Search This Blog

ক্রিয়া পদ (পর্ব ১): ক্রিয়া পদ ক্রিয়ার প্রকারভেদ সমাপিকা-অসমাপিকা ক্রিয়া সকর্মক-অকর্মক-দ্বিকর্মক ক্রিয়া কর্ম পদ প্রযোজক ক্রিয়া নামধাতুর ক্রিয়া যৌগিক ক্রিয়া মিশ্র ক্রিয়া পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপ উত্তম পুরুষ মধ্যম পুরুষ নামপুরুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন ক্রিয়া পদ : যে পদ দিয়ে কোন কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে। অর্থাৎ, বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোন কাজ সম্পাদন করা বা কোন কাজ সংঘটন হওয়াকে বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ ও কাল অনুযায়ী ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন, ‘পড়্’ একটি ধাতু। এর সঙ্গে উত্তম পুরুষ ও সাধারণ বর্তমান কাল অনুযায়ী ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয় ‘পড়ি’ ক্রিয়াপদটি। আবার মধ্যম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ো’। নাম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ে’। আবার উত্তম পুরুষের জন্য ঘটমান বর্তমান কালের জন্য হবে ‘পড়ছি’। সাধারণ অতীত কালের জন্য হবে ‘পড়েছি’। [ক্রিয়া পদ বাক্যের অপরিহার্য অঙ্গ। শুধু ক্রিয়াপদ নিয়ে একটি বাক্য গঠিত হতে পারে। কিন্তু ক্রিয়া পদ ছাড়া কোন বাক্য গঠিত হতে পারে না। তবে মাঝে মাঝে অনেক বাক্যের ক্রিয়াপদটি উহ্য থাকে। যেমন- ‘রমেশ আমার ভাই (হয়)।’ এই বাক্যে ‘হয়’ ক্রিয়াটি উহ্য থাকে, এটি না লিখলেও সবাই বুঝতে পারে। আর তাই এটি লেখাও হয় না। কিন্তু এটা আবার ইংরেজি করলে ‘হয়’-র ইংরেজি লেখা হয়- Rameshismy brother. সাধারণত, ‘হ্’ ও আছ্’ ধাতু বা ক্রিয়ামূল দ্বারা গঠিত ক্রিয়া পদগুলো উহ্য থাকে।] ক্রিয়ার প্রকারভেদ 1.সমাপিকা-অসমাপিকা ক্রিয়া বাক্যের ভাব প্রকাশের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া, এই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া পদ বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে ক্রিয়া পদ বাক্যকে সম্পূর্ণ করে, আর কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা বাকি থাকে না, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। একটি বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতেই হয়। এবং একটি বাক্যে একটার বেশি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে না। যেমন- ছেলেরাখেলছে। ছেলেরা খেলাকরছে। দ্বিতীয় বাক্যে ‘খেলা’ সমাপিকা ক্রিয়া নয়। এ জন্য ‘করছে’ সমাপিকা ক্রিয়া আনতে হয়েছে। নয়তো বাক্যটি সম্পূর্ণ হচ্ছে না। অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া পদ দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্য সম্পূর্ণ হয় না, আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহারের পরও বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করতে হয়। শুধু অসমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে বাক্য গঠিত হয় না। একটি বাক্যে যতোগুলো ইচ্ছা অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করা যায়। কিন্তু একটি সমাপিকা ক্রিয়া আনতেই হয়। যেমন- ছেলেরাখেলা। এখানে খেলা একটি অসমাপিকা ক্রিয়া। ক্রিয়া পদ হলেও এটি দিয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ হয়নি, আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরেকটি সমাপিকা ক্রিয়া ‘করছে’ যোগ করলেই কেবল বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে। ছেলেরা খেলা করছে। সাধারণত অসমাপিকা ক্রিয়ার শেষেইয়া, ইলে, ইতে, এ, লে, তেবিভক্তিগুলো যুক্ত থাকে। 1.সকর্মক-অকর্মক-দ্বিকর্মক ক্রিয়া বাক্যে ক্রিয়ার কর্মের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে অকর্মক, সকর্মক ও দ্বিকর্মক- এই ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। কর্ম পদ : যে পদকে আশ্রয় করে ক্রিয়া পদ তার কাজ সম্পাদন বা সংঘটন করে, তাকে কর্ম পদ বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়া পদ কাজ করার জন্য যেই পদকে ব্যবহার করে, তাকে কর্ম পদ বলে। ক্রিয়া পদকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মপদ। আর যদি উত্তর না পাওয়া যায়, তবে সেই ক্রিয়ার কোন কর্মপদ নেই। যেমন- মেয়েটি কলম কিনেছে। মেয়েটি হাসে। এখানে প্রথম বাক্যে ক্রিয়াপদ ‘কিনেছে’কে ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় ‘কলম’। (কী কিনেছে?- কলম) অর্থাৎ, প্রথম বাক্যের ক্রিয়ার কর্মপদ কলম। আবার দ্বিতীয় বাক্যের ক্রিয়াপদ ‘হাসে’কে ‘কী/ কাকে’ কোনটা দিয়ে প্রশ্ন করলেই কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং, এই বাক্যের ক্রিয়াপদের কোন কর্ম নেই। অকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের কোন কর্ম নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের কর্ম পদ আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। দ্বিকর্মক ক্রিয়া : কখনো কখনো একটি বাক্যে একই ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম পদ থাকে। তখন সেই ক্রিয়াপদকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। এক্ষেত্রে,বস্তুবাচক কর্মপদকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম বলে এবং ব্যক্তিবাচক কর্মপদকে গৌণ কর্মবলে। অর্থাৎ, বস্তুবাচক কর্মটিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন- ‘বাবাআমাকে একটিল্যাপটপকিনে দিয়েছেন।’ এখানে ‘কিনে দিয়েছেন’ ক্রিয়ার কর্মপদ দুটি, ‘আমাকে’ (কাকে কিনে দিয়েছেন?) ও ‘ল্যাপটপ’ (কী কিনে দিয়েছেন?)। এখানে বস্ত্তবাচক কর্মপদ ‘ল্যাপটপ’, আর ব্যক্তিবাচক কর্মপদ ‘আমাকে’। সুতরাং এখানে মুখ্য বা প্রধান কর্মপদ ‘ল্যাপটপ’ আর গৌণ বা অপ্রধান কর্ম ‘আমাকে’। সমধাতুজ কর্ম : বাক্যের ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ যদি একই ধাতু বা ক্রিয়ামূল থেকে গঠিত হয়, তবে তাকে সমধাতুজ কর্মপদ বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই শব্দমূল থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্মপদ বলে। যেমন- আজ এমন ঘুম ঘুমিয়েছি। এখানে ক্রিয়াপদ ‘ঘুমিয়েছি’, আর কর্মপদ ‘ঘুম’ (কী ঘুমিয়েছি?)। আর এই ‘ঘুমিয়েছি’ আর ‘ঘুম’ দুটি শব্দেরই শব্দমূল ‘ঘুম্’। অর্থাৎ, শব্দ দুইটি একই ধাতু হতে গঠিত (ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে)। সুতরাং, এই বাক্যে ‘ঘুম’ কর্মটি একটি সমধাতুজ কর্ম। এরকম- আজ কী খেলা খেললাম। (খেল্) আর মায়াকান্না কেঁদো না। (কাঁদ্) এমন মরণ মরে কয়জনা? (মর্)

কারক ও বিভক্তি (পর্ব ২ এবং শেষ পর্ব): সম্প্রদান কারক যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে কিছু দেয়া হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে। ‘কাকে দান করা হল’ প্রশ্নের উত্তরই হলো সম্প্রদান কারক। সম্প্রদান কারকের নিয়ম অন্যান্য নিয়মের মতোই সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকেই এসেছে। তবে অনেক বাংলা ব্যাকরণবিদ/ বৈয়াকরণ একে আলাদা কোন কারক হিসেবে স্বীকার করেন না। তারা একেও কর্ম কারক হিসেবেই গণ্য করেন। কর্মকারক ও সম্প্রদান কারকের বৈশিষ্ট্যও একই। কেবল স্বত্ব ত্যাগ করে দান করার ক্ষেত্রে কর্মকারক হিসেবে গণ্য না করে কর্মপদটিকে সম্প্রদান কারক হিসেবে গণ্য করা হয়। সম্প্রদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তির বদলে চতুর্থী বিভক্তি যুক্ত হয়। চতুর্থী বিভক্তি আর কোথাও যুক্ত হয় না। অর্থাৎ, ‘কে/ রে’ বিভক্তি দুটি সম্প্রদান কারকের সঙ্গে থাকলে তা চতুর্থী বিভক্তি। অন্য কোন কারকের সঙ্গে থাকলে তা দ্বিতীয়া বিভক্তি। তবে কোথাও নিমিত্তার্থে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হলে তা চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- বেলা যে পড়ে এল, জলকে চল। (নিমিত্তার্থে চতুর্থী বিভক্তি) উদাহরণ- ভিখারিকে ভিক্ষা দাও। (কাকে দান করা হল? ভিখারিকে।) : সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি অসহায়কে খাদ্য দাও। (কাকে দান করা হল? অসহায়কে।) : সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে দেহ প্রাণ। (কাকে দান করা হল? অন্ধজনে।): সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি সমিতিতে চাঁদা দাও। (কাকে দান করা হল? সমিতিতে।) : সম্প্রদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি অপাদান কারক যা থেকে কোন কিছু গৃহীত, বিচ্যুত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত, রক্ষিত, ভীত হয়, তাকে অপাদান কারক বলে। অর্থাৎ, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হওয়া বোঝায়। ‘কি হতে বের হল’ প্রশ্নের উত্তরই অপাদান কারক। উদাহরণ- গাছ থেকে পাতা পড়ে। (কি হতে বের হল/ পড়ল? গাছ থেকে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি শুক্তি থেকে মুক্তি মেলে। (কি হতে বের হল? শুক্তি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি জমি থেকে ফসল পাই। (কি হতে বের হল? জমি থেকে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি দেশ থেকে হায়েনারা চলে গেছে। (কি হতে বের হল? দেশ থেকে):অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি বিপদ থেকে বাঁচাও। (কি হতে বাঁচাও? বিপদ হতে) : অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি বাঘকে ভয় পায় না কে? (কি হতে ভয় বের হল? বাঘ হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি মনে পড়ে সেই জৈষ্ঠ্যের দুপুরে পাঠশালা পলায়ন। (কি হতে বের হল/ পলায়ন? পাঠশালা হতে) : অপাদান কারকে শূণ্য বিভক্তি বাবাকে বড্ড ভয় পাই। (কি হতে ভয় বের হয়? বাবা হতে): অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি তিনি চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন। (কি হতে বের হয়েছেন/ এসেছেন? চট্টগ্রাম হতে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছিলো। (কি হতে বের হল/ ফেলা হল? বিমান হতে): অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি অধিকরণ কারক ক্রিয়া সম্পাদনের কাল এবং আধারকে (সময় এবং স্থানকে) অধিকরণ কারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কোথায়/ কখন/ কী বিষয়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই অধিকরণ কারক। উদাহরণ- পুকুরে মাছ আছে। (কোথায় আছে? পুকুরে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি বনে বাঘ আছে। (কোথায় আছে? বনে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে। (কোথায় বাঁধা আছে? ঘাটে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা। (কোথায় বাঁধা? দুয়ারে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি সকালে সূর্য ওঠে। (কখন ওঠে? সকালে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি এ বাড়িতে কেউ নেই। (কোথায় কেউ নেই? বাড়িতে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি নদীতে পানি আছে। (কোথায় আছে? নদীতে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি রবিন অঙ্কে কাঁচা। (কী বিষয়ে কাঁচা? অঙ্কে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি সজিব ব্যাকরণে ভাল। (কী বিষয়ে কাঁচা? ব্যাকরণে) : অধিকরণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি ঘরের মধ্যে কে রে? (কোথায়? ঘরে) : অধিকরণ কারকে অনুসর্গ মধ্যে বাড়ি থেকে নদী দেখা যায়। (কোথায় থেকে দেখা যায়? বাড়ি থেকে):অধিকরণে পঞ্চমী বিভক্তি* *.শেষ উদাহরণটিতে নদী বাড়ি থেকে বের হয়নি, তাই এটি অপাদান কারক নয়। নদী বাড়ি থেকেই দেখা যায়। অর্থাৎ, ক্রিয়াটি বাড়িতেই ঘটছে, তাই এটি অধিকরণ কারক। অপাদান-অধিকরণ কারকের পার্থক্য অপাদান ও অধিকরণ কারক আলাদা করতে গিয়ে অনেকেরই সমস্যা হয়। অপাদান ও অধিকরণ কারককে আলাদা করে চেনার সহজ উপায় হলো, অপাদান কারক থেকে কোন কিছু বের হয় বোঝায়। আর অধিকরণ কারকের মাঝেই ক্রিয়া সম্পাদিত হয়। যেমন- ‘তিলে থেকে তেল হয়’ আর ‘তিলে তেল আছে’। প্রথম বাক্যে তিলের ভেতর ক্রিয়া সংঘটিত হয়নি। বরং তিল থেকে তেল বের হওয়ার কথা বোঝাচ্ছে। আর দ্বিতীয় বাক্যে তিলের ভেতরই তিল থাকার কথা বলছে। এই ‘আছে’ ক্রিয়াটি তিলের ভেতরে থেকেই কাজ করছে। [ছবি] এরকম-বিপদ থেকে বাঁচাও- অপাদান কারক বিপদে বাঁচাও- অধিকরণ কারক শুক্তি থেকে মুক্তি মেলে- অপাদান কারক শুক্তিতে মুক্তি হয়- অধিকরণ কারক জমি থেকে ফসল পাই- অপাদান কারক জমিতে ফসল হয়- অধিকরণ কারক নিচে কারক নির্ণয়ের উপায় সংক্ষেপে ছক আকারে দেয়া হলো- ক্রিয়াকে প্রশ্ন উত্তর যে কারক কে, কারা? কর্তৃকারক কী, কাকে? কর্মকারক কী দিয়ে? করণকারক কাকে দান করা হল? সম্প্রদান কারক কি হতে বের হল? অপাদান কারক কোথায়, কখন, কী বিষয়ে? অধিকরণ কারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.শিকারী বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। *.ক্রিকেট খেলে’- বাক্যের কারক ও বিভক্তি- (ক-২০০৬-০৭) *.‘রেখো মা দাসেরে মনে।’- এ বাক্যে ‘দাসেরে’ কোন কারকে কোন বিভক্তি? (ঘ-২০১০-১১) *.‘গরিবকে কম্বল দিয়ে ঠাণ্ডায় বাঁচাও’- বাক্যটির ‘ঠাণ্ডায়’ শব্দের কারক-বিভক্তি (ঘ-২০০৬-০৭) *.‘নিঃশেষে নিশাচর গ্রাসে মহাবিশ্বে’ এই চরণের ‘মহাবিশ্বের’ পদটির কারক- (ঘ-১৯৯৮-৯৯) *.‘লঙ্ঘি এ সিন্ধুর প্রলয়ের নৃত্যে’- এ বাক্যে ‘সিন্ধুর’ কারক ও বিভক্তি হবে: (গ-২০১০-১১) *.‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’- ধর্মের কল’- এর কারক ও বিভক্তি: (গ-২০১০-১১) *.গুরুজনে ভক্তি কর- ‘গুরুজনে’ কোন কারক? (গ-২০০৯-১০)

কারক ও বিভক্তি: বিভক্তি বাক্যের একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শব্দগুলোর সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত করতে হয়। এই শব্দাংশগুলোকে বলা হয় বিভক্তি। মা শিশু চাঁদ দেখা। উপরের বাক্যটিতে কোন শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত করা হয়নি। ফলে বাক্যের শব্দগুলোর মধ্যে কোন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি, এবং এগুলো বাক্যও হয়ে উঠতে পারেনি। এখন শিশু’র সঙ্গে কে বিভক্তি আর দেখা’র সঙ্গে চ্ছেন’ বিভক্তি যোগ করলে বাক্যটি হবে- মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। অর্থাৎ, শব্দগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে একটি বাক্য সম্পূর্ণ হলো এবং এখন আর এগুলো শব্দ নয়, এগুলো প্রত্যেকটি একেকটি পদ। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তখন সেগুলোকে বলা হয় পদ। বাক্যে বিভক্তি ছাড়া কোন পদ থাকে না বলে ধরা হয়। তাই কোন শব্দে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন না হলেও ধরে নেয়া হয় তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। এবং এই বিভক্তিটিকে বলা হয় শূণ্য বিভক্তি। উপরের বাক্যটিতে ‘মা’ ও ‘চাঁদ’ শব্দদুটির সঙ্গে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন হয়নি। তাই ধরে নিতে হবে এই শব্দদুটির সঙ্গে শূণ্য বিভক্তি যোগ হয়ে এগুলো বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং এই দুটিও এখন পদ। মৌলিক বাংলা শব্দ বিভক্তিগুলো হলো- শূণ্য বিভক্তি (০), এ, য়, তে, কে, রে, র(এর)। তবে এছাড়াও কিছু কিছু অব্যয় শব্দ কারক সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো হলো- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হতে, থেকে, চেয়ে, ইত্যাদি। বাংলা শব্দ বিভক্তি ৭ প্রকার- বিভক্তির নাম বিভক্তি প্রথমা বা শূণ্য বিভক্তি ০, অ দ্বিতীয়া বিভক্তি কে, রে তৃতীয়া বিভক্তি দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক চতুর্থী বিভক্তি কে, রে* পঞ্চমী বিভক্তি হইতে (হতে), থেকে, চেয়ে ষষ্ঠী বিভক্তি র, এর সপ্তমী বিভক্তি এ, য়, তে *.চতুর্থী বিভক্তি শুধুমাত্র সম্প্রদান কারকে যুক্ত হয়। *.বচনভেদে বিভক্তির আকৃতি পরিবর্তিত হয়। তবে কোন বিভক্তি চিহ্নিত করার জন্য উপরের বিভক্তির তালিকাটি মনে রাখলেই চলবে। *.বিভক্তির নাম লেখার সময় কখনো সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা যাবে না। অর্থাৎ দ্বিতীয়া বিভক্তিকে কখনোই ২য়া বিভক্তি লেখা যাবে না। *.বিভক্তির তালিকাটি ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে, প্রয়োজন হলে মুখস্থ করতে হবে। কারক কারক শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘যা ক্রিয়া সম্পাদন করে’। বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে কারক বলে। অর্থাৎ, বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে। কারক ৬ প্রকার- ১. কর্তৃকারক ২. কর্মকারক ৩. করণকারক ৪. সম্প্রদান কারক ৫. অপাদান কারক ৬. অধিকরণ কারক কর্তৃকারক বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কে/ কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্তৃকারক। (কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের বাক্যে এই নিয়ম খাটবে না। সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।) উদাহরণ- গরু ঘাস খায়। (কে খায়) : কর্তৃকারকে শূণ্য বিভক্তি কর্ম কারক যাকে অবলম্বন করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে ক্রিয়ার কর্ম বা কর্মকারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মকারক। বাক্যে দুইটি কর্ম থাকলে বস্ত্তবাচক কর্মটিকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম ও ব্যক্তিবাচক কর্মটিকে গৌণ কর্ম বলে। তবে দুইটি একই ধরনের কর্ম থাকলে প্রথম কর্মটিকে উদ্দেশ্য কর্ম ও দ্বিতীয়টিকে বিধেয় কর্ম বলে। যেমন- ‘দুধকে মোরা দুগ্ধ বলি, হলুদকে বলি হরিদ্রা’। এখানে ‘দুধ’ ও ‘হলুদ’ উদ্দেশ্য কর্ম, ‘দুগ্ধ’ ও ‘হরিদ্রা’ বিধেয় কর্ম। কর্তা নিজে কাজ না করে কর্মকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে তাকে প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম বলে। ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্ম বলে। [ক্রিয়াপদ] উদাহরণ- বাবা আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। (কাকে দিয়েছেন? আমাকে। কী দিয়েছেন? ল্যাপটপ) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), ল্যাপটপ- কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি (মুখ্য কর্ম) ডাক্তার ডাক। (কাকে ডাক?) : কর্মকারকে শূণ্য বিভক্তি আমাকে একটা বই দাও। (কাকে দাও? আমাকে। কী দাও? বই) : আমাকে- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (গৌণ কর্ম), বই- কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি (মুখ্য কর্ম) আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থণা। (কাকে করিবে? আমারে) : কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি তোমার দেখা নাই। (কার দেখা? তোমার) : কর্মকারকে ষষ্ঠী বিভক্তি জিজ্ঞাসিবে জনে জনে। (কাকে জিজ্ঞাসিবে? জনে জনে) : কর্মকারকে সপ্তমী বিভক্তি করণ কারক করণ শব্দের অর্থ যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়। যে উপাদান বা উপায়ে ক্রিয়া সম্পাদন করা হয়, তাকে করণ কারক বলে। ক্রিয়াকে ‘কী দিয়ে/ কী উপায়ে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তাই করণ কারক। উদাহরণ- পিয়াল কলম দিয়ে লিখছে। (কী দিয়ে লেখে? কলম দিয়ে) :করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি কীর্তিমান হয় সাধনায়। (কী উপায়ে হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি ডাকাতেরা গৃহকর্তার মাথায় লাঠি মেরেছে। (কী দিয়ে মেরেছে? গুলি): করণ কারকে শূণ্য বিভক্তি লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হয়। (কী দিয়ে চাষ করা হয়? লাঙ্গল দিয়ে): করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি মন দিয়ে পড়াশুনা কর। (কী উপায়ে/ দিয়ে কর? মন দিয়ে) :করণ কারকে তৃতীয়া বিভক্তি ফুলে ফুলে ঘর ভরেছে। (কী দিয়ে ভরেছে? ফুলে ফুলে) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায়। (কী দিয়ে/ উপায়ে চেনা যায়? গোঁফে): করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি সাধনায় সব হয়। (কী উপায়ে সব হয়? সাধনায়) : করণ কারকে সপ্তমী বিভক্তি এ সুতায় কাপড় হয় না। (কী দিয়ে হয় না? সুতায়)

দ্বিরুক্ত শব্দ: দ্বিরুক্ত শব্দ শব্দের দ্বিরুক্তি পদের দ্বিরুক্তি/ পদাত্মক দ্বিরুক্তি বিশিষ্টার্থক বাগধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ দ্বিরুক্ত শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘দ্বি+উক্ত’। অর্থাৎ, যা দুইবার বলা হয়েছে। বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ বা পদ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে অন্য একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। কোন শব্দ বা পদ পরপর দুইবার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে দ্বিরুক্ত শব্দ বলে। যেমন- ‘আমার জ্বর জ্বর লাগছে।’ এখানে ‘জ্বর জ্বর’ দ্বিরুক্ত শব্দটি ঠিক ‘জ্বর’ অর্থ প্রকাশ করছে না। জ্বরের ভাব প্রকাশ করছে। দ্বিরুক্ত শব্দ ৩ প্রকার- শব্দের দ্বিরুক্তি, পদের দ্বিরুক্তি ও অনুকার দ্বিরুক্তি। (ক) শব্দের দ্বিরুক্তি ১. একই শব্দ অবিকৃতভাবে দুইবার ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- ভাল ভাল বই, ফোঁটা ফোঁটা জল, বড় বড় বাড়ি, ইত্যাদি। ২. সহচর শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। দুটি সম্পর্কিত শব্দকে সহচর শব্দ বলা যায়। যেমন, ‘কাপড়-চোপড়’ সহচর শব্দযোগে গঠিত দ্বিরুক্ত শব্দ। ‘কাপড়’ অর্থ গা ঢাকার জন্য যেসব পরা হয়। আর কাপড়ের সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে যেগুলো পরা হয় সেগুলোই ‘চোপড়’। অর্থাৎ, এই দুটি শব্দ পরস্পর সম্পর্কিত। তাই এই দুটি শব্দ সহচর শব্দ। এরকম- লালন-পালন, খোঁজ-খবর, ইত্যাদি। ৩. একই শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে পরেরবার একটু পরিবর্তিত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- মিট-মাট, ফিট-ফাট, বকা-ঝকা, তোড়-জোড়, গল্প-সল্প, রকম-সকম, ইত্যাদি। ৪. সমার্থক শব্দযোগে দ্বিরুক্ত শব্দ হতে পারে। যেমন- ধন-দৌলত, বলা-কওয়া, টাকা-পয়সা, ইত্যাদি। ৫. বিপরীতার্থক শব্দযোগেও দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন- লেন-দেন, দেনা-পাওনা, ধনী-গরিব, আসা-যাওয়া, ইত্যাদি। (খ) পদের দ্বিরুক্তি/ পদাত্মক দ্বিরুক্তি পদ বা বিভক্তিযুক্ত শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয়ে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে পদের দ্বিরুক্তি বা পদাত্মক দ্বিরুক্তি বলে। পদাত্মক দ্বিরুক্তি নিম্নোক্তভাবে গঠিত হতে পারে- ১. একই পদ অবিকৃতভাবে পরপর দুইবার ব্যবহৃত হয়ে। যেমন- ঘরে ঘরে লেখাপড়া হচ্ছে। দেশে দেশে ধন্য ধন্য পড়ে গেলো। মনে মনে আমিও এ কথাই ভাবছিলাম। ২. দ্বিতীয় পদ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে। তবে এক্ষেত্রেও পদ-বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, মূল শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়, কিন্তু বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন- আমরা হাতে-নাতে চোরটাকে ধরেছি। ৩. সহচর, সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দ একই বিভক্তি যুক্ত হয়ে পরপর ব্যবহৃত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করতে পারে। যেমন- আমার সমত্মান যেন থাকে দুধে-ভাতে। দেশে বিদেশে বইটি লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী, আর পথে-প্রবাসে লিখেছেন মুহম্মদ এনামুল হক। পদাত্মক দ্বিরুক্তির প্রয়োগ বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি (উল্লেখ্য, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ পদের মত কাজ/ আচরণ করে। অর্থাৎ, বিশেষ্য পদের দ্বিরুক্তি হলে সেগুলো বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।) ১. আধিক্য বোঝাতে : রাশি রাশি ধন, ধামা ধামা ধান ২. সামান্য বোঝাতে : আমার জ্বর জ্বর লাগছে। কবি কবি ভাব। ৩. পরস্পরতা বা ধারাবাহিকতা বোঝাতে : তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছ। ওরা বাড়ি বাড়ি হেঁটে চাঁদা তুলছে। ৪. ক্রিয়া বিশেষণ : ধীরে ধীরে যায়, ফিরে ফিরে চায়। ৫. অনুরূপ কিছু বোঝাতে : তার সঙ্গী সাথী কেউ নেই। ৬. আগ্রহ বোঝাতে : ও দাদা দাদা বলে ডাকছে। বিশেষণ পদের দ্বিরুক্তি ১. আধিক্য বোঝাতে : ভাল ভাল আম। ছোট ছোট ডাল। ২. তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতে : গরম গরম জিলাপী। নরম নরম হাত। ৩. সামান্যতা বোঝাতে : উড়ু উড়ু ভাব। কাল কাল চেহারা। সর্বনাম পদের দ্বিরুক্তি ১. বহুবচন বা আধিক্য বোঝাতে : সে সে লোক কোথায় গেল? কে কে এল? কেউ কেউ বলে। ক্রিয়াপদের/ ক্রিয়াবাচক পদের দ্বিরুক্তি ১. বিশেষণ রূপে : রোগীর তো যায় যায় অবস্থা। তোমার নেই নেই ভাব আর গেল না। ২. স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতে : দেখতে দেখতে আকাশ কাল হয়ে এল। ৩. ক্রিয়া বিশেষণ : দেখে দেখে যাও। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলে কিভাবে? ৪. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেছি। অব্যয় পদের দ্বিরুক্তি ১. ভাবের গভীরতা বোঝাতে : সবাই হায় হায় করতে লাগল। ছি ছি, তুমি এত খারাপ! ২. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : বার বার সে কামান গর্জে উঠল। ৩. অনুভূতি বা ভাব বোঝাতে : ভয়ে গা ছম ছম করছে। ফোঁড়াটা টন টন করছে। ৪. বিশেষণ বোঝাতে : পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির। ৫. ধ্বনিব্যঞ্জনা : ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর। বিশিষ্টার্থক বাগধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ সতর্কতা বোঝাতে : ছেলেটিকে চোখে চোখে রেখো। ভাবের প্রগাঢ়তা বোঝাতে : ভুলগুলো তুই আনরে বাছা বাছা। কালের বিসত্মার বোঝাতে : থেকে থেকে শিশুটি কাঁদছে। আধিক্য বোঝাতে : লোকটা হাড়ে হাড়ে শয়তান। : খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে, পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.নমনীয় বস্তুর প্রসারণ জ্ঞাপক দ্বিরুক্ত শব্দ- (ঘ-১৯৯৮-৯৯)লকলকে *.‘অলি-গলি’ শব্দটিকে ব্যাকরণের সংজ্ঞায় বলা হয় (ঘ-১৯৯৯-২০০০) *.‘জিজ্ঞাসিব জনে জনে।’ বাক্যটির দ্বিরুক্তি কী দিয়ে গঠিত?(ক-২০০৮-০৯) *.দ্রুততা জ্ঞাপক দ্বিরুক্ত শব্দ (ক-২০০৯-১০)

ধ্বনি পরিবর্তন (পর্ব ২ ও শেষ পর্ব): ৮. ধ্বনি বিপর্যয় : শব্দের মধ্যবর্তী দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি অদলবদল হলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন, বাক্স˃ বাস্ক, রিক্সা˃ রিস্কা, পিশাচ˃ পিচাশ, লাফ˃ ফাল ৯. সমীভবন :(স্বরসঙ্গতির মতো, কিন্তু ব্যঞ্জন ধ্বনির পরিবর্তন হয়) দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার- ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত) ১০. বিষমীভবন : পাশাপাশি একই ব্যঞ্জনধ্বনি দু’বার থাকলে তাদের একটি পরিবর্তিত হলে তাকে বিষমীভবন বলে। যেমন, শরীর˃ শরীল, লাল˃ নাল ১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা : শব্দের কোন ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে, অর্থাৎ দুইবার উচ্চারিত হলে তাকে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা বলে। মূলত জোর দেয়ার জন্য দ্বিত্ব ব্যঞ্জন হয়। যেমন, পাকা˃ পাক্কা, সকাল˃ সক্কাল ১২. ব্যঞ্জন বিকৃতি : কোন ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোন ব্যঞ্জনধ্বনি হলে তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। যেমন, কবাট˃ কপাট, ধোবা˃ ধোপা, ধাইমা˃ দাইমা ১৩. ব্যঞ্জনচ্যুতি : পাশাপাশি দুটি একই উচ্চারণের ব্যঞ্জন থাকলে তার একটি লোপ পেলে তাকে বলে ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন, বউদিদি˃ বউদি, বড় দাদা˃ বড়দা, ১৪. অন্তর্হতি : কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন, ফাল্গুন˃ ফাগুন (‘ল’ লোপ), ফলাহার˃ ফলার, আলাহিদা˃ আলাদা ১৫. অভিশ্রুতি : যদি অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হয়, এবং পরিবর্তিত স্বরধ্বনি তার আগের স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলে যায়, এবং সেই মিলিত স্বরধ্বনির প্রভাবে তার পরের স্বরধ্বনিও পরিবর্তিত হয়, তবে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন, ‘করিয়া’ (ক+অ+র+ই+য়+আ) থেকে অপিনিহিতির মাধ্যমে (র+ই-এর আগে আরেকটা অতিরিক্ত ‘ই’ যোগ হয়ে) ‘কইরিয়া’ হলো। অর্থাৎ অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ‘ই’ স্বরধ্বনিটির পরিবর্তন হলো। আবার ‘কইরিয়া’-এর র+ই-এর ‘ই’ তার আগের ‘ই’-র সঙ্গে মিলে গেলে হলো ‘কইরয়া’ বা ‘কইরা’। এবার ‘কইরা’-র ‘ই’ ও ‘আ’ পরিবর্তিত হয়ে হলো ‘করে’। এটিই অভিশ্রুতি। এরকম, শুনিয়া˃ শুইনিয়া˃ শুইনা˃ শুনে, বলিয়া˃ বইলিয়া˃ বইলা˃ বলে, হাটুয়া˃ হাউটুয়া˃ হাউটা˃ হেটো, মাছুয়া˃ মাউছুয়া˃ মাউছা˃ মেছো ১৬. র-কার লোপ : (আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) শব্দের ‘র’ ধ্বনি বা ‘র-কার’ লোপ পেয়ে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে তাকে র-কার লোপ বলে। যেমন, তর্ক˃ তক্ক, করতে˃ কত্তে, মারল˃ মালল, করলাম˃ কল্লাম ১৭. হ-কার লোপ : (আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) অনেক সময় দুইটি স্বরধ্বনির মধ্যবর্তী ‘হ’ ধ্বনি বা ‘হ-কার’ লোপ পায়। একে হ-কার লোপ বলে। যেমন, ‘গাহিল’ (গ+আ+হ+ই+ল+অ)-এর ‘আ’ ও ‘ই’ স্বরধ্বনি দুটির মধ্যবর্তী ‘হ’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘গাইল’। এরকম, পুরোহিত˃ পুরুত, চাহে˃ চায়, সাধু˃ সাহু˃ সাউ, আল্লাহ˃ আল্লা, শাহ˃ শা ১৮. অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি : পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে, এবং সেই দুটি স্বরধ্বনি মিলে কোন যৌগিক স্বর তৈরি না করলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য মাঝে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ বা অন্তঃস্ত ‘ব’ উচ্চারিত হয়। একে অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি বলে। যেমন, ‘যা+আ’, এখানে পরপর দুটি ‘আ’ স্বরধ্বনি আছে। দুটি যুক্ত হয়ে কোন যৌগিক স্বর তৈরি করছে না। তাই এখানে মাঝখানে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ উচ্চারিত হয়ে হবে ‘যাওয়া’। এরকম, নাওয়া, খাওয়া, দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন *.পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে কি বলে? (গ-২০০৮-০৯) *.‘স্কুল’ শব্দটিকে ‘ইস্কুল’ উচ্চারণে ধ্বনির এই পরিবর্তনকে বলা হয়: (গ-২০০৭-০৮) *.দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বলা হয়: (গ-২০০৫-০৬)