শব্দ ফরাসি শব্দ ওলন্দাজ শব্দ গুজরাটি শব্দ পাঞ্জাবি শব্দ তুর্কি শব্দ চিনা শব্দ মায়ানমার/ বর্মি শব্দ জাপানি শব্দ মিশ্র শব্দ শব্দের গঠনমূলক শ্রেণীবিভাগ মৌলিক শব্দ সাধিত শব্দ অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যবহারিক অর্থ যৌগিক শব্দ রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ যোগরূঢ় শব্দ নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ৫টি বিভাজন সম্পর্কে জানার আগে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জানা জরুরি। বাংলা ভাষার উৎপত্তি:বাংলা ভাষার উৎপত্তি মূলত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে। এই বংশের অন্যতম একটি শাখা সংস্কৃত। বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার বংশেরই উত্তরসূরী। কিন্তু বাংলা ভাষা সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে আসেনি। সংস্কৃত সবসময়েই ছিলো সমাজের সম্ভ্রান্ত মানুষদের ব্যবহৃত ভাষা। আর বাংলা শুরু থেকেই সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষের ভাষা। এ থেকেই বোঝা যায় সংস্কৃত আর বাংলার মাঝেও কোনো ভাষা ছিলো। কিন্তু এ ব্যাপারে ভাষাবিদেরা একমত হতে পারেননি। পূর্বে সম্ভ্রান্ত মানুষেরা সংস্কৃত ব্যবহার করতো। আর সাধারণ মানুষ যে সব ভাষায় কথা বলতো, সেগুলোকে বলা হতো প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষা। অপভ্রংশ মানে বিকৃত, সংস্কৃত ভাষার শব্দকে মানুষ পরিবর্তন করে তাদের সুবিধামতো করে উচ্চারণ করতো বলে এগুলোকে পন্ডিতরা বলতেন অপভ্রংশ বা বিকৃত ভাষা। এগুলো আঞ্চলিক ভাষার মতোই একেক জায়গায় ছিলো একেক রকম। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা এসেছে গৌড়ীয় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে। আর ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলা এসেছে মাগধী অপভ্রংশ থেকে। এই অপভ্রংশগুলোতে সংস্কৃত ভাষার যে পরিবর্তিত বা বিকৃত রূপ পাওয়া যায়, তারই আরো পরিবর্তিত আর সহজ রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয় বাংলা ভাষা। দিন দিন মানুষের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলা ভাষাও অনেক সহজ হয়ে এসেছে। এবং তা আরো পরিবর্তিত হয়ে দিন দিন আরো সহজ ও সংক্ষিপ্ত হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রয়োজনে আরো অনেক নতুন শব্দও তৈরি হবে বা অন্য ভাষা থেকে আমাদের ভাষায় ঢুকে যাবে। উৎপত্তিগত দিক দিয়ে শব্দের ৫টি বিভাজন হলো- তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি আর বিদেশি শব্দ। তৎসম শব্দ:সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রাকৃত বা অপভ্রংশের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়নি, বরং সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, অনেক তৎসম শব্দেরই অর্ধ-তৎসম ও তদ্ভব রূপও বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, সূর্য˃ সুরুয, মনুষ্য˃ মানুষ। শুধু তৎসম শব্দেই ষ, ণ ব্যবহৃত হয়। অর্ধ-তৎসম শব্দ:যে সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। এগুলো সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকেই কিছুটা সহজ আকারে গৃহীত হয়েছে। সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষার মাধ্যমে বাংলায় আসেনি। যেমন, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂ গিন্নী, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত। তদ্ভব শব্দ:বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। অর্থাৎ, যে সব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত বা অপভ্রংশে ব্যবহৃত হয়েছিলো, পরে আবার প্রাকৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, মূলত এই শব্দগুলোই বাংলা ভাষা গঠন করেছে। আর তাই এই শব্দগুলোকে বলা হয় খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন, সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার, দেশি শব্দ:বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। মেমন,কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, পেট (উদর)- তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা। বিদেশি শব্দ:বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে। আরবি শব্দ :আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায় ফারসি শব্দ:খোদা, গুনাহ, দোযখ, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, মেথর, রসদ আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospitai), বোতল (bottle) পর্তুগিজ শব্দ :আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোঁরা ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম) গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা চিনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি জাপানি শব্দ :রিক্সা, হারিকিরি

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): ৩. ইকা-প্রত্যয় : (ক) শব্দের শেষে অক থাকলে ইকা-প্রত্যয় যোগ হয় এবং অক’-র স্থলে ইকা হয়। যেমন- বালক-বালিকা, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেবক-সেবিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা। ব্যতিক্রম : গণক-গণকী (গণিকা- বেশ্যা), নর্তক-নর্তকী, চাতক-চাতকী, রজক-রজকী/ রজকিনী (বাংলায়) (খ) অনেক সময় ক্ষুদ্রার্থেও ইকা প্রত্যয় যোগ হয়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না, এগুলো ক্ষুদ্রার্থক প্রত্যয়। যেমন- নাটক-নাটিকা (ক্ষুদ্র নাটক, নাটকের স্ত্রী রূপ নয়), মালা-মালিকা (ক্ষুদ্র মালা), গীত-গীতিকা (ক্ষুদ্র গান), পুস্তক-পুস্তিকা (ক্ষুদ্র বই)। ৪. আনী-প্রত্যয় : ইন্দ্র-ইন্দ্রানী, মাতুল-মাতুলানী, আচার্য-আচার্যানী (আচার্যের স্ত্রী, কিন্তু আচার্যের কাজে নিয়োজিত নারীও ‘আচার্য’), শূদ্র-শূদ্রানী (শূদ্রের স্ত্রী, সাধারণ শূদ্র জাতীয় মহিলা ‘শূদ্রা’), ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়ানী (ক্ষত্রিয়ের স্ত্রী, ক্ষত্রিয় জাতের মহিলা ক্ষত্রিয়া) কখনো কখনো আনী-প্রত্যয় অর্থেরও পরিবর্তন ঘটায়। তখন সেটা আর স্ত্রী প্রত্যয় থাকে না। যেমন- অরণ্য-অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য), হিম-হিমানী (জমানো বরফ)। ৫. নী, ঈনী-প্রত্যয় : মায়াবী-মায়াবিনী, কুহক-কুহকিনী, যোগী-যোগিনী, মেধাবী-মেধাবিনী, দুঃখী-দুঃখিনী বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ : ১. যে সব পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ আছে, সেগুলোর শেষে ‘ত্রী’ হয়। যেমন- ধাতা-ধাত্রী, নেতা-নেত্রী, কর্তা-কর্ত্রী, শ্রোতা- শ্রোত্রী ২. পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত, বান, মান, ঈয়ান থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে যথাক্রমে অতী, বতী, মতী, ঈয়সী হয়। যেমন- সৎ-সতী, মহৎ-মহতী, গুণবান-গুণবতী, রূপবান-রূপবতী, শ্রীমান-শ্রীমতি, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, গরীয়ান-গরিয়সী ৩. বিশেষ নিয়মে গঠিত স্ত্রীবাচক শব্দ : সম্রাট- সম্রাজ্ঞী, রাজা-রাণী, যুবক-যুবতী, শ্বশুর-শ্বশ্রূ, নর-নারী, বন্ধু-বান্ধবী, দেবর- জা, শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী, স্বামী-স্ত্রী, পতি-পত্নী, সভাপতি-সভানেত্রী নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ : কতগুলো সংস্কৃত শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। অর্থাৎ, এগুলো সর্বদাই স্ত্রীবাচক, এগুলোর কোন পুরুষবাচক শব্দই নেই। যেমন- সতীন, সৎমাতা, সধবা, কুলটা ইত্যাদি। বিদেশি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ খান- খানম মরদ- জেনানা মালেক- মালেকা মুহতারিম- মুহতারিমা সুলতান- সুলতানা দ্রষ্টব্য : ১. কতোগুলো বাংলা শব্দ পুরুষ ও স্ত্রী দুই-ই বোঝায়। যেমন-জন, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু ২. কতোগুলো শব্দ শুধু পুরুষ বোঝায়। যেমন-কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার ৩. কতোগুলো শব্দ শুধু স্ত্রীবাচক হয়। যেমন-সতীন, সৎমা, সধবা ৪. কিছু পুরুষবাচক শব্দের দুটো করে স্ত্রীবাচক শব্দ আছে- দেবর- ননদ (দেবরের বোন), জা (দেবরের স্ত্রী) ভাই- বোন, ভাবি/ বৌদি (ভাইয়ের স্ত্রী) শিক্ষক- শিক্ষয়িত্রী (নারী শিক্ষক), শিক্ষকপত্নী (শিক্ষকের স্ত্রী) বন্ধু- বান্ধবী মেয়ে বন্ধু), বন্ধুপত্নী (বন্ধুর স্ত্রী) দাদা-দিদি (বড় বোন), বৌদি (দাদার স্ত্রী) ৫. বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের বিশেষণ স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- সুন্দর বলদ- সুন্দর গাই, সুন্দর ছেলে- সুন্দর মেয়ে, মেজ খুড়ো, মেজ খুড়ি ৬. বাংলায় বিশেষণ পদের স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন- মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে (পাগলি হবে না)। নদী ভয়ে অস্থির হয়ে গেছে (অস্থিরা হবে না)। ৭. কুল-উপাধি-বংশ ইত্যাদিরও স্ত্রীবাচক রূপ আছে। যেমন- ঘোষ- ঘোষজা (কন্যা অর্থে), ঘোষজায়া (পত্নী অর্থে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.ক্ষুদ্রার্থে ‘ইকা’ প্রত্যয়যোগে গঠিত? (ঘ-২০০৪-০৫) *.দুটি পুরম্নষবাচক রম্নপ রয়েছে কোন শব্দের ? (ঘ-২০০৮-০৯) *.লিঙ্গান্তর হয় না এমন শব্দ কোনটি? (গ-২০০৪-০৫)

পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ) (পর্ব ১): লিঙ্গ পুরুষবাচক শব্দ স্ত্রীবাচক শব্দ পতি ও পত্নীবাচক অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ সাধারণ পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বাংলা শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ বিদেশি পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ দ্রষ্টব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন লিঙ্গ : ছেলে মেয়ের ধারণাকে বলা হয় লিঙ্গ। অর্থাৎ, পুংলিঙ্গ মানে পুরুষ, আর স্ত্রীলিঙ্গ মানে নারী বা মেয়ে বা স্ত্রী। এই বিভাজনই হলো লিঙ্গভেদ। অন্যান্য ভাষার মতোই বাংলা ভাষাতেও লিঙ্গভেদে শব্দের রূপ পরিবর্তিত হয়। আবার অনেক সময় দুই লিঙ্গের দুইটি পৃথক শব্দও ব্যবহৃত হয়। পুরুষবাচক শব্দ : যে শব্দ পুরুষ বা ছেলে বোঝায়, তাকে পুরুষবাচক শব্দ বলে। যেমন- বাপ, ভাই, ছেলে, ইত্যাদি। স্ত্রীবাচক শব্দ : যে শব্দ নারী বা স্ত্রী বা মেয়ে বোঝায়, তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলে। যেমন- মা, বোন, মেয়ে, ইত্যাদি। উলেলখ্য, মূলত বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ আছে। সংস্কৃত ভাষায় পুরুষবাচক বিশেষ্য পদের সঙ্গে পুরুষবাচক বিশেষণ পদ আর স্ত্রীবাচক বিশেষ্য পদের স্ত্রীবাচক বিশেষণ পদ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষায় এই নিয়ম মানা হয় না। বাংলা ভাষায় বিশেষণ পদের লিঙ্গভেদ করা হয় না। অর্থাৎ, বাংলা ভাষায় কেবল বিশেষ্য পদের লিঙ্গভেদ হয়। যেমন- সংস্কৃত ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দরী বালিকা’। কিন্তু বাংলা ভাষায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা’। পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দগুলোকে সাধারণত ২টি ভাগে ভাগ করা যায়- ১. পতি ও পত্নীবাচক অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ : আববা-আম্মা, বাবা-মা, চাচা-চাচি, কাকা-কাকি, জেঠা-জেঠি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নন্দাই-ননদ, দেওর-জা, ভাই-ভাবি/বৌদি, ইত্যাদি। ২. সাধারণ পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অর্থে পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ : খোকা-খুকি, পাগল-পাগলি, বামন-বামনি, ভেড়া-ভেড়ী, মোরগ-মুরগি, বালক-বালিকা, দেওর-ননদ, ইত্যাদি। পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন মূলত পুরুষবাচক শব্দের শেষে স্ত্রীবাচক প্রত্যয় যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। অর্থাৎ, পুরুষবাচক শব্দের শেষে একটি অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। এই স্ত্রীবাচক প্রত্যয় ২ প্রকার- বাংলা স্ত্রী বাচক প্রত্যয় ও সংস্কৃত স্ত্রী বাচক প্রত্যয়। বাংলা স্ত্রী বাচক প্রত্যয়গুলো বাংলা শব্দের সঙ্গে আর সংস্কৃত স্ত্রী বাচক প্রত্যয়গুলো সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়। শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হওয়া ছাড়াও আরো কিছু বিশেষ নিয়মে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। নিচে বাংলা ও সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। বাংলা শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন বাংলা স্ত্রী প্রত্যয় যোগে পুরুষ হতে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন : ১. ঈ-প্রত্যয় : বেঙ্গম-বেঙ্গমী, ভাগনা/ভাগনে- ভাগনী ২. নী-প্রত্যয় : কামার-কামারনী, জেলে-জেলেনী, কুমার-কুমারনী, ধোপা-ধোপানী, মজুর-মজুরনী পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ’ থাকলে নী-প্রত্যয় যোগ হলে আগের ‘ঈ’, ‘ই’ হয়। যেমন- ভিখারী- ভিখারিনী ৩. আনী-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকুরানী, নাপিত-নাপিতানী, মেথর-মেথরানী, চাকর-চাকরানী ৪. ইনী-প্রত্যয় : কাঙাল-কাঙালিনী, গোয়ালা- গোয়ালিনী, বাঘ-বাঘিনী ৫. উন-প্রত্যয় : ঠাকুর-ঠাকরুন ৬. আইন-প্রত্যয় : (এরকম আরো নতুন নতুন প্রত্যয়ের প্রয়োগ দেখা যায়) ঠাকুর-ঠাকুরাইন নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ : কতগুলো শব্দ নিত্য স্ত্রীবাচক। অর্থাৎ, এগুলো সর্বদাই স্ত্রীবাচক, এগুলোর কোন পুরুষবাচক শব্দই নেই। যেমন- সতীন, সৎমা, এয়ো, দাই, সধবা, ইত্যাদি। শব্দের আগে পৃথক শব্দ যোগ করে : কতগুলো শব্দের আগে পুরুষবাচক শব্দ গঠনের জন্য নর, মদ্দা, ইত্যাদি ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠনের জন্য স্ত্রী, মাদী, মাদা, ইত্যাদি শব্দ যোগ করা হয়। যেমন- মর/ মদ্দা/ হুলো বিড়াল- মেনি বিড়াল, মদ্দা হাঁস- মাদী হাঁস, মদ্দা ঘোড়া- মাদী ঘোড়া, পুরুষলোক-মেয়েলোক, বেটাছেলে- মেয়েছেলে, পুরুষ কয়েদী- স্ত্রী/ মেয়ে কয়েদী, এঁড়ে বাছুর-বকনা বাছুর, বলদ গরু- গাই গরু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ প্রয়োগে : কিছু কিছু পুরুষবাচক শব্দের আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। যেমন- কবি- মহিলা কবি, ডাক্তার- মহিলা ডাক্তার, সভ্য- মহিলা সভ্য, কর্মী- মহিলা কর্মী, শিল্পী- মহিলা শিল্পী/ নারী শিল্পী, সৈন্য- নারী সৈন্য/ মহিলা সৈন্য, পুলিশ- মহিলা পুলিশ শব্দের শেষে পৃথক শব্দ যোগ করে : শব্দের শেষে পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করেও পুরুষ বা স্ত্রীবাচক শব্দ তৈরি করা যায়। যেমন- বোন-পো- বোন-ঝি, ঠাকুর-পো- ঠাকুর-ঝি, ঠাকুর দাদা/ ঠাকুরদা- ঠাকুরমা, গয়লা- গয়লা-বউ, জেলে- জেলে-বউ ভিন্ন শব্দ প্রয়োগে : দুটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দের মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী বাচক বোঝানো যেতে পারে। যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন, কর্তা-গিন্নী, ছেলে-মেয়ে, সাহেব- বিবি, জামাই-মেয়ে, বর-কনে, দুলহা-দুলাইন/ দুলহিন, বেয়াই-বেয়াইন, তাঐ-মাঐ, বাদশা-বেগম, শুক-সারী সংস্কৃত শব্দের পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের গঠন সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয় যোগে পুরুষ হতে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন : ১. আ-প্রত্যয় : মৃত-মৃতা, বিবাহিত-বিবাহিতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রিয়-প্রিয়া, প্রথম-প্রথমা, চতুর-চতুরা, চপল-চপলা, নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা, অজ-অজা, কোকিল-কোকিলা, শিষ্য-শিষ্যা, ক্ষত্রিয়-ক্ষত্রিয়া, শূদ্র-শূদ্রা ২. ঈ-প্রত্যয় : নিশাচর-নিশাচরী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, সুন্দর-সুন্দরী, চতুর্দশ-চতুর্দশী, ষোড়শ-ষোড়শী, সিংহ-সিংহী, ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী, মানব-মানবী, বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী, কুমার-কুমারী, ময়ূর-ময়ূরী