Search This Blog

পদ প্রকরণ (পর্ব ২): নির্ধারক বিশেষণ : দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করে যখন একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানো হয় তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলে। যেমন- রাশি রাশি ভারা ভারাধান (সোনার তরী) লাল লালকৃষ্ণচূড়ায় গাছ ভরে আছে। নববর্ষ উপলক্ষেঘরে ঘরেসাড়া পড়ে গেছে। এতছোট ছোটউত্তর লিখলে হবে না। [নির্ধারক বিশেষণ; ভাষা অনুশীলন; সোনার তরী] [বিশেষণবাচক ‘কী’ কী-শব্দটির একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে বিশেষণ হিসেবে এর ব্যবহার। যেমন, ‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতায় : এই যে আসুন, তারপরকীখবর? নিজেই চমকে,কীনিস্পৃহ, কেমন শীতল। কীসহজে হয়ে গেল বলা। (ক্রিয়াবিশেষণের বিশেষণ/ বিশেষণের বিশেষণ)] [বিশেষণবাচক ‘কী’; ভাষা অনুশীলন; একটি ফটোগ্রাফ] [বিশেষণ সম্বন্ধ পাথরেরটুকরো আমাদেরগ্রামেরপুকুর গ্রীষ্মেরপুকুর শোকেরনদী আমারসন্তান] [বিশেষণ সম্বন্ধ; ভাষা অনুশীলন; একটি ফটোগ্রাফ] বিশেষণের অতিশায়ন (degree) বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের মধ্যে তুলনা বোঝায়, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের একরকম অতিশায়ন প্রচলিত আছে, আবার তৎসম শব্দে সংস্কৃত ভাষার অতিশায়নের নিয়মও প্রচলিত আছে। ক) বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের অতিশায়ন ১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন বোঝাতে দুইটি বিশেষ্য বা সর্বনামের মাঝে চাইতে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রায়ই প্রথম বিশেষ্যটির সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) যুক্ত হয়। যেমন- গরুরথেকেঘোড়ার দাম বেশি। বাঘেরচেয়েসিংহ বলবান। ব্যতিক্রম : কখনো কখনো প্রথম বিশেষ্যের শেষের ষষ্ঠী বিভক্তিই হতে, থেকে, চেয়ে-র কাজ করে। যেমন- এ মাটি সোনারবাড়া। (সোনার চেয়েও বাড়া) ২. বহুর মধ্যে অতিশায়নে বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সর্বাপেক্ষা, সবথেকে, সবচেয়ে,সর্বাধিক, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন- তোমাদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান। পশুর মধ্যে সিংহসর্বাপেক্ষাবলবান। ৩. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে গেলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম অধিকতর, ইত্যাদি শব্দ যোগ করতে হয়। যেমন- পদ্মফুল গোলাপের চাইতেবেশিসুন্দর। ঘিয়ের চেয়ে দুধবেশিউপকারী। কমলার চাইতে পাতিলেবুঅল্পছোট। খ) তৎসম শব্দের অতিশায়ন ১. দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ হয় বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তম’ যোগ হয়। যেমন- গুরু- গুরুতর- গুরুতম দীর্ঘ- দীর্ঘতর- দীর্ঘতম [তবে কোনো বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ করলে সেটা যদি আবার শ্রচতিকটু হয়ে যায়, শুনতে খারাপ লাগে, তখন বিশেষণটির শেষে ‘তর’ যোগ না করে বিশেষণের আগে ‘অধিকতর’ শব্দটি যোগ করা হয়। যেমন- ‘অধিকতর সুশ্রী’।] ২. আবার, দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ঈয়স’ প্রত্যয় যুক্ত হয় বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ইষ্ঠ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- লঘু- লঘীয়ান- লঘিষ্ঠ অল্প- কনীয়ান- কনিষ্ঠ বৃদ্ধ- জ্যায়ান- জ্যেষ্ঠ শ্রেয়- শ্রেয়ান- শ্রেষ্ঠ [দুয়ের তুলনায় এই নিয়মের ব্যবহার বাংলায় হয় না। অর্থাৎ, বাংলায় লঘীয়ান, কনীয়ান, জ্যায়ান, শ্রেয়ান, ইত্যাদি শব্দগুলোর প্রচলন নেই। তবে ‘ঈয়স’ প্রত্যয়যুক্ত কতোগুলো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন- ভূয়সী প্রশংসা।] সর্বনাম পদ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই সর্বনাম পদ বলে। অনুচ্ছেদে বা প্যারাগ্রাফে একই বিশেষ্য পদ বারবার আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একই পদ বারবার ব্যবহার করলে তা শুনতে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এই পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিশেষ্য পদের পরিবর্তে অনুচ্ছেদে যে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে সেই বিশেষ্য পদকেই বোঝানো হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে। [সর্বনাম পদগুলো সব বিশেষ্য বা নামের পরিবর্তে বসতে পারে বলে এদেরকে ‘সর্বনাম’ বলে।] ‘বাংলাদেশঅত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ।এই দেশটি যেমন সুন্দর,এই দেশের মানুষগুলোও তেমনি ভালো।তারাএতোটাই ভদ্র ও মার্জিত যে,তাদেরকাছে ভিখারি ভিক্ষা চাইতে আসলেতারাতাদেরবিতাড়িত করে না। বরং মার্জিতভাবে বলে, মাফ করেন।’ উপরের অনুচ্ছেদে মূলত ৩টি বিশেষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশের মানুষ’ ও ‘ভিখারি’। এবং প্রথমবার উল্লেখের পর দ্বিতীয়বার কোন বিশেষ্যই আর উল্লেখ করা হয়নি। পরের বার থেকে ‘বাংলাদেশ’-র বদলে ‘এই দেশ’; ‘বাংলাদেশের (এই দেশের) মানুষ’-র বদলে ‘তারা’ ও ‘তাদের’ এবং ‘ভিখারি’-র বদলে ‘তাদের’ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ্য পদের বদলে ব্যবহৃত এই শব্দগুলোই হলো সর্বনাম পদ। সর্বনাম পদগুলোকে মূলত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা ২. আত্মবাচক : স্বয়ং, নিজ, খোদ, আপনি ৩. সামীপ্যবাচক : এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি ৪. দূরত্ববাচক : ঐ, ঐসব, সব ৫. সাকল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ ৬. প্রশ্নবাচক : কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে ৭. অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক : কোন, কেহ, কেউ, কিছু ৮. ব্যতিহারিক : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর ৯. সংযোগজ্ঞাপক : যে, যিনি, যাঁরা, যাহারা ১০. অন্যাদিবাচক : অন্য, অপর, পর সাপেক্ষ সর্বনাম : কখনও কখনও পর্সপর সম্পর্কযুক্ত একাধিক সর্বনাম পদ একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে দুটি বাক্যের সংযোগ সাধন করে থাকে। এদেরকে বলা হয় সাপেক্ষ সর্বনাম। যেমন- যতচাওততলও (সোনার তরী) যতচেষ্টা করবেততইসাফল্যের সম্ভাবনা। যতবড় মুখ নয়ততবড় কথা। যতগর্জেততবর্ষে না। যেইকথাসেইকাজ। যেমনকর্মতেমনফল। যেমনবুনো ওলতেমনিবাঘা তেঁতুল। [সাপেক্ষ সর্বনাম; ভাষা অনুশীলন; সোনার তরী] সর্বনামের পুরুষ [PERSON] [বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পুরুষভেদে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। বিশেষণ ও অব্যয় পদের কোন পুরুষভেদ নেই।] পুরুষ ৩ প্রকার। সুতরাং, সর্বনাম পদের পুরুষও ৩টি- উত্তম পুরুষ : বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি।

পদ প্রকরণ (পর্ব ১): পদ পদের প্রকারভেদ বিশেষ্য পদ বিশেষণ পদ নির্ধারক বিশেষণ বিশেষণবাচক ‘কী’ বিশেষণ সম্বন্ধ বিশেষণের অতিশায়ন (degree) সর্বনাম পদ সাপেক্ষ সর্বনাম সর্বনামের পুরুষ [PERSON] অব্যয় পদ অব্যয়ের প্রকারভেদ কিছু বিশেষ অব্যয় অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় অনুসর্গ অব্যয় অনন্বয়ী অব্যয় সমুচ্চয়ী অব্যয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন পদ : বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকে পদ বলে। বাক্যে যখন শব্দ ব্যবহৃত হয়, তখন শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য প্রতিটি শব্দের সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়। এগুলোকে বলে বিভক্তি। যে সব শব্দে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় কোন বিভক্তি যুক্ত হয়নি, সে সব শব্দেও একটি বিভক্তি যুক্ত হয়। একে প্রথমা বিভক্তি বা শূণ্য বিভক্তি বলে। ব্যাকরণ অনুযায়ী কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তাতে বিভক্তি যুক্ত হতে হয়। আর তাই কোন শব্দ বাক্যে বিভক্তি না নিয়ে ব্যবহৃত হলেও তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে বলে ধরে নিয়ে তাকে শূণ্য বিভক্তি বলা হয়। অর্থাৎ,বিভক্তিযুক্ত শব্দকেই পদ বলে। পদের প্রকারভেদ : পদ প্রধানত ২ প্রকার- সব্যয় পদ ও অব্যয় পদ। সব্যয় পদ আবার ৪ প্রকার- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও ক্রিয়া। অর্থাৎ,পদ মোট ৫ প্রকার- ১. বিশেষ্য ২. বিশেষণ ৩. সর্বনাম ৪. ক্রিয়া ৫. অব্যয় [শব্দের শ্রেণীবিভাগ হলো- তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি। অন্যদিকে পদের শ্রেণীবিভাগ হলো- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয়। দুইটিই ৫ প্রকার।] যখন পর্যন্ত কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হচ্ছে না, তখনো সেটি কোন পদ নয়। কোন শব্দ কোন পদ হবে তা নির্ভর করে বাক্যে কিভাবে ব্যবহৃত হলো তার উপর। তাই কোন শব্দকে আগেই বিশেষ্য বা বিশেষণ বলে দেয়া ঠিক নয়। যেমন- তোমারহাতেকি? ডাকাত আমার সবহাতিয়েনিয়েছে। জঙ্গীরাহাতবোমা মেরে পালিয়ে গেলো। প্রথম বাক্যে হাত শব্দটি বিশেষ্য। আবার দ্বিতীয় বাক্যে এই হাত শব্দটিই একটু পরিবর্তিত হয়ে ক্রিয়া হয়ে গেছে। আবার তৃতীয় বাক্যেই আবার হাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষণ হিসেবে। [তবে প্রশ্নে শুধু শব্দ দিয়ে সেটি কোন পদ জিজ্ঞেস করলে সাধারণত শব্দটি যে পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেটি দিতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, প্রতিটি শব্দই সাধারণত একেক পদ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় একেক রূপ নেয়। যেমন, ‘হাত’ শব্দটি বিশেষণ হিসেবে কোন বিভক্তি নেয়নি, কিন্তু বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় বিভক্তি নিয়েছে। আবার ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় প্রত্যয় নিয়েছে। এভাবেপ্রশ্নের শব্দটিকে বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহার করে কোন পদ নির্ণয় করা যেতে পারে।] বিশেষ্য পদ কোন কিছুর নামকেই বিশেষ্য বলে। যে পদ কোন ব্যক্তি, বস্ত্ত, প্রাণী, সমষ্টি, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম, গুণ ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। বিশেষ্য পদ ৬ প্রকার- ১. নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য (ক) ব্যাক্তির নাম : নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল (খ) ভৌগোলিক স্থানের নাম : ঢাকা, দিলিল, লন্ডন, মক্কা (গ) ভৌগোলিক নাম (নদী, পর্বত, সমুদ্র ইত্যাদির নাম) : মেঘনা, হিমালয়, আরব সাগর (ঘ) গ্রন্থের নাম : গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা, দেশেবিদেশে, বিশ্বনবী ২. জাতিবাচক বিশেষ্য : (এক জাতীয় প্রাণী বা পদার্থের নাম) মানুষ, গরু, গাছ, পাখি, পর্বত, নদী, ইংরেজ ৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য : বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবন, পানি ৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি) : সভা, জনতা, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল ৫. ভাববাচক বিশেষ্য (ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব বা কাজের নাম বোঝায়) : গমন, শয়ন, দর্শন, ভোজন. দেখা, শোনা, যাওয়া, শোয়া ৬. গুণবাচক বিশেষ্য : মধুরতা, তারল্য, তিক্ততা, তারুণ্য, সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ বিশেষণ পদ যে পদ বাক্যের অন্য কোন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে। অর্থাৎ, বিশেষণ পদ অন্য কোন পদ সম্পর্কে তথ্য বা ধারণা প্রকাশ করে, বা অন্য পদকে বিশেষায়িত করে। [কিছু বিশেষণ পদ : (‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতা থেকে) সফেদদেয়াল শান্তফটোগ্রাফ জিজ্ঞাসুঅতিথি ছোটছেলে নিস্পৃহকণ্ঠস্বর তিনটিবছর (সংখ্যাবাচক বিশেষণ) রুক্ষচর প্রশ্নাকুলচোখ ক্ষীয়মাণশোক সহজেহয়ে গেল বলা (ক্রিয়া বিশেষণ)] [বিশেষণ শব্দ; ভাষা অনুশীলন; একটি ফটোগ্রাফ] বিশেষণ পদ ২ প্রকার- নাম বিশেষণ ও ভাব বিশেষণ। নাম বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ কোন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন- *.বিশেষ্যের বিশেষণ :নীলআকাশ আরসবুজমাঠের মাঝ দিয়ে একটিছোট্টপাখি উড়ে যাচ্ছে। *.সর্বনামের বিশেষণ : সেরূপবানওগুণবান। ভাব বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ছাড়া অন্য কোন পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে। ভাব বিশেষণ ৪ প্রকার- *.ক্রিয়া বিশেষণ :ধীরে ধীরেবায়ু বয়।পরেএক বার এসো। *.বিশেষণের বিশেষণ (কোন বিশেষণ যদি অন্য একটি বিশেষণকেও বিশেষায়িত করে, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে) : *.নাম বিশেষণের বিশেষণ :সামান্যএকটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সেঅতিশয়দুঃখিত। *.ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : রকেটিঅতিদ্রুত চলে। *.অব্যয়ের বিশেষণ (অব্যয় পদ বা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষায়িত করে) : ধিক তারে,শতধিক নির্লজ্জ যে জন। *.বাক্যের বিশেষণ (কোন পদকে বিশেষায়িত না করে সম্পূর্ণ বাক্যটিকেই বিশেষায়িত করে) :দুর্ভাগ্যক্রমেদেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।বাস্তবিকইআজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন। [না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ : নি- *.এখনো দেখনিতুমি? *.ফুল কি ফোটেনিশাখে? *.পুষ্পারতি লভেনিকি ঋতুর রাজন? রাখিনিসন্ধান *.রহেনি, সে ভুলেনিতো না- *.বসন্তে বরিয়া তুমি লবেনাকি তব বন্দনায়? *.রচিয়া লহনাআজও গীতি। *.ভুলিতে পারিনাকোন মতে। নাই- *.শুনিনাই, রাখি নি সন্ধান *.নাইহল, না হোক এবারে *.করেনাইঅর্ঘ্য বিরুন?] [না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ; ভাষা অনুশীলন; তাহারেই পড়ে মনে]

ণত্ব ও ষত্ব বিধান: ণত্ব ও ষত্ব বিধান স্পর্শধ্বনির তালিকা ণত্ব বিধান বা ণ ব্যবহারের নিয়ম ষত্ব বিধান বা ষ ব্যবহারের নিয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ণত্ব ও ষত্ব বিধান : বাংলা ভাষায় ‘ণ’ ও ‘ষ’-র ব্যবহার তেমন নেই। অর্থাৎ, খাঁটি বাংলা শব্দে বা তদ্ভব শব্দে কখনোই ‘ণ/ ষ’ ব্যবহৃত হয় না। শুধু তাই না, অর্ধ-তৎসম, দেশি বা বিদেশি শব্দেও ‘ণ/ষ’ ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোন পরিবর্তন ছাড়াই সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে, সে সব শব্দে সংস্কৃত ভাষার বানান অনুসরণ করার জন্য ‘ণ/ ষ’ ব্যবহার করতে হয়। এইসব তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে ‘ণ/ ষ’ ব্যবহার করার নিয়মকেই বলা হয় ণত্ব ও ষত্ব বিধান। [ণত্ব ও ষত্ব বিধান পড়ার জন্য স্পর্শধ্বনির তালিকাটা জরুরি বলে উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হলো- স্পর্শধ্বনি/ বর্গীয় ধ্বনি ক-বর্গীয় ধ্বনি ক খ গ ঘ ঙ চ-বর্গীয় ধ্বনি চ ছ জ ঝ ঞ ট-বর্গীয় ধ্বনি ট ঠ ড ঢ ণ ত-বর্গীয় ধ্বনি ত থ দ ধ ন প-বর্গীয় ধ্বনি প ফ ব ভ ম ণত্ব বিধান বা ণ ব্যবহারের নিয়ম ১.ট-বর্গীয় ধ্বনির আগে ন যুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন গঠিত হলে তা ‘ণ’ হয়। অর্থাৎ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ- এদের আগে ন যুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন গঠিত হলে সেই ‘ন’, ‘ণ’ হয়। যেমন- কণ্ঠ, ঘণ্টা, লণ্ঠন, কান্ড, ইত্যাদি। ২. ঋ, র, ষ- এদের পরে ‘ণ’ হয়। যেমন- ঋণ, তৃণ (ত+ঋ+ণ+অ), বর্ণ (ব+অ+র+ণ+অ), বর্ণনা, কারণ, মরণ, ব্যকরণ, ভীষণ, ভাষণ, উষ্ণ (উ+ষ+ণ) ৩. ঋ, র, ষ- এদের পরে ‘স্বরকপযবহং’ থাকলে এবং তারপর ‘ন’ আসলে তা ‘ণ’ হয়। এখানে স্বরকপযবহং মানে হলো- স্বর = স্বরধ্বনি কপ = ক ও প বর্গীয় ধ্বনি (ক-বর্গীয় ধ্বনি = ক, খ, গ, ঘ, ঙ; প-বর্গীয় ধ্বনি = প, ফ, ব, ভ, ম) যব = ষ, য়, য, ব হং = হ, ং যেমন-কৃপণ (ক+ঋ+ প (প-বর্গীয় ধ্বনি)+অ (স্বরধ্বনি)+ ণ) হরিণ (হ+অ+র+ ই(স্বরধ্বনি)+ ণ) অর্পণ (অ+র+ প(প-বর্গীয় ধ্বনি)+অ(স্বরধ্বনি)+ ণ) লক্ষণ (ল+অ+ক্+ষ+ অ(স্বরধ্বনি)+ ণ) রামায়ণ (র+ আ(স্বরধ্বনি+ম(প-বর্গীয় ধ্বনি)+আ(স্বরধ্বনি)+য়(যব)+ ণ) রুক্মিণী (র+ উ(স্বরধ্বনি)+ক(ক-বর্গীয়ধ্বনি)+ম(প-বর্গীয়ধ্বনি)+ই(স্বরধ্বনি)+ ণ +ই) ব্রাহ্মণ (ব+র+ আ(স্বরধ্বনি)+হ(হং)+ম(প-বর্গীয় ধ্বনি)+অ(স্বরধ্বনি)+ ণ) ৪. কতোগুলো শব্দে স্বভাবতই ণ হয়- চাণক্য মাণিক্য গণ বাণিজ্য লবণ মণ বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা কল্যাণ শোণিত মণি স্থাণু গুণ পূণ্য বেণী ফণী অণু বিপণি গণিকা আপণ লাবণ্য বাণী নিপুণ ভণিতা পাণি গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ চিক্কণ নিক্কণ তূণ কফোণি বণিক গুণ গণনা পিণাক পণ্য বাণ ৫. (এটি ণত্ব বিধানের সংজ্ঞানুযায়ী ণত্ব বিধানের নিয়ম নয়) সমাসবদ্ধ শব্দে ণত্ব বিধান খাটে না। অর্থাৎ, সমাসের মাধ্যমে গঠিত শব্দে ‘ণ’ হয় না, ‘ন’ হয়। যেমন- ত্রিনয়ন (২নং নিয়ম অনুযায়ী ত্রিণয়ন), সর্বনাম (৩নং নিয়ম অনুযায়ী সর্বণাম), দুর্নীতি (২নং নিয়ম অনুযায়ী দুর্ণীতি), দুর্নাম (২নং নিয়ম অনুযায়ী দুর্ণাম), দুর্নিবার (২নং নিয়ম অনুযায়ী দুর্ণিবার), পরনিন্দা (২নং নিয়ম অনুযায়ী পরণিন্দা), অগ্রনায়ক (২নং নিয়ম অনুযায়ী অগ্রণায়ক) ৬. (এটিও ণত্ব বিধানের সংজ্ঞানুযায়ী ণত্ব বিধানের নিয়ম নয়) ত-বর্গীয় ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হলে কখনোই ‘ন’, ‘ণ’ হয় না। অর্থাৎ, ত, থ, দ, ধ, ন- এদের সঙ্গে যুক্ত হলে সেটা ‘ন’ হবে। যেমন- অন্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন, চন্দন ষত্ব বিধান বা ষ ব্যবহারের নিয়ম ১. অ/আ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনি এবং ক,র-এর পরের ‘স’, ‘ষ’ হয়। অর্থাৎ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ, ক, র- এদের পরে স থাকলে তা ষ হয়। যেমন- ভবিষ্যৎ (ভ+অ+ব+ই+ষ+য+ত্), মুমূর্ষু (ম+উ+ম+ঊ+র+ষ+উ), চক্ষুষ্মান (চ+অ+ক+ষ+উ+ষ+ম+আ+ন), চিকীর্ষা (চ+ই+ক+ঈ+র+ষ+আ) ২. ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পরে প্রায়ই ষ হয়। অর্থাৎ, যে সব সংস্কৃত উপসর্গের শেষে ই-কার বা উ-কার আছে, সেসব উপসর্গযোগে গঠিত শব্দে প্রায়ই ষ হয়। মূলত, ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের সঙ্গে কতোগুলো ধাতু যুক্ত হলে সেসব ধাতুতে ষ হয়। যেমন- অভিসেক> অভিষেক (এখানে উপসর্গ অভি, অ+ভ+ই- ই-কারান্ত উপসর্গ)। এরকম- সুসুপ্ত> সুষুপ্ত, অনুসঙ্গ> অনুষঙ্গ, প্রতিসেধক> প্রতিষেধক, প্রতিস্থান> প্রতিষ্ঠান (দন্ত্য স-র সঙ্গে দন্ত্য ধ্বনি থ যুক্ত হয়। আর মূর্ধণ্য ষ-এর সঙ্গে মূর্ধণ্য ধ্বনি ঠ যুক্ত হয়েছে।), অনুস্থান> অনুষ্ঠান, বিসম> বিষম, সুসমা> সুষমা ৩. ঋ ও র-এর পরে ষ হয়। যেমন- ঋষি, কৃষক (ক+ঋ+ষ+অ+ক), তৃষ্ণা (ত+ঋ+ষ+ণ+আ), উৎকৃষ্ট, বৃষ্টি (ব+ঋ+ষ+ট+ই), দৃষ্টি (দ+ঋ+ষ+ট+ই), কৃষ্টি, সৃষ্টি, বর্ষা (ব+অ+র+ষ+আ), বর্ষণ ৪. ট ও ঠ-র সঙ্গে যুক্ত হলে ষ হয়। যেমন- কষ্ট, স্পষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ, ওষ্ঠ ৫. কতোগুলো শব্দে স্বভাবতই ষ হয়। যেমন- অ= অভিলাষ আ= আষাঢ়, আভাষ ঈ= ঈষৎ ঊ= ঊষা, ঊষর ঔ= ঔষধ, ঔষধি ক= কলুষ, কোষ ত= তোষণ দ= দ্বেষ প= পাষন্ড, পাষাণ, পোষণ, পৌষ ভ= ভাষা, ভাষ্য, ভাষণ, ভূষণ ম= মানুষ র= রোষ শ= শোষণ স= সরিষা ষ= ষন্ড, ষোড়শ, ষড়যন্ত্র, ষটচক্র (শব্দগুলো প্রথম ধ্বনির ক্রমানুযায়ী সাজানো হলেও পড়ার সুবিধার্থে ‘স’কে আগে দিয়ে ‘ষ’কে পরে রাখা হয়েছে।) ৬. (এটি ষত্ব বিধানের সংজ্ঞানুযায়ী ষত্ব বিধানের নিয়ম নয়) বিদেশি শব্দে কখনোই ‘ষ’ হয় না। যেমন- জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পোস্ট, ইত্যাদি। এই বানানগুলোর ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ৭. (এটিও ষত্ব বিধানের সংজ্ঞানুযায়ী ষত্ব বিধানের নিয়ম নয়) সংস্কৃত ‘সাৎ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত শব্দেও ‘ষ’ হয় না। অর্থাৎ, যেসব শব্দের শেষে ‘সাৎ’ শব্দাংশটি আছে, সেখানে সাৎ বানানে ষ হয় না। যেমন- অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.নিচের কোন শব্দে কোনো নিয়ম ছাড়াই মূর্ধণ্য ষ বসেছে (ঘ-২০০৯-১০) *.‘ণ’-ত্ব বিধান অনুসারে নিচের কোন বানান অশুদ্ধ? (ক-২০০৯-১০)

ক্রিয়ার কাল: ক্রিয়ার কাল ক্রিয়ার কাল রূপ নির্ভর, অর্থ নির্ভর নয় প্রকারভেদ বিভিন্ন কালের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (ছক আকারে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ক্রিয়ার কাল : ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কেই ক্রিয়ার কাল বা কাল বলে। যেমন- আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়ি।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি এখন সম্পন্ন হচ্ছে। আবার, আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়বো।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি পরে সম্পন্ন হবে। আবার, আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়েছি।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি পূর্বেই সম্পাদিত হয়েছে। উপরের বাক্য তিনটিতে ক্রিয়া তিনটি ভিন্ন সময়ে সম্পাদিত হয়েছে। ক্রিয়া সম্পাদনের এই সময়গুলোই ক্রিয়ার কাল বা কাল। ক্রিয়ার কাল রূপ নির্ভর, অর্থ নির্ভর নয় : কাল মূলত ক্রিয়ার রূপকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ ক্রিয়াপদ তৈরি করে। ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ক্রিয়াবিভক্তিটি কাল ও পুরুষ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। আর তাই কাল ও পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়াপদের রূপও পরিবর্তিত হয়। ক্রিয়াপদের এই পরিবর্তনশীল ‘রূপ’ কাল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, বাক্যের অর্থ নয়। মনে রাখতে হবে, কাল বলতে ক্রিয়ার কালকে বোঝায়, বাক্যের কাল নয়। তাই, ক্রিয়াপদ যে কালের রূপ অনুযায়ী ব্যবহৃত হবে, ক্রিয়াপদটি সেই কালের হবে। যেমন- ‘তিনি গতকাল হাটে যাননি।’ এখানে, বাক্যটি গতকালকে সম্পাদিত ক্রিয়ার কথা বলছে। সুতরাং, এটি অতীত কালের উদাহরণ হওয়া উচিত। কিন্তু বাক্যের ক্রিয়াপদ ‘যাননি’ বর্তমান কালের রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। (যেমন- ‘আপনি আজ হাটে যাননি)। তাই, এখানে ক্রিয়াপদের বা বাক্যের কাল বা ক্রিয়ার কাল বর্তমান হিসেবে ধরা হয়। এ ধরনের উদাহরণকে কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয়। কাল বা ক্রিয়ার কাল ইংরেজি Tense-এর অনুরূপ। কিন্তু ইংরেজি Tense বাক্যের অর্থ অনুসরণ করে, বাংলা কাল প্রায়ই বাক্যের অর্থ অনুসরণ করে না; মূলত বাংলা কাল ক্রিয়ার রূপকে অনুসরণ করে। প্রকারভেদ : ক্রিয়ার কালকে মূলত- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত, এই ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। তবে এইগুলোকেও আবার অনেক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিচে ক্রিয়ার কালের প্রকারভেদ দেওয়া হলো- বিভিন্ন কালের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো: কাল সংজ্ঞা উদাহরণ বিশিষ্ট প্রয়োগ ১. বর্তমান কাল সাধারণ বর্তমান নিত্যবৃত্ত বর্তমান যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণভাবে ঘটে সে ভাত খায়। আম বাড়ি যাই। ক) অনুমতি প্রার্থণায় : এখন তবে আসি। খ) উদ্ধৃতি : চণ্ডীদাস বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ গ)বর্ণনা : আমি দেখেছি, বাচ্চাটি রোজ রাতে কাঁদে। ঘ) নেতিবাচক শব্দযোগে অতীত কালের ক্রিয়ায় : তিনি গতকাল হাটে যাননি। স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়। ক) স্থায়ী সত্য : চার আর চারে আট হয়। খ)ঐতিহাসিক বর্তমান: ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনায়; বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করলেন। গ) কাব্যের ভনিতায় : মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস ভনে শুনে পূণ্যবান।। ঘ) অনিশ্চয়তা : কে জানে দেশে আবার সুদিন আসবে কি না। ঙ) অতীত ও ভবিষ্যতে ‘যদি, যখন, যেন’ শব্দের প্রয়োগ করলে। যদি বৃষ্টি আসে, তবে আমরা বাড়ি চলে যাব। সকলেই যেন সভায় হাজির থাকে। বিপদ যখন আসে, তখন এমনি করেই আসে। ঘটমান বর্তমান এখনও চলছে এমন বর্তমানের কাজ হাসান ইডিপিডিবিডিতে পড়ছে। নীরা গান গাইছে। ক) প্রত্যক্ষ উক্তিতে : বক্তা বললেন, ‘ধন-সম্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে, দিকে দিকে আগুন জ্বলছে।’ খ) ভবিষ্যত সম্ভাবনা : চিন্তা করো না, কালই আসছি। পুরাঘটিত বর্তমান পূর্বেই শেষ হয়ে যাওয়া কোনো ক্রিয়ার ফল যদি এখনো বর্তমান থাকে এ বার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি। ২. অতীত কাল সাধারণ অতীত যে ক্রিয়া আগেই শেষ হয়েছে প্রদীপ নিভে গেল। শিকারি পাখিটিকে গুলি করল। ক) পুরাঘটিত বর্তমানের স্থলে : এক্ষণে জানিলাম, কুসুমে কীট আছে। খ) বিশেষ ইচ্ছা প্রকাশে : তোমরা যা খুশি কর, আমি বিদায় হলাম। নিত্যবৃত্ত অতীত অতীতকালে অভ্যস্ততা অর্থে আমরা তখন রোজ নদীতে গোসল করতাম। ক) কামনা প্রকাশে : আজ যদি সুমন আসত, কেমন মজা হত। খ) অসম্ভব কল্পনায় : সাতাশ হত যদি একশ’ সাতাশ। গ) সম্ভাবনা প্রকাশে : তুমি যদি যেতে, তবে ভালই হত। ঘটমান অতীত অতীতে চলছিল (যখনকার কথা বলা হচ্ছে, তখনো কাজটি শেষ হয় নি।) কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল। আর আমরা তখন ভিজছিলাম। পুরাঘটিত অতীত অতীতে বহু আগে সংঘটিত সে বার তাকে সুস্থিই দেখেছিলাম। কাজটি কি তুমি করেছিলে? ক) অতীতের নিশ্চিত ঘটনার বর্ণনায় : পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে এক লক্ষ মারাঠা সৈন্য মারা গিয়েছিল। আমি সমিতিতে সে দিন পাঁচ টাকা নগদ দিয়েছিলাম। খ) অতীতের ক্রিয়া পরম্পরা বোঝাতে অপেক্ষাকৃত আগে সম্পন্ন ক্রিয়াতে : বৃষ্টি শেষ হবার পূর্বেই আমরা বাড়ি পৌছেছিলাম। ৩. ভবিষ্যত কাল সাধারণ ভবিষ্যত পরে সংঘটিত হবে আমরা মাঠে খেলতে যাব। শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে। ক)আক্ষেপ প্রকাশে অতীতের স্থলে : কে জানত, আমার ভাগ্যে এমন হবে? সে দিন কে জানত যে ইউরোপে আবার মহাযুদ্ধের ভেরী বাজবে? খ) অতীতের ক্রিয়ায় সন্দেহের ভাব থাকলে : ভাবলাম, তিনি এখন বাড়ি দিয়ে থাকবেন। তোমরা হয়ত বিশ্বনবী পড়ে থাকবে। ঘটমান ভবিষ্যত ভবিষ্যতে চলতে থাকবে পুরাঘটিত ভবিষ্যত সম্ভবত ঘটে গেছে এমন ক্রিয়া বোঝাতে ভবিষ্যত কালের ক্রিয়া ব্যবহার করলে তা পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.কোনটি নিত্যবৃত্ত অতীত কালের উদাহরণ? (গ-২০০৬-০৭)

ক্রিয়া পদ (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): 1.প্রযোজক ক্রিয়া যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনায় আরেকজন করে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। প্রযোজক ক্রিয়ার দু’জন কর্তা থাকে। এরমধ্যে একজন কর্তা কাজটি আরেকজন কর্তাকে দিয়ে করান। অর্থাৎ, একজন যখন আরেকজনকে দিয়ে কোন কাজ করিয়ে নেয়, তখন সেই ক্রিয়াপদটিকে বলে প্রযোজক ক্রিয়া। [সংস্কৃত ব্যাকরণে এরই নাম ণিজন্ত ক্রিয়া।] প্রযোজক ক্রিয়ার দুইজন কর্তার মধ্যে যিনি কাজটি করান, তাকে বলে প্রযোজক কর্তা। আর যিনি কাজটি করেন, তাকে বলে প্রযোজ্য কর্তা। তাকে দিয়ে কাজটি প্রযোজ্য করা হয় বলে তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন- মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এখানে চাঁদ দেখার কাজটি করছে ‘শিশু’, কিন্তু চাঁদ দেখাচ্ছেন ‘মা’। অর্থাৎ, ‘মা’ কাজটি প্রযোজনা করছেন। তাই ‘মা’ এখানে প্রযোজক কর্তা। আর চাঁদ দেখার কাজটি আসলে ‘শিশু’ করছে, তাই ‘শিশু’ এখানে প্রযোজ্য কর্তা। এরকম- সাপুড়ে সাপ খেলায়। (এখানে সাপুড়ে প্রযোজক কর্তা, আর সাপ প্রযোজ্য কর্তা) 1.নামধাতুর ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে সব ধাতু গঠিত হয়, তাদেরকে নামধাতু বলে। নামধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে যেসব ক্রিয়াপদ গঠন করে, তাদেরকেই নামধাতুর ক্রিয়া বলে। যেমন- বিশেষ্য = বেত+আ = বেতা, ক্রিয়াপদ = বেতানো, বেতাচ্ছেন, বেতিয়ে বিশেষণ = বাঁকা+আ = বাঁকা, ক্রিয়াপদ = বাঁকানো, বাঁকাচ্ছেন, বাঁকিয়ে ধ্বন্যাত্মক অব্যয় = কন কন+আ = কনকনা, ক্রিয়াপদ = কনকনাচ্ছে, কনকনিয়ে বাক্যে প্রয়োগ- লোকটি ছেলেটিকে বেতাচ্ছে। কঞ্চিটি বাঁকিয়ে ধর। দাঁত ব্যথায় কনকনাচ্ছে। অজগরটি ফোঁসাচ্ছে। ব্যতিক্রম : কয়েকটি নামধাতু ‘আ’ প্রত্যয় ছাড়াই ধাতু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ফল = বাগানে এবার অনেক আম ফলেছে। টক = তরকারি বাসি হলে টকে। ছাপা = প্রকাশক তার বইটা এবার মেলায় ছেপেছে। 1.যৌগিক ক্রিয়া একটি সমাপিকা ক্রিয়া ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি বসে যদি কোন বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া মিলে যদি তাদের সাধারণ অর্থ প্রকাশ না করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন- ঘটনাটা শুনে রাখ। (শোনার বদলে তাগিদ দেয়া অর্থ বুঝিয়েছে) তিনি বলতে লাগলেন। (বলার অর্থ সম্প্রসারণ করে নিরন্তর বলা বুঝিয়েছে) ছেলেমেয়েরা শুয়ে পড়ল। (শোওয়ার পাশাপাশি দিনের কার্যসমাপ্তিও বোঝাচ্ছে) সাইরেন বেজে উঠল। (আকস্মিক সাইরেন বাজার কথা বলা হচ্ছে) শিক্ষায় মন সংস্কারমুক্ত হয়ে থাকে। (অভ্যস্ততা অর্থে, ধীরে ধীরে সংস্কারমুক্ত হয় বোঝাচ্ছে) এখন যেতে পার। (যাওয়ার বদলে অনুমোদন অর্থে) 1.মিশ্র ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়্, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র ক্রিয়া বলে। যেমন- বিশেষ্যের পরে : আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। গোল্লা য় যাও। বিশেষেণের পরে : তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম। ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে : মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। [খেয়াল রাখতে হবে, যৌগিক ক্রিয়া দুইটি ক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, যার একটি সমাপিকা ক্রিয়া আরেকটি অসমাপিকা ক্রিয়া। অন্যদিকে, মিশ্র ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ক্রিয়াপদ বসে গঠিত হয়।] পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপ পুরুষ সাধারণ সম্ভ্রমাত্মক তুচ্ছার্থক/ ঘনিষ্ঠার্থক উত্তম পুরুষ আমি যাই আমরা যাই --------- -------- মধ্যম পুরুষ তুমি যাও তোমরা যাও আপনি যান আপনারা যান তুই যা তোরা যা নাম পুরুষ সে যায় তারা যায় তিনি যান তাঁরা যান এটা যায় এগুলো যায় [উত্তম পুরুষ : বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি। মধ্যম পুরুষ : বাক্যের উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। অর্থাৎ, উত্তম পুরুষ যাকে উদ্দেশ্য করে বাক্যটি বলে, এবং পাশাপাশি বাক্যেও উল্লেখ করে, তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। মধ্যম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনার, আপনাদের, ইত্যাদি। নামপুরুষ : বাক্যে বক্তা অনুপস্থিত যেসব ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর উল্লেখ করেন, তাদের নামপুরুষ বলে। অর্থাৎ, বক্তার সামনে নেই এমন যা কিছুর কথা বক্তা বাক্যে বলেন, সবগুলোই নামপুরুষ। নাম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের, ইত্যাদি।] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.বাংলা ভাষায় অসমাপিকা ক্রিয়ার রূপ (ঘ-২০০৫-০৬) *.কোন বাক্যে সকর্মক ক্রিয়ায় অকর্মক রূপ আছে? (ঘ-২০০৬-০৭) *.লোকটা পুরো কাঁঠালটাই খেয়ে ফেলল।- এই বাক্যে খেয়ে ফেলল’ কোন ধররেন ক্রিয়াপদ? (ক-২০০৬-০৭) *.ক্রিয়াপদের মূল অংশের নাম: (গ-২০০৪-০৫) *.ক্রিয়া পদের মূল অংশকে কি বলে? (গ-২০০১-০২)